Advertisement
Advertisement

Breaking News

Manoj Kumar Last Rites

তেরঙ্গায় মুড়ে দেওয়া হল ‘ভারত কুমারে’র মরদেহ, রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্পন্ন হবে শেষকৃত্য

'আলবিদা' মনোজ কুমার! শেষযাত্রায় কান্নায় ভেঙে পড়লেন স্ত্রী শশী গোস্বামী।

Manoj Kumar Last Rites: Actor Wrapped In Tricolour, received state honour
Published by: Sandipta Bhanja
  • Posted:April 5, 2025 12:31 pm
  • Updated:April 5, 2025 12:34 pm  

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দীর্ঘ রোগভোগের পর শুক্রবারই চিরঘুমের দেশে পাড়ি দিয়েছেন মনোজ কুমার। যাঁর প্রয়াণে শোকের ছায়া দেশের বিনোদুনিয়া থেকে রাজনৈতিকমহলেও। মাত্র পয়ত্রিশটি সিনেমাতেই বলিউডে কাঁপন ধরানো ভারত কুমার যে রাজনীতি সচেতন ছিলেন, তাঁর অভিনীত, পরিচালিত সিনেমাই তার প্রমাণ। লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর অনুরোধে ‘জয় জওয়ান জয় কিষাণ’ স্লোগানের উপর ভিত্তি করে পরিচালক হিসেবে শিকে ছিড়েছিলেন উপকার সিনেমা দিয়ে। তারও আগে ভগৎ সিংয়ের জীবনকাহিনি অবলম্বনে তৈরি ছবির চিত্রনাট্য লেখার জন্য জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত হন মনোজ। আর জীবনের প্রথম পুরস্কার স্বরূপ প্রাপ্ত সেই টাকার গোটাটাই তুলে দিয়েছিলেন ভগৎ সিংয়ের পরিবারের হাতে। আসলে সিনেমার মাধ্যমেও যে জনসচেতনতা গড়ে তোলা যায় কিংবা একতার বার্তা দেওয়া যায়, সেই পাঠ শুধু হিন্দি কেন গোটা দেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে দিয়েছিলেন মনোজ কুমার। তাই তো শনিবার দেশমাতৃকার সেই সন্তানকে ‘আলবিদা’ জানানোর আগে তাঁর মরদেহ মুড়ে দেওয়া হল তেরঙ্গায়।

এদিন সাড়ে ১১টায় জুহুর পবনহংস শ্মশানে শুরু হয় মনোজ কুমারের শেষকৃত্য। জানা গিয়েছে, রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় চিরবিদায় জানানো হবে ‘ভারত’কে। এমনকী তাঁর শববাহী গাড়িটিও গেরুয়া-সাদা-সবুজে সাজানো হয়েছে তেরঙ্গার প্রতীক হিসেবে। শেষযাত্রায় কান্নায় ভেঙে পড়েন স্ত্রী শশী গোস্বামী। সেই ভিডিও ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়েছে। বলিউড মাধ্যম সূত্রে খবর, মনোজের শেষকৃত্যে যোগ দিয়েছেন বলিপাড়ার অনেকেই। শুক্রবারই অবশ্য প্রয়াণের খবর প্রকাশ্যে আসার পর থেকে বলিউড তারকাদের আনাগোনা ছিল তাঁর বাড়িতে। পুত্র কুণাল গোস্বামীর সঙ্গে দেখা করতে হাজির হয়েছিলেন ধর্মেন্দ্র, ফারহা খান, সজিদ খান-সহ আরও অনেকেই।

Advertisement

রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত না হয়েও দেশের মানুষের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য সিনেমাকে ‘অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন যে মানুষটি, তিনি মনোজ কুমার। সেই তালিকায় অবশ্য অনেক পরিচালক, অভিনেতার নাম ঠাঁই পেলেও দেশাত্মবোধক ছবির সমার্থক হয়ে ওঠে মনোজ কুমার নামটিই। এমনকী সিনেমার পর্দায় দেশের মানুষদের কথা তুলে ধরার জন্য নিজের বাড়ি পর্যন্ত বিক্রি করে দিয়েছিলেন পরিচালক তথা অভিনেতা। আর সেই জন্যই তাঁর অভিনীত ‘উপকার’ সিনেমার চরিত্রের নামানুসারে তাঁকে ‘ভারত কুমার’ আখ্যাও দেওয়া হয়। সেই ‘মুকুট’ জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সযত্নে আগলে রেখেছিলেন হরিকৃষ্ণ গিরি গোস্বামী ওরফে মনোজ কুমার (Manoj Kumar)।

 
 
 
 
 
View this post on Instagram
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 

A post shared by Snehkumar Zala (@snehzala)

ষাটের দশকে লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর অনুরোধেই পরিচালকের আসনে বসেছিলেন মনোজ কুমার। সেসময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শাস্ত্রী অভিনেতাকে ‘জয় জওয়ান জয় কিষাণ’ স্লোগানের উপর ভিত্তি করে একটি সিনেমা তৈরি করার আবদার জানান। যে ছবি গাইবে সেনা, কৃষকদের জয়গান। সেখান থেকেই মনোজ পরিচালিত ‘উপকার’ উপহার পেলেন দর্শকরা। প্রেম চোপড়া, আশা পারেখ কামিনী কৌশল, প্রাণ, মদন পুরিদের মতো বাঘা অভিনেতাদের নিয়ে কালজয়ী সিনেমা তৈরি করে ফেললেন মনোজ কুমার। তাঁর হাত ধরেই গোটা দেশ শুনল ‘মেরে দেশ কি ধরতি, সোনা উগলে, উগলে হিরে মোতি…’। স্বাধীনতা দিবস হোক কিংবা সাধারণতন্ত্র দিবস, ছয় দশক পেরিয়ে সেই গান এখনও দেশপ্রেমের উদযাপনে বাজে সর্বত্র। ছবিতে নিজেদের রোজনামচা, নিজেদের জীবনের গল্প দেখতে পেয়ে ভারতীয় দর্শকরা এতটাই একাত্ম বোধ করেছিলেন এবং এই ছবি সাধারণ মানুষের মনে এতটাই জায়গা করে নিয়েছিল যে পরবর্তীতে তেলুগু ভাষাতেও তৈরি হয়। যার নাম ‘পদিপান্তালু’। সেখান থেকেই মনোজ কুমারের দেশপ্রেমের গাথা বোনা শুরু।

 
 
 
 
 
View this post on Instagram
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 

A post shared by BollywoodShaadis.com (@bollywoodshaadis)

অতীতে এক সাক্ষাৎকারে মনোজ বলেছিলেন, “দেশপ্রেম আমার রক্তে রয়েছে। উত্তরাধিকার সূত্রে বাবার কাছ থেকে দেশপ্রেম এবং সাহিত্যচর্চার প্রতি আনুরাগ্য পেয়েছি, আর মা শিখিয়েছেন নৈতিক মূল্যবোধ।” সেই আদর্শকে পাথেয় করেই অভিনেতা-পরিচালক তাঁর ফিল্মি কেরিয়ারে একাধিক দেশাত্মবোধক সিনেমা উপহার দিয়েছেন। ১৯৬৭ সালে ‘উপকার’ দিয়ে শুরু, এরপর ‘রোটি কাপড়া অউর মকান’ (১৯৭৪), ‘শহিদ’ (১৯৬৫), ‘পূরব অউর পশ্চিম’ (১৯৭০), ‘ক্রান্তি’ (১৯৮১)-র মতো সিনেমাগুলি সেই তালিকার শীর্ষে। এই ‘ক্রান্তি’ ছবিটির জন্যই মুম্বইয়ের জুহুর বাংলো বিক্রি করে দিয়েছিলেন মনোজ। পরিকল্পনা ছিল, সেই জমিতে একটি থিয়েটার গড়ে তুলবেন, কিন্তু ‘ক্রান্তি’ তৈরির পথে অন্তরায় হয়ে ওঠে অর্থাভাব। তাই ছবিটি বানানোর জন্য সেই সাধের বাংলোটি বিক্রি করে দেন অভিনেতা-পরিচালক। তার সেই কসরতের দাম পালটা ভালোবাসা দিয়ে দিয়েছিলেন দর্শকরা। বক্স অফিসে দারুণ হিট হয় ‘ক্রান্তি’। রাজনীতি নিয়েও বরাবর সচেতন ছিলেন মনোজ কুমার। ফিল্মি কেরিয়ারের অস্তরাগে রাজনীতিতে কেরিয়ার গড়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ২০০৪ সালের নির্বাচনের আগে ভারতীয় জনতা পার্টির সদস্য হন। মোদির সঙ্গেও একাধিকবার নির্বাচনী প্রচারে দেখা গিয়েছে তাঁকে। শনিবার হিন্দি সিনেদুনিয়ার সেই মহীরুহকে তেরঙ্গায় মুড়ে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষবিদায় জানানো হল।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement