Advertisement
Advertisement

Breaking News

Golondaaj Review

Golondaaj Review: ফুটবল ও দেশপ্রেমের যুগলবন্দি ‘গোলন্দাজ’, মাইলফলক দেবের

ধর্ম-বর্ণ বিভাজনের ঊর্ধ্বে গিয়ে তৈরি হয় নগেন্দ্রপ্রসাদের স্বপ্নের একাদশ।

Here is the review of Dev starrer Bengali Movie Golondaaj | Sangbad Pratidin
Published by: Suparna Majumder
  • Posted:October 10, 2021 5:31 pm
  • Updated:October 10, 2021 6:18 pm  

শম্পালী মৌলিক: পঞ্চমীতে মুক্তি পেল ‘গোলন্দাজ’ (Golondaaj)। বড় ক‌্যানভাসের ছবি। ফুটবল আর দেশপ্রেমের ককটেল পুজো-রিলিজের কলার টিউন সেট করে দিল। বিস্মৃত প্রায় একটি মানুষের জীবনছোঁয়া কাহিনির হাত ধরে উঠে এসেছে ব্রিটিশ শাসিত ভারতের প্রেক্ষাপট। ‘ক‌্যাপ্টেন অফ দ‌্য শিপ’ পরিচালক ধ্রুব বন্দ‌্যোপাধ‌্যায়। ইতিমধ‌্যেই তাঁর যথেষ্ট দর্শক তৈরি হয়েছে ‘গুপ্তধন’ ফ্র‌্যাঞ্চাইজির সাফল‌্যের সূত্র ধরে। বঞ্চিতদের উত্থানের কাহিনি ‘গোলন্দাজ’। আর অবশ‌্যই মলাটচরিত্রে দেব (Dev), তাঁর মাইলফলক বলা যায় এ ছবিকে। ভারতীয় ফুটবলের জনক নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারী হয়ে ওঠার জন‌্য নিজেকে ভেঙেচুরে নতুন করে গড়ে নিয়েছেন তিনি। উৎসবের মরশুমে দর্শক এ ছবি দেখতে যাবে।

Golondaaj

Advertisement

ছবিতে ফুটবলের ভাগ যতখানি, দেশভক্তির সুবাস ততখানি। যে কারণে, ‘চক দে ইন্ডিয়া’ বা ‘লগান’-এর কথা দর্শকের মনে পড়বে। খেলা আর দেশপ্রেমীদের লড়াই দু’টো সমান্তরাল ভাবে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন পরিচালক। ব্রিটিশদের যে খেলায় পরাধীন ভারতের বাসিন্দারা  অচ্ছু‌ৎ ছিলেন, সেই ফুটবল খেলাকে নগেন্দ্রপ্রসাদ-ই জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন এদেশে। আর এ তো শুধু খেলা নয়, মাঠের লড়াইয়ে ইংরেজদের সমকক্ষ হয়ে ওঠা, তার আঁচ রাজনীতির ময়দানে পড়তে বাধ্য।

 Dev plays Nagendra Prasad Sarbadhikari in Golondaaj

যাঁদের পদানত রাখতে চায় শাসক, তাঁদের উত্থান-সম্ভাবনা দেখামাত্র পিষে মারতে চায় সাহেবরা। ঠিক এই কারণে নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারীর ভূমিকা এত গুরুত্বপূর্ণ এদেশের ফুটবলের ইতিহাসে। ধ্রুব বন্দ‌্যোপাধ‌্যায়ের চিত্রনাট‌্য-পরিচালনা-ক্রীড়া নির্দেশনা, তাঁর ও দুলাল দে-র কাহিনি আর নায়ক দেবের প্রচেষ্টায় সেই ইতিহাস এ বার উঠে এসেছে বড়পর্দায়। এবং সিংহভাগ সফল।

[আরও পড়ুন: F.I.R Movie Review: এবার ‘সিংহম’ অবতারে অঙ্কুশ, কেমন হল এফআইআর?]

ছবির গল্প কেমন? ছোট থেকেই নগেন্দ্রর (দেব) ধ‌্যানজ্ঞান ছিল ফুটবল। তিনি ছিলেন প্রথম ভারতীয় যে ফুটবলে পা দেন। প্রায় ১২/১৩টি ক্লাব গঠন করেছিলেন। ১৮৮০ সালে নগেন্দ্র ওয়েলিংটন ক্লাব গঠন করেন। কিন্তু ব্রিটিশদের এই খেলায় ‘নেটিভ ইন্ডিয়ান’-দের জায়গা ছিল না। নগেন্দ্রর প্রতিজ্ঞা ছিল ব্রিটিশদের খেলায়, তাদেরই পরাস্ত করা। ‘ফ্রেন্ডস’, ‘বয়েজ’, ‘প্রেসিডেন্সি’ ক্লাবের সংযুক্তিতে নগেন্দ্র ‘ওয়েলিংটন’ ক্লাব শুরু করলেও নানা কারণে একসময় তা ভেঙে যায়। ডুরান্ড কাপে খেলা হয় না তাদের। যেখানে সমাজের প্রভাবশালী কুচক্রীদের ভূমিকা ছিল।

Bengali Movie Golondaaj

পরবর্তীকালে রাজা আনন্দকৃষ্ণ দেব (পদ্মনাভ দাশগুপ্ত) ও অন‌্য ক্ষমতাবানদের সঙ্গে মিলিতভাবে নগেন্দ্র ‘শোভাবাজার ক্লাব’ তৈরি করেন। এবং ‘ট্রেডস কাপ’ ফাইনালে খেলার স্বপ্ন দেখেন। যেখানে তাঁর প্রধান প্রতিপক্ষ মেজর জ্যাকসনের টিম। নগেন্দ্রর দল গঠনের পর্যায়টি সুন্দরভাবে উঠে এসেছে ছবিতে। ফুটবল তো টিম গেম। নগেন্দ্র দিশা দেখাতে পারেন, জয় তো একার লড়াইয়ে আসে না! তাঁর দলে জায়গা করে নেন সমাজের সব স্তরের মানুষ। ধর্ম-বর্ণ বিভাজনের ঊর্ধ্বে গিয়ে তৈরি হয় নগেন্দ্রপ্রসাদের স্বপ্নের একাদশ। জটাধারী (বিশ্বজিৎ দাস), ক‌্যাপ্টেন জিতেন্দ্র (ইন্দ্রাশিস), বিনোদ (জন ভট্টাচার্য), সাইরাস (অনিরুদ্ধ গুপ্ত), মজিদ (জাকির হোসেন), রানার দুখিরাম (অনির্বাণ সিকদার), পুরোহিত (দুলাল দে), মণি দাস (উজান চট্টোপাধ‌্যায়), সুরদাস (অমিতাভ আচার্য), মহিদুল (দেবেশ সরকার)– এদের নিয়ে গড়ে ওঠে নগেন্দ্রর স্বপ্নের ফুটবল টিম। সঙ্গে রইল ছায়াসঙ্গী নারু (অভিনয়ে মির্চি অগ্নি)।

New Bengali movie Golondaaj

এই যাত্রাপথে নগেন্দ্রর জীবনে জুড়ে যায় ‘কমলিনী’ (ইশা সাহা) ভালবাসায়। প্রতি পদক্ষেপে কমলিনীর নীরব সমর্থন নগেন্দ্রকে এগিয়ে দেয় জয়ের দিকে। খুব সুন্দর মানিয়েছে দেব-ইশা (Ishaa Saha) জুটিকে। রাসের গানে তাঁদের রসায়ন চোখে পড়ার মতো। ইশা শুধুমাত্র অভিব‌্যক্তি দিয়ে প্রেম, যন্ত্রণা সবকিছু ফুটিয়ে তুলেছেন। তাঁর চরিত্রটি আরও পরিসর পেলে ভাল লাগত।

ফুটবল-দাম্পত‌্য-দেশসেবার মাঝে আসে নগেন্দ্রর বহু প্রতীক্ষিত ‘ট্রেডস কাপ’ ফাইনাল। নগেন্দ্রপ্রসাদের দল কি পারে ইংরেজদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে? ঘটনা বহুল সেই ম‌্যাচ সিনেমা হলে দেখাই ভাল। একদিকে খালি পায়ে ভারতীয়দের লড়াই, অন‌্যদিকে বুট পরা গোরা সাহেবদের কড়া ট‌্যাক্‌ল। সৌমিক হালদারের ক‌্যামেরা চমৎকার। শেষ পর্যন্ত ‘গোলন্দাজ’ ফুটবল আর দেশপ্রেমের যুগলবন্দি, ফলে তার বক্স অফিস জয় আটকায় কে? তবে ছবির দৈর্ঘ‌্য কম হতে পারত। আর কোনও কোনও সিকোয়েন্সে অতি নাটকীয়তা একটু কম থাকলে মন্দ হত না।

ছোট ছোট চরিত্রে শ্রীকান্ত আচার্য (সূর্য কুমার সর্বাধিকারী), জয়দীপ মুখোপাধ‌্যায় (প্রসন্ন সর্বাধিকারী), তুলিকা বসু, পদ্মনাভ দাশগুপ্ত একেবারে যথাযথ। প্রধান খলচরিত্রে অ‌্যালেক্স ও’নিল বড্ড ভাল। আর বিপ্লবী ভার্গবের ভূমিকায় অনির্বাণ ভট্টাচার্য খুব ইন্টারেস্টিং, তাঁর ভয়েসওভার মনোযোগ টানবে ছবি চলাকালীন। মির্চি অগ্নি অভিনয়ে মন্দ নন। ইন্দ্রাশিস রায় জিতেন্দ্রর ভূমিকায় খুব ভাল, চরিত্রের সঙ্গে মিশে গিয়েছেন। ভাল লাগে জন ভট্টাচার্যকেও। বেশ মানিয়েছে কুচক্রী নবকুমারের চরিত্রে আরেক অনির্বাণ ভট্টাচার্যকে। আর উল্লেখযোগ‌্য সাইরাসের চরিত্রে অনিরুদ্ধ গুপ্তর কাজ। আর দেব? মুখ্য চরিত্রে নিজেকে ছাপিয়ে গিয়েছেন। তিনি এখন অনেক পরিণত। ছবির মিউজিক করেছেন বিক্রম ঘোষ, সিনেমার মেজাজের সঙ্গে মানানসই। আর গান লিখেছেন শ্রীজাত ও সুগত গুহ। পরিচালক ধ্রুব বন্দ‌্যোপাধ‌্যায় দর্শকের পাল্‌স বোঝেন, তাই বলতেই হয় ‘গোলন্দাজ’ সর্বার্থে পুজোর ছবি। লোকে হইহই করে দেখবে।

  • ছবির নাম – গোলন্দাজ
  • পরিচালনা – ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়
  • অভিনয়ে – দেব, ইশা সাহা, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, বিশ্বজিৎ দাস, ইন্দ্রাশিস, জন ভট্টাচার্য, অনিরুদ্ধ গুপ্ত, জাকির হুসেন, অনির্বাণ সিকদার, দুলাল দে, উজান চট্টোপাধ‌্যায়, অমিতাভ আচার্য, দেবেশ সরকার।

[আরও পড়ুন: লালপেড়ে শাড়ি পরে মায়ের পুজো শুরু করলেন স্বস্তিকা, মিস করছেন কাছের মানুষকে]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement