‘৫ নং স্বপ্নময় লেন’ মুক্তির সময় স্পষ্ট কথায় পরিচালক মানসী সিনহা। শম্পালী মৌলিক
কী মনে হচ্ছে, নিজে কি একটা স্বপ্নময় লেনের মধ্য দিয়ে হাঁটছেন?
আমি এখন এমন একটা লেনের মধ্যে দিয়ে হাঁটছি যেখানে পায়ের তলায় অঙ্গার। এবং খুব টেনশন, পেট গুড়গুড় সব হচ্ছে। আগের বার যা হয়েছিল, এবারও একইরকম হচ্ছে। আগের বারও শুভঙ্কর মিত্র (প্রযোজক) যে ভাবে ধমকেছিল, এবারও তাই করছে। সমানে বলছে, ‘সুস্থ থাকো, শান্তিতে থাকো।’
আপনার প্রথম ছবি এবছরেই, ‘এটা আমাদের গল্প’ হিট। চলতি বছরেই আপনার দ্বিতীয় ছবি ‘৫ নং স্বপ্নময় লেন’ রিলিজ করছে ২০ ডিসেম্বর। তবুও বলব এখনও আন্ডারডগ হিসেবেই রয়েছেন। কী বলবেন?
আমার আলাদা করে কিছু বলার নেই। নিজেকে প্রমাণ করতে সময় লাগে। আমরা তো সত্যি নতুন। সেকেন্ড ছবি সবে আসতে চলেছে। ঝুলিতে একটি মাত্র ছবি। মানুষের ভালো লেগেছে। সে অর্থে হিট ছবি হয়তো। একটি হিট ছবি নিয়ে বিশাল বিশাল স্টলওয়ার্টদের সঙ্গে একসঙ্গে নাক গলিয়ে ফেলেছি, এটাই তো একটা ভয়ংকর শক্ত কাজ, যেটা করে ফেলেছি। এইবার বাকিটা দর্শক বলবে।
এই ডিসেম্বরে বড়দিনের আগে বেশ বড় এবং স্টার স্টাডেড কয়েকটা ছবি একসঙ্গে রিলিজ করছে। ছবির ভিড় যাকে বলে। সেই ভিড়ের মধ্যে ‘৫ নং স্বপ্নময় লেন’ আনার পরিকল্পনা কেন করলেন?
দুটো কারণ আছে। প্রথমত, খুব সহজ কথা। আমাদের নিজেদের ছবির ওপর আমাদের ভরসা আছে। দু’নম্বর
কথা হল, যদি লাইনে দাঁড়াতেই হয়, এ গ্রেডের সঙ্গেই কি দাঁড়ানো উচিত নয়? সেটাই তো উচিত। যদি যুদ্ধ করতেই হয়, তাহলে যারা সেরা যোদ্ধাদের সঙ্গেই যুদ্ধটা করা উচিত।
আপনি দীর্ঘদিন অভিনয় করেছেন। পরিচালনায় আসার ইচ্ছেটা কবে থেকে এত তীব্র হল?
এই বাসনা আমার একেবারেই ছিল না। আমি নিজে ভাবতেই পারিনি এই যোগ্যতাটা আমার আছে, যে আমি ছবি বানাতে পারি। মা এই স্বপ্নটা দেখেছিলেন। আমার মা আমাকে বলেছিলেন ‘তুমি পারবে।’ তারপর যখন পাকেচক্রে সিনেমা বানানো হয়েই গেল। মা খুব খুশি হয়েছিলেন। কিন্তু মা তো ছবি দেখে যেতে পারেননি। ওই আর কি, মা তো সন্তানকে চিনতে পেরেছিলেন। বুঝতে পেরেছিলেন যে, মেয়ের অনেক কথা বলার আছে, তার একটা প্ল্যাটফর্ম চাই।
দ্বিতীয় ছবিতেও লিড রোলে অপরাজিতা আঢ্যকে নিয়েছেন। আপনারা দু’জনে পরস্পরের খুব বন্ধু। নিন্দুকেরা বলতে পারে বন্ধুকৃত্য করছেন। কী বলবেন?
আমার এটা দ্বিতীয় ছবি। তার আগে অপরাজিতা আঢ্য কী-কেন-কোথায় সকলে জানেন। কেন আজ অপরাজিতা আঢ্য টপ লেভেলের তিনজন অ্যাক্টরের সঙ্গে একসারিতে উচ্চারিত হন, সেটার জন্য মানসী সিনহার ডিরেকশনের ছবি লাগবে না। অপা নিজস্ব যোগ্যতায় সবটা অর্জন করেছে। মানসী সিনহা যদি অপাকে কোনও ছবিতে কাস্ট করে, এবং অপা যদি সেই চরিত্র করার জন্য ‘হ্যঁা’ বলে, তবে উভয়পক্ষই প্রয়োজনীয়তা আছে বলেই করবেন। বন্ধুত্ব একসঙ্গে কাজ করলেও থাকবে, না করলেও থাকবে। এ ব্যাপারে আমরা দু’জনেই ভীষণ আত্মবিশ্বাসী।
শুনেছি, এই ছবির জন্য অডিশনের মাধ্যমেও অনেক অভিনেতাকে নির্বাচন করেছেন।
হ্যাঁ, ৫১ জন কাজ করছেন অডিশন দিয়ে। এই ছবির মোট কাস্টিং একশো এক জন।
অন্বেষা হাজরা রয়েছেন ছবিতে, যিনি টেলিভিশনের জনপ্রিয় অভিনেত্রী। সেই পপুলারিটির কথা ভেবেই কি ওঁকে নেওয়া?
না, অন্বেষা ভীষণ ভালো অভিনেত্রী। যবে আমি ওর সঙ্গে কাজ করেছি, বা তার আগেও ওকে দেখেছি, আমার মনে হয়েছিল, এই মেয়েটি নায়িকা হওয়ার জন্য জন্মায়নি, অভিনেত্রী হওয়ার জন্য জন্মেছে। ও নিজের একের পর এক কাজে সেটা প্রমাণ করেছে। ও ইন্ডাস্ট্রিতে থাকতে এসেছে। অন্বেষা পায়ের তলায় শিকড় ছড়িয়ে দিয়ে তবে ওপরে মাথা চাড়া দিচ্ছে। ও হাওয়ায় ভেসে যাবে না।
অর্জুন চক্রবর্তীর কাস্টিং কীভাবে?
অন্বেষা আর অর্জুন জুটি এই ছবিতে। অর্জুন খুব গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রয়েছে। আমরা যখন প্রথম বসি কাস্টিং নিয়ে, তখনই মনে হয়েছিল, অর্জুনকে না হলে কি এটা হবে? উই আর অনার্ড যে, অর্জুন এক কথায় হ্য়াঁ বলেছে। কী ডেডিকেটেডলি কাজটা করেছে, প্রোমোশনে অংশ নিচ্ছে। আমরা একটা ছোট হাউস, আমাদের সঙ্গে ওর এতটা না করলেও চলত হয়তো। কিন্তু ও তেমন নয়, কাজের প্রতি অত্যন্ত ডেডিকেটেড।
এটা যৌথ পরিবারের কাহিনি নিয়ে। এককথায় কোন ঘরানার ছবি বলা যায়?
আমি একটা ঘরানায় বিশ্বাস করি, সেটা ভালোবাসা। এই ছবিও ভালোবাসার কথাই বলবে। কিন্তু সেই ভালোবাসা কার প্রতি, সেইটা উহ্য থাক। তার জন্য হল-এ আসা হোক। শুধু এইটুকু বলতে পারি, এই ছবিটা স্বপ্ন বোনার গল্প নয়, এই ছবিটা স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ার। এবং চাইলে যে সেই ভেঙে যাওয়া স্বপ্নকে আবার জুড়ে নেওয়া যায়, সেই চাওয়ার গল্প।
আপনার প্রথম ছবি ‘এটা আমাদের গল্প’ মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ভালোবেসেছিল। অনেকে আশাই করেননি এত লোক দেখবে ছবিটা। কিন্তু একশ্রেণির দর্শক বলেছেন, ছবিটা হিট করলেও খুব চড়া দাগের। কী বলবেন?
আজ অবধি কোনও কাজ নিয়ে একশোভাগ মানুষ কি একমত হয়েছেন? দু-একটা অসাধারণ কাজ ছাড়া। যার যেমন মানসিকতা তাঁর সঙ্গে যদি ম্যাচ না করে, তার বদনাম করবেনই। প্রতিটি নিন্দে বা সমালোচনা আমাদের পাথেয়। সেগুলো সঙ্গে নিয়েই চলব। সমালোচনা হচ্ছে মানেই মানুষ দেখেছেন। ওইটুকুই প্রাপ্তি। না দেখলে তো সমালোচনাও করতে পারতেন না।
পরিচালনার ফলে কি অভিনয় ব্যাকফুটে চলে যাচ্ছে?
অভিনয় ব্যাকফুটে চলে যাচ্ছে না। তবে আমি যতটা মসৃণভাবে দু’দিক ম্যানেজ হবে ভেবেছিলাম, ততটা হচ্ছে না। এই মুহূর্তে পরিচালনায় আনন্দ পাচ্ছি। জি বাংলার ‘মিত্তির বাড়ি’ ধারাবাহিকে অভিনয় করছি এখন। কিন্তু ছবির প্রচারের জন্য এখন একটু কম সময় দিচ্ছি। আবার ছবিটা রিলিজ করে গেলে পুরোদমে ঝাঁপাতে হবে (হাসি)।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.