সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পরপারে কাটানোর চার বছর। তবুও বিশ্বজুড়ে অনুরাগীদের স্মৃতির খাতায় ইরফান খান (Irrfan Khan) রেখে গিয়েছেন ‘পান সিং তোমার’, ‘লাইফ অফ পাই’, ‘পিকু’, ‘লাঞ্চবক্স’, ‘হিন্দি মিডিয়াম’, ‘তলোয়ার’, ‘ডুব’-এর মতো ছবি। যাঁর শিল্পীমন, শৈল্পিকসত্তা আজও অভিনেতাদের কাছে সিনে ব্যাকরণ। আজ ইরফান খানের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী। না, মৃত্যুদিবস বলেই কলমের আঁচড় পড়েনি তাঁকে নিয়ে। আসলে প্রিয় শিল্পী হোক কিংবা প্রিয় মানুষ, তাঁদের নিয়ে আদিখ্যেতা করার কিংবা ভালোবাসা জাহির করার জন্য কোনও নির্দিষ্ট দিনের দরকার হয় না ঠিকই। তবে অলিখিতভাবে তার যাবতীয় দায়ভার বর্তায় জন্মদিন আর মৃত্যুদিনের উপর। ২৯ এপ্রিল, ইরফান খানের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী। অভিনেতা হওয়ার পাশাপাশি বাইশ গজের মারপ্যাঁচেও যে তিনি দুরন্ত ছিলেন সেকথা অনেকেই হয়তো জানেন না।
ফিল্মি কেরিয়ার তখনও শুরু হয়নি। ইরফান খান চেয়েছিলেন ক্রিকেটার হতে। তবে অদৃষ্টের হয়তো পরিকল্পনাই ছিল অন্য। মাত্র ২০০ টাকার অভাবে সুযোগ পেয়েও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খেলতে পারেননি তিনি। ২০১৭ সালে এক সাক্ষাৎকারে খুব দুঃখ করে বলেছিলেন সেকথা। শুনিয়েছিলেন ক্রিকেট নিয়ে নিজের ফ্যান্টাসির কথা। ভালোই খেলা সত্ত্বেও অর্থাভাবে বাইশগজে নিজের কেরিয়ার গড়তে পারেননি ইরফান খান। মাত্র কয়েকটা টাকার জন্য ক্রিকেটে তাঁর কেরিয়ার শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যায়। ওই সাক্ষাৎকারে ইরফান জানিয়েছিলেন, আসলে তিনি অল-রাউন্ডার ছিলেন। তবে বোলিং ছিল তাঁর পছন্দের বিষয়। ক্রিকেট খেলার বহু স্মৃতি হাতড়ে জানিয়েছিলেন, ক্যাপটেন তাঁর বোলিং নাকি বেশ পছন্দ করতেন। তাই টিমের বোলার বানিয়ে দিয়েছিলেন। “শুধু বল ছুঁড়ে দিতাম আর তাতেই ২-৩ উইকেট জুটে যেত”, বলেছিলেন বিশ্ববন্দিত অভিনেতা। তবে বাইশ গজে পা রাখতে না পারলেও ব্যাট-বলের নেশা কিন্তু তাঁকে ছাড়েনি। শুটিংয়ের ফাঁকেই সহকর্মীদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলায় মজে যেতেন। বা কখনও পরিচালকের ‘কাট’ বলা শুনেই ব্যাট-বল হাতে নেমে পড়তেন।
ক্রিকেট প্রতিভার জন্য কর্নেল সিকে নায়ডু ট্রফিতে (Col C K Nayudu Trophy) খেলার সুযোগ পান ইরফান খান। কিন্তু তখন তাঁর বাড়ির পরিস্থিতি এমনই ছিল যে ক্রিকেট খেলতে হলেও তাঁকে মিথ্যে কথা বলে বাড়ি থেকে বেরতে হত। ফিরে এসে কিছু একটা অজুহাত দিয়ে দিতেন। ভীষণ আক্ষেপের সুরেই জানিয়েছিলেন, “আমি যখন সুযোগ পাই তখন আমাদের জয়পুর থেকে আজমেঢ় যেতে হত। সেজন্য ২০০-২৫০ টাকা লাগত। আমি সেই টাকাটা জোগাড় করতে পারিনি। সেদিনই বুঝে গিয়েছিলাম, এটা আমার জন্য নয়।” কপিল দেব, শচীন তেণ্ডুলকরের ভক্ত ইরফান খানের কাছে ডেভিড ব্যকহাম ছিল সবথেকে সুদর্শন স্পোর্টসম্যান। আর ইমরান খান ও জাহির আব্বাসের মতো দুই পাক ক্রিকেটার ছিলেন তাঁর বড় প্রিয়। তবে ‘ক্যাপ্টেন’ ধোনিকে নিয়ে বড় গর্ববোধ করতেন ইরফান। বলেছিলেন, “ও দুর্দান্ত অধিনায়ক, নিজের পারদর্শীতাতেই ভারতের হাতে বিশ্বকাপ তুলে দিতে পেরেছেন।” অভিশপ্ত ২০২০ সালের ২৯ এপ্রিল ইরফান খানের আকস্মিক পরলোক অভিসারে চলে যাওয়ায় আজও উত্তর খোঁজে বিশ্বের সিনেইন্ডাস্ট্রি। না জানি, আরও কত মণি-মাণিক্য বাকি ছিল তাঁর সিনেদর্শকদের উপহার দেওয়ার জন্য।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.