নির্মল ধর: প্রায় সারা বিশ্ব এই মুহূর্তে করোনার থাবায় আক্রান্ত। সিনেমার কাজকর্ম শিকেয় তোলা। এই টালিগঞ্জেই ছোট ও বড় পর্দার সব কাজই বন্ধ। সবাই ঘরবন্দি। আন্তর্জাতিক সিনেমাতেও ব্যবসায় ভাটার স্রোত। তার জাজ্জ্বল্য প্রমাণ, বিশ্বের সব চাইতে বড় মাপের উৎসব কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল হচ্ছে না। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, “করোনার দুর্যোগে দেশের কোথাও অনুষ্ঠান করা যাবে না।” সুতরাং উৎসব কর্তা থিয়ের ফর্মু আগামী মে মাসের উৎসব বাতিল করতে বাধ্য হয়েছেন। শোনা যাচ্ছে, সেপ্টেম্বর-এর ভেনিস উৎসবের সঙ্গে নাকি কান উৎসব মিলে যেতে পারে। ব্যাপারটা নিয়ে ভেনিসের কর্তা আলবার্তো বার্বেরার সঙ্গে প্রাথমিক কথাও হয়েছে কানের কর্তৃপক্ষের। সিদ্ধান্ত অবশ্য এখনও হয়নি। আসলে করোনা বিধ্বস্ত ইতালিতে ভেনিস উৎসবই তো অনিশ্চিত। করোনার প্রথম ধাক্কায় ইতালি কুপোকাত। আর ভেনিস উৎসব হয় ছোট্ট দ্বীপ লিদে। সেখানকার পরিকাঠামো প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক অতিথিদের সবরকম সেবা ও চিকিৎসার উপযুক্ত কি না সেটাও মনে রাখতে হচ্ছে উৎসব আয়োজকদের।
মজার কথা হল, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় ভেনিস উৎসব শুরু হয়েছিল মুসোলিনির নেতৃত্বে। ফ্রান্স তখন ছিল বিপরীত পক্ষে। এখন সেই ফ্রান্স ইতালির সঙ্গে হাত মেলাতে চাইছে। ভাগ্যের পরিহাস একেই বুঝি বলে! কিন্তু কান উৎসবে তো বিশাল এক সিনেমা বাজার বসে। সেটা বন্ধ হলে মুশকিল। সারা পৃথিবীর ফিল্ম ব্যবসায়ীরা নাকি বলেছেন ‘বাজার বন্ধ করা চলবে না।’ তাই বাজার বিভাগের কর্তা জেরমি পোলার্ড আগামী ২২ মে ‘অনলাইন’ বাজার বিভাগটি চালু করবেন। ফিল্ম ব্যবসায়ীরা অনলাইনে ছবি দেখবেন, বিক্রিবাটাও হবে অনলাইনে।
মার্চ মাসে বার্লিন উৎসব থেকে ফেরার সময়েই করোনার থাবা প্রায় ঘাড়ে চেপে বসতে শুরু করেছিল। ওখানেই আমেরিকার সিয়াটেল উৎসবের কর্ত্রী মারিয়ানা বলেছিলেন, “জানি না, এবার জুনে উৎসব করতে পারব কি না!” তাঁর আশঙ্কাই সত্যি হল। দেশে ফিরেই তিনি পড়লেন করোনার মুখে। ট্রাম্পের হম্বিতম্বির চোটে এখন তো আমেরিকার হাঁসফাঁস অবস্থা! সিয়াটেল উৎসব বন্ধ। ইতালির উদিন উৎসব বন্ধ হয়েছে। ফ্রান্সের ভেসউল উৎসবও বাতিল। সুইজারল্যান্ডের ফ্রিবুরগ বাতিল। খুবই জনপ্রিয় উৎসব লোকার্নো এখনও স্থির করতে পারেনি জুনে উৎসব করতে পারবে কি না। উৎসবের প্রেসিডেন্ট মার্ক সলারি এবং নতুন পরিচালক লিলি হিনস্টিন দেশের প্রশাসকদের সঙ্গে আলোচনা করছেন। ইতিমধ্যে রাশিয়ার সবচাইতে বড় মস্কো সিনেমা উৎসব মার্চ থেকে সরে গিয়েছে অক্টোবরে। তাও অনিশ্চিত। পুরো ইউরোপ জুড়ে বেশিরভাগ ফিল্ম উৎসবই বাতিলের খাতায়।
এদিকে পুবের দিকে টোকিও, বুসান, তাইপেইতে উৎসবের তোড়জোড় চলছে পুরোদমে। এই জুনে সাংহাই চলচিত্র উৎসব নির্ধারিত সময়েই হবে জানিয়ে দিয়েছে। অবশ্য রাজনৈতিক কারণও আছে। করোনার উৎস বলা হয়েছে চিনে। এদিকে চিন বলছে এই মুহূর্তে শুধু ইউহান নয়, ওদের দেশে করোনার প্রভাব তেমন নেই। সুতরাং সাংহাই উৎসব বন্ধ করে দিলে যদি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভুল বার্তা যায়! উৎসব তাই করতেই হচ্ছে। টোকিও উৎসবের এক প্রতিনিধি জানিয়েছেন, “সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে। বাজেট এখনও পাইনি, পেলে বুঝতে পারব উৎসব করা যাবে কি না।” অন্যদিকে এশিয়ার সেরা ফিল্ম উৎসব বুুসান প্রস্তুতি চালিয়েই যাচ্ছে। উৎসব আধিকারিক জে জিওন জানিয়েছেন, “অক্টোবরকে মাথায় রেখেই ছবি বাছাইয়ের কাজ চলছে। এই বছরটা আবার বুসানের রজত জয়ন্তী! সুতরাং বন্ধ হওয়ার চান্স কম। তায় আবার এই কদিন আগেই দেশের প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইন বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় ফিরেছেন। তাই উৎসব বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
এবার একটু নিজের ঘরের দিকে তাকানো যাক। ভারত সরকারের ‘ইফি’ গোয়াতে হবে তো? মুম্বইয়ের ‘মিফ’? সেটারই বা কী ভবিষ্যৎ! এখনও পর্যন্ত মুম্বইতেই করোনা আক্রান্তের ও মৃত্যুর সংখ্যা সবচাইতে বেশি। সুতরাং প্রশ্নচিহ্ন থেকেই যাচ্ছে উৎসব ঘিরে। করোনা তো দেশের অর্থনীতিতেও প্রচণ্ড চাপ দিচ্ছে। উৎসবের স্পনসরশিপ পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকছেই। আর কলকাতার ফিল্ম উৎসব! তারও ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবার সুযোগ বা সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও নেই। করোনা নিয়েই তিনি আপাতত ব্যস্ত। উৎসব তাঁর প্রিয় বিষয় হলেও এই ক্ষণে তিনি অন্যদিকে নজর দিতে পারবেন কি? একটাই আশা- জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রী জনগণকে উৎসবের আনন্দ থেকে হয়তো বঞ্চিত করবেন না। তবে সবটাই নির্ভর করছে করোনার মতিগতি ওপর। কেউ কেউ বলছেন কান-এর মতো বড় মাপের উৎসব বন্ধ হয়ে গেল। কলকাতা তো চুনোপুঁটি!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.