সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বাদল অধিবেশনের আগে শব্দ ‘ফতোয়া’ জারি হয়েছে সংসদে (Parliament)। একগুচ্ছ শব্দতালিকা প্রকাশ করেছে লোকসভার সচিবালয়। আর বলা যাবে না ‘লজ্জাজনক’, ‘নির্যাতন’, ‘বিশ্বাসঘাতকতা’, ‘নাটক’, ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’, ‘অযোগ্য’, ‘ভণ্ডামি’র মতো শব্দ। কেন? কারণ মোদি সরকারের সচিবালয়ের মতে এগুলি ‘অসংসদীয়’ শব্দ। এই ঘটনায় একযোগে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। কংগ্রেস (Congress) থেকে তৃণমূল (TMC) সকলেরই বক্তব্য, আদতে বিরোধী কণ্ঠরোধ করাই সরকারের উদ্দেশ্য। আর এবার এই নিয়ে মুখ খুললেন কমল হাসান। সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে হিটলার বলে কটাক্ষ করলেন কমল। কমল হাসানের দল ‘মক্কল নিধি মাইয়ামে’র পক্ষ থেকে টুইটারে কমল হাসানের ছবি পোস্ট করে গোটা ঘটনার বিরোধিতাও করা হয়েছে। এই পোস্টারেই লেখা হয়েছে, ”মিস্টার হিটলার, এটা জার্মানি নয়, আপনি কি রাজতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে চলেছেন?”
উল্লেখ্য, এই বিষয়ে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) বলেন, “এই ঘটনা একনায়কতন্ত্রের চূড়ান্ত। ‘দুর্নীতি’, ‘লজ্জিত’ বলতে পারব না। সরকার যে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ করছে, তা বলতে পারব না। ওরা ঠিক করে দেবে আমরা কী বলব, কী খাব, কীভাবে পুজো করব। সবরকম নিদান দিচ্ছে বিজেপি সরকার। এর প্রতিবাদের ভাষা আমার জানা নেই। ওরাই যদি সব ঠিক করে দেয়, তাহলে আর নির্বাচন করে লাভ কী! তাহলে সংসদ ভবন রেখেই বা লাভ কী! ব্রিটিশ আমলে ভারতের মানুষ এতখানি পরাধীন ছিল না।” মুখ খুলেছেন তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষও। তিনি বলেন, “বিজেপি গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ করতে চাইছে। বক্তৃতাকেও ভয় পাচ্ছে।”
এই বিষয়ে সরব হয়েছেন তৃণমূল (TMC) সাংসদ ডেরেক ও ব্রায়েন (Derek O’Brien )। তিনি সচিবালয়ের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে বলেন, আমি ‘মৌলিক’ শব্দ ব্যবহার করব। আমাকে সাসপেন্ড করুন। গণতন্ত্রের জন্য লড়ব। ডেরেক টুইট করেন, “ক’দিনের মধ্যে সংসদের অধিবেশন শুরু হবে। সাংসদদের উপরে হাস্যকর নির্দেশিকা জারি হল। আমরা এখন থেকে নিজেদের বক্তব্য পেশ করার সময় ‘মৌলিক’ শব্দগুলি ব্যবহার করতে পারব না। যেমন, লজ্জাজনক, বিশ্বাসঘাতকতা, দুর্নীতিগ্রস্ত, কপটতা, অযোগ্য। আমি এই শব্দগুলি ব্যবহার করব। সাসপেন্ড করুন। গণতন্ত্রের জন্য লড়ব।”
মোদি সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় গর্জে উঠছেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র (Mahua Moitra)। কেন্দ্রের নির্দেশিকাকে কটাক্ষ করে লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার মীরা কুমারের ভঙ্গিতে টুইটারে মহুয়া লেখেন, “বৈঠ যাইয়ে, বৈঠ জাইয়ে… প্রেম সে বোলিয়ে।” আসলে একসময় এভাবেই উত্তেজিত সাংসদদের শান্ত করতেন মীরা কুমার। মহুয়া আরও লেখন, “লোকসভা ও রাজ্যসভায় নতুন অসংসদীয় শব্দের তালিকায় নেই সঙ্ঘি। আসলে কীভাবে ভারতকে ধ্বংস করছে বিজেপি, তার ব্যখ্যা দিতে গিয়ে বিরোধীরা যে শব্দ ব্যবহার করত, তা নিষিদ্ধ করেছে সরকার।”
একই বিষয়ে কটাক্ষ করে টুইট করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও (Rahul Gadhi)। যেন বা একটি অভিধানের পাতাই টুইট করেছেন তিনি! সেই পাতায় একটিই শব্দ ‘আনপার্লামেন্টারি’ (Unparliamentary) বা ‘অসংসদীয়’। এরপর বিশেষণটিকে ব্যাখ্যা করা হয়- কীভাবে প্রধানমন্ত্রী সরকার চালাচ্ছেন, তা সঠিকভাবে বর্ণনা করা হয়েছে এই শব্দ দিয়ে। এবার তা বলার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি হল। অভিধানের কায়দাতেই নীচে অসংসদীয় শব্দের ব্যবহারের উদাহরণ দেওয়া হয়। সেটি হল- জুমলাজিভি তানাশা লোকটা যখন মিথ্যে বলে এবং তাঁর অর্মণ্যতা প্রকাশ্যে আসে তখন সে কুম্ভীরাশ্রু ফেলে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.