সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বড় অকালে চলে গেলেন ইরফান খান। ভারতীয় সিনেমা তো বটেই, বিশ্বের সিনেমাকেও তাঁর অনেক কিছু দেওয়ার ছিল। তিনি এমন একজন অভিনেতা যাঁকে জওহরলাল নেহেরুর চরিত্রে অভিনয়ের অফার দেওয়া হয়েছিল। সম্প্রতি এই খবর প্রকাশ্যে এসেছে। জানা গিয়েছে, ব্রিটিশ পরিচালক জো রাইট (অনুষ্কা শঙ্করের স্বামী) ইরফানকের কাছে এমনই একটি অফার নিয়ে এসেছিলেন। অ্যালেক্স ভন টুনজেলম্যানের বইয়ের উপর ভিত্তি করে ‘ইন্ডিয়ান সামার’ নামে একটি ছবি বানাতে চাইছিলেন তিনি। সেখানেই নেহেরুর চরিত্রে অভিনয় করার জন্য ইরফানকে প্রস্তাব দেন। ইরফানও রাজি হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ছবিটি স্থগিত হয়ে যায়। এর জন্য আক্ষেপও ছিল অভিনেতার।
নেহেরু এবং এডউইনা মাউন্টব্যাটেনের মধ্যে যে সম্পর্কের কথা শোনা যায়, তার উপর ভিত্তি করেই তৈরি হওয়ার কথা ছিল ছবিটির। লেডি মাউন্টব্যাটেন চরিত্রে অভিনয় করার কথা ছিল কেট ব্লানচেটের। হিউ গ্রান্টকে তাঁর স্বামী লর্ড মাউন্টব্যাটেনের ভূমিকার জন্য অফার দেওয়া হয়েছিল। সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিল। এতদিনে হয়তো মুক্তিও পেয়ে যেত ছবিটি। ছবির জন্য ইরফান বেশ উৎসাহী ছিলেন। নেহেরুর চেহারার সঙ্গে সাদৃশ্য না থাকলেও তিনি নিজের অভিনয়ের মধ্যে তার প্রতিফলন আনতে চেয়েছিলেন। বলেছিলেন, “ভারতীয় অভিনেতারা জওহরলাল নেহেরু বা মহাত্মা গান্ধীর চরিত্রে অভিনয় করার স্বপ্ন দেখেন। তবে কয়েকজনেরই সেই সুযোগ হয়। আমি আমার ব্যক্তিত্বের মাধ্যমে চরিত্রটিতে রূপদানের চেষ্টা করব। আমি যখন NSD থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম, তখন ২১ বছর বয়সে লেনিনের চরিত্রে অভিনয় করেছি।”
কিন্তু ভারত সরকার ছবির চিত্রনাট্যের অনুমোদন দাবি করে। এমনকী পরিচালকের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতিও চাওয়া হয়েছিল যে তিনি নেহরু এবং এডউইনা মাউন্টব্যাটেনের মধ্যে কোনও চুম্বন দৃশ্য দেখবেন না। এদিকে ছবির বাজেট ছাড়িয়েছিল ৩০-৪০ মিলিয়ন ডলার। এবং অবশেষে প্রজেক্টটি স্থগিত হয়ে যায়। এই নিয়ে পরিটালক জো রাইট বলেছিলেন, “আমরা কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। ভারত সরকার চাইছে যে আমরা প্রেমের উপাখ্যান যতটা সম্ভব কম দেখাই। আর স্টুডিও (ইউনিভার্সাল) ওটাই বেশি করে দেখাতে চাইছে।” এই দোটানার ফলে হিউ গ্রান্ট এবং কেট ব্ল্যানচেট অন্য ছবিতে মনোনিবেশ করতে শুরু করেন। ছবি স্থগিত হয়ে যাওয়ায় ভেঙে পড়েন ইরফান খানও।
অভিনয়ের প্রতি বরাবরই যত্নবান ছিলন ইরফান। অভিনয়ের জন্য তিনি স্টিভেন স্পিলবার্গের মতো পরিচালককেও না বলেছিলেন। ওই ছবিতে স্কারলেট জোহানসনের বিপরীতে কাজ করার সুযোগ ছিল তাঁর। কিন্তু অভিনেতার মনে হয়েছিল, ছবিতে অভিনয়ের তেমন সুযোগ নেই। এরপর ২০১২ সালে ‘দ্য অ্যামেজিং স্পাইডার-ম্যান’ ছবিতে একটি ছোট্ট দৃশ্যও খুব যত্ন নিয়ে করেছিলেন তিনি। তবে ইরফানের সবচেয়ে বড় আক্ষেপ থেকে যাবে বোধহয় ক্রিস্টোফার নোলানের ছবি ‘ইন্টারস্টেলার’-এর জন্য। এই ছবির জন্য তাঁকে দীর্ঘ চার মাস আমেরিকায় থাকতে হতো। কিন্তু তখন ‘দ্য লাঞ্চবক্স’ ও ‘ডি-ডে’র শুটিং চলছে। ফলে চারমাস আমেরিকায় থাকা তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিল না। এনিয়ে অভিনেতা পরে বলেছিলেন, ‘এটি আমার জীবনের একটি কঠিন সিদ্ধান্ত ছিল।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.