কুকিজ আর ব্ল্যাক কফিতে চুমুক দিতে দিতে নিজের বাড়িতে সময় দিলেন মিমি চক্রবর্তী। সামনে শম্পালী মৌলিক।
প্রথমবার সংসদ ভবনে প্রাথমিক পরিচয় পর্ব সেরে এসেই গত বুধবার নেমে পড়েছিলেন নিজের এলাকা পরিদর্শনে। দিনভর ছোটাছুটির পর রাতে কসবায় নব নির্বাচিত সাংসদ-অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী নিজের ফ্ল্যাটবাড়িতে রাত্রিবেলায় একটু একলা হলেন। তখনই সময় দিয়েছিলেন পপকর্ন-কে। ফ্রেশ হয়ে অফ হোয়াইট টপ আর ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট চেক পালাজো পরে মিমি এসে বসলেন ড্রয়িংরুমে। সঙ্গে তাঁর পোষ্য ম্যাক্স। ইন্টারভিউ শুরুর আগে ম্যাক্স পপকর্ন-এর প্রতিনিধিকে ভাল করে স্ক্যান করে সম্মতি দিতে তবেই রেকর্ডার অন করা গেল। মাঝে মাঝে কুকিজ আর কাজু বরফি খেতে লাগল ম্যাক্স আমাদের সঙ্গে। কফিতে চুমুক দিয়ে মিমি কথা শুরু করলেন।
এলাকার কাজের চাপ, সাংসদ, সবমিলিয়ে নায়িকা মিমিকে দর্শক হারিয়ে ফেলবে না তো?
-না, না। পরের মাস থেকে আমি ছবির শুটিং শুরু করে দেব। একটা ছবি ছাড়তে হয়েছে। সম্ভবত, আর ছাড়ব না। আমি যা কিছু আজ, সিনেমার জন্যই। এত কম বয়সে, কেরিয়ারের পিক-এ কেন আমি সিনেমা ছাড়ব! কখনওই নয়।
কার সঙ্গে কাজ শুরু করতে চলেছেন?
– কিছুদিন পর মিটিং করব। কী রিলিজ আছে, কী করা যায় ইত্যাদি দেখব। তারপর সিদ্ধান্ত।
[আরও পড়ুন: ব্লাউজ খুলে হট ফটোশুট প্রিয়াঙ্কার, ভাইরাল ভিডিও ঘিরে বিতর্ক]
পুজো রিলিজ থাকবে না আপনার?
– দেখুন, শুধু পুজো রিলিজ করার জন্য আমি করব না। যদি স্ক্রিপ্টটা পুজো রিলিজের মতো হয়, তবেই করব। নয়তো পুজো রিলিজ করব না। দরকার নেই। উই ক্যান শিফট ইট টু ডিসেম্বর। মানে অন্যসময়। পুজোয় মিমির ছবি থাকতে হবে বলেই করব না আমি, দেখা যাক।
‘দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন’ দেখতে গিয়ে আমার মনে হল, এবারে সোনাদা আবিরের একজন প্রেমিকা এন্ট্রি নিতে পারেন পরের ছবিতে। আপনার কাছে তেমন অফার এসেছে? মানে সোনাদার প্রেমিকা হওয়ার?
– (হাসি)… লেটস সি। ফিঙ্গার্স ক্রসড। আই উইল টক টু ধ্রুব।
নুসরতের বিয়ে সামনে…
– আই অ্যাম জিপড! আই ক্যান নট সে এনিথিং।
মিমির ইস্তানবুলে যাওয়া পাকা তো?
– আই ক্যান নট সে এনিথিং (হাসি)। আই সোয়্যার। শি উইল কিল মি।
এই যে শহরতলি বা গ্রামে-গঞ্জে ঘুরলেন। মানুষ এত কাছ থেকে দেখল আপনাকে। এতে স্টারডম ফিকে হয়ে যেতে পারে না?
– ধুর, তা হয় না কি কোনওদিন! এটাতে ভালবাসা আরও বাড়ে।
এক্ষেত্রে তো টিকিট না কেটে এমনিই দেখতে পাচ্ছে আপনাকে।
– তাতে কিছু এসে যায় না। আমার মনে হয়, লোকে যদি আমাকে ভালবাসে, হল-এও আসবে। টিকিট না কেটে যদি একজন হিরোইনকে এমনিই দেখতে পাই তাহলে কী দরকার সিনেমায় যাওয়ার- এমন কিন্তু কেউ ভাবে না। সিনেমা ইজ সিনেমা। ডিফারেন্ট ওয়ার্ল্ড। আমি সবসময় যেটা বলেছি, ডোন্ট থিঙ্ক মি অ্যাজ আ বার্বিডল। আমি এখানে কাজ করতে এসেছি, কাজ করব। আর আমার সব লোকজনদেরকেও কাজ করাব। যারা আমাকে ভালবাসে, তারা সারাজীবন ভালবাসবে।
প্রথম দিন পার্লামেন্টে পৌঁছে ঠিক কেমন অনুভূতি?
– যখন যাচ্ছিলাম তখনও ঠিক বুঝতে পারিনি। কিন্তু একদম এন্ট্রির মুখে, যেখানে সব টুরিস্টরা যায়, সেখানে দশ বছর আগে আমিও আমার বন্ধুদের সঙ্গে ছবি তুলে এসেছিলাম। সেই স্মৃতিটা মনে পড়ে গেল। যখন আমি একজন অভিনেত্রী, একজন এমপি হিসেবে প্রবেশ করলাম সত্যি একটা অদ্ভূত অনুভূতি হচ্ছিল। যাঁরা গার্ড ছিলেন, তাঁরা তো আমার ম্যানেজারকেই এমপি ভেবে বসলেন। তারপর ভুল বুঝতে পেরে বললেন, ‘ওহ! আচ্ছা, আপ হ্যায় এমপি!’ দে জাস্ট অ্যাড্রেসড আস- “ইস সাল তো কিতনে ছোটে ছোটে কিউটসি এমপি’স আয়ে হ্যায়।” ইট ওয়াজ লাইক- (হাসিতে ফেটে পড়লেন মিমি, সামনে বসা তাঁর পোষ্য ম্যাক্সও চঞ্চল হয়ে উঠল। দ্বিগুণ উৎসাহে ল্যাজ নাড়তে শুরু করল)। সত্যি বলতে, দারুণ অভিজ্ঞতা! ভিতরে একটা উষ্ণ অভ্যর্থনার আবহ টের পাচ্ছিলাম। আমি এতটা আশা করিনি। বাট দেয়ার ওয়াজ টু মাচ অফ ওয়ার্মথ ইনসাইড। প্রত্যেকে ভীষণ ওয়ার্ম। তখনও সব এমপি এসে পৌঁছাননি। সকলে পরস্পরকে অভিনন্দন জানাচ্ছিলেন, কথা বলছিলেন। ইট ওয়াজ আ ভেরি নাইস এক্সপিরিয়েন্স। ওই পিলারগুলো দেখেই আমার গুজবাম্পস শুরু হয়ে গিয়েছিল। যে, ইট ইজ দ্য পার্লামেন্ট!
মা-বাবা কী বলছেন?
– তাঁরাই বলছেন, আমি কিছু বলছি না। সত্যি বলতে কী উচ্ছ্বসিত একেবারে।
ইন্ডাস্ট্রি ফ্র্যাটার্নিটি, টলিউড কী বলছে?
– প্রত্যেকে টেক্সট করেছে। ফোন করেছে। এভরিবডি সাপোর্টেড ফ্রম ডে ওয়ান। যেদিন থেকে আমি প্রার্থী হচ্ছি ঘোষণা হয়েছিল, তখন থেকে।
এত লোক আপনাকে সমর্থন করছে, আবার একই সঙ্গে প্রচুর লোক ট্রোলও করছে। আপনি কী বলবেন?
– আমি সবসময় এটাই মনে করি যে, যদি আমাকে পঞ্চাশ লক্ষ লোক ভালবাসে, তাহলে পঞ্চাশজন লোক হয়তো ট্রোল করে। আমি একটা জিনিস পরিষ্কার করে বলতে চাই সবাইকে, নেগেটিভিটিকে আমাকে অ্যাফেক্ট করতে দিই না কখনও, তাই এটাতে কনসেনট্রেটই করি না। আমি বরং মনোযোগ দিই ওই পঞ্চাশ লাখ মানুষের দিকে, যাঁরা আমাকে ভালবাসে। নয়তো আজকে আমার ভোটে জেতার মার্জিন এটা হত না। দু’লাখ পঁচানব্বই হাজারের উপরে, নিশ্চয়ই জানেন।
যাদবপুরে সিনেমার জগৎ থেকে গিয়ে দাঁড়িয়ে একজন এত ভোট পেলেন, যাঁর সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ ছিল না সে অর্থে। কীভাবে?
– আমার একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। প্রথমদিন থেকে সকলে আমাকে বলে এসেছে যে, এটা শক্ত ঘাঁটি। হেভিওয়েট জায়গা। আমি জানতে চাইতাম যে, হেভিওয়েট জায়গাটা কী? হাউ ডু ইউ ডিফাইন ইট? ডাক্তারির শংসাপত্র, পিএইচডি সার্টিফিকেট অর বিইং আ হিউম্যান হুইচ ইউ আর। আমার সৌভাগ্য বা আশীর্বাদ বলতে পারেন, আমি সবসময় মানুষের ভালবাসা পেয়েছি। আমি জলপাইগুড়ি থেকে কলকাতায় এসে আজ অবধি যত ভালবাসা পেয়েছি, এটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওনা। আমি দিদিকে থ্যাংক ইউ বলব যে, দিদি নিজের জায়গাটা আমাকে দিয়েছেন। আর আজকে ইটস রেকর্ড মার্জিন। আই অ্যাম গ্রেটফুল টু দিদি। মানুষের কাছে কৃতজ্ঞ।
আচ্ছা, এই গেরুয়া ঝড়ের মুখে এই জয় আপনি আশা করেছিলেন? এখন তো লড়াইটা আরও কঠিন।
– আমার কনস্টিটিউয়েন্সির এরকম কোনও জায়গা নেই যেখানে আমি হেরেছি। মেজরলি আই ওয়ান। আমি যেটার জন্য এসেছি অর্থাৎ কাজ করতে হবে। আজকে থেকেই আমি বেরিয়ে পড়েছিলাম। একটা মিথ আছে যে, আমরা তো আর এমপি-কে দেখতে পাই না। সেই মিথটা আমি ডে ওয়ান থেকে ভাঙতে চাই। তার জন্য আমি ওয়াটারপ্ল্যান্ট দেখতে চলে গিয়েছি। বাজার দেখতে গিয়েছি। ওখান দিয়ে অ্যাম্বুল্যান্স যেতে সমস্যা হয়। এটা সোনারপুরের কথা বলছি। ফিরদৌসি বেগমের এরিয়াতে। স্কুল টাইমে বাচ্চাদের যেতে অসুবিধা হয়, পরীক্ষার সময় আরও চাপ। কারণ ওখানে সরু রুট আর রাস্তাটা ভাঙা। কিছুটা রেলওয়ের অধীনে, কিছুটা মিউনিসিপ্যালিটির অধীন। তো কী হয় লোকে ঠিকভাবে কাজ করতে পারছে না। যদি আমি পুরো দায়িত্বটা নিই, রাস্তাটা ঠিক করতে পারি তাহলে জিনিসটা সহজ হয়। আমি সবসময়েই কঠিন পরিশ্রমে বিশ্বাস করি। আমি আমার পাঁচশো শতাংশ দেব। কাজের ক্ষেত্রে সিনিয়রদেরও আমাকে হেল্প করতে হবে, যে সাপোর্টটা আমি অলরেডি পাচ্ছি। সিনেমার ক্ষেত্রেও যেমন পুরোপুরি পরিশ্রমে বিশ্বাস করি, এক্ষেত্রেও তাই।
রাজনীতির লোকজন মুখের ভাষা হারাচ্ছেন। মেজাজ হারাচ্ছেন। সেটা নিয়ে আপনি কী বলবেন?
– থ্যাঙ্কফুলি দে আর নট ট্রোল্ড ফর দ্যাট! আমি কোনওদিন ভাবিনি একে গালাগাল দিয়ে আমি বড় হব। আমি সবসময় মঞ্চেও স্পিচ দিয়েছি যে, চারটে মানুষকে খারাপ বলে এগিয়ে যেতে চাই না। এগিয়ে যাব আমার কেপেবিলিটি বা দক্ষতায়। কী কাজ করতে পারি, কী কাজ করতে চাই, তার ভিত্তিতে এগোব। কাউকে ছোট করায় আমি বিশ্বাস করি না। প্রথমদিন থেকে দেখেছি আমার আর নুসরতের থেকে বেশি সমালোচিত কোনও সাংসদ হননি। হয়তো লোকে বাকি ৪০ জনের নামও ঠিক করে বলতে পারবে না।
এত ট্রোল্ড হলেন কেন মনে হয়?
– বিকজ উই হ্যাভ ডিভিয়েটেড, আমার আর নুসরতের দিকে ডিরেকশন চেঞ্জ হয়ে গিয়েছে। একটা মেয়েকে তো অনেকভাবে ট্রোল করা যায় একটা ছেলের তুলনায়। আমাদের বাংলার মানুষকে কাজকর্ম নিয়ে একটু ভাবতে হবে, তাহলে ট্রোলগুলো কমবে। লোকের কাজ নেই বলে, এই ট্রোল বাড়ে।
যেহেতু বিজেপির হাওয়া বেশ জোরালো আগামী দিনে আপনার দলের কী অবস্থা দাঁড়াবে মনে হয়?
– মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্ভীক। তিনি একটা আসন থেকে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। তাঁর দীর্ঘ সংগ্রামের একটা যাত্রা আছে। একটা হাওয়া হয় না, তাই হয়তো মানুষ ভেবেছে ওরা খুব ভাল কাজ করেছে। তাই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে মানুষ। আমরা তো কাউকে ফোর্স করতে পারি না যে, ভোট দাও আমাদের। আমাদের কাজ হল, নিজের কাজটা করে যাওয়া। আমি আমার কাজ করব, দিদির মর্যাদা রক্ষা করব। তাঁকে গর্বিত করার চেষ্টা করব। দিদি যে উন্নয়নটা করেছেন, বাংলার ইতিহাসে হয়নি, আজও বলছি।
[আরও পড়ুন: ফের বলিউড ছবিতে শাশ্বত, রয়েছেন এক তারকাপুত্রও]
এই রং বদলের প্রভাব, ভোটের ফলাফলের প্রভাব, টলিউডে কতটা পড়বে?
– অনেকে রং বদলাতে পারেন। সেটা আমি ঠিক বলতে পারব না তাঁদের মনের ভিতরে কী আছে। আমি সবসময় একজন স্বচ্ছ মানুষ। আমি নিজের বিষয়েই বলতে পারব। অন্যের বিষয়ে নয়।
আপনার এত কাজ, কমিটমেন্ট, টাইম ম্যানেজ করবেন কীভাবে?
– (তখনই ডোরবেল বাজল। নুসরতের বাড়ি থেকে শাড়ি আর মিষ্টি পাঠানো হয়েছে। হেসে ফেললেন মিমি)। সত্যি এটা আমার দুঃস্বপ্ন এখন। আমার অনেকগুলো বই পড়া বাকি। নেটফ্লিক্স দেখা হচ্ছে না। অনেকগুলো স্ক্রিপ্ট পড়া বাকি। শেষ তিনমাস কেবল রাজনীতির চর্চা করছি। লোকসভা কনস্টিটিউয়েন্সি বুকস পড়েছি। স্পিচ দেখেছি ইউটিউবে। বোধহয় কলেজেও এত পড়াশোনা করিনি। ঠিকঠাক চারদিন পড়াশোনা করে ইংলিশ অনার্স পাস করেছি। মা বলছে, ‘আগে তো এত পড়াশোনা করিসনি!’ কী আর করা যাবে, যখন দায়িত্ব নিয়েছি। আমি সিনেমার স্ক্রিপ্টটা খুব পড়ি। আই মিন হোমওয়ার্ক করি। এক্ষেত্রেও করছি। সো দ্যাট আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু লেট এনিবডি ডাউন। যে মানুষগুলো আমাকে সমর্থন করছেন, তাঁদের হতাশ করতে চাই না। আই অ্যাম সিওর, আশা করি সব ব্যালেন্স করতে পারব। (হাসি)
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.