সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: চলচ্চিত্র জগতে আরও এক নক্ষত্রপতন। সোমবার সকালেই ঘুমের মধ্যেই চিরঘুমে চলে গেলেন অভিনেত্রী ও গায়িকা রুমা গুহঠাকুরতা। ক্যামেরার সামনে এবং পিছনে, দুই জায়গাতেই সমানভাবে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন তিনি। ‘অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি’র যোগেশ্বরী কবিয়ালের চরিত্রে উত্তম কুমারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছিলেন তিনি। ওই ছবিতেই দেবব্রত বিশ্বাসের ছাত্রী রুমা প্লেব্যাকও করছেন। শুধু এই একটি ছবিই নয়, তালিকায় রয়েছে ‘অমৃতকুম্ভের সন্ধানে’, ‘জোড়াদিঘির চৌধুরী পরিবার’, ‘বাঘিনী’, ‘পলাতক’-এর মতো অনেক ছবি। এমন উজ্জ্বল নক্ষত্র বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি খুব কমই পেয়েছে।
[ আরও পড়ুন: নাট্য চরিত্রের মধ্যে ভিন্নতর সত্ত্বা, অন্য আলোয় ‘তিন তস্কর’ ]
মাস তিনেক আগেই পরপারে চলে গিয়েছেন চিন্ময় রায় ও রমেন রায়চৌধুরী। তার একমাস পর সংগীতজগত হারিয়েছে লোকশিল্পী অমর পালকে। এবার রুমা গুহঠাকুরতাও বিদায় নিলেন। বর্ষীয়ান অভিনেত্রীর বিহনে মূহ্যমান টলিউড। বর্তমান নায়ক-নায়িকারা সরাসরি রুমা গুহঠাকুরতার ছত্রছায়ায় কাজ না করলেও অনেকেই জানিয়েছেন, আরও এক অভিভাবককে হারালেন তাঁরা৷
বর্ষীয়ান এই অভিনেত্রীর সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, মাধবী মুখোপাধ্যায়ের মতো শিল্পীর। অজিত লাহিড়ির ‘জোড়াদিঘির চৌধুরী পরিবার’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন সৌমিত্র ও মাধবী। মুখ্য চরিত্রে তাঁরা থাকলেও রুমার চরিত্র ছিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ। টলিপাড়া পুরনো দিনের লোকজনের সঙ্গে গল্প করলে উঠে আসে সেকালের অনেক কথা। শোনা যায়, তখন নাকি কোনও সিনেমার অভিনেতা,অভিনেত্রী এবং অন্যান্য সদস্যরা পরিবারের মতো থাকত। আক্ষরিত অর্থেই পরিবারের মতো। বয়সে বড়রা ছোটদের যেমন স্নেহ করতেন, তেমনই শাসনও করতেন। সুপারস্টার-পার্শ্বচরিত্র বলে কোনও ভেদাভেদ ছিল না।
শোনা যায়, একবার নাকি মাধবী ও রুমার একসঙ্গে শুটিং ডেট পড়েছিল। শুটিং স্পটে স্নানঘরের ব্যবস্থা ছিল না। একপ্রকার বাধ্য হয়েই তাঁদের পুকুরে নামতে হয়েছিল। তখন বড় দিদির মতো মাধবীকে আগলে রেখেছিলেন রুমা গুহঠাকুরতা। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ও অভিনেত্রীর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন। বলেছেন, পুরনো দিনের অনেক কথা মনে পড়ছে তাঁর। পেশার সূত্রেই দু’জনের সম্পর্ক ছিল বন্ধত্বপূর্ণ। তার উপর সত্যজিৎ রায়ের সূত্রে একাধিকবার একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন তাঁরা। ‘অভিযান’, ‘গণশত্রু’ তারই উদাহরণ। বন্ধুবিয়োগে আজ ভেঙে পড়েছেন তিনিও। একইভাবে মূহ্যমান অভিনেত্রী সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ও। তিনি বলছেন,‘‘ একথা সত্যি – ‘জন্মিলে মরিতে হবে’। কিন্তু এমন কাছের মানুষের প্রয়াণ দুঃখ তো দেয়ই।’’
[ আরও পড়ুন: বিদায় বাংলার জনপ্রিয় কল্পবিজ্ঞান কাহিনিকার অদ্রীশ বর্ধন! শোকস্তব্ধ সাহিত্য জগৎ ]
কিশোর কুমারের প্রথম স্ত্রী ছিলেন রুমা। স্ত্রীয়ের হাতের মাখন চিংড়ি আর গোটা মশলা দেওয়া মাংস খেতে ভালবাসতেন কিশোর। রান্না করতে ভালবাসতেন অভিনেত্রী। বাড়িতে ডেকে অনেককে খাইয়েওছেন। মাখন চিংড়ি পদটির স্রষ্টা তিনিই। শোনা যায়, সত্যজিৎ রায় ও বিজয়া রায়েরও নাকি এটি খুব প্রিয় পদ ছিল।আজ অভিনেত্রীর মৃত্যুর খবর পেয়ে তাঁর বাসভবনে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছেন, রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে রুমা গুহঠাকুরতার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.