ইন্দ্রনীল শুক্লা: শেষ হল আট দিন ব্যাপী কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। তবে কলকাতার চলচ্চিত্র উৎসব কেন সত্যিকারের একটি আন্তর্জাতিক উৎসব তা ফের প্রমাণিত হল বৃহস্পতিবার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে। বিশ্বে সর্বাধিক আলোচিত দুটি বিষয় হিজাব বিরোধী আন্দোলন আর আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ ফুটবল জয় উঠে এল রবীন্দ্র সদনের মঞ্চে। একদিকে মঞ্চে দাঁড়িয়ে ইরানের মহিলা পরিচালক নাহিদ হাসানজাদে জানিয়ে দিলেন তিনি ইরানে লড়তে থাকা মহিলাদের পাশে আছেন, অন্যদিকে আর্জেন্টিনার পরিচালক ভিরনা মলিনা দেশের নীল-সাদা জার্সি পরে মঞ্চে উঠে বার্তা দিতে চাইলেন দেশের জয়ে তিনি কতখানি আপ্লুত। মধ্যপ্রাচ্যের এক নারী এবং লাতিন আমেরিকার এক নারীর এই আবেগে ভেসে হর্ষধ্বনি করলেন উপস্থিত কলকাতার আবেগীপ্রবণ মানুষ।
এদিনের অনুষ্ঠান শুরু হয় পুরুলিয়ার ছৌ নাচ দিয়ে। ছৌ নাচের মধ্যস্থতায় অসুর দলনী মা দুর্গার উপস্থিতি আরও একবার মনে করিয়ে দেবেই ইউনেস্কো স্বীকৃতি। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন অরূপ বিশ্বাস, ইন্দ্রনীল সেন, শান্তনু বসু, রাজ চক্রবর্তী, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী, অরিন্দম শীল, হরনাথ চক্রবর্তী, জুন মালিয়া, পাওলি দাম, তনুশ্রী চক্রবর্তী, সায়ন্তিকা ব্যানার্জি, ঈশা সাহা প্রমুখ। মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বলেন, ‘বিশ্বের কোনও চলচ্চিত্র উৎসবে ২৫ হাজার মানুষের উপস্থিতি বিশ্ব রেকর্ডের তালিকায় জায়গা করে নেওয়ার মতো ঘটনা।’
গোল্ডেন রয্যাল বেঙ্গল টাইগার সেরা ছবির যুগ্ম পুরস্কার পেয়েছে বাংলাদেশের ছবি ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ এবং স্পেনের ছবি ‘আপঅন কান্ট্রি’। পুরস্কার মূল্য ৫১ লক্ষ টাকা। আন্তর্জাতিক ইনোভেশন ইন মুভিং ইমেজ বিভাগে আর্জেন্টিনার সায়লেন্ট গ্লোরি ছবিটির জন্য সেরা পরিচালকের পুরস্কার নিতেই নীল-সাদা জার্সি পরে মঞ্চে ওঠেন ভিরনা মলিনা। একই বিভাগে জুরি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন ইরানের সাইলেন্ট গ্লোরি ছবির পরিচালক নাহিদ হাসানজাদে। পুরস্কার মূল্য ২১ লক্ষ টাকা। এদিকে হীরালাল সেন মোমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে ইন্দ্রানী পরিচালিত ‘ছাদ’।
বাংলাদেশের পরিচালক মুহাম্মদ কাইউম রীতিমতো আপ্লুত পুরস্কার পেয়ে। তাঁর ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ ছবিতে বাংলাদেশী প্রান্তিক মানুষের অজানা অচেনা জগৎ সম্পর্কে একটা সার্বিক ধারণা পেয়েছেন এপার বাংলার মানুষ। তাছাড়া ছবির উৎকর্ষতা আকর্ষণের কারণ বটেই। এখানে পরিচালক একটি হাওড় বা লো-ল্যান্ডে কাজের খোঁজে এসে পড়া এক পরিযায়ী শ্রমিকের গল্প শুনিয়েছেন। এখানে ৬ মাস অতি বৃষ্টির কারণে বিস্তীর্ণ এলাকা জলের তলায় চলে যায়, তবে জল সরে যাওয়ার পর উর্বর মাটিতে বিপুল ধান উৎপাদন হয়। কিন্তু, বাকি ৬ মাস কার্যত দ্বীপের মতো করে এক জায়গায় বসে থাকতে হয়। এখানকার মানুষেরই জীবন উঠে এসেছে ছবিতে। আর আর্জেন্টিনার ফুটবল টিমের প্রতি কলকাতার মানুষের ভালোবাসা রীতিমতো অবাক করে দিয়েছে ভিরনা মলিনাকে। কলকাতার মানুষের বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহার মুগ্ধ করেছে ইরানের পরিচালক নাহিদকে। জানালেন, ‘আমার কয়েক জন বন্ধু আন্দোলনে আহত হয়েছেন।’ এভাবেই চলচ্চিত্র উৎসবে বাকি বিশ্বের সঙ্গে মিশে গেল কলকাতা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.