‘কালের কোলে কপাল ফেরে। কেউ রাজা, কেউ রাজার বাপ।’ ইতিমধ্যেই যাঁরা হইচইয়ের নতুন সিরিজ ‘মন্দার’ দেখে ফেলেছেন তাঁদের মুখে মুখে ফিরছে এই সংলাপ। অনেকে তো হোয়াটসঅ্যাপের স্টেটাসেও দিয়েছেন এই রাজা হওয়ার গল্প। সোশ্যাল মিডিয়াতেও জোর চর্চা অনির্বাণ ভট্টাচার্যের প্রথম ওয়েব সিরিজের ‘মন্দার’কে নিয়ে। কে এই ‘মন্দার’? টলিপাড়ায় আপাতত তিনি নতুন হয়েও, অনেক অভিনেতার রাতের ঘুম কেড়েছেন। একটা চরিত্রই তাঁকে নিয়ে এসেছে স্পটলাইটে। তিনি দেবাশিস মণ্ডল। সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে মন্দার হওয়ার গল্প শোনালেন অভিনেতা। শুনলেন আকাশ মিশ্র।
মন্দারে আপনিই তো পুরো স্পটলাইট কেড়ে নিয়েছেন! অনির্বাণ খুশি তো?
দেবাশিস মণ্ডল: অনির্বাণের সঙ্গে এটা নিয়ে বিস্তারিত ভাবে কথা হয়নি। তবে শুট শেষের পরে আমি অনির্বাণকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে আমি ঠিকঠাক করতে পেরেছি কিনা। অনির্বাণ আমাকে জানিয়েছিল, আমি তাঁর প্রত্যাশাকে ছাপিয়ে গিয়েছি। একজন অভিনেতা হিসেবে, পরিচালকের কাছ থেকে এই ধরনের প্রশংসা পাওয়া সত্যিই বড় ব্যাপার। অনির্বাণ যা খুঁতখুঁতে পরিচালক! তা ওর সঙ্গে কাজ করেই বুঝতে পেরেছি।
মন্দার তো এখন টক অফ দ্য টাউন। নিশ্চয়ই প্রচুর প্রশংসা পাচ্ছেন!
দেবাশিস মণ্ডল: যাঁরা যাঁরা সিরিজটা দেখেছেন, তাঁরা কিন্তু সবাই প্রশংসা করেছে আমার অভিনয়ের। এই ইন্ডাস্ট্রির অনেক বড় বড় শিল্পীরাও আমাকে ব্যক্তিগতভাবে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। যেমন, স্ক্রিনিংয়ের দিন টোটাদা (টোটা রায়চৌধুরী) উচ্ছ্বসিত ছিলেন। আমাকে বলেছেন,দুর্দান্ত, আউটস্ট্যান্ডিং, এত ভাল কাজ আগে দেখেননি তিনি। এটা আমার কাছে খুব বড় পাওনা।
প্রশংসা তো এখন পাচ্ছেন, মন্দার হয়ে ওঠা কি খুব সহজ ছিল?
দেবাশিস মণ্ডল: খুব যে কঠিন ছিল তা বলব না। কারণ, প্রায় ষোলো-সতেরো বছর ধরে আমি থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত। শেক্সপিয়রের লেখা চরিত্র এবং বিশেষ করে ম্যাকবেথের সঙ্গে পরিচয় আমার বহুদিন আগে থেকেই। তাছাড়া থিয়েটারে বহু পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছি। তাঁদের সবাই আলাদা আলাদা ভাবে শেক্সপিয়য়ের গল্পকে অ্যাডাপ্ট করেছেন। সেই অভিজ্ঞতাগুলোকেই কাজে লাগিয়েছি। তবে হ্যাঁ, মন্দারের চিত্রনাট্য হাতে পাওয়ার পর অনির্বাণ যেভাবে চরিত্রের রূপান্তর ঘটিয়েছে সেটাকে অনুসরণ করেছি চোখ বুজে। আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল, একজন অভিনেতার কাছে যদি শেক্সপিয়রের কোনও চরিত্র করার অফার আসে, সেটা খুব বড় সুযোগ। আমি যখন ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামায় পড়তাম তখন ওথেলো করেছিলাম। চরিত্রকে বোঝার জন্য একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া চলেছিল। সেই সব অভিজ্ঞতাগুলোকেই মন্দারের ক্ষেত্রে কাজে লাগিয়ে ছিলাম। তাছাড়া এর আগেও ম্যাকবেথ করেছি একটা হিন্দি প্রোডাকশনে। তাই ম্যাকবেথ আমার কাছে পুরনো, মন্দারই নতুন।
তার মানে মন্দার নিয়েই সারাদিন ডুবে থাকতেন?
দেবাশিস মণ্ডল: সেটা তো নিশ্চয়ই। কারণ, আমার কাছে মন্দার চরিত্রটা একেবারেই নতুন। অনির্বাণ ম্যাকবেথের গল্পটাকে একেবারে অন্য় জায়গায় নিয়ে এসে ফেলেছেন। তাই চিত্রনাট্য অনুযায়ীই চরিত্রকে বুঝতে হয়েছে। আমার মনে হয় মন্দার সবার মধ্যেই রয়েছে। আমার আশপাশের লোকজনের মধ্যে থেকেই অল্প অল্প করে উপাদান নিয়েছি। আসলে এই চরিত্রটা গতেবাঁধা চরিত্র নয়, অনেকটাই ডার্ক বা গ্রে। একটা লোক খুন করছে, প্রতিশোধ নিচ্ছে, কিন্তু এর নেপথ্যে তো কোনও একটা কারণ রয়েছে। সেটাকে তুলে ধরতে চেয়েছিলাম। চেষ্টা করেছিলাম চরিত্রটাকে রক্তমাংসের রূপ দিতে।
বুঝতেই পারছি চরিত্রটা নিয়ে আপনি খুবই খেটেছেন। কীভাবে এই চরিত্রটা পেলেন?
দেবাশিস মণ্ডল: অনির্বাণ বলেছিল আমাকে দেখেই নাকি মন্দারের চিত্রনাট্য লিখেছিল। আমাকে বলেছিল তোকেই করতে হবে এই চরিত্রটা। আর চিত্রনাট্য হাতে পেয়ে একটাই কথা মাথায় এসেছিল, এরকম এক চিত্রনাট্যর জন্য তো আমি অপেক্ষা করছিলাম। আসলে আমি বিশ্বাস করি, সঠিক সময়, সঠিক জিনিসটা আসবেই। তবে এর জন্য ধৈর্য ধরতে হবে। মন্দার আমার কাছে এরকমই একটা সুযোগ।
সুযোগ তো এল। হোমওয়ার্ক করার সময় নিশ্চয়ই পোলানস্কির ম্যাকবেথ, বিশাল ভরদ্বাজের মকবুল দেখেছেন?
দেবাশিস মণ্ডল: এর পিছনে একটা গল্প রয়েছে। ব্যাপারটা কাকতালীয়। আমার ওয়ার্ল্ড সিনেমা দেখা শুরু এক দাদার হাত ধরে। সে আমাকে কয়েকটা ছবি দেখতে দিয়েছিল। তার মধ্যে ছিল পোলানস্কির ম্যাকবেথ, কুরোসাওয়ার থ্রোন অফ ব্লাড। অদ্ভুতভাবে পোলানস্কির ম্যাকবেথ দিয়েই আমার বিশ্ব সিনেমা দেখা শুরু। আমি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম ছবিগুলো দেখে। বিশাল ভরদ্বাজের মকবুল তো আমি মাঝে মধ্যেই দেখি। যতবার দেখি ততবার নতুন নতুন কিছু শিখি। এগুলো তো প্রচ্ছন্নভাবে ছিলই আমার ভিতরে। অভিনয়ের সময় এগুলোই আমাকে মন্দার হয়ে উঠতে সাহায্য করেছে। তবে আমি সচেতনভাবে কোনও ছবিকে অনুসরণ করিনি।
সে তো বুঝলাম। মন্দারের পর আপনার মহিলা ফ্যানের সংখ্যা নিশ্চয়ই বেড়েছে। একটা কথা বলুন তো, সোহিনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ দৃশ্য করার সময়, টেনশনে ছিলেন?
দেবাশিস মণ্ডল: আসলে কী, সোহিনীর সঙ্গে যে ঘনিষ্ঠ দৃশ্য রয়েছে, তা একেবারেই সেনসেশন তৈরি করার জন্য নয়। মন্দার চরিত্রটাকে সঠিকভাবে দর্শকদের কাছে তুলে ধরার জন্যই এই দৃশ্যগুলো আনা হয়েছিল। বলা ভাল এই ঘনিষ্ঠ দৃশ্যগুলো সাংকেতিক। কারণ, এই দৃশ্যগুলোর মধ্যে দিয়ে মন্দার চরিত্রের যৌন অক্ষমতা সঙ্গে এক ‘পাওয়ার স্ট্রাগল’ বা ক্ষমতার দখলকে বোঝানো হয়েছে। এই দৃশ্যগুলো মোটেই শুধু যৌন দৃশ্য নয়। তাই আমি আর সোহিনী এই দৃশ্যকে সঠিকভাবে ফুটিয়ে তোলার দিকে মন দিয়েছিলাম। ঠিক করে তা ফুটিয়ে তুলতে পারছি কিনা, সেটা নিয়েই টেনশন ছিল।
অনেকে বলছেন অনির্বাণের সঙ্গে আপনার অভিনয়ের মিল রয়েছে। আপনি কি অনুকরণ করেন?
দেবাশিস মণ্ডল: জানি না আপনি কোন মিলের কথা বলছেন। তবে অনির্বাণ আর আমার দুজনেই থিয়েটারের মানুষ এখানে অবশ্যই একটা মিল রয়েছে। ভাল অভিনেতার প্রতি বরাবরই আমার রেসপেক্ট রয়েছে। আমাকে সেই সব অভিনেতা অনুপ্রাণিত করে। এই অনুপ্রেরণাই আমাকে এগিয়ে নিয়ে যায়। তাই অনুকরণ নয়, অনুপ্রেরণা বলতে পারেন।
দেবাশিসের সঙ্গে মন্দারের কোনও মিল রয়েছে?
দেবাশিস মণ্ডল: মন্দার চরিত্রের মধ্যে যে সংঘাত রয়েছে আমার মধ্যেও তা রয়েছে। নিজের অধিকারের জন্য লড়াই, বঞ্চিত হওয়া, প্রতিশোধ এই সব উপাদান নিয়েই তো মন্দার তৈরি। আমার মনে হয়, এগুলে কমবেশি সবার মধ্যেই রয়েছে।
মন্দারের পর কটা নতুন কাজের অফার এল?
দেবাশিস মণ্ডল: মহাভারত মার্ডার বলে একটা ছবিতে অভিনয় করলাম। সেটাও হইচইয়ে আসবে। এক নতুন পরিচালকের সঙ্গে কথা হচ্ছে ফিচার ফিল্মের জন্য। আরও কয়েকটা অফার রয়েছে। সবার সঙ্গেই প্রাথমিক কথা হয়েছে। দেখা যাক, কী হয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.