সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রক্তাক্ত ‘ভারতভাগ্যবিধাতা’। বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য দেশের মূল মন্ত্র হলেও ধর্মের মোহে আজ দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য মানুষ। কোথাও ইসলামের নামে চলছে সন্ত্রাস, কোথাও আবার চোখ রাঙাচ্ছে গোরক্ষকদের দাদাগিরি। ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ শব্দটা যেন শুধু অভিধানের পাতাতেই শোভা বর্ধন করছে। কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে বিশ্বের দরবারে ভারতের ভাগ্য ভূলুণ্ঠিত হতে আর বেশি দেরি নেই। সম্প্রতি সেকথাই মনে করিয়ে দিয়েছেন পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়।
‘রাজকাহিনি’ যখন মুক্তি পেয়েছিল, ছবির শেষে একটি চমক রেখেছিলেন পরিচালক। রবি ঠাকুরের ‘ভারতভাগ্যবিধাতা’ গানের প্রথম অনুচ্ছেদ দেশের জাতীয় সংগীত। সৃজিত এই গানের বাকিটা ব্যবহার করেছিলেন ছবির শেষে। এবারও সম্প্রীতির বার্তা দিতে পরিচালক এই গানটিকেই বেছে নিলেন। গানের দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ টুইটারে পোস্ট করেছেন পরিচালক। সঙ্গে জাফরাবাদ হামলার ছবি। কয়েকজন লোক একজনকে বেধড়ক মারছে। আর মাঝরাস্তায় মাথায় হাত দিয়ে বসে নিজেকে প্রাণপণ বাঁচানোর চেষ্টা করছে ওই যুবক। দু’জনেই ভারতীয়। কিন্তু ফারাক বিস্তর।
একটাই ছবি। কিন্তু সেই ছবি অনেক কথা বলে। ছবিতে যারা প্রহার করছে, তারাও ভারতীয়, যিনি প্রহৃত হচ্ছেন, তিনিও ভারতীয়। ছবিটি পোস্ট করে সৃজিতের বার্তা, ‘জনগণ ঐক্য বিধায়ক জয় হে, ভারতভাগ্যবিধাতা।’ এই দেশ সবার। হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন, পারসি, মুসলমান, খ্রিস্টান সবাই এখানে সমান। কিন্তু এখন সেই ‘উদার বাণী’ ভুলে গিয়েছে ভারতীয়রাই। তাই জাফরাবাদের ছবি তুলে সেই কথাই আরও একবার মনে করিয়ে দিয়েছে পরিচালক। মনে করিয়েছেন, ‘জনগণমঙ্গলদায়ক জয় হে ভারতভাগ্যবিধাতা।’
অহরহ তব আহ্বান প্রচারিত, শুনি তব উদার বাণী
হিন্দু বৌদ্ধ শিখ জৈন পারসিক মুসলমান খৃস্টানী
পূরব পশ্চিম আসে তব সিংহাসন-পাশে
প্রেমহার হয় গাঁথা।
জনগণ-ঐক্য-বিধায়ক জয় হে ভারতভাগ্যবিধাতা!
জয় হে, জয় হে, জয় হে, জয় জয় জয় জয় হে।। pic.twitter.com/DrNWQ8rUmR— Srijit Mukherji (@srijitspeaketh) February 25, 2020
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে আন্দোলন শুরু হয়েছে জাফরাবাদে। অভিযোগ উঠছে ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দেওয়ার পন্থা এই সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বা CAA। এর আগে শাহিনবাগে এই নিয়ে প্রতিবাদ হয়। এবার তারই প্রতিফলন জাফরাবাদে। একদিকে যেমন CAA’র বিরোধিতায় পথে নেমেছে হাজার হাজার মানুষ, অন্যদিকে আইনের সমর্থনেও অনেকে সরব হয়েছে। আন্দোলন প্রতিহত করতে গিয়ে প্রহৃত হয়েছে পুলিশ। বিক্ষোভের আঁচে কার্যত তপ্ত উত্তর পূর্ব দিল্লি। একাধিক জায়গায় আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। এই প্রহার, পালটা প্রহারের মাঝ দিয়ে বইছে ধর্মের চোরা স্রোত। বুদ্ধিজীবীরা বারবার আবেদন করছেন, প্রতিবাদ হোক। কিন্তু তার ভাষা যেন হয় অহিংস। সেই বার্তাই আরও একবার তুলে ধরলেন সৃজিত। পোস্ট করলেন, ‘পূরব পশ্চিম আসে তব সিংহাসন পাশে, প্রেমহার হয় গাঁথা…।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.