শম্পালী মৌলিক: ক্রীড়া সাংবাদিক দুলাল দে-র পরিচালনায় ‘অরণ্য’র প্রাচীন প্রবাদ’ (Aranyer Prachin Probad) আসছে ৫ জুলাই। এই ছবির মাধ্যমেই বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে এক নতুন গোয়েন্দা অবতীর্ণ হচ্ছে। মলাটচরিত্রে জীতু কামাল। অনেকদিন পর এমন ছবি আসছে যেখানে প্রধান মুখ জীতু (Jeetu Kamal)। টেনশন রয়েছে? জিজ্ঞেস করতেই অভিনেতা স্মিত হেসে মাথা নাড়লেন, ‘না, না আমার কখনও খুব টেনশন হয় না। খুব শান্ত থাকি। ছবি কেন, যখন ক্রিকেট খেলতে যাই তখনও টেনশন করি না। এখনও ব্যাট হাতে ওপেন করতে নামি স্ট্রেস ফ্রি হয়েই। মনে করি, যদি হোমওয়ার্ক ঠিক হয়, তাহলে পরীক্ষার হল-এ গিয়ে টেনশন করার মানে হয় না। যখন প্রথম স্ক্রিপ্ট পাই তখন টেনশন হয়। বা এই ইন্টারভিউ দেওয়ার সময়, বা যখন প্রোমোশনে বেরব, যে আমার প্রস্তুতি ঠিক আছে কি না? গলা, উচ্চারণ পারফেক্ট তো, এইরকম।’ এই ছবিটা ব্যাট হাতে ওপেন করতে নামার মতোই রোমাঞ্চকর, কারণ গোয়েন্দা হিসাবে আপনি প্রথম আসছেন। তাই না? ‘এই ছবিটা স্পেশাল সেই কারণে। অনেক গোয়েন্দা রয়েছে, তার মধে্য নতুন গোয়েন্দা হিসাবে নিজের আত্মপ্রকাশ তার একটা আলাদা গুরুত্ব রয়েছে আমার কাছে।’ বাংলা সাহিত্য-সিনেমায় গোয়েন্দার অভাব নেই। সেখানে আরও একজন গোয়েন্দা ‘অরণ্য চ্যাটার্জি’। আপনি আত্মবিশ্বাসী? জীতু বলছেন, ‘প্রচণ্ড। কারণ, এই কাজটা পুরো আলাদা। এ গোয়েন্দাই নয়। ৫ জুলাইয়ের পর গোয়েন্দার প্রতিষ্ঠা হবে। শেষ দৃশ্যে গিয়ে সে ভাববে, আমি গোয়েন্দা হয়ে গেলাম! ফেলুদার গল্পে যেমন, প্রথমে শখে গোয়েন্দাগিরি করে ফেলেছিল। তার পর সেটাই প্রধান হয়ে দাঁড়ায়।’
ব্যোমকেশ, ফেলুদা, সোনাদা, একেনবাবু, শবর, মিতিন, সুব্রত, কিরীটি– এদের পরেও একজন নতুন রহস্যসন্ধানী কী দেবে? ‘যে হারে আমাদের সমাজে ক্রাইম বাড়ছে, আরও কিছু গোয়েন্দা হলে ভালো হয় (হাসি)। এই ছবি, এই চরিত্র একটা ফ্রেশনেস দেবে। ট্রেলার দেখে সকলে, এমনকী সিনিয়র অভিনেতা-অভিনেত্রীরাও বলেছেন যে ফ্রেশ লাগছে, তঁারা ছবিটা দেখতে আগ্রহী। দ্বিতীয়ত, নতুন পরিচালক দুলাল দে, তাঁর প্রথম চিত্রনাট্য। সেটা মনে হয় মানুষের কাছে বাড়তি উদ্দীপনা তৈরি করতে পারে।’ আশাবাদী শোনায় জীতু কামালকে। ছবির সংলাপে ওয়াটসন ও অজিতের প্রসঙ্গ রয়েছে অরণ্য আর সুদর্শনের কথোপকথনে। যেটা বেশ ইন্টারেস্টিং, মনে করিয়ে দেয় শার্লক ও ব্যোমকেশের কথা।
২০২২-এ বড়পর্দায় ‘অপরাজিত’ জীতু কামালের টার্নিং পয়েন্ট। তারপরে একটা দুটো ছবির জন্য তাঁর কাজ নিয়ে কথা হয়েছে ঠিকই, তবে কাজের চেয়ে ব্যক্তিগত জীবনের কারণে অভিনেতা বেশি চর্চায় এসেছেন। সেটা কি জীতুকে বিরক্তি বা অস্বস্তিতে রেখেছিল? উত্তরে বলছেন, ‘তার চেয়েও বেশি বলব মন খারাপ হয়ে যাচ্ছিল। আমাকে মানুষ সবসময় কাজ নিয়েই দেখেছে, মজা করতে দেখেছে। তার বাইরে এমন একটা অনভিপ্রেত জিনিস নিয়ে আলোচনা চলল। যে ঘটনা হয়তো আগেও কারও সঙ্গে ঘটেছে, এটা আমি দেখতে চাইনি। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে, প্রতিষ্ঠিত অভিনেতাদের সঙ্গেও এমন ঘটনা অহরহ ঘটছে। কিন্তু তাদের চেয়েও বেশি আমাদের নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কারণ আমাদের দুজনকে (জীতু-নবনীতা) একসঙ্গে দেখতে এবং মেনে নিতে মানুষের খুব ভালো লেগেছিল। কারণ, আমাদের কেমিস্ট্রি। সেটা নিয়ে আর কী করা যাবে। বারবার আলোচনা হলে খারাপ লাগে। খুব যে ডিস্টার্বড হয়ে যাই, এমন নয়।’ সোশাল মিডিয়ায় বেশিরভাগ তারকাদের জীবন খোলা পাতার মতো ফলে, মানুষের আগ্রহ তো থাকবেই। সেই প্রসঙ্গে জীতু অকপট– ‘হঁ্যা, তাদের উৎসাহে কমতি থাকলে, আমাদের তারকা কেন বলবে। যদিও আমি নিজেকে তারকা মনে করি না। কিছু পোর্টাল আর একটু দায়িত্বশীল হলে ভালো হয় আমার মনে হয়। খবর আর শিরোনামে সাযুজ্য থাকলে ভালো। পাঠক-দর্শকও এতে বিব্রত হবেন না।’
ছবির প্রসঙ্গে ফেরা যাক। পরিচালক দুলাল দে আদতে ক্রীড়া সাংবাদিক, তাঁর প্রস্তাবে রাজি হয়েছিলেন কেন? ‘সে আমাকে অন্য গল্প নিয়ে আগেও প্রস্তাব দিয়েছিল। তখন খুব উৎসাহ পাইনি। সেপ্টেম্বরে লাস্ট আমি কাজ করেছিলাম। প্রায় নয় মাস আমি বসে। কাজের প্রস্তাব আসেনি এমন নয়। একটু অন্যরকম কাজের আশায় বসে ছিলাম। এই স্ক্রিপ্টটায় আগ্রহ জন্মায়। গোয়েন্দা, কিন্তু শুরু থেকে তার আচরণ গোয়েন্দাসুলভ নয়। প্রথম থেকেই কেসের পিছনে ছুটছে তা নয়। বড় গোয়েন্দার গল্পের প্রস্তাবও এসেছিল, আমি নিইনি। ফেলুদা নয় কিন্তু। এটা ভালো লেগেছে বলেই নিয়েছি। আর প্রতে্যকে গুণি শিল্পী (শিলাজিৎ, মিথিলা, সুহোত্র, লোকনাথ, সায়ন), সকলের সঙ্গে কাজ করতে ভালোও লেগেছে। আর বেশ সহজ-সরল গল্প, ভালোলাগার এটাও একটা কারণ।” ডিটেক্টিভ থ্রিলার ‘অরণ্য’র প্রাচীন প্রবাদ’ মুক্তি পাওয়া ছাড়াও জীতু কামালের আরও কিছু রিলিজ পেন্ডিং। সেগুলোর অপেক্ষায় অভিনেতা। কাজ তো হচ্ছে, আর প্রেম? অপেক্ষা নেই? ‘না, ওটার সময় এখন নয়। সেপ্টেম্বর থেকে কাজই ছিল না (জোরে হাসি)।’ বললেন জীতু।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.