স্পর্ধা। নতুন কিছু করার স্পর্ধা। তার প্রচারের জন্য তুমুল লড়াই করার স্পর্ধা পরিচালক-অভিনেতা হেমন্ত তিওয়ারির (Hemwant Tiwari) মধ্যে রয়েছে। তাই তো শিয়াল সেজে নেমে পড়েছেন কলকাতার রাস্তায়। নন্দন থেকে ভিক্টোরিয়া, হাওড়া থেকে মানিস্ক্যোয়ার চষে বেড়াচ্ছেন । উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায় তৈরি করা সিনেমা ‘লোমড়’-এর (২৪টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার পাওয়া) প্রচার করা। যে সিনেমা মাত্র কলকাতার একটি মাত্র সিনেমা হলে মুক্তি পাচ্ছে। কীসের এই স্পর্ধা? তা জানতেই ফোন করা হয়েছিল পরিচালককে। সুপর্ণা মজুমদারের সঙ্গে কথা বললেন ইন্ডিপেনডেন্ট ফিল্মমেকার।
শিয়াল সেজে রাস্তায় নেমে সিনেমার প্রচার। কী ভেবে নেমে পড়লেন প্রচারের ময়দানে?
এই আইডিয়াটা তখন এল যখন চারদিক থেকে শুধুই নিরাশ হতে হচ্ছিল। কোনও রাস্তা খোলা ছিল না। প্রথমে তো মানুষজন বুঝতেই পারছিলেন না সিঙ্গল শট সিনেমা কী হয়, কীভাবে হয়। তারপর সিনেমা যখন তৈরি হয়ে গেল। আমরা বিভিন্ন ফেস্টিভ্যালে পাঠাই। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাই। কিন্তু রিলিজ বা প্রচার করার টাকা ছিল না। ছবি কিনে নেওয়ার অফার দেওয়া হয়েছিল। কারণ তখন মানুষজন জেনে গিয়েছিলেন যে এভাবেও সিনেমা তৈরি করা যায়। কিন্তু ছবির সত্ত্ব বিক্রি করে দিলে আমার আর কোনও অধিকার থাকবে না। যাঁরা কিনবেন তাঁরা স্টারদের নিয়ে নতুন করে তৈরি করবেন। তাতে আমি রাজি ছিলাম না। দু’বছর চাকরি করেছি। তারপর রিলিজের টাকা জোগাড় করতে পেরেছি। কিন্তু প্রচার করার টাকা ছিল না। নিজেকেই কিছু একটা করতে হবে। ভেবে নিয়েছিলাম। একদিন ঘুম থেকে উঠেই আইডিয়াটা এল। দর্জিকে দিয়ে শিয়ালের পোশাক তৈরি করালাম। তারপর রাস্তায় নেমে পড়লাম।
কোন কোন চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কার পেয়েছেন?
সবচেয়ে বেশি অ্যাওয়ার্ড পাওয়া সিঙ্গল শট ফিল্ম ‘লোমড়’ (Lomad)। ২৪টা আন্তর্জাতিক পুরস্কার এখনও পর্যন্ত পেয়েছি। সিয়াটেল চলচ্চিত্র উৎসবে বেস্ট অ্যাচিভমেন্ট ইন ফিল্ম মেকিং, সেরা পরিচালনার সম্মান পেয়েছি। স্যান্টামনিকা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সেরা পরীক্ষামূলক সিনেমা, ফ্লোরিডা চলচ্চিত্র উৎসবেও সম্মান পেয়েছি।
কবে থেকে ‘লোমড়’-এর যাত্রা শুরু হল?
আসলে আমার অন্য একটা বিষয়ে সিনেমা তৈরি করার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু একটি চলচ্চিত্র উৎসবে গিয়ে আমি একই ধরনের কাহিনি দেখতে পেলাম। তারপর অন্য আইডিয়া খুঁজছিলাম। কোনও ঘটনা মনে ধরলেই আমি লিখে রাখি। ২০১৬ সালেই এভাবেই কিছু একটা লিখতে শুরু করেছিলাম। ২০১৭ সালে রাফ স্ক্রিপ্ট তৈরি। আর ২০১৮ সালে পুরো স্ক্রিপ্ট রেডি ছিল। ২০১৯ সালের এপ্রিলের মধ্যে গোটা সিনেমার প্রিন্ট আমার হাতে ছিল। তারপর ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে পাঠাতে শুরু করি। মাঝে কোভিড হয়।
সিনেমা সম্পর্কে কিছু বলুন
‘লোমড়’ ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিটের সিঙ্গল শট ফিল্ম। কোনও কাট নেই। এমন এক যুগলের গল্প যাঁরা ১০ বছর আগে এক সঙ্গে ছিল। বহুবছর বাদে আবার দেখা হচ্ছে। তাঁদের মধ্যে কী কী বদল এসেছে। এর মধ্যেই তাঁদের গাড়ি খারাপ হয়ে যায়। আরও চরিত্ররা আছে। আবার সবার ভিতরের ধুর্ত শিয়ালের মতো স্বভাব দেখা যায়। আমাদের সবার মধ্যেই ভিন্ন এক আমি বাস করে। যাকে আমরাই চিনি না। এই নিয়েই সিনেমা। আমি ছাড়া বাকি শিল্পীরা সবই FTII-এর। শিখর দে, তীর্থা মুরবারকর, পরিমল আলোক, আমরা সবাই নতুন। আমরা সবাই খুব পরিশ্রম করেছি।
কলকাতায় কবে এলেন?
গত শুক্রবার কলকাতায় এসেছি। রাতেই হাওড়া চলে গিয়েছিলাম। ভিক্টোরিয়া ময়দানে গিয়েছিলাম। পাটুলিতে গিয়েছিলাম। আর মানিস্ক্যোয়ারের আশেপাশে যাব। পিভিআর মানিস্ক্যোয়ারেই যেহেতু সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে। আরও যেখানে যেখানে পারব যাব।
মানুষ কী বলছে?
কিছু তো একটা হয়েছে। তার জন্যই তো আপনি আমার সঙ্গে কথা বলছেন। আমাকে সাপোর্ট করার চেষ্টা করছেন। মানুষ এত সাহায্য করছে আমি সত্যিই খুশি। সবার এত ভালবাসা পেয়েছি। কলকাতার তো কথাই আলাদা। মানুষ আগে থেকেই জানেন আমি কী বলতে চলেছি। এত ভালবাসা সত্যিই ভাল লাগে। কোন পরিচালক, কোন অভিনেতা চাইবেন না বলুন তো এত পরিশ্রমের পর এই রেসপন্স পেতে।
কলকাতাতেই কি প্রথম মুক্তি পাচ্ছে ‘লোমড়’?
না, ৪ আগস্ট মুম্বই, দিল্লি, গুরগাও, নয়ডাতে মুক্তি পেয়েছে। ২৫ আগস্ট কলকাতায় শুধু PVR মানিস্ক্যোয়ারে দেখা যাবে।
একটা মাত্র সিনেমা হল!
এটাই স্বাধীনভাবে ছবি তৈরি করা পরিচালকের জীবন। এর জন্য বাজেট হতে হবে। আমার কাছে এত বাজেট নেই যে কলকাতার সমস্ত PVR-এ রিলিজ করি। হ্যাঁ, যদি মানুষের ভালবাসা পাই। তাহলে আরও হলে দেখানোর চেষ্টা নিশ্চয়ই করব। সেই মতো PVR-এর সঙ্গে কথা বলব।
View this post on Instagram
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.