সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: অস্কার মনোনয়নে বাঙালি পরিচালক সুস্মিত ঘোষের তথ্যচিত্র ‘রাইটিং উইথ ফায়ার’ (Writing With Fire)। স্ত্রী রিন্টু থমাসের সঙ্গে জুটি বেঁধে তৈরি এই তথ্যচিত্র এখন গোটা বিশ্বের নজরে। অস্কারের দৌড়ে তাঁর ছবি এই খবর পাওয়ার পর থেকে দারুণ ব্যস্ত দিল্লির এই বাঙালি যুবক। দেশের নানা প্রান্ত থেকে ফোন, হোয়াটসঅ্যাপে আসছে শুভেচ্ছা বার্তা। তবে হাজার ব্যস্ততার মধ্যেও সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে সাক্ষাৎকার দিলেন সুস্মিত (Sushmit Ghosh)। ‘রাইটিং উইথ ফায়ার’ তৈরির গল্প শুনলেন আকাশ মিশ্র।
আপনার ছবি ‘রাইটিং উইথ ফায়ার’ অস্কারে মনোনীত। খবরটা শুনে নিশ্চয়ই চমকে উঠেছিলেন?
সুস্মিত: সে এক অদ্ভুত মুহূর্ত। বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না। আমি আর রিন্টু (Rintu Thomas) আনন্দের জোয়ারে ভেসেই গিয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল যেন হাতে চাঁদ পেয়েছি। তবে অস্কারে মনোনয়ন পাওয়াটা শুধু আমদের জন্য নয়,আমাদের মতো যাঁরা স্বাধীনভাবে ছবি তৈরি করেন, তাঁদের কাছেও এটা নিঃসন্দেহে বড় খবর। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য় ব্য়াপার হল এদেশের এক মহিলা সাংবাদিকের জীবন, তাঁর লড়াই ছবিতে তুলে ধরা হয়েছে। যা গোটা বিশ্বের নজরে এসেছে। সেই অনুভূতিটাই আমার কাছে খুব স্পেশ্যাল।
কীভাবে তৈরি হল ‘রাইটিং উইথ ফায়ার’? এর নেপথ্যের গল্পটা যদি শেয়ার করেন…
সুস্মিত: আমরা অনলাইনে একটা ফটোস্টোরি দেখেছিলাম। সেখানেই জানতে পারি উত্তরপ্রদেশের এক দলিত মহিলার কথা। যিনি সংবাদপত্র বিক্রি করেন। এই ফটোস্টোরির ছবিগুলো দেখে আমরা মুগ্ধ হয়ে যাই। জানতে পারি এই মহিলা ‘খবর লহরিয়া’ নামের একটি সংবাদপত্র চালান। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করি। আর কাকতালীয়ভাবে সেই সময়ই খবর লহরিয়া তাঁদের ১৪ বছরের নিউজ পেপারকে ডিজিটাল মিডিয়ায় রূপ দেওয়ার পরিকল্পনা করছিল। বলতে পারি, পুরো ব্য়াপারটাই যেন আমাদের ছবির জন্য়ই তৈরি হচ্ছিল। এটা জানার পর আর একটুও দেরি করিনি। সঙ্গে সঙ্গে এই ছবি তৈরির পরিকল্পনা করে ফেলি। প্রায় সাড়ে চার বছর ধরে তৈরি হয় ছবিটি। আর সম্পাদনার কাজটি চলে এক বছর ধরে। এভাবেই তৈরি হয় রাইটিং উইথ ফায়ার।
এই ছবি তৈরি করার প্রেরণা কোথা থেকে পেলেন?
সুস্মিত: ২০০৯ সালে আমি আর রিন্টু মিলে ব্ল্যাক টিকিট নামে এক প্রযোজনা সংস্থা শুরু করি। আমাদের মূল লক্ষ্য়ই ছিল সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের গল্প বলা। যাঁরা তাঁদের কাজ দিয়ে সমাজে বিপ্লব ঘটিয়েছেন। তাঁদের সামাজিক অবস্থান, সংস্কৃতি, দৈনন্দিন জীবনযাপনকেই তুলে ধরতে চাই। সেই পটভূমি হতে পারে দক্ষিণ ভারতের ছোট্ট কোনও গ্রাম, তাদের কৃষিকার্য অথবা দিল্লির কোনও রিফিউজি পরিবারের জীবন সংগ্রাম। এ ধরনের মানুষের গল্পই আমাদের আকৃষ্ট করে। সেই কারণেই খবর লহরিয়া যা একজন দলিত শ্রেণির মহিলা দ্বারা পরিচালিত, তা আমাদের নজর কেড়ে নেয়। আমরা যেরকম গল্পের খোঁজে থাকি, তাঁর গল্প একেবারেই সেরকম ছিল।
পরিচালক ও প্রযোজক হিসেবে তথ্যচিত্র তৈরির সময় কী কী চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিলেন?
সুস্মিত: একজন স্বাধীন পরিচালক বা প্রযোজক সব সময়ই নানারকম চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। আমাদেরও বিভিন্ন চ্য়ালেঞ্জের সামনে পড়তে হয়েছে। আসলে ভারতে এখনও তথ্যচিত্র তৈরির বিষয়টা সেভাবে সঠিক কাঠামোই পায়নি। তাই ছবি তৈরির সময় থেকেই বহু চ্য়ালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছিল। ছবির নির্মাণের সময় থেকে শুরু করে ছবির ডিস্ট্রিবিউশন নিয়েও নানা সময় অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। তবে আমরা খুব খুশি এটা ভেবে যে রাইটিং উইথ ফায়ার অস্কারে মনোনীত হওয়ায় আমাদের মতো ফিল্মমেকাররা আরও বেশি করে উদ্বুদ্ধ হবে। ভুলে যাবে তথ্যচিত্র তৈরির সময় চ্য়ালেঞ্জের কথা। আরও বড় পরিসরে ভাবনা চিন্তা করতে পারবে পরিচালকরা। রাইটিং উইথ ফায়ারের অস্কারে মনোনয়ন এই জায়গাটাই হয়তো তৈরি করে দিল ।
আপনার সহপরিচালক রিন্টু, আপনার স্ত্রী! লাইফ পার্টনারের সঙ্গে প্রফেশনাল কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?
সুস্মিত: (হেসে ফেলে) আমি আর রিন্টু বহুদিনের বন্ধু। একসঙ্গে ফিল্ম স্কুলে পড়াশুনো করেছি। আমরা একসঙ্গে মাস কমিউনিকেশনে স্নাতকোত্তর পাশ করেছি। ২০০৯ সালে দুজনে মিলে ব্ল্য়াক টিকিট নামে প্রযোজনা সংস্থার শুরু করেছি। তারপর… আমরা বিয়ে করি। প্রথমে বন্ধু,তারপর সহকর্মী, এখন জীবনসঙ্গী। তাই কাজ করার সময়ও দুজনের মধ্যে একটা কমফোর্ট জোন ছিল। তাই তথ্যচিত্র তৈরি করার সময়ও দুজনের কাজ একই ছন্দে এগিয়ে ছিল। আসলে, চিন্তাভাবনার মধ্যে সাদৃশ্য থাকার কারণেই আমরা দুজনে মিলে খুব সুন্দর ও আনন্দ করেই কাজ করতে পেরেছি।
এরপরের পরিকল্পনা?
সুস্মিত: হাতে বেশ কিছু নতুন কাজ রয়েছে। ভাবনাচিন্তা চলছে কিছু ডকুফিচারের। কিছু সিরিজের কাজ নিয়েও ভাবছি। তবে আপাতত আমাদের নজর অস্কারের দিকেই রয়েছে। ফেব্রুয়ারি আর মার্চ মাস খুব উত্তেজনার মধ্যে দিয়েই কাটবে মনে হচ্ছে। অধীর আগ্রহে ২৭ মার্চ অস্কার অনুষ্ঠানের দিকে তাকিয়ে রয়েছি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.