আগামিকাল, শনিবার অভিনেত্রী-সাংসদ নুসরত জাহানের (Nusrat Jahan) জন্মদিন। মা হওয়ার পর তাঁর প্রথম বার্থডে। ফোনালাপে উঠে এল বদলে যাওয়া জীবন, নতুন ছবি ও পরবর্তী কাজের কথা। শুনলেন শম্পালী মৌলিক।
[তখনও রাজ্যে সংক্রমণের গ্রাফ এমন ঊর্ধ্বমুখী হয়নি। নতুন ছবির প্রচারের মাঝে কিছুদিন আগে ধরা দিয়েছিলেন নুসরত জাহান।]
কেমন আছেন?
ঠিক আছি। তবে খুব সাবধানে আছি, চারদিকে যা কোভিড (COVID-19) পরিস্থিতি।
৮ জানুয়ারি আপনার জন্মদিন। প্রথমেই জন্মদিনের আগাম শুভেচ্ছা। পরিকল্পনা কী?
থ্যাঙ্ক ইউ (হাসি)। নাহ্, তেমন কোনও প্ল্যান নেই। শুট ছিল, তবে সময়টা একটু রি-শিডিউলড হয়েছে। আপাতত পরিবারের সঙ্গেই সময় কাটানোর প্ল্যান।
যশ কী উপহার দেবেন, টের পেলেন?
নাহ্, ওরা কী প্ল্যান করেছে আমাকে তো আগাম বলবে না! সো আই ডোন্ট নো। আমার সবচেয়ে বড় উপহার আমার ছেলে। এটা আমার প্রথম বার্থডে অ্যাজ আ মাদার। এক বছর বয়স হল আমার এটাই বলব (জোরে হাসি)। বছরের সেরা উপহার ঈশান।
নতুন বছরে কোনও রেজোলিউশন?
কোনওদিন রেজোলিউশন নিই না, কারণ আমি নিলে রাখতে পারি না। এই বছর চেষ্টা করব একটু হেলদি লাইফ স্টাইল মেনটেন করতে। যেটা আমি একদমই করতে পারিনি একবছরে। প্রচুর খেয়েছি কেবল। এবার জীবনে সবদিক আরও ব্যালান্স করার চেষ্টা করব। আর ওয়ার্ক আউটের জন্য সময় বের করতেই হবে।
গত দু’বছর আপনার ভালমন্দ মিশিয়ে কেটেছে। তার মধ্যে সেরা ঘটনা?
ওই যে বললাম, ঈশানের জন্ম। একজন নারীর পুনর্জন্ম হয় সন্তানের জন্মের পর। এর চেয়ে বড় টার্নিং পয়েন্ট আমার জীবনে কিছুই নেই।
ঈশানের জন্য কি রাত জাগতে হচ্ছে? ন্যাপি কে বেশি পাল্টায়, আপনি, না যশ?
রাত জাগতে হচ্ছে না। ও খুব সুন্দর ঘুমায়। দু’জনে মিলেই পালটাই। তবে খুব সকালেরটা ওর বাবাকে দায়িত্ব দিয়েছি। (হাসি)
কিছু মানুষ গত দু’বছরে আপনাকে ট্রোল করেছেন, আবার অনেক মানুষ আপনার সাহসকে কুর্নিশ করেছেন। কীভাবে দেখেন?
আমি না এই প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে বোর হয়ে গিয়েছি আর কিছু বলতে চাই না।
এরকমই শীতে আপনি লন্ডনে শুটিং করছিলেন ‘স্বস্তিক সংকেত’ ছবিটির। সেই ছবি এই শীতে রিলিজ করতে পারে।
হ্যাঁ, এটা এমন একটা ছবি যার জন্য আমাদের প্রচুর হার্ডওয়ার্ক করতে হয়েছে। আমি রুদ্রাণীর চরিত্রে, যে একজন ক্রিপ্টোগ্রাফার। অনেক গভীরে গিয়ে যে পড়াশোনা করেছে। এই রুদ্রাণী লন্ডনে যায়। ক্রিপ্টোগ্রাফির ওপর একটা বইপ্রকাশ অনুষ্ঠান রয়েছে সেখানে। যে বইটা রুদ্রাণী লিখেছে। সেখানে একজনের সঙ্গে দেখা হয়, যে রুদ্রাণীকে বলে তার দাদুর একটা পাজ্ল-এর বিষয়ে।
তারপর?
সেই লোকটি রুদ্রাণীকেই বলে ওই পাজ্লটা ডিক্রিপ্ট করতে। যেখান থেকে ক্যানসার থেকে আরোগ্যলাভের উপায় পাওয়া যেতে পারে। সেই চ্যালেঞ্জ রুদ্রাণী নেয় এবং ডিক্রিপ্ট করে। সঙ্গে থাকে তার স্বামী প্রিয়ম। সামহাউ একটা ডেঞ্জারাস গেমে সে ফেঁসে যায়, যেটা মনুষ্যত্বের পক্ষে ক্ষতিকর। একটা ভাইরাসকে রুদ্রাণী কীভাবে হ্যান্ডল করে দেখার। মাঝে রয়েছে ইতিহাস। যেখানে নেতাজির জীবনের বিভিন্ন অধ্যায় উঠে এসেছে। যেমন–তাঁর জার্মানির জীবন বা অ্যাডলফ হিটলারের সঙ্গে ঐতিহাসিক মিটিং। দেখা যাবে কীরকম ভাবে ভাবতেন নেতাজি। বায়োপিক নয়, কিন্তু নেতাজির জীবনের বিভিন্ন অধ্যায় উঠে আসবে। সেই সময়ের ঘটনা আর বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিত– দুটোর একটা লিঙ্ক আছে ছবিতে। কীভাবে, সেটা ছবি রিলিজ হলেই বোঝা যাবে। রুদ্রাণীর পেশা অর্থাৎ ভায়া ক্রিপ্টোগ্রাফি একটা সংযোগসূত্র রয়েছে, এইটুকুই বলব। অতীত আর বর্তমান মিলছে ভবিষ্যতের জন্য, মানবজাতির জন্য। আমি ছাড়া শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, রুদ্রনীল ঘোষ, গৌরব চক্রবর্তী রয়েছে ছবিতে। গৌরব আমার স্বামীর চরিত্রে। প্রিয়ম আর রুদ্রাণী মিলে এই অ্যাডভেঞ্চারে অংশ নেয়, তারপর রুদ্রদা ওদের জয়েন করে।
এই কোভিড-পরিস্থিতিতে যদি সব কিছু ঠিকঠাক থাকে ২১ জানুয়ারি আসতে পারে ‘স্বস্তিক সংকেত’…
এটুকু বলতে পারি এই ধরনের ছবি কম বানানো হয়। এই ছবির ব্যাকড্রপে সেকেন্ড ওয়ার্ল্ড ওয়ার রয়েছে, হিটলার, নেতাজি রয়েছেন। সেই সঙ্গে আজকের একটি বাঙালি মেয়ে যে ক্রিপ্টোগ্রাফার, মানুষের জীবন বাঁচাচ্ছে, একটা ভাইরাসের অ্যাঙ্গেলও আছে, যেটা আজকের সময়ের সঙ্গে রিলেট করতে পারবে দর্শক। ইউকে-র অনাবিষ্কৃত এবং অরিজিনাল লোকেশনে শুটিং করেছি আমরা। ছবির নাম ‘স্বস্তিক সংকেত’। আর হিটলারের নাৎজি পার্টির সিম্বলটাও মনে করুন, তাহলেই বুঝবেন পরিচালক (সায়ন্তন ঘোষাল) কী সুন্দরভাবে লিঙ্ক করেছে। ছবিটা দেবারতি মুখোপাধ্যায়ের উপন্যাস ‘নরক সংকেত’-এর উপর বেস করে তৈরি। খুব আকর্ষণ করবে দর্শককে মনে হয়। লন্ডনে ভীষণ ঠান্ডায় কুড়ি দিন শুট করেছিলাম আমরা। এটা আমার কেরিয়ারের অন্যতম সেরা ছবি এখনও পর্যন্ত।
মা হওয়ার পরেই আপনি দ্রুত শুটিংয়ে ফিরেছিলেন। ‘জয় কালী কলকাত্তাওয়ালি’ দিয়ে। তারপর কাজ করেছেন ‘মাস্টারমশাই আপনি কিছুই দেখেননি’-তে। আর কিছু করছেন?
দ্বিতীয়টার শুটিং চলছে এখনও। এটা খুব অন্য ধরনের ছবি। পরে এ বিষয়ে বলব। আমাকে এখন কাজগুলো একটু ভাগ করে নিতে হচ্ছে, আগের মতো না করে। দুর্দান্ত স্ক্রিপ্ট না পেলে, খুব আগ্রহী না আমি। ‘জয় কালী’ খুব হ্যাপি ফিল্ম, আমার ওখানে গেস্ট অ্যাপিয়ারেন্স বলতে পারো। প্রথমত ঈশান ছোট, তাছাড়া রাজনৈতিক কাজ রয়েছে। যেটা একটু স্লো-ডাউন হয়েছিল ইস্যু হওয়ার পর। কারণ ডাক্তার ট্রাভেল করতে বারণ করেছিলেন। আমি তাও গিয়েছি। এখন দারুণ চ্যালেঞ্জিং কিছু না হলে করতে চাইছি না মানে ফিল্মের ক্ষেত্রে বলছি। শরীরটা হিল করতেও আমি নিজেকে তেমন সময় দিইনি। বেরিয়ে পড়েছিলাম কাজে, ইস্যু হওয়ার পরেই। আমার কনস্টিটিউয়েন্সিতে টিম তৈরি রেখেছিলাম, যারা আমার অনুপস্থিতিতে কাজ করেছে। তাই কোনও কাজ বন্ধ হয়নি সেখানে। তা সত্ত্বেও যদি একটা ছবি পোস্ট করি লোকে বলবে, কাজ শো অফ করছি। বা যদি অন্য একটা সুন্দর ছবি পোস্ট করি, তাহলেও লোকে বলবে, এরা কাজ করে না। তাই সেটা আমার জন্য ম্যাটার করে না। কাজ হচ্ছে কি না সেটাই আসল। এবার আমি নিজে গিয়ে এলাকায় সময় দিতে চাই। ছেলে খুব ছোট, সবে কান্নার সময় মাম্মা, বাব্বা বলতে শিখেছে। সেই মুহূর্তগুলোও মিস করতে চাই না। কখনও হাসবে, উলটে পড়বে (হাসি)। তাই সময়টা ব্যালান্স করে জীবনের সব ক্ষেত্রে দিতে চাই। আর ওয়ার্ক আউট-এ সময় দিতে চাই অবশ্যই (হাসি)।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.