Advertisement
Advertisement

Breaking News

Indranil Roychowdhury

বাঙালি থ্রিলার ‘ছোটলোক’-এর রক্তমাংসের ‘হিরো’ সাবিত্রীর গল্প শোনালেন পরিচালক ইন্দ্রনীল

Zee5 প্ল্যাটফর্মে দেখা যাচ্ছে সিরিজটি।

Indranil Roychowdhury about web series Chhotolok | Sangbad Pratidin
Published by: Suparna Majumder
  • Posted:November 3, 2023 7:02 pm
  • Updated:November 3, 2023 7:02 pm  

কাল্পনিক প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটরদের ভিড়ে একটা ক্যাবলা মেয়ে কী করতে পারে দেখাই যাক না– বললেন পরিচালক ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরি। Zee5 প্ল্যাটফর্মে দেখা যাচ্ছে পরিচালকের ওয়েব সিরিজ ‘ছোটলোক’। সেই সংক্রান্ত কথাই বললেন বিদিশা চট্টোপাধ‌্যায়।

মার্ডার ইনভেস্টিগেশন এবং থ্রিলারের নানা রসদ থাকলেও ‘ছোটলোক’ অন‌্যান‌্য সিরিজের থেকে ভাবনায় আলাদা।
Zee5 একটা থ্রিলার করতে চেয়েছিল। আমিও চেয়েছি। প্রথমদিকে প্রচুর বিদেশি উপন‌্যাস পড়তে গিয়ে দেখলাম, এমন কিছু পাচ্ছি না, যেটা থেকে আমার মতো করে একটা গল্প বলতে পারি। সিনেমায় ছোট গল্প, নভেল, নাটকের ক্ষেত্রে ভারতীয় সাহিত্যে দীর্ঘ যাত্রা একটা ছাঁকনি হিসাবে কাজ করেছে। দীর্ঘ দিনের ঘষামাজায় সেগুলো আঞ্চলিক হয়ে উঠেছে। কিন্তু থ্রিলার রাইটিং-এর সেই ঘরানা এখানে নেই। তাই ‘নয়ার’ ঘরানার বিদেশি থ্রিলারের প্রভাব, আমাদের কাজে। ‘নয়ার’ খুব ডার্ক ওয়ার্ল্ড। রেমন্ড শ‌্যান্ডলার বা ড‌্যাশিয়েল হ‌্যামেট-এর লেখা পড়লেই বুঝতে পারবে। এই থ্রিলারের প্রোটাগনিস্টরা হেরে যাওয়া, ভেঙে পড়া মানুষ। যাদের জীবনে কিছুই ঠিক হয় না, প্রেম কাজ করে না, সে ভুল করে, কেউ মেরে চলে যায়।

Advertisement

চাননি প্রোটাগনিস্ট তেমন হোক?
হ্যাঁ, আসলে এই ‘নয়ার’-কে ভারতীয় সিনেমা-সিরিজে প্রায়ই কপি পেস্ট করা হয়। বিনোদ চোপড়ার টুকটাক কাজ বাদ দিলে, যদি ওয়েব সিরিজের কথাই ধরি, তাহলে যেমন ‘সেক্রেড গেমস’ বা অন‌্যান‌্য কাজে বিদেশি কাজের সরাসরি প্রভাব রয়েছে। আমার বক্তব‌্য হচ্ছে, দ‌্যাট ইজ নট হাউ আই সি মাই স্পেস। আমার পৃথিবীতে চূড়ান্ত হিংসার পাশাপাশি, চূড়ান্ত ভালোবাসা, সহমর্মিতা, কমপ‌্যাশন, ডোমেস্টিসিটি মিলেমিশে থাকে। সবসময় হয়তো আলাদা করা যায় না। ‘মেয়ার অফ ইস্টটাউন’-এ ‘মেয়ার’-এর জীবনে কিছুই ঠিক নেই। আমরা কিন্তু অনেক বেশি সেল্‌ফ প্রিজার্ভিং। আমাদের জীবনে সবকিছু একসঙ্গে নষ্ট হয়ে যায় না। আমাদের নেচারটা আলাদা। আমাদের জগৎ এতটা ডার্ক, কোল্ড নয়। যে লোকটা খুনি সেও অত ডার্ক নয়, যে লোকটা ইনভেস্টিগেট করছে সেও অত সহজ নয়। আমাদের জগতে নানা বৈচিত্র আছে, প্রায় খিচুড়ির মতো। সেই পাঁচমিশেলি স্বাদ আমি এখনকার থ্রিলারে পাই না, যেটা আমি ‘ছোটলোক’-এ রাখতে চেয়েছি। একটা আদ‌্যপান্ত বাঙালি থ্রিলার বানাতে চেয়েছিলাম।

Chhotolok

আর সেই কারণেই ‘সাবিত্রী মণ্ডল’, ‘মেয়ার অফ ইস্টটাউন’ বা ‘দাহাড়’-এর অঞ্জলি ভাটি নয়। এই মহিলা পুলিশ চরিত্রের ইন্সপিরেশন কোথা থেকে পেলেন? পুলিশ ইউনিফর্ম না থাকলে, ‘সাবিত্রী’ যে পুলিশ টের পাওয়া যায় না।
রাস্তাঘাটে কত পুলিশ তো দেখি। তারা বাড়ি ফিরে ইউনিফর্ম ছেড়ে দিলে, তোমার আমার মতোই। চাকরির খাতিরে তাদের অনেক কিছু করতে হয়। একটা ঘটনার কথা বলি, আমি রাস্তার মাঝখানে, সেখানে ঝামেলা চলছে। একজন পুলিশের উঁচু পদের অফিসার সেটা সামলাচ্ছেন, তাঁর হাতে ধরা দুটো ফোন। একটাতে সম্ভবত মেয়ের সঙ্গে কথা বলছেন, ‘মা, মা’ করে। তখুনি অন‌্য ফোনটা বেজেছে, সেটা তুলে প্রবল বাজে খিস্তি করল। এদিকে মেয়ের ফোন যে ধরা, মাথা থেকে বেরিয়ে গিয়েছে। আমার চোখের সামনে দেখলাম, পুলিশ অফিসারের চেহারাটা কেমন বদলে গেল! মেয়ের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে একেবারে ভেবলে গেল! আসলে বাড়িতে ও একটা আলাদা মানুষ। আর এটাই তো স্বাভাবিক। তাই ‘সাবিত্রী’-ই বা আলাদা কেন হবে! আমাদের চারপাশে কত মহিলা পুলিশ দেখি, অনেকের হাতে শাঁখা-পলাও থাকে। সে বাড়িতে কারও স্ত্রী, মা। সেই নানান কমপ্লেক্সিটির ছাপ তো জীবনে পড়বেই। আর সেটা ‘সাবিত্রী মণ্ডল’-এর আছে।

তবু বলব ‘ছোটলোক’ সিরিজে, ‘কাস্ট’ বিষয়টা খুব সূক্ষ্মভাবে এসেছে। ইস্যু হিসাবে সেটাকে আলাদা করা হয়নি। ‘কাঁঠাল’, ‘দাহাড়’ বা ‘ভিড়’-এর মতো ফোরফ্রন্টে আসেনি।
ইস্যুভিত্তিক ছবি আমার কাছে খুব প্রবলেমেটিক বলে মনে হয়। কারণ, আসলে জীবনে ওই ভাবে ইস্যু বলে কিছু থাকে না। জীবনে সব মিলেমিশে থাকে। ফিল্মমেকার ইস্যু নিয়ে দায়িত্ব নিচ্ছে, সেটাকে সামনে আনা হয়। আমি তো ‘কাস্ট’কে সামনে আনতে চাইছি না এই সিরিজে। ‘ছোটলোক’-এ ‘কাস্ট’ যেমন একটা ফ‌্যাক্টর, ‘জেন্ডার’-ও একটা ফ‌্যাক্টর। যার যেটা বোঝার সেটা দর্শক বুঝে নিতে পারবে।

[আরও পড়ুন: আবারও প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা ম্যাজিক, পুজো শেষ হতেই কৌশিকের নতুন ছবির কাজ শুরু]

‘ছোটলোক’ নিঃসন্দেহে নারীকেন্দ্রিক সিরিজ। দামিনী বেণি বসু, প্রিয়াঙ্কা সরকার, ইন্দ্রাণী হালদার, উষসী রায় অভিনীত চরিত্রগুলোই লিডে। অথচ নারীকেন্দ্রিক হয়েও গ্লোরিফিকেশন নেই। এমনকী, বেণি অভিনীত ‘সাবিত্রী’ প্রচলিত অর্থে ভালোর দিকে হলেও ম‌্যানিপুলেটিভ!
অফকোর্স ‘সাবিত্রী’ ম‌্যানিপুলেটিভ। তার নানারকম চেহারা আমরা দেখি। বাড়িতে বাচ্চাদের সঙ্গে, বসের সঙ্গে কিংবা বরের সঙ্গে তার মুখগুলো আলাদা। আবার ক্ষমতাশালী ‘মোহর ভট্টাচার্য’র (ইন্দ্রাণী হালদার) সঙ্গে যখন কথা বলছে তখন একরকম। যে মানুষটা জীবনে কর্নারড হয়ে এসেছে, সে ম‌্যানিপুলেটিভ হবেই। লেখার সময় এই সব মাথায় রেখেই লেখা। মানুষের জীবন এমনিতেই জটিল। এবং ‘ছোটলোক’-এ এমন কিছু দেখানো হয়নি যা তাত্ত্বিকভাবে জটিল। বেণির, ‘সাবিত্রী’-র চরিত্রটা করতে একটু সমস‌্যা হয়েছিল। ও কিছুতেই ‘সাবিত্রী’-কে একটা মানুষ হিসাবে দেখতে পারছিল না।

একটু বিশদে জানতে চাই…
শুটিংয়ের প্রথমদিকে ঝগড়া করে, তর্ক করে প্রায় মাথা খেয়ে ফেলেছিল। ওর বক্তব‌্য ‘সাবিত্রী’ তো দশটা লোক। বাচ্চাকে প্রোটেক্ট করার সময় প্রায় সিংহীর মতো, বরের সঙ্গে খুনসুটি করে, বসের কাছে তেল মারে, ক্ষমতায় থাকা মানুষদের কাছে প্রয়োজন মতো ম‌্যানিপুলেট করে, আবার দরকার পড়লে প্রবলভাবে পাওয়ার দেখাতে পারে। বেণির বক্তব‌্য, ‘এতগুলো লোক কেন? আমি কোনও সেন্টার পাচ্ছি না’।

আমাদের কি কোনও সেন্টার থাকে…
আমার পয়েন্টটা সেটাই ছিল। বেণি নিজের জীবনে খুব ফোকাসড। ওর অভিনেতা সত্তাটাই ওভারপাওয়ার করে। কিন্তু সাধারণ মানুষ তা নয়। ওঁকে বলেছিলাম, ‘ইউ নিড টু ট্রাস্ট দ‌্য স্ক্রিপ্ট’। ওকে কনভিন্স করতে আমার সময় লেগেছিল। এবং তারপর যে অভিনয়টা করেছে, এটা কে করতে পারত, আমি জানি না। আর ‘সাবিত্রী মণ্ডল’-এর চরিত্রটাও ওকে ভেবেই লেখা।

Indranil-Roychowdhury

‘মায়ার জঞ্জাল’-এও দেখেছি, ‘ছোটলোক’-এও দেখলাম, এই সময়ে দাঁড়িয়ে প্রেম অনেক পিছনে চলে যায়।
জীবনের কঠিন স্ট্রাগলে, প্রেম, ভালোবাসার ক্ষমতা সবার আগে বলিপ্রদত্ত হয়। কারণ অনেক রাগ তৈরি হয়, আর সেই রাগের প্রথম পাত্র হয়, যে আমার সবচেয়ে কাছের। এই যে থিয়োরি, আগেকার দিনে সম্পর্ক কম ভাঙত, কারণ, মহিলাদের কাছে অপশন ছিল না, এটা খানিক সত্যি হলেও পুরোটা নয়। বর্তমান জীবনের যে ধরনের স্ট্রেস সেটা আগে ছিল না। তখনকার স্ট্রেস ছিল আমাদের চেনা। এখনকার মতো এমন কোনও স্ট্রেস ছিল না, যেটার সঙ্গে বড় হয়ে লড়াই করা যায় না। এখনকার স্ট্রেস সেইরকম। যে পৃথিবীতে বিউটি, সত‌্য, রূপসা, সুমন বেঁচে আছে, সেখানে সারভাইভ করার জন‌্য ওরা প্রস্তুত নয়।

এই মুহূর্তে অন‌্যান‌্য বাংলা ওটিটি প্ল‌্যাটফর্মে যে সব গোয়েন্দা সিরিজ চলছে, সেখানে ‘ছোটলোক’-এর মহিলা এস.আই. ‘সাবিত্রী’ ছবিটা বদলে দেবে?
আমার তো মনে হয় প্রাইভেট গোয়েন্দা থেকে বেরিয়ে আসা দরকার। যেটা শরদিন্দুবাবু বা সত‌্যজিৎ রায় লিখেছিলেন, সেটা একটা কাল্পনিক জগৎ। কোনওকালেই ভারতে, প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর বলে কোনও বস্তু ছিল না। যেটুকু ছিল বা আছে সেটা হল কর্পোরেট খবরাখবর বের করার জন‌্য বা কার বউ কার সঙ্গে কী করছে বা বিয়ের আগে ছেলে বা মেয়ের সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া। এটা আলাদা কাজ। উনিশ শতকের ইংল‌্যান্ড, আমেরিকার রিয়ালিটি থেকে এখানে সেই গোয়েন্দাদের আনছি প্রায় সুপার হিউম‌্যান চরিত্র করে। ফেলুদা এমন একজন চরিত্র যে ‘ফ্ললেস’। রূপকথার মতো।

সেই ক্রাইমের জগতের সঙ্গে তো এখন মিল নেই…
হ্যাঁ, এটা এখন ডেটেড। আধুনিক ক্রাইমের জগৎ বেশি জটিল। আমাদের ক্রাইম থ্রিলারে সমসময়ও রিফলেক্ট হওয়া উচিত বলে আমার মনে হয়। প্রচলিত পি.আই. মডেল আমাদের জগতের লোক নয়। সাতের দশকের কিশোর ফ‌্যান্টাসির আইকন ফেলুদা। যে জগৎ ঘিরে ফেলুদা তৈরি হয়েছিল সেটা সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছে। সেই জগতের রোমান্সটা আর বেঁচে নেই। যে জগৎ ‘মগজাস্ত্র’কে সর্বশ্রেষ্ঠ বলে ভাবত, দ‌্যাট ইজ এ প্রোডাক্ট অফ সিক্সটিজ অ‌্যান্ড সেভেনটিজ। আমরা যে পৃথিবীতে বাঁচি সেটা অনেক বেশি কমপ্লেক্স, শুধু বুদ্ধি দিয়ে সেখানে এগনো যাবে না। সেই কারণেই আমার সিরিজের সাবইন্সপেক্টর ‘সাবিত্রী’ একজন রক্তমাংসের ‘হিরো’। যার মধ্যে পঞ্চাশটা দিক আছে। আর এত পুরুষ প্রোটাগনিস্ট দেখেছি, এবার একটা ক‌্যাবলা মেয়ে কী করতে পারে দেখাই যাক না।

[আরও পড়ুন: চাকদহ নাট্যজনের নাট্যোৎসব বাতিল, সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের অবস্থানে নাটক করার খেসারত!]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement