সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বাংলা সিনেমার প্রাণকেন্দ্র নন্দন ছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের চারণক্ষেত্র। কারণ, তাঁর হাত ধরেই কার্যত নন্দন তৈরি হয়েছিল। তাঁর পৃষ্ঠপোষকতার জেরেই একসময়ে সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, তরুণ মজুমদার থেকে বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, গৌতম ঘোষ বহু গুরুত্বপূর্ণ সিনেমা তৈরি করতে পেরেছিলেন। যেসব ছবিগুলো বাংলা সিনেমার ইতিহাসে চিরকাল এক জীবন্ত দলিল হয়ে রয়ে যাবে। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য (Buddhadeb Bhattacharjee) কতটা সংস্কৃতি মনস্ক মানুষ ছিলেন? স্মৃতিচারণায় ঋণ স্বীকার করে নিলেন গৌতম ঘোষ (Goutam Ghosh)।
মাণিকবাবু, মৃণাল সেনরা যেরকমভাবে বুদ্ধবাবুর সাহায্য পেয়েছেন সিনেমা তৈরির ক্ষেত্রে, গৌতম ঘোষের ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয়নি। সত্তরের দশক থেকেই পরিচালকের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে উঠেছিল তাঁর। পরিচালক যখন ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ সিনেমাটি তৈরি করছেন, তখন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য রাজ্যের তথ্যসংস্কৃতি মন্ত্রী। এই ছবি তৈরির নেপথ্যে বড় ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি। স্বয়ং গৌতম ঘোষকে সাহস জুগিয়ে বলেছিলেন, “এই ছবিটা তোমাকে তৈরি করতেই হবে। তার জন্য যা যা প্রয়োজন, আমরা করব।” কপি রাইটের সমস্যাও নিজেই মিটিয়েছিলেন বুদ্ধবাবু। এমনকী পদ্মা নদীতে শুটিং করার জন্য যে অনুমতির দরকার ছিল, সেটাও তৎকালীন বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কথা বলে নিজে ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি। এরপর ভারত-বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনায় তৈরি হল ‘পদ্মা নদীর মাঝি’। যে ছবি কিনা ব্যবসায়িক সাফল্যের পাশাপাশি সিনে সমালোচকদের কলমেও বহুল প্রশংসিত হয়েছিল। জাতীয় পুরস্কার পেলেন গৌতম ঘোষ। ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ আন্তর্জাতিক খ্যাতি পাওয়ার পর কীভাবে শিশুসুলভ হাসি হেসেছিলেন? সেকথা মনে করে গৌতম ঘোষ জানালেন, “আজও সেই মুখটা মনে পড়ে।”
শুধু কি তাই? গৌতম ঘোষ জানান, “বাংলায় যখন প্রথম ফিল্ম সোসাইটি তৈরি হল, তখন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যই আমাকে ফাউন্ডার চেয়ারম্যান পদে বসালেন। মনে পড়ে যাচ্ছে, মাণিকদার বাড়িতে গিয়ে বুদ্ধদেব এবং আমরা নন্দনের লোগো তৈরি করেছিলাম। নন্দন ছিল ওঁর দুর্বলতার জায়গা। আমাদের ফিল্মমেকারদের জন্য একটা ল্যাবের প্রয়োছিল ছিল, সেটাও বুদ্ধদেববাবুর উদ্যোগেই তৈরি হয়েছিল। যদিও ওটার আর কোনও অস্তিত্ব এখন আর নেই। দিন তিনেক আগেই জীবনানন্দ দাশের উপর লেখা ওঁর একটা প্রবন্ধ পড়ছিলাম। কী অসাধারণ লেখা। আর ভাগ্যের কী পরিহাস দেখুন! সেই সংস্কৃতিমনস্ক, সাহিত্যপ্রেমী মানুষটাকে আমরা চিরতরে হারালাম।”
রাজনীতিক, প্রশাসক হলেও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য আদ্যোপান্ত একজন সাহিত্য-সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ভাইপো। সেই সূত্রেই সম্ভবত সাহিত্যচর্চার প্রতি তাঁর আনুরাগ্য আতুঁরঘর থেকেই। রাজনীতির গণ্ডি পেরিয়েও তাঁর সাহিত্যচর্চা এবং জ্ঞানভান্ডার ছিল অপরিসীম। বলাই বাহুল্য, রাইটার্স বিল্ডিংয়ে প্রশাসন সামলানোর পাশাপাশি মার্কস, লেনিন, রবীন্দ্রনাথ, শেক্সপিয়র, কাফকা সব বুদ্ধবাবুর নখদর্পণে ছিল। সুস্থ থাকাকালীন শহরে কোনও ভালো নাটক বা সিনেমা তিনি মিস করতেন না। সিনেমার গুণগতমান নিয়েও মুখের উপর বলার সাহস রাখতেন। ৮ আগস্ট সেই সাহিত্য, সিনেমাপ্রেমী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য চিরবিদায় নিলেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.