সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: করোনামুক্ত হয়েছিলেন। নিউমোনিয়াকেও হার মানিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। রবিবার সকালে ৯২ বছর বয়সে প্রয়াত সুর সম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর ( Lata Mangeshkar)।
Singing legend Lata Mangeshkar passes away, says Union Minister Nitin Gadkari pic.twitter.com/S1Rhc63OdI
— ANI (@ANI) February 6, 2022
গত ৮ জানুয়ারি লতা মঙ্গেশকরের করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবর প্রকাশ্যে আসে। পরে জানা যায় কোভিডের (COVID-19) পাশাপাশি নিউমোনিয়াতেও আক্রান্ত কিংবদন্তি গায়িকা। একটানা মুম্বইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন ৯২ বছরের শিল্পী। মাঝে তাঁর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় ভেন্টিলেশন থেকেও সরানো হয়েছিল।কিন্তু শনিবার ফের লতা মঙ্গেশকরের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। আবারও ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয় তাঁকে। আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন চিকিৎসকরা। কিন্তু এদিন থেমে গেল সব লড়াই।
১৯২৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর মধ্যপ্রদেশের ইনদোরের এক সংগীত পরিবারে জন্ম হয় লতা মঙ্গেশকর। বাবা পণ্ডিত দীননাথ মঙ্গেশকর ছিলেন মারাঠি সংগীত জগতের সুবিখ্যাত ধ্রুপদী গায়ক। বাবার থেকেই প্রথম তালিম নেওয়া। মাত্র ১৩ বছর বয়সে একটি সিনেমার জন্য প্রথমবার গান রেকর্ড করলেও, তা পরবর্তী সময়ে ছবি থেকে বাদ পড়ে। ১৯৪৫ সালে মুম্বইয়ে পাড়ি দেন তিনি। তারপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। সেখানে উস্তাদ আমান আলি খানের কাছে ধ্রুপদী সঙ্গীতের তালিম নেন। পরের বছর একটি হিন্দি ছবির জন্য প্লেব্যাকে গান করেন। এরপর বাঙালি প্রযোজক শশধর মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে পরিচয় হয় লতা মঙ্গেশকরের। তাঁর ছবি ‘শহিদ’-এ কাজের সুযোগ পেলেও সরু কণ্ঠের জন্য পছন্দ হয় না সংগীতকারের। ১৯৪৮ সালে ‘মজবুর’ সিনেমায় প্রথম বড় ব্রেক পান লতা। নেপথ্যে সংগীত পরিচালক গুলাম হায়দার। পরবর্তী সময়ে লতা মঙ্গেশকর সাক্ষাৎকারে জানান যে গুলাম হায়দার সত্যিই তাঁর গডফাদার। তিনিই তাঁর মেধার উপর পূর্ণ আস্থা রেখেছিলেন।
১৯৫০ থেকে দীর্ঘ কয়েক দশক ‘কোকিলকণ্ঠী’র গান মুগ্ধ করেছে দেশবাসীকে। আয়েগা আনেওয়ালা, প্যার কিয়া তো ডরনা কেয়া, আল্লা তেরো নাম, কঁহি দীপ জ্বলে – ছয় ও সাতের দশকে এসব গান জনপ্রিয়তার যে শিখর ছুঁয়েছিল, তা আজও অম্লান। বহু বিখ্যাত সংগীত পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছেন সুরসম্রজ্ঞী। এমনকী বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই নিজের তৈরি গান লতা মঙ্গেশকরের কণ্ঠে নতুন করে আবিষ্কার করেছেন। স্বনামধন্য সংগীত পরিচালক এ আর রহমান নয়ের দশকে ‘দিল সে’ ছবিতে তাঁকে দিয়ে গান গাওয়ান। ‘জিয়া জ্বলে’ গানটিতে আজও একক এবং অদ্বিতীয় লতা মঙ্গেশকর। তাঁর সুরে বুঁদ গোটা দেশ।
জীবনভর মনপ্রাণ দিয়ে সুরসাধনার পুরস্কারও তিনি কম পাননি। বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা ছাড়াও ঝুলিতে এসেছে সিনে অ্যাওয়ার্ড অফ লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট থেকে শুরু করে পদ্মভূষণ, পদ্মবিভূষণ, দাদাসাহেব ফালকে, ফিল্মফেয়ার লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট, ভারত রত্ন-সহ একাধিক সম্মান। বছর কয়েক ধরে ধীরে ধীরে জনসমক্ষে ফিকে হচ্ছিল লতা মঙ্গেশকরের কণ্ঠ। অসুস্থতার জন্য খুব বেশি কাজ করতে পারতেন না। তবে উরিতে ভারতীয় জওয়ানদের সাফল্য কিংবা পরবর্তী সময়ে দেশে তোলপাড় ফেলে দেওয়া বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে ছোট করেই দিয়েছেন সুরেলা বার্তা।
শ্বাসকষ্টের জেরে গুরুতর অসুস্থ হয়ে মুম্বইয়ের বিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ভরতি করা হয় তাঁকে। প্রাথমিক সংকট কাটিয়ে কিছুটা স্থিতিশীল হলেও চিকিৎসকরা তাঁকে পর্যবেক্ষণে রাখেন। পরে তাঁকে ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়েছিল। জীবনদীপ নিভে যাওয়ার আগে পর্যন্ত সুরসম্রাজ্ঞী সেখানেই ছিলেন। ভারতীয় সংগীতের এক বিশেষ অধ্যায়ের শেষ পাতাটি রচিত হয়ে গেল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.