Advertisement
Advertisement

সৌন্দর্য ও লাস্যের বাইরেও অনেক কিছু আছে, প্রমাণ করেছেন দীপিকা

সুন্দরী দীপিকার বয়স আজ আরও এক বছর কমল।

Inside Deepika Padukone’s life
Published by: Bishakha Pal
  • Posted:January 5, 2019 4:05 pm
  • Updated:January 5, 2019 4:07 pm  

সময়ের সঙ্গে পালটেছেন নিজের অভিনয়। পালটেছেন ব্যক্তিগত জীবন। দীপিকা পাড়ুকোনের জন্মদিনে লিখছেন প্রতিম ডি গুপ্ত

ফিল্মের নাম ‘তামাশা’। গান- অগর তুম  সাথ হো। দেখতে দেখতে অঝোরে কাঁদছি। সিনেমা হলে ওভাবে কোনও দিন কাঁদিনি আমি। সৌভাগ্যক্রমে সেটা ছিল শুক্রবার সকালের ফার্স্ট ডে ফার্স্ট শো। আশেপাশে তাই খুব বেশি লোক ছিল না। সে দিনের কান্নার জল যদি জমিয়ে রাখতে পারতাম, আমার বড়সড় পপকর্ন টাব ভরে ছলকে পড়ত।

Advertisement

পরে ভাবতে গিয়ে একটা জিনিস বুঝতে পেরেছিলাম। ভেতরে ভেতরে আগে থেকেই জানতাম, কিন্তু কোনও দিন অত গভীরে গিয়ে ভাবিনি। যখন কোনও সুন্দরী ভেঙে পড়ে, সেটা অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক এক অভিজ্ঞতা। কারণ সেই সুন্দরী সবার কল্পনায় সব সময় নিখুঁত থেকেছেন। কিন্তু হঠাৎ তিনি তাঁর সত্যিকারের চেহারা তুলে ধরলেন। তাঁর চরিত্রের যে দিক সম্পর্কে আপনার কোনও ধারণাই ছিল না, সেই দিকটা আপনার সামনে মেলে ধরলেন।

বিশ্বের তাবড় তাবড় অভিনেতা আমাকে যত না কাঁদিয়েছেন, তার চেয়ে অনেক বেশি করে আমাকে কাঁদিয়েছেন দীপিকা পাড়ুকোন। ‘তামাশা’ ফিল্মের সেই রাতে রণবীর কাপুর যখন ও রকম আচরণ করলেন (সবাই হয়তো ফিল্মটা দেখেননি, তাই এর চেয়ে বেশি লিখছি না), দীপিকার চরিত্রের ভেতর কিছু একটা ভেঙে গিয়েছিল। আর দীপিকার কষ্ট দেখে আমার ভেতরেও যেন কিছু একটা চুরমার হয়ে গেল। এ কি শুধু অভিনয়? না কি বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে নিংড়ে নেওয়া বারুদ? কেউ জানে না। তবে যা-ই ছিল, একদম স্পটে লেগেছিল। আর কষ্ট দিয়েছিল। খুব, খুব কষ্ট।

রিওয়াইন্ড করে এক দশক আগে ফিরে যাচ্ছি। শহরের এক শীর্ষস্থানীয় ইংরেজি সংবাদপত্রে জার্নালিস্ট আমি। আইটিসি সোনার হোটেলে ফারাহ খানের সঙ্গে লাঞ্চ করতে যাব। অন্য কোনও কাজে তিনি তখন শহরে এসেছিলেন। কিন্তু আমার আসল উদ্দেশ্য তাঁর আসন্ন ফিল্মের হিরোইন কে হবে, সেই খবরটা বের করা। ফিল্মের নাম? ‘ওম শান্তি ওম’।

ফের বিজেপির বিরোধিতা, মানবাধিকার নিয়ে বড় মঞ্চে নাসিরুদ্দিন ]

“নতুন একটা মেয়ে। এমনিতে মডেল, কিন্তু অভিনয়টা ওর মজ্জায় আছে,” দীপিকা নিয়ে সে দিন বলেছিলেন ফারাহ। হয়তো ফারাহর ওই মন্তব্য পলিটিক্যালি কারেক্ট থাকার চেষ্টা। নিজের ফিল্মকে আগলে রাখার চেষ্টা। কোন পরিচালকই বা বলবেন যে, শাহরুখ খানের নায়িকা হিসেবে আমার ফিল্মে কিংফিশার বিকিনি মডেলকে নিচ্ছি? বা হয়তো আমরা কয়েক বছর পরে যেটা দেখলাম, অত দিন আগেই দীপিকার মধ্যে সেটা দেখেছিলেন ফারহা। কী? না, ডাকসাইটে সুন্দরী এই মেয়েটা ক্যামেরার সামনে অবিশ্বাস্যভাবে নিজের সব দুর্বলতা উজাড় করে দিতে পারে। বড় বড় ওই সুন্দর চোখ যা বলে দেয়, ইন্ডাস্ট্রির বাকি সব অভিনেতা মিলেও তা বলতে পারেন না।

দীপিকার সঙ্গে কয়েকবার আমার দেখা হয়েছে। প্রথমেই যেটা আমাকে ছুঁয়ে গিয়েছে, তা হল দীপিকার সারল্য। মানুষ হিসেবে তিনি খুব রিয়েল। তাঁর মধ্যে আরোপিত কিছু নেই। বান্দ্রায় তাজ ল্যান্ড’স এন্ড হোটেলের একটা ইন্টারভিউ সেশন মনে আছে। মুম্বইয়ের বাইরে থেকে আসা সব সাংবাদিককে আলাদা আলাদা করে দীপিকা জিজ্ঞেস করছিলেন, “আপনি লাঞ্চ করেছেন তো?” দায়সারা বা লোক-দেখানো সৌজন্য যে নয়, শুনেই বোঝা যাচ্ছিল। দীপিকার মধ্যে সে দিন এক সহৃদয় গৃহকর্ত্রীকে দেখেছিলাম।

অভিনেত্রী হিসেবে দীপিকা যে ভাবে উন্নতি করেছেন এবং করছেন, অবিশ্বাস্য। ‘ওম শান্তি ওম’ আর ‘বচনা অ্যায় হাসিনো’-তে দীপিকার অভিনয় গ্রহণযোগ্য ছিল। কিন্তু দু’বছর পরের ‘লাভ আজ কাল’ দেখুন। ইমতিয়াজ আলির কড়া নজরের সৌজন্যে দীপিকার অভিনয় অন্য পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল। রাহুল খান্নাকে বিয়ে করার পরে যে দৃশ্যে দীপিকা ভেঙে পড়লেন, ওই সিনটাতেই তিনি গোটা বিশ্বের সামনে ঘোষণা করে দিয়েছিলেন- দেখে নিন, সুন্দর মুখ আর লাস্যময়ী শরীরের বাইরেও আমার অনেক কিছু আছে!

প্রদীপ সরকারের ‘লফঙ্গে পরিন্দে’ অনেকে দেখেননি। দৃষ্টিহীন স্কেটারের ভূমিকায় ওই ফিল্মে দীপিকা ছিলেন ব্রিলিয়ান্ট। তার পরেও দীপিকাকে অভিনেত্রী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না কি গ্ল্যাম গার্লের ডাব্বায় রেখে দেওয়া হবে, তা নিয়ে কারও মনে কোনও সন্দেহ থেকে থাকলে সে সব তিনি গুঁড়িয়ে দেন ‘ককটেল’-এ। ফিল্মের পরিচালক হোমি আদাজানিয়া, কিন্তু চরিত্রটা লিখেছিলেন সেই ইমতিয়াজ। দীপিকার চরিত্র ছিল এমন একটা মেয়ের, যে সর্বক্ষণ মদের নেশায় চুর, যে সর্বক্ষণ সুখী। যত দিন না নিজের ভেতরে সে সত্যিকারের অনুভূতি খুঁজে পায়।

এর পাশাপাশি চলেছে ‘রেস ২’ আর ‘হাউসফুল’-এর মতো বাণিজ্যিক মাল্টিস্টারার ফিল্ম। তার পর বিশাল দুটো সোলো হিট- ‘ইয়ে জওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি’ আর ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’। রাতারাতি দীপিকা বলিউডের হিরোইন নাম্বার ওয়ান। এই সময়ই রণবীর কাপুরের সঙ্গে প্রেম ভেঙে যাওয়ায় মানসিক অবসাদের শিকার হন দীপিকা। মনে আছে এক অভিনেত্রী তখন বলেছিলেন, “দীপিকার এখন সবচেয়ে ভাল প্রফেশনাল ফেজ আর সবচেয়ে খারাপ পার্সোনাল ফেজ চলছে।”

স্বস্তিকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল? জানালেন অনির্বাণ ]

সময়ের সঙ্গে তাঁর প্রেমিকরা যে ভাবে পালটে গিয়েছেন, সেটাও বেশ ইন্টারেস্টিং। তাঁর বয়ফ্রেন্ডদের নাম দেখলেই বোঝা যায় শুধু অভিনেত্রী নয়, মানুষ হিসেবেও ক্রমশ বেড়ে উঠেছেন দীপিকা। তাই সিদ্ধার্থ মালিয়ার পরে এসেছেন রণবীর কাপুর। রণবীর কাপুরের পরে এসেছেন রণবীর সিং। রণবীর সিং যে ওয়ান-উওম্যান ম্যান, তা সর্বজনবিদিত। আর বাকি দুই? থাক।

সেই নোংরা ঘেঁটে এই লেখাটা নষ্ট করতে চাই না।

গত বছরদুয়েক দারুণ কেটেছে দীপিকার। ‘পিকু’ আর ‘তামাশা’ তো আছেই। সঞ্জয় লীলা বনশালির তিনটে ফিল্মে পরপর হিরোইন হয়েছেন দীপিকা। আর কী অসাধারণ তিনটে ফিল্ম! ‘রাম-লীলা’। ‘বাজিরাও মস্তানি’। ‘পদ্মাবত’। তিনটে ফিল্মে দীপিকার যে কোনও ক্লোজ আপ দেখুন। ক্লোজ আপ তো নয়, যেন পেন্টিং। অতীত বা ভবিষ্যতের যে কোনও রাজপ্রাসাদের দেওয়ালে টাঙিয়ে রাখার মতো পেন্টিং। কিন্তু তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ, রণবীরকে বিয়ে করার পরে ব্যক্তিগত জীবনে শান্তি খুঁজে পেয়েছেন দীপিকা।

সুন্দরী এই মহিলার বয়স আজ আরও এক বছর ‘কমল’। দীপিকার সুখী দাম্পত্যজীবন কামনা করি। অভিনেত্রী হিসেবে তিনি আরও শক্তিশালী হয়ে উঠুন, সেই আশাও। ট্রেডমার্ক পাড়ুকোন স্ম্যাশের জন্য নতুন করে চোখের জল ফেলতে আমি রেডি!

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement