টলিউড বক্স অফিসে ইতিমধ্যেই হইচই ফেলে দিয়েছে অঙ্কুশের ‘মির্জা’। ছবিতে আলাদা করে নজর কেড়েছে ছবির অন্যতম খলনায়ক ‘আজহার’ ওরফে শোয়েব কবীর। কেমন ছিল শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা? একান্ত আড্ডায় অভিনেতা শোয়েব। শুনলেন শম্পালী মৌলিক।
বাংলা নববর্ষের শুরুটা তো ‘মির্জা’ দিয়ে, ভালো হল?
শোয়েব কবীর: একদম। যতটা আশা করেছিলাম, ধীরে ধীরে আমরা ওই দিকেই এগোচ্ছি। ভালো হচ্ছে।
‘মির্জা’-তে আপনি ডার্ক শেডের চরিত্রে। সুলতানের ছেলে ‘আজহার’। শুরু থেকে তো দর্শকমনে শিহরন জাগিয়েছেন। আপনার হোমটাউন মুর্শিদাবাদের লোকজন কী বলছেন?
শোয়েব কবীর: বহরমপুর শহরে আমরা কিছুদিন আগে প্রোমোশন করতে গিয়েছিলাম। ছোটবেলা থেকে ওখানে বড় হয়েছি। ওখানে দুটো হল আছে। রিলিজের পর থেকে আজ (রবিবার) অবধি তার আটটা শো-ই হাউসফুল গেছে। উই আর ব্লেসড যে, মুর্শিদাবাদের মানুষ ‘মির্জা’ পছন্দ করছে। মোহন টকিজ আর সিলভার স্ক্রিন-এ প্রচুর মানুষ দেখতে যাচ্ছেন ছবিটা।
পরিচালক সুমিত-সাহিল এরকম ডার্ক শেডের চরিত্রের জন্য যখন বলেন সম্মতি দেন কী ভেবে?
শোয়েব কবীর: আমি হিন্দিতেও কাজ করেছি। আমার প্রথম ওয়েব সিরিজ ছিল ২৬/১১-র ওপর ভিত্তি করে। ওখানে আমি ‘আজমল কাসভ’-এর চরিত্র করেছিলাম। তারপর ‘ধারাভি ব্যাঙ্ক’ সিরিজটা করি, সুনীল শেট্টি এবং বিবেক ওবেরয়ের সঙ্গে, ওখানেও খুব গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র ছিল। সুমিত ভাই প্রথম কাজটা দেখেছিলেন। আর সাহিল ভাই দুটোই। তখন ওঁরা জানতে পারেন, আমি বাঙালি। তারপর ফোন আসে যে, এরকম চরিত্র করতে চাই কিনা। বাংলা বলতে পারি কিনা। আমি জানিয়েছিলাম, যে নিশ্চয়ই পারি। আমি বাঙালি। হেয়ার স্কুলের ছাত্র ছিলাম তারপর স্কটিশ চার্চে পড়াশোনা করেছি। তারপর একে একে প্রসেসটা এগোয়। এই ছবিটা অনেক আগেই হওয়ার কথা ছিল। প্রযোজক পাল্টে যায়। তারপর অনেক ঝড় ঝঞ্ঝা পেরিয়ে এখানে দাঁড়িয়ে আছি। ভালো লাগছে।
স্কটিশ চার্চের পরে কী করছিলেন?
শোয়েব কবীর: দেরাদুন চলে গিয়েছিলাম গ্র্যাজুয়েশন করতে। ফুড টেকনোলজিতে স্নাতক করি, ইউনিভার্সিটিতে র্যাঙ্কও করি। তারপর অভিনয় জগতে আসি।
অভিনয়ের ইচ্ছে কি ছোট থেকেই?
শোয়েব কবীর: অনুপম খেরের ‘অ্যাক্টর্স প্রিপেয়ার’ স্কুলে আমি আগে কাজ করতাম। কলেজেও নাটকে আমি স্ক্রিপ্ট লিখেছি। অনুপম খেরের ভাইঝি আমার একটা স্ক্রিপ্ট পান, মানে আমি সাবমিট করেছিলাম। তখন আমি ওখানে কনসালটেন্ট হিসেবে সুযোগ পাই। জয়েন করি। তারপর বেশকিছু হিন্দি সিরিয়াল লিখি আমি। তারপরে আমার এক বন্ধু অভিনয়ের ব্যাপারে বলে এবং আমি অডিশন দিই। কাসভের রোলটাই আমার প্রথম ছিল।
বাংলায় এর আগে অঞ্জন দত্ত-র ‘রিভলভার রহস্য’, অরুণ রায়ের ‘বাঘা যতীন’, অনীক দত্ত-র ‘অপরাজিত’-তে করেছেন…
শোয়েব কবীর: হ্যাঁ, আমি খুব ব্লেসড যে ‘মির্জা’ আমার চার নম্বর ছবি। প্রথম আমি কাজ করেছিলাম ‘অপরাজিত’-তে বংশীচন্দ্র গুপ্ত-র চরিত্রে। দ্বিতীয় অঞ্জন দত্তর সঙ্গে। ওপরওয়ালার অশেষ কৃপা যে এমন সব গুণী লোকজনের সান্নিধ্য পেয়েছি। এবং এত বিভিন্ন ধরনের চরিত্র পেয়েছি।
এরপরে তো অর্জুন দত্ত-র ‘ডিপ ফ্রিজ’-এও পাওয়া যাবে আপনাকে?
শোয়েব কবীর: হ্যাঁ, ওটা এখনও রিলিজ হয়নি। তাই সেভাবে বলতে পারছি না এটা নিয়ে।
পড়াশোনা, স্ক্রিপ্ট লেখা লিখির কাজ করার পরেও রাজনীতির দিকে ঝোঁক এল কীভাবে?
শোয়েব কবীর: আমি ২০২২-এ যখন ‘অপরাজিত’ শুট করছিলাম সায়নীদির (ঘোষ) সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আমি একটা অন্য হেল্প নিতে সায়নীদিদির কাছে যাই। এবং উনি রেকগনাইজ করেন যে, আমার একটা সার্টেন পলিটিক্যাল ইন্টারেস্ট আছে। প্রথমে আমি নিশ্চিত ছিলাম না যে, এই কাজটা করতে পারব কিনা, সায়নীদিই আমাকে বলেন, ‘তুই একবার ট্রাই করে দেখতে পারিস’। রাজনীতিতে আমার কেউই চেনাজানা নেই। আমাদের পরিবারের প্রথম প্রজন্ম আমি, যে সক্রিয় রাজনীতিতে এসেছি। তারপরে সায়নীদি আমাকে মুর্শিদাবাদে কিছু কাজ করতে দেন। কারণ, মুর্শিদাবাদ রাজনীতির নিরিখে খুবই ভলেটাইল অঞ্চল। যুব উইংয়ের জন্য আমাকে কিছু রিসার্চ করতে দেন, যে ভাই, তুই একটু করে দে। তখন আমি ফ্রি ছিলাম। আই ট্রায়েড টু হেল্প হার। তারপর হঠাৎ করে ২০২২-এর ৩০ শে নভেম্বর দেখি তৃণমূলের রাজ্য কমিটিতে আমার নাম। আমি প্রথমে বিশ্বাস-ই করিনি (হাসি)। নিশ্চিত না হলেও খুশি হয়েছিলাম। অভিনয় করছিলাম নিজের ভালোলাগার জন্য, তবে যখন তৃণমূল এসেছিল আদর্শগতভাবে একাত্ম অনুভব করেছিলাম। বাড়ির অনেকেই তৃণমূলের ফলোয়ার। কারণ, সিপিএম-এর এত বছরের পরে নতুন কিছু এসেছিল। যারা ‘লেজেন্ড কিলার’ পার্টি। এইভাবেই ধীরে ধীরে রাজনীতিতে আসা। এখন আমি মুর্শিদাবাদের সহ সভাপতি, যুব উইংয়ের।
এতটা পড়াশোনা করলে সাধারণত মানুষও তো রাজনীতিতে থেকে দূরে থাকে।
শোয়েব কবীর: (হাসি) অনেকের ক্ষেত্রে হয় আগে অভিনেতার জনপ্রিয়তা পায়, তারপরে রাজনীতিতে আসে। আমার ক্ষেত্রে তা নয়, আমি রাজনীতি করি। অনেক রাজনীতিবিদ টাকা পয়সা দিয়ে সিনেমা করেন। আমি কিন্তু তা নই। অভিনয় করে আমাকে পেট চালাতে হয়। ওয়াই-ফাই-এর বিল দিতে হয়। হাউসহেল্পকে টাকা দিতে হয়। যুব রাজনীতি করি আমরা। যেটা সেবার রাজনীতি। কেউ যদি বলে, তুমি নেতা হয়ে গেছ, তা নয়। নেতা হওয়া সহজ নয়। আমরা সেবক পর্যায়ে আছি। একটা সুযোগ পেয়েছি সার্ভ করার। সেটা অনেকদিন ধরে করতে চাই, ব্যস।
কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন ‘মির্জা’-য়?
শোয়েব কবীর: কৌশিকস্যরের মধ্যে একটা অদ্ভুত ওয়ার্মথ আছে। সবে আমার দু’বছর হয়েছে বাংলা ফিল্মে। আমি নতুই-ই এখনও। সেখানে ওঁর মতো একজন ভেটেরেন প্রত্যেকবার ওঁর সঙ্গে সিনের আগে সহজ করে দিয়েছিলেন। উনি একটা ইনস্টিটিউশন। উনি যতটা করছেন তাতে যদি আমি রিঅ্যাক্ট করি, তাহলেই অভিনয়টা বেরিয়ে আসে। আমি শুধু রিঅ্যাক্ট করেছি। ওঁর ম্যাজিকের আশেপাশেও আমি নেই। টুপি থেকে পায়রা বার করেছেন আমি শুধু হাততালি দিয়েছি।
কমার্শিয়াল ধারায় ‘মির্জা’ বেশ অন্য রকমের ছবি হয়েছে। এর পরে সুযোগ আসবে আরও? কী মনে হয়?
শোয়েব কবীর: সেটা জানি না। পরিচালকদের সরাসরি ফোন করি অনেক সময়। কেউ বলেন ঠিক আছে দেখছি, অনেকে ডেকেও নেন। ইন্ডাস্ট্রিতে এমন ছবির দরকার ছিল। ইন্ডাস্ট্রি যেন একটু ছোট হয়ে আসছে, জানি না কেন। মালয়লি সিনেমা যেখানে ৫/৬ কোটি টাকা লাগিয়ে ৭০/৮০ কোটির ব্যবসা করছে, আমাদের ইন্ডাস্ট্রি যেন ডাউনফলের দিকে। ‘মির্জা’র মতো ছবিতে ৪০০-৫০০ লোক ডিরেক্টলি বা ইনডিরেক্টলি যুক্ত থাকে। ফলে এই ছবি জীবিকা-সেন্ট্রিক। ‘মির্জা’-র মতো ছবি বছরে ছ-সাতটা হলে অনেক লোকের কাজ বাড়বে। ডান্সার, জুনিয়র আর্টিস্ট, সাইড অ্যাক্টর, আর্টের লোক, ভিএফএক্স-এর লোক সব মিলিয়ে বলছি। যেমন দেবদার ‘খাদান’ বড় আকারে হচ্ছে। বা ‘মির্জা-২’ আরও বড় স্কেলে হবে। ‘মির্জা’ কিন্তু ইজ নট আ ফিল্ম এনি মোর। ‘মির্জা’ হল সাহস। যেটা খুব দরকার ছিল। প্যারালাল সিনেমা থাকুক কিন্তু কমার্শিয়াল সিনেমা যেন হারিয়ে না যায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.