বাংলাদেশে দু’বার জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। ওপার বাংলার সঙ্গে জনপ্রিয় এপার বাংলাতেও। তাঁর অভিনীত সিরিজ কারাগার এখন টক অফ দ্য টাউন। অভিনেতার সঙ্গে একান্ত আড্ডায় উঠে এল নানা অজানা কথা। শুনলেন শম্পালী মৌলিক।
‘হইচই’-এ মুক্তিপ্রাপ্ত সিরিজ ‘কারাগার’-এ আপনার অভিনয় খুব প্রশংসিত। এত ভালবাসা পাবেন ভেবেছিলেন?
চঞ্চল: না, না, প্রথমে তো আন্দাজ করা যায় না। যখন কাজটা করি তখন তার জন্য যে এফর্টটা দেওয়া দরকার সেইখানে যেন কোনও গ্যাপ না থাকে সেই চেষ্টা করি। আসলে কাজটা দেখার পর দর্শকের অনুভূতি কী হবে, তা পরের ব্যাপার। কাজ করার সময় প্রয়াসের দিক থেকে কোনও কার্পণ্য করি না। দর্শকের যেন ভাল লাগে, এই টার্গেটটা থাকে।
‘কারাগার’-এর জন্য আলাদা কোনও প্রস্তুতি নিয়েছিলেন?
চঞ্চল: সেটা শুধু ‘কারাগার’ বলে নয়, ‘কারাগার’-এর বাইরেও যখন কাজ করি প্রস্তুতি থাকে। সত্যি বলতে, ‘কারাগার’-এর জন্য প্রস্তুতি আরও বেশি ছিল। কারণ, জেলখানার ভিতরের পরিবেশ আলাদা, তার উপর আমরা রিয়েল লোকেশনে শুটিং করেছি। কারাগারের ভিতরের চরিত্রের প্রয়োজনে যা যা করার করেছি। ওখানে তো আমার কোনও ডায়ালগ ছিল না। অন্য চরিত্রের ক্ষেত্রে বলতে পারি, সংলাপ থাকলে কাজটা সহজে হয়ে যায়। ‘তকদির’ বা ‘বলি’-র ক্ষেত্রে বিষয়টা যেমন আলাদা ছিল। এক্ষেত্রে আমাকে সাইন ল্যাঙ্গোয়েজ শিখতে হয়েছে। চরিত্রের জন্য মাথার চুল পুরো কেটে ফেলেছিলাম। তার সঙ্গে জেলখানার অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তো ছিলই। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে শুটিং করা হয়েছিল। ওখানকার সমস্ত কয়েদিকে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল অন্য জায়গায়। এটা ২৫০ বছরের প্রাচীন জেলখানা। এখন এই কারাগার পরিত্যক্ত। সেই জন্যই শুটিং করা সম্ভব হয়েছে। যে সেলগুলোতে শুটিং হয়েছে, সেটা কারাগারেই। আবর্জনা ভর্তি পরিবেশের মধ্যেই শুটিং হয়েছে।
আপনি এপার বাংলায় অত্যন্ত জনপ্রিয় সেটা শুধু ‘তকদির’, ‘বলি’ বা ‘কারাগার’-এ অভিনয়ের জন্য নয়, আপনার গায়ক সত্তার জন্যও। টের পান?
চঞ্চল:ফেসবুকের কল্যাণে সেটা মাঝেমধ্যে বুঝতে পারি। ওপার বাংলা থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচুর প্রতিক্রিয়া পাই। ইনবক্সও করেন অনেকে। এই যোগাযোগটা ঘটেছে দীর্ঘদিন যাবৎ। এটা খুবই আনন্দের এবং ভাললাগার বিষয়। তবে আমার গানের কোনও প্রথাগত শিক্ষা নেই। কেউ অনুরোধ করলে দু’লাইন গাইতে পারি, এইমাত্র।
ভারতে ওয়েব সিরিজে অভিনয় করলেন, সিনেমায় অভিনয়ের কথা কিছু ভেবেছেন?
চঞ্চল: অনেক আগে থেকেই সেই আলোচনা চলছে। আসলে সিনেমায় করব বললেই তো করা যায় না। দুটো আলাদা দেশ। ভিসা, পারমিশন ইত্যাদি জটিল ব্যাপার আছে। তাছাড়া চরিত্র পছন্দ হওয়া এবং কে নির্মাতা, যাওয়া-আসার সময়, অনেক কিছু ভাবতে হয়। যে কাজটা সহজে বাংলাদেশে করে ফেলতে পারি, সেটা ইন্ডিয়াতে গিয়ে করতে গেলে অনেক সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। ইচ্ছা রয়েছে, অদূর ভবিষ্যতে হয়তো হয়েও যাবে। অনেক পরিচালকই আমাকে নিয়ে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করে থাকেন।
সৃজিত মুখোপাধ্যায় ‘কারাগার’-এ আপনার কাজের প্রশংসায় সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন। ওঁর সঙ্গে কাজের বিষয়ে কোনও কথা হয়েছে?
চঞ্চল: ওঁর সঙ্গে আমার প্রথম কাজটাই হওয়ার কথা ছিল। ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি’-তে অনির্বাণ (ভট্টাচার্য) যে চরিত্রে করেছেন, সেই চরিত্রে আমার করার কথা ছিল। আর রাহুল বোস যেটা করেছেন, সেখানে অনির্বাণের করার কথা ছিল। এটা শুট হওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশে। কিন্তু কোভিডের জন্য ইন্ডিয়ায় শুট হয়। এবং পুরো পরিকল্পনা পাল্টে যায়। সৃজিতদার সঙ্গে কথা চলছে, সাম্প্রতিককালেও কথা হয়েছে। দেখা যাক, হয়তো খুব দেরি হবে না কাজ হতে (হাসি)।
বাংলাদেশে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘হাওয়া’ সিনেমায় আপনার অভিনয় দর্শক খুব পছন্দ করেছেন। আমরা গানটা শুনেছি ‘সাদা সাদা, কালা কালা’ দারুণ জনপ্রিয় হয়েছে এপারেও। আপনি অনেকদিন পর ফিল্মে কাজ করলেন, তাই না?
চঞ্চল: হ্যাঁ, ঠিকই। ভাল লাগছে শুনে (হাসি)। প্রত্যেক বছরেই ফিল্মে কাজ করা হয়ে ওঠে না। আমাদের ইন্ডাস্ট্রি ওইরকম না। মাঝখানে তিন বছর কোভিডের কারণে গ্যাপ গেল। আর আমি নরমালি দু’-তিনবছর পর সিনেমার কাজ করি।
ভারতে ‘হাওয়া’ দেখার কোনও সুযোগ হতে পারে?
চঞ্চল: এটা চেষ্টা করা হচ্ছে, যদি কলকাতায় রিলিজ করা যায়। আলোচনা চলছে। আমি তো শিল্পী মাত্র। ছবির প্রযোজনা ও মুক্তির ক্ষেত্রে অনেক জটিল আইনি বিষয় থাকে। সেগুলো মানতে হয়। এক দেশের ছবি অন্য দেশে মুক্তি পাবে কি না, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ-ভারতের ক্ষেত্রে বিষয়টা একটু কঠিন। এখানকার প্রযোজক এবং তাঁদের টিমের কাছে এই বিষয়টা আলোচনার স্তরে রয়েছে।
এপার বাংলায় জয়া আহসান নিয়মিত কাজ করছেন। এছাড়া মোশাররফ করিম, বাঁধন, মিথিলাও কাজ করছেন। জয়া যতটা নিয়মিত এখানে কাজ করেন, তেমনটা আপনি এখানে পারেন না?
চঞ্চল: বাংলাদেশে আমার কাজের এত বেশি চাপ… কী বলব। তারপর আমার ছেলে শুদ্ধ রয়েছে, ও সবে তেরো পূর্ণ করবে। কোভিডের কারণে কিছু কাজ হতে হতেও হয়নি। তবে জয়ার মতো অত পারব না। আমি বছরে একটা-দুটো প্রোজেক্ট করতে পারি, বেশি না। একটানা ওখানে থেকে অনেক কাজ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
ছবি নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোনটা মাথায় রাখেন?
চঞ্চল: স্ক্রিপ্ট, চরিত্র, নির্মাতা– সবগুলোই মাথায় রাখতে হয়। গল্পটা আগে করা কাজগুলোর থেকে আলাদা কিনা ভাবতে হয়। সেই সঙ্গে টেকনিক্যাল টিম, বাজেটও মাথায় থাকে। সব মিলিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয় যে, কাজটা করব কি না।
ওয়েব সিরিজ, সিনেমা, টেলিভিশন করেন, তার পরেও মঞ্চের সঙ্গে গভীর যোগ রাখেন কীভাবে?
চঞ্চল:ওটা দায়বদ্ধতার জায়গা। মঞ্চ থেকেই আমার জার্নি শুরু। এখন আগের মতো মঞ্চে সময় দিতে পারি না, কিন্তু দুর্বলতাটা আছে। ১৯৯৬ সাল থেকে মঞ্চে কাজ করি। ইদানীং ওয়েব, টেলিভিশনের ব্যস্ততার কারণে একটু সময় কম দেওয়া হচ্ছে মঞ্চে। আর মঞ্চে কাজ করতে গেলে একটা প্রোডাকশনের জন্য তিন থেকে ছ’মাস সময় দিতে হয়। ওই সময়টা এখন কম পাই। তবে ভবিষ্যতে আবার মঞ্চে কাজ করব।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.