বলিউডে প্রায় দশ বছর আগে আত্মপ্রকাশ ‘পাতাল লোক’-এর নায়ক জয়দীপ আলাওয়াতের। ২০১০ সালে তাঁর আত্মপ্রকাশ অক্ষয় কুমার অভিনীত ‘খাট্টা মিঠা ‘ ছবিতে। হরিয়ানার খারকারা গ্রামের জাট পরিবারে জন্ম এই অভিনেতার। সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে চেয়েছিলেন, হয়ে গেলেন অভিনেতা। অনুরাগ কাশ্যপের ছবি ‘গ্যাংস ওফ ওয়াসিপুর পার্ট ওয়ান’-এ শাহিদ খানের চরিত্রে নজর কাড়েন তিনি। ‘পাতাল লোক’-এর পর এখন সবার মুখেই তার প্রশংসা। সংবাদ প্রতিদিনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বললেন জয়দীপ আলাওয়াত। শুনলেন বিদিশা চট্টোপাধ্যায়।
‘খাট্টা মিঠা’র প্রায় দশ বছর পর এই রকম গুরুত্বপূর্ণ লিড রোলে অভিনয় করার সুযোগ পেলেন। মনে হয় না একটু বেশি দেরি হল এই সুযোগ পেতে?
জয়দীপ: কখনও কখনও মনে হয় দেরি হল এই সুযোগ পেতে। কিন্তু আমার সব সময় মনে হয় এইভাবে ভাবা উচিত নয়। দেখতে গেলে সব অভিনেতারই মনে হয় আরও আগে সুযোগ পেলে ভালো হত। এই মনে হওয়ার কোনও শেষ নেই। আগে পাইনি তো কী হয়েছে? এখন তো পেয়েছি। সেটাই বা কম কী! আর সব সময়ই কোনও না কোনও ছোট-বড় সুযোগ আসতেই থাকে। তবে হাতিরাম চৌধুরির রোলটা যেহেতু বেশ বড় এবং দারুনভাবে লেখা, তাই সবাই এটা নিয়ে কথা বলছে।
শুনেছি আপনি সেনাতে যোগ দিতে চেয়েছিলেন? অভিনয় তো একেবারে অন্য ধারার পেশা।
জয়দীপ: না না। খুব আলাদা কিছু নয়। দুটো পেশাতেই অধ্যবসায় এবং শৃঙ্খলাবোধ খুব গুরত্বপূর্ণ। হ্যাঁ, ওটা সত্যি জীবন আর এখানে আমাকে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করতে হয়। কিন্তু সব প্রফেশনে একাগ্রতা, পরিশ্রম এবং ফোকাস লাগে।
কিন্তু একটা থেকে আর একটাতে গেলেন কীভাবে?
জয়দীপ: যখন আর্মি জয়েন করা হল না তখন ভাবলাম অন্য কিছু করি। থিয়েটারে যোগ দিই। দুই-তিন বছর থিয়েটার করার পর আর অন্য কিছু করতে ইচ্ছেই করল না। এটা করতেই সবচেয়ে আনন্দ পেতাম। আর অন্য চাকরি করার কথা ভাবতেই পারলাম না। তারপর FTII-এ এসে রীতিমত ডিগ্রি নিয়ে মুম্বই এলাম।
আপনি বেশিরভাগ নেগেটিভ চরিত্রে অভিনয় করেছেন। কিন্তু ‘লাস্ট স্টোরিজ’-এ মণীশা কৈরালার প্রেমিকের চরিত্রে একেবারে অন্য জয়দীপকে পাওয়া যায়। দিবাকর বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে সেই ছবিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?
জয়দীপ: বোধহয় প্রথমবার আমাকে কেউ এমন একটা চরিত্র অফার করেছিল যেখানে প্রেমের একটা অ্যাঙ্গেল রয়েছে। এবং এমন একটা চরিত্র যে ভালনারেবল। ধরা পড়ার ভয়ে আছে সর্বক্ষণ। আধ ঘণ্টার ছবি। বেশি সুযোগ পাইনি। ছয়-সাত দিনে শুটিং হয়েছিল। তবে দারুন কাজের অভিজ্ঞতা। দিবাকর এমন একজন পরিচালক যে খুব ডিটেলে, প্রচণ্ড খেটে কাজটা করে। আমাদের দিয়ে থিয়েটার ওয়ার্কশপ করিয়েছিল। যেহেতু অল্প স্ক্রিন টাইমে সবটা বোঝাতে হবে, তাই এই চরিত্রে অভিনয় করার অভিজ্ঞতা একেবারে আলাদা।
‘পাতাল লোক’-এ হাতিরাম চৌধুরির চরিত্রে অভিনয় করার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কোনটা?
জয়দীপ: হাতিরাম অনেক ধরণের ইমোশনের মধ্যে দিয়ে যায়। এই ক্রমাগত বদলে যাওয়া ইমোশন, পর্দায় ফুটিয়ে তোলা সব সময় চ্যালেঞ্জের। কারণ চরিত্রের জীবনে এবং মননে যে পরিবর্তন ঘটছে, সেটা ভিতরে ফিল করতে হয়। অভিনেতাও যেন সেইসব পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে থাকে। আর সেটাকেই পর্দায় ফুটিয়ে তুলতে হয়। সূক্ষ জিনিসগুলো বের করে আনতে হয়। পিতৃতান্ত্রিক সমাজের অংশ হয়েও হাতিরাম নিজে সেটা প্র্যাটকটিস করতে চায় না। ঠিক এবং ভুলের ধারণাটা তার মধ্যে খুব জোরালো। বউয়ের গায় হাত তুললে সে জানে ভুল করেছে। তাই পরে যখন তার স্ত্রী থাপ্পড় মারে, চুপ থেকে যেন নিজের ভুলটাই স্বীকার করে।
‘পাতাল লোক’-এ আমরা দেখি, সিস্টেম না বদলালেও মানুষের জীবন বদলে যায়..
জয়দীপ: হ্যাঁ, অনেক মানুষেরই জীবন বদলায় ‘পাতাল লোক’-এ। বাইরে থেকে বোঝা না গেলেও, ভিতরে বদলে যায়। আমরা সবাই এই সিস্টেমের অংশ। এটা ব্যক্তির ওপর নির্ভর করবে যে সে জীবনের কোন মোড় বেছে নেবে। চয়েস সবার কাছেই থাকে। প্রতিটা মানুষ তার চয়েস অনুযায়ী প্রায়োরিটি ঠিক করে। উই পিক অ্যান্ড চুজ।
আপনিও জীবনে তেমন কোনও চয়েস করেছেন?
জয়দীপ: কোন চয়েসের কথা বলছেন জানি না। তবে এই যে আমার তিনকূলে অভিনয় জগতে কেউ আসেনি, মুম্বইয়ে কোনও চেনা পরিচিত ছাড়াই ঠিক করেছিলাম যে অভিনয়টাই করব, সেটা তো একটা চয়েস। সব কিছুই খুব অনিশ্চিত ছিল। এই অনিশ্চয়তা সবাই ভয় পায়। তবু ঠিক করেছিলাম যেটা ভাল লাগে সেটাই করব। আই টুক দ্যাট চান্স।
শুনেছি ‘পাতাল লোক’ সিজন টু আসতে পারে?
জয়দীপ: আমিও নিশ্চিত করে জানি না। তবে শুনেছি আসতে পারে। অনুষ্কা শর্মা একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন এমন সম্ভাবনার কথা। আমি এইটুকুই বলতে পারি আমি রেডি।
কলকাতায় এসেছেন কখনও?
জয়দীপ: বেদব্রত পাইনের ছবি ‘চিটাগং’-এর শুটিংয়ে কলকাতায় এসেছিলাম। বেশ কিছুদিন ছিলাম।
আর বাংলা ছবি দেখেন?
জয়দীপ: FTII-এ অনেক বাঙালি বন্ধু আছে। সেই সময় ঋত্বিক ঘটকের ‘মেঘে ঢাকা তারা’ আমার খুব মনে ধরেছিল। আমার নিজের বাংলা ছবির কালেকশনে ঋত্বিক ঘটকের বেশ কিছু ছবি আছে। সত্যজিৎ রায়ের ছবিও আছে।
নতুন কী কাজ করছেন?
জয়দীপ: ‘খালি পিলি’ নামের এই ছবি রেডি আছে। এছাড়া ‘নেটফ্লিক্স’-এর জন্য একটা ছবি করছি। চারটে ছবি, চারজন পরিচালক। আমার ছবির পরিচালক হলেন শশাঙ্ক খৈতান। আমার সঙ্গে অভিনয় করেছেন ফাতিমা সানা শেখ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.