সুপর্ণা মজুমদার: লোকসভা ভোটের দামামা বাজতে না বাজতেই কার্যকর সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বা সিএএ (CAA)। সারা দেশে এ বিষয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া। কেউ পক্ষে কথা বলছেন, কেউ আবার প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে কী ভাবছেন? জানালেন পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, অভিনেতা রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ঋদ্ধি সেন।
কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, পরিচালক:
অন্য দেশ থেকে আসা মানুষের পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে আমার বা আমাদের কোনও বিরোধ নেই, বিরোধটা হচ্ছে একটা বিশেষ সম্প্রদায়কে এই আইন থেকে বাদ দেওয়া। আরেকটা কথা হচ্ছে যে লোকসভা ভোটের আগেই তা করা হচ্ছে। আর এটা বোধহয় সময়োচিত নয়।
রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিনেতা ও লেখক:
স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই CAA আনা হচ্ছে এবং এটার তো সামগ্রিক বিরোধিতা ছাড়া আর কোনও রাস্তা দেখছি না। প্রাদেশিকতা তো চিরকালই ওদের একটা খেলনা। হিন্দি আগ্রাসনও একটা বড় ব্যাপার। সব মিলিয়েই গোটা বিষয়টা খুব নক্কারজনক এবং ঠিক ভোটের আগে CAA আনা এবং একটার পর একটা ভোটকে কেন্দ্র করে নরেন্দ্র মোদিকে প্রায় ঈশ্বর রূপে প্রতিস্থাপন করার যে চেষ্টা বিজেপি করছে এটা ওদের উলটো ব্যাকফায়ার করার চান্সও অনেক বেশি।
ঋদ্ধি সেন, অভিনেতা:
প্রথমত একটা আইন যার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে প্রায় এগারোটা মতো মামলা চলছে, এখনও তো পুরো ক্লিয়ারেন্স পায়নি তার মধ্যে এমন একটা বিষয় আইন হিসেবে কীভাবে কার্যকর হতে পারে? এটা প্রথম পয়েন্ট। আর দুনম্বর পয়েন্ট হচ্ছে যে এটা ২০১৯-এর এত সময় পরে, প্রায় চার বছর পরেই কেন করা হচ্ছে? এটা ভীষণভাবে একটা চোখে লাগার মতো বিষয়। ২০১৯ সালে যখন এটা প্রয়োগ করার চেষ্টা হয়েছিল এবং তার পরে সারা দেশ জুড়ে যে আন্দোলন হয়েছিল। সেই ঘটনার চার-চারটে বছর পরে মানুষের স্মৃতি থেকে যখন পুরো বিষয়টা বেরিয়ে গেছে, ঠিক ভোট শুরু হওয়ার কয়েক সপ্তাহ আগে এটাকে কার্যকর করার মধ্যে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে গোটা বিষয়টায় একটা রাজনৈতিক ছাপ রয়েছে। এটা বিপজ্জনক ও ভয়ানক।
এবং তৃতীয়ত, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন মানে যদি এটাই হয় যে মাইনরিটি যাঁরা বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছেন সেই তালিকা থেকে মুসলিমদের বাদ দেওয়া। তাহলে তো প্রচণ্ডভাবে যেকোনও সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের প্রশ্ন তোলা উচিত, শুধু মুসলিমদের কেন রাখা হয়নি? সুতরাং এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে একটা নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের মানুষকে বাদ দেওয়ার পেছনে রাজনৈতিক কারণ এবং রাজনৈতিক আদর্শ রয়েছে। ভারতীয় জনতা পার্টি যে আদর্শে বিশ্বাস করে সেই আদর্শ তাঁরা চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে এবং সেদিক থেকেও এই আইন প্রচণ্ড জটিল।
ইতিমধ্যেই অসমে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। দেশজুড়ে বিভিন্ন জায়গায় যাঁরা ২০১৪-র আগে এসেছেন এ দেশেই তো রয়েছেন, ভোট দিয়েছেন। সুতরাং তাঁরা তো নাগরিকই। তাহলে তাঁদের আর নতুন করে কি নাগরিকত্ব দেওয়া হবে? আমাদের এত জনসংখ্যার দেশে বহু মানুষের যথাযথ নথি নেই, তাঁদের ক্ষেত্রে আইন কী? সুতরাং অনেক প্রশ্ন আছে যা ক্লিয়ার না করে যদি দেশজুড়ে এই আইন চালু করা হয় তাহলে বিশাল কনফিউশনের সৃষ্টি হতে পারে এবং সেটা খুবই খারাপ একটা চেহারা নিতে পারে। সরকার যতক্ষণ না বিরোধী পক্ষ, আদালত, নাগরিকদের পশ্নের উত্তর পরিষ্কার করে না দিতে পারছে তার আগে এই আইন চালু করা প্রচণ্ড বিপজ্জনক।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.