সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বেঁচে থাকলে তাঁর বয়স হত ৫৪। কিন্তু অনুরাগীদের কাঁদিয়ে গত ৩১ মে অকালেই চলে গেলেন জনপ্রিয় গায়ক কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ ওরফে কেকে। কেকের আজ জন্মদিন। গায়ককে হারিয়ে অনুরাগীরা এখন তাঁর স্মৃতিকেই সঙ্গী করেছেন। ঠিক যেমন কেকের স্ত্রী জ্যোতি কৃষ্ণা। কেকের জন্মদিনে ইনস্টাগ্রামে এক পুরনো ছবি শেয়ার করে জ্যোতি লিখলেন তাঁর মনের কথা।
জ্যোতি যে ছবিটি পোস্ট করেছেন, সেখানে দেখা গিয়েছে বেশ অন্তরঙ্গ অবস্থায় বসে আছেন কেকে ও তাঁর স্ত্রী জ্যোতি। সেই ছবির ক্যাপশনে জ্যোতি লিখলেন, ”হ্যাপি বার্থডে সুইটহার্ট। তোমাকে ভালবাসি, তোমাকে খুব মিস করছি। খুব বেদনাদায়ক এটা।”
কেকে। পুরো নাম কৃষ্ণকুমার কুন্নথ। বয়স হয়েছিল মাত্র ৫৩। যিনি গেয়েছিলেন, ‘হাম রহে ইয়া না রহে ইয়াদ আয়েঙ্গে ইয়ে পল’। সেই গানে মুহূর্তের যে উদযাপন, সেটাই হয়ে রইল তাঁর এপিটাফ। নজরুল মঞ্চে এই গানই যে ছিল তাঁর শেষ নিবেদন। কী অদ্ভুত সমাপতন!
১৯৬৮ সালে দিল্লিতে জন্ম কেকে’র। শুরুটা খুব মসৃণ ছিল না তাঁর। বলিউডে প্লেব্যাকের সুযোগ মোটেই সহজে আসেনি। হিন্দি সিনেমায় গান গাওয়ার আগে প্রায় সাড়ে তিন হাজার বিজ্ঞাপনের জিঙ্গল গেয়েছেন। একসময় মার্কেটিংয়ের কাজও সামলেছেন। প্লেব্যাকের প্রথম সুযোগ বিশাল ভরদ্বাজের সঙ্গে। ‘ছোড় আয়ে হাম উও গঁলিয়া’। সেখানে অবশ্য অনেকের সঙ্গে গলা মেলানো।
The Magical KK
Happy Birthday https://t.co/VFwMPT8lJo— rjshashankredfm (@rjshashankredfm) August 23, 2022
প্রকৃত অর্থে তাঁর জয়যাত্রা শুরু হয় ‘হাম দিল দে চুকে সনম’ ছবির ‘তড়প তড়প কে’ গানের মাধ্যমে। ওটাই কেকে’র প্রথম সোলো প্লেব্যাক। আর তাতেই কী অব্যর্থ লক্ষ্যভেদ! ১৯৯৯ সালে প্রকাশিত হয় ‘পল’ অ্যালবামটিও। আটের দশকে যাঁদের জন্ম, তাঁদের কৈশোর অথবা তারুণ্যের প্রথম দিকের সময় সেটা। ‘পল’ গানটি ছাড়াও ‘ইয়ারো’ গানটি সেই সময় স্কুলের টিফিনবেলা থেকে কলেজ ক্যান্টিনে একরকম লুপে গাওয়া হত। প্রেম, বিষাদ, বন্ধুত্বের আশ্চর্য মিশেলে এই গান সহজেই স্পর্শ করেছিল তরুণ, তরুণীদের হৃদয়। এরপর ক্রমেই দীর্ঘ হয়েছে কেকে’র গাওয়া স্মরণীয় গানের সংখ্যা। ‘রোগ’ (২০০৫), ‘গ্যাংস্টার’ (২০০৬), ‘উও লমহে’ (২০০৬), ‘ওম শান্তি ওম’ (২০০৭), ‘লাইফ ইন এ মেট্রো’ (২০০৭) থেকে শুরু করে ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ (২০১৪),’বজরঙ্গি ভাইজান’ (২০১৫)… তালিকা বিরাট। এই সব ছবিতে একাধিক হোক বা স্রেফ একটি গান- কেকে’কে তাঁর কবজির মোচড়ে বল ফেলেছেন গ্যালারিতেই।
happy birthday ❤️#KK #kkforever pic.twitter.com/nI3tBWHFRa
— Akshat Verma (@_vermaakshat_) August 23, 2022
আসলে গান তো অনেকেই করেন। সুর, তাল, লয়ের নিখুঁত প্রয়োগে মুগ্ধও করে ফেলেন। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে যাঁরা থেকে যান হৃদয়ের কাছাকাছি, তাঁদের সমীকরণ আসলে অন্য। তাঁরা হয়ে ওঠেন ‘ব্যক্তিগত’ সঙ্গী। কেকে ছিলেন তেমনই একজন। তাঁর মৃত্যুর খবর তাই যেন কোনও নিকট বন্ধুর প্রয়াণ সংবাদের মতো বুক কাঁপিয়ে দেয়।
Happy birthday @K_K_Pal Sir.
We miss you always 😥😌#Legend #KK #birthday pic.twitter.com/9gcixDMoht— Jintu Moni Barman (@MoniBarmanJintu) August 23, 2022
কুমার শানু, উদিত নারায়ণরা যখন বলিউড কাঁপাচ্ছেন, সেই সময় কেকে’র উত্থানের পিছনে আসলে মূল ফ্যাক্টর ছিল তাঁর গলার তারুণ্য ও ব্যতিক্রমী মেজাজ। সেটাই তাঁকে আলাদা করে চিনিয়ে দিয়েছিল। শান কিংবা সোনু নিগমের মতোই নতুন প্রজন্ম সেই কণ্ঠস্বরেও খুঁজে পেয়েছিল নিজেদের সময়ের স্পন্দন। ‘ইয়ারো’ যেমন বলে বন্ধুত্বের কথা, তেমনই ‘তু হি মেরি শব হ্যায়’ গানে প্রেমের সোচ্চার ঘোষণা। আবার ‘সচ কহে রাহা হ্যায়’ গানে প্রেম ভাঙার যন্ত্রণা। ‘তড়প তড়প কে’ গানে সেই ভগ্ন হৃদয়ের আরও মর্মান্তিক এক ট্র্যাজেডির সুর। কৈশোর, তারুণ্যের প্রায় সব আবেগই ধরা পড়েছিল তাঁর গানে। বন্ধুদের সঙ্গে দল বেঁধে হোক কিংবা একলা ছাদের নির্জনতায়, সেই সব গানের আবেদন রয়ে গিয়েছে অমোঘ মাইলফলক হয়ে। কত স্মৃতি, হারিয়ে ফেলা জড়িয়ে মড়িয়ে রয়ে গিয়েছে আজও। তাই এই ২০২২ সালেও হঠাৎই ইউটিউবে লুপে বাজতে শুরু করে দেয় এরই কোনও একটা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.