সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দু’টি গ্র্যামি ন’বছর আগেই ঝুলিতে ভরেছিলেন। ২০১৯-এর ৬১তম গ্র্যামি পুরস্কারের জন্য মনোনয়নে তিনি থাকুন বা না থাকুন, আমন্ত্রণ ছিল। লস অ্যাঞ্জেলেসের স্ট্যাপলস সেন্টারে মেয়ে রহিমাকে নিয়ে সেই আমন্ত্রণ রক্ষা করলেন ভারতের সংগীত জগতের অন্যতম সেরা সুরকার এ আর রহমান। অনুষ্ঠান ছিল রবিবার সন্ধ্যায়। অর্থাৎ, ভারতীয় সময় সোমবার সকালে। রহমানকে দেখা গেল গ্র্যামি মঞ্চে অনুষ্ঠানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত আপডেটই অনুষ্ঠান চলাকালীন নিজের সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে পোস্ট করতে। অ্যাওয়ার্ড নাইটে প্রবেশের আগের মুহূর্তে বন্ধুদের সঙ্গে তোলা গ্রুফি থেকে শুরু করে মেয়ে রহিমার সঙ্গে তাঁর ছবি, গ্র্যামির মঞ্চের উদ্বোধনী আয়োজন, লেডি গাগার পারফরম্যান্সের ভিডিও, ক্যামিলা কাবেলোর গানের সময়ের বিশেষ মঞ্চসজ্জা – কী নেই তাতে। রয়েছে ৮৬ বছরের গ্র্যামি বিজেতা কুইনসি জোনসের ছবিও। যার বিবরণে রহমান আবার লিখেছেন,“একমাত্র সংগীতই বোধ হয় পারে এই বয়সেও আমাদের এইভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে!”
All set to go for Grammy Awards night ! pic.twitter.com/EwRadpcgLL
Advertisement— A.R.Rahman (@arrahman) February 10, 2019
প্রতিশোধের কৌশল শেখাতে আসছে সৃজিতের নতুন ক্রাইম থ্রিলার
সংগীতের আন্তর্জাতিক সম্মানের সর্বোচ্চ মঞ্চ গ্র্যামি। ৬১তম গ্র্যামি পুরস্কারের মঞ্চে পুরস্কৃত করা হল ২০১৭-র ১ অক্টোবর থেকে ২০১৮-র ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রকাশিত সংগীতের সেরা রেকর্ডিং, কম্পোজিশন ও শিল্পীদের। রহমানের সঙ্গে ছিলেন তাঁর সংগীত দুনিয়ার তিন বন্ধু। লন্ডনের প্রশান্ত মিস্ত্রী, নিউ ইয়র্কের ফাল্গুনি শাহ এবং আমেরিকার সতনাম কৌর। এঁরা তিনজনেই তাঁদের অ্যালবাম সিম্বল, ফালু’স বাজার এবং বিলাভেড-এর জন্য গ্র্যামি পুরস্কারের বিভিন্ন বিভাগে মনোনীত হয়েছিলেন। অবশ্য কেউই শেষপর্যন্ত গ্র্যামি জিততে পারেননি। এবারের গ্র্যামি পুরস্কার অনেক দিক দিয়েই ছিল অন্যবারের তুলনায় আলাদা। এতদিন গ্র্যামির মঞ্চে পুরুষ শিল্পীদের একাধিপত্যের অভিযোগ উঠেছিল। এবছর উলটপুরাণ। নারীশক্তির জয়জয়কার দেখল গ্র্যামি অনুষ্ঠান। মূল বিভাগের বেশ কয়েকটিতে পুরস্কার জিতে পুরুষ শিল্পীদের থেকে নজর কেড়ে নিলেন লেডি গাগা, কেসি মুসগ্রেভস, কার্ডি বি, আরিয়ানা গ্রান্দে-র মতো শিল্পীরা। গ্র্যামির ‘পার্সন অফ দ্য ইয়ার’ বিভাগেও সম্মান জানানো হল মার্কিন সংগীত ‘আইকন’ ডলি পারটনকে। কান্ট্রি মিউজিক যা আদতে দক্ষিণ আমেরিকার লোকসঙ্গীত থেকে অনুপ্রাণিত৷ তার সঙ্গেই পপ সংগীতের মেলবন্ধন ঘটিয়ে সাতের দশকে তৈরি হয় কান্ট্রি পপ। পারটন এই কান্ট্রি পপের একজন জনপ্রিয় শিল্পী সাতের দশকের মাঝামাঝি তাঁর বহু গান মার্কিন কান্ট্রি সিঙ্গল এবং পপ সিঙ্গল চার্টের শীর্ষে থেকেছে।
গ্র্যামির মঞ্চে অনুষ্ঠানের শুরুটাই হয় পারটনকে সম্মান জানিয়ে একটি ১০ মিনিটের ‘অল আর্টিস্ট ট্রিবিউট’ দিয়ে। সমস্ত শিল্পীরা পারটনের গাওয়া গান গেয়েই সম্মান জানান তাঁকে। পারটন নিজেও যোগ দেন সেই গানে। সুর মেলান তরুণ শিল্পীদের সঙ্গে। ছিলেন কেটি পেরি, লেডি গাগা, মাইলি সাইরাস, কেসি মুসগ্রেভস-সহ সমস্ত শিল্পীরাই। ১০ মিনিটের সেই অনুষ্ঠানের ছবিও রহমান পোস্ট করেছেন তাঁর ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে।
গ্র্যামির অনুষ্ঠানের জন্য রহমান এদিন পড়েছিলেন কালচে ধূসর আর কালো স্যুট। রহিমাও বাবার রঙের সঙ্গে মিলিয়ে পড়েছিলেন সম্পূর্ণ কালো পোশাক। দু’জনের ছবিতে ভক্তদের পাশাপাশি মন্তব্য করেছেন সেলব্রিটিরাও। বন্ধুদের সঙ্গে রহমান ও রহিমার ছবিতে প্রিয়াঙ্কা চোপড়া লিখেছেন “ভারতীয় হিসাবে গর্ববোধ করছি”। সম্প্রতিই গ্র্যামি পুরস্কার বিজেতা কিছু বন্ধুদের সঙ্গে পার্টি করতে দেখা গিয়েছিল প্রিয়াঙ্কা চোপড়া আর নিক জোনাসকেও। যদিও গ্র্যামির অনুষ্ঠানে তাঁদের দেখা মেলেনি। মহিলা আধিপত্য সম্বলিত এবারের গ্র্যামি মঞ্চে আরও একটি বড় চমক ছিলেন প্রাক্তন মার্কিন ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা। তিনি মঞ্চে যান এবারের গ্র্যামির হোস্ট অ্যালিসিয়া কিজকে সমর্থন করতে। ১৪ বছরের দীর্ঘ বিরতির পর আবার কোনও মহিলা গ্র্যামির মঞ্চে হোস্টের ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন। রবিবার সন্ধ্যায় মঞ্চে এসে কিজ পুরস্কারের রাতের সবচেয়ে বড় চমকের ইঙ্গিত দিয়ে হঠাৎই ডাক পাঠালেন তাঁর ‘বোনদের’। গ্র্যামির অতিথিরা যখন অত্যন্ত আগ্রহ নিয়ে কিজের বোনদের অপেক্ষা করছেন, তখনই মঞ্চে একে একে প্রবেশ করছেন মিশেল ওবামা, জেনিফার লোপেজ, জেডা পিঙ্কেট স্মিথ এবং লেডি গাগা। কিজ বললেন, ‘এই মঞ্চটা আসলে একে অপরের মহত্বকে উদযাপন করার। আমি আজ সেটাই করার চেষ্টা করব।’
এবারের বার্লিনালেতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই প্রতিযোগিতা বিভাগে
মিশেল ওবামা এদিন বলেন, ‘সংগীত যেমনই হোক -কান্ট্রি, র্যাপ বা রক, আসলে আমাদের নিজেদের আবেগকে পরষ্পরের সঙ্গে ভাগ করে নিতে সাহায্য করে। আমাদের ব্যক্তিত্ববোধ, আমাদের আশা আকাঙ্ক্ষা সুখ-দুঃখ অন্যদের বোঝানোর একটা দারুণ মাধ্যম এই সংগীত। সংগীত আমাদের একে অপরকে শুনতে সাহায্য করে। প্রতি স্বরে নতুন কাহিনি, প্রতি সুরে নতুন গান-সংগীত আসলে এটাই।’ সবচেয়ে বেশি পুরস্কার জিতে এবার গ্র্যামির মঞ্চে উজ্জ্বল তিন মহিলা শিল্পী কেসি মুসগ্রেভস, কার্ডি বি এবং লেডি গাগা নারীদের এই জয়জয়কারের প্রসঙ্গ টেনে গ্র্যামির বিদায়ী প্রেসিডেন্ট নীল পোর্টনাউকে কটাক্ষ করে সেরা নতুন গায়কের পুরস্কারজয়ী ডুনা লিপ বলেন “মহিলারা একটা বড় ধাপ এক লাফে পেরিয়ে গিয়েছে এবার।”
গত বছর গ্র্যামির মঞ্চে পুরুষদের একাধিপত্য নিয়ে সমালোচনার জবাবে এই পোর্টনাউ বলেছিলেন, পুরস্কার জিততে হলে মহিলাদের এক ধাপ এগোতে হবে। তারই জবাবে এই কটাক্ষ। এদিন গ্র্যামির মঞ্চে বিশেষ প্রশংসা পেয়েছে লেডি গাগার ‘স্যালো’ এবং অ্যালিসিয়া কিজ-এর এক সঙ্গে দু’টি পিয়ানো বাজানো পারফরম্যান্স। অ্যালবাম অফ দ্য ইয়ারের পুরস্কার পেয়েছেন কেসি মুসগ্রেভসের গোল্ডেন আওয়ার, সেরা কান্ট্রি অ্যালবামের পুরস্কারও পেয়েছেন তিনিই। একই অ্যালবামের জন্য। ‘রিদম অ্যান্ড ব্লু’ জঁরের সেরা অ্যালবামের জন্য পুরস্কৃত হয়েছেন গ্যাব্রিয়েলা উইলসন, যিনি ‘হার’ নামে পরিচিত। তাঁর পুরস্কৃত অ্যালবামটির নামও ‘হার’। রেকর্ড অফ দ্য ইয়ার সম্মান পেয়েছে চাইল্ডিশ গ্যাম্বিনোর ‘দিস ইজ আমেরিকা’। সেরা পপ ভোকাল অ্যালবামের জন্য পুরস্কৃত হয়েছেন আরিয়ানা গ্রান্দে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.