সামনে নতুন বছর। নতুন মাধ্যমে আবির্ভাবের আগে একান্ত সাক্ষাৎকারে মিমি চক্রবর্তী (Mimi Chakraborty)। আসছে তাঁর অভিনীত সিরিজ ‘যাহা বলিব সত্য বলিব’। শম্পালী মৌলিক
নতুন বছরটা শুরু হচ্ছে ওয়েব ডেবিউ দিয়ে। ৫ জানুয়ারি হইচই-এ আসছে ‘যাহা বলিব সত্য বলিব’। কতটা এক্সাইটেড?
মিমি: এক্সাইটেড-এর থেকেও বেশি বলব, আমি কিছুটা নার্ভাস। কারণ, এতদিন ছবি করেছি সেটা মানুষ দু’ঘণ্টার মধ্যে দেখেছে। ওটিটি এমন একটা স্পেস, যেটা ‘স্কিপ’ করে যাওয়ার স্বাধীনতা আছে দর্শকের। ততটাই ভালো অভিনয় করতে হবে যাতে লোকে স্কিপ না করে, যেন দর্শক আটকে থাকে। তাই আমার ভাবতে সময় লাগল যে, আমি ওটিটি-তে করার উপযুক্ত কি না। তারপরে অবশেষে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম। ভালো চিত্রনাট্য এবং ঠিক প্ল্যাটফর্ম বেছে নিয়েছি, আমার মনে হয়। আর থ্রিলার আমার খুব প্রিয়। এই স্টোরিটা দারুণ এবং কোর্টরুম ড্রামা। আমি নিজেকেও চ্যালেঞ্জ করতে চেয়েছি। আশা করি, লোকের ভালো লাগবে।
এই সিরিজ সত্যি ঘটনা অনুপ্রাণিত, পুলিশ সার্জেন্ট বাপি সেন হত্যাকাণ্ডের থেকে। ওয়েব ডেবিউয়ের জন্য এমন সিরিয়াস বিষয়ই কি বেছে নিতে চেয়েছিলেন?
মিমি: হ্যাঁ। সত্য ঘটনা থেকে যেহেতু অনুপ্রাণিত এবং থ্রিলার, আমার পছন্দের জনার। এই ছিল রাইট মুড, রাইট স্ক্রিপ্ট এবং ঠিক সময়। সময়ের আগে কিছু হয় না। আমার মনে হয়, আজকাল লোকে সিরিয়াস জিনিস দেখতে খুব পছন্দ করে।
প্রায় দু’দশক আগে বর্ষবরণের রাতে একদল পুলিশকর্মীর ইভটিজিংয়ের হাত থেকে এক মহিলাকে বাঁচাতে সার্জেন্ট বাপি সেন এগিয়ে এসেছিলেন। এটাও বছর শুরুর সময়, যখন ‘যাহা বলিব সত্য বলিব’ আসছে।
মিমি: প্রথমে বলি, সেই সময় আমার বয়স অনেক কম ছিল। এই কেসটা সম্পর্কে আমি কিছুই জানতাম না। ধনঞ্জয়ের ঘটনা নিয়ে তাও জানতাম, কারণ তখন কলেজে পড়তাম। ওই ছবিতে ‘কাব্য সিনহা’র চরিত্রে করার সময় আমি পুরো ঘটনাটাই জানতাম। এই সিরিজে কাজ করার সময় আমি ঘটনাটা নিয়ে পড়ি, রিসার্চ করতে শুরু করি। বেশিরভাগ সময় এরকম ঘটনার দুটো ভিশন থাকে। একটা এই পক্ষের লোকের বলার থাকে, আরেকটা অন্য পক্ষের। অ্যাক্টরদের একটা ব্যাপার হল, আমরা একটা স্টোরি পাই। যেটা আমাদের অডিয়েন্সকে ন্যারেট করতে হয়। এবার ভালো লাগা-না-লাগা তাঁদের ওপর নির্ভর করছে। কেউ হয়তো পক্ষে বলবে, কেউ বিপক্ষে। দ্যাট ইজ ওয়েল অ্যাকসেপ্টেড। ইট মাইট রেজ আ কোয়াইট আ ফিউ আইব্রোস। গল্পটাই ওরকম। ইট ইজ রিগার্ডিং আ কন্ট্রোভার্সি। অ্যাকচুয়ালি পুলিশের কিছু খামতিও উঠে আসে স্টোরিতে। সেই ভিক্টিমকেও পাওয়াই যায়নি। এই সিরিজের গল্প বাপি সেনের উপর নয়। তবে ওই ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত। পৃথার (মিমির চরিত্র) চোখ দিয়ে গল্পটা দেখা যাবে। আর পৃথার জীবনে কী করে কেসটা আসে, সে কীভাবে সলভ করতে পারে বা পারে না সেটাও দেখা যাবে। শুধু বাপি সেনের ওপর নয়, পৃথার জীবনের ওঠা-নামা গল্পের অংশ, ফলে সিনেমাটিক লিবার্টির জায়গা রয়েছে সেখানে।
‘ধনঞ্জয়’ ছবিতে আইনজীবীর চরিত্রে ছিলেন। এখানেও। কতটা আলাদা?
মিমি: আমার সচেতন সিদ্ধান্ত ছিল যে নিজেকে রিপিট করব না। লইয়ার বা ডাক্তার, এগুলোর তো একটা নির্দিষ্ট ধরন নিশ্চয়ই আছে। কিন্তু আলাদা করার জন্য পরিচালক চন্দ্রাশিস এবং ফার্স্ট এডি রুমনির সঙ্গে বসেছি। প্রচুর ব্রেনস্ট্রর্মিং করেছি। চন্দ্রাশিস এত ভালো আর ডিলিজেন্ট একটা ছেলে, প্রত্যেকটা জিনিস ওর মাথায় ছকা ছিল। কী চায়, কীভাবে চায় পরিষ্কার ছিল। আমি স্ক্রিপ্টটা ফলো করেছি দারুণভাবে।
আপনার খুব স্বতঃস্ফূর্ত একটা প্রতিবাদী সত্তা আছে। সেই সত্তা কতটা হেল্প করেছে এই চরিত্র করতে?
মিমি: আমি বিশ্বাস করি, এটা সবসময় জরুরি নয় যে স্ক্রিন ক্যারেক্টারের সঙ্গে রিয়্যাল লাইফের যোগ থাকবে। আমি যখন ‘পুপে’ করেছিলাম, লোকে ভেবেছিল আমি ঠিক পুপের মতো। কিন্তু আমি তার একেবারে বিপরীত। আগে যা করেছি, তার থেকে আলাদা করতে চেয়েছি। আমি মিমি নয়, ‘পৃথা’ হতে চেয়েছি।
গল্প অনুসারে আপনার প্রতিপক্ষ আইনজীবীর চরিত্রে টোটা রায়চোধুরি। দু’জনের লড়াই কেমন জমল?
মিমি: আমার টোটাদার সঙ্গে বেশি সিন ছিল না। দু’দিন ছিল। আমাদের মুখোমুখি ইন্টার্যাকশন সিন খুব একটা নেই। তবে টোটাদা ভীষণ পেশাদার। আমি ‘চোখের বালি’-র ‘বিহারী’ দেখার পর থেকে টোটাদাকে পছন্দ করি। ফিটনেসের জন্য ওঁকে আমি খুব অ্যাডমায়ার করি। এই সিরিজে কাজ করেও ভালো লাগছে।
কার সঙ্গে বেশি সিন আপনার?
মিমি: সবার সঙ্গে আছে। থ্রু আউট আছি, তবে কারও একার সঙ্গে বেশি সিন নয়। কোর্টরুমে অনেকগুলো সিন আছে।
ডেবিউ সিরিজে মুখ আপনি, সেক্ষেত্রে একটু বেশি দায়িত্ব মনে হয়েছে? বা প্রেশার?
মিমি: যখন বক্স আর্টিস্টকে ওটিটি-তে নেওয়া হয় তখন একটা প্রেশার থাকেই। কিন্তু ওটিটি-র ক্ষেত্রে সিনেমার মতো হিট-ফ্লপ সেভাবে বোঝা যায় না। আমি এটা নিয়ে ভাবছি না।
আপনার সাম্প্রতিকতম রিলিজ ‘রক্তবীজ’ তো দারুণ সাফল্য পেয়েছে বক্স অফিসে। সেটা কতটা চেরিশ করছেন এখনও?
মিমি: আমি বিশ্বাস করি আমার সব সাফল্য গতকালের। আজকের দিন নতুন দিন। আমি কোনওদিন হিটের ব্যাগেজ নিয়ে চলি না, বা এই করেছি, সেই করেছি ভাবি না। আমি বন্ধুদের সঙ্গে বসেও বলিনি কোনওদিন যে, জানিস ব্লকবাস্টার হয়ে গেছে। আসলে ব্লকবাস্টার হলে সবাই জানতে পারে। যদি লোকে আমার কাছে এসে বলে, ‘রক্তবীজ’ তো ব্লকবাস্টার, সেটাই আমার প্রাপ্তি। মা সবসময় বলেন, নিজে যাকে বড় বলে, বড় সে নয়। পরে যাকে বড় বলে, বড় সেই হয়। আমি এতেই বিশ্বাস করি।
প্রায় ১৩ বছর ইন্ডাস্ট্রিতে কাটিয়ে ফেললেন। কী বদল দেখছেন?
মিমি: বাজেট কমে গেল, ছবির ফ্লপের হার বাড়তে শুরু করল, একটা ইনসিকিউরিটির জায়গা তৈরি হল, ছবির শুটিংয়ের দিন কমে গেল। যে ব্লকবাস্টার দেখে আমরা অভ্যস্ত, সেটা কমে গেল, ইন জেনারেল বলছি আমি।
আর আপনার নিজের কী বদল এল?
মিমি: যখন এক যুগের বেশি কাটিয়ে ফেলেছি, সময়ের সঙ্গে অনেক বদল দেখেছি মানুষ হিসাবে, অভিনেত্রী হিসাবে অনেকটাই পাল্টেছি। অনেক ওঠা-পড়া দেখেছি। হাউ টু ক্লাইম্ব ব্যাক এগেন অন দ্য টপ, হাউ টু বি সাইডলাইনড অ্যান্ড দেন এগেন কামব্যাক। আই হ্যাভ সিন অল অফ ইট। সেটা আমি সারভাইভ করেছি। এখন আমি একটা সিকিওরড জায়গায়, আমি শুধু নিজের কাজে বিশ্বাস রাখি। আমার কেউ ছিল না এই ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যাকআপ দেওয়ার জন্য। আমার কোনও গডফাদার নেই, না আছে বয়ফ্রেন্ড, না হাজব্যান্ড। যে বলবে আমার কাছে চারটে ছবি আছে। বসে বসে ছবি দেওয়ারকেউ নেই। কাজই আমার একমাত্র জোরের জায়গা। এমনিও খুব কম কাজ করি। যদি না প্রপার কিছু পাই। দেখো, আজকের দিনে দুটো জিনিস খুব গুরুত্বপূর্ণ।
কী কী?
মিমি: টাকা আর ভালো স্ক্রিপ্ট। আমি একটার সঙ্গে আপোস করতে পারি। যদি স্ক্রিপ্ট ভালো হয়, টাকা নিলাম-ই না ধরো। চিত্রনাট্যের জন্য কাজ করে দিলাম। কিন্তু আমাকে নিশ্চিত করতে হবে যে ছবিটা হিট করবে। অর ইউ পে মি মাই মানি। নয়তো আমার ক্ষতি। অথবা স্ক্রিপ্টটা মোটামুটি। কিন্তু টাকাটা ঠিকঠাক। তাহলেও করা যায়। কারণ, আই হ্যাভ টু পে মাই বিলস।
নতুন বছরের রেজোলিউশন কী?
মিমি: রেজোলিউশনে বিশ্বাস করি না। আমি ডিসিপ্লিনড লাইফে বিশ্বাস করি। থ্রু আউট দ্য ইয়ার। ওই বছর শেষে শুধু নয়। বাবার থেকে শৃঙ্খলাপরায়ণ হতে শিখেছি। সৎ, ভালো মানুষ হতে চেয়েছি সবসময়। আর সমাজকে কিছু ফিরিয়ে দিতে চাই, মানুষকে সাহায্য করতে চাই।
রাজনীতিতে এতটাই জড়িয়ে কখনও মনে হয় অভিনয় জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হল?
মিমি: না, না। সময় ম্যানেজ করা যায় চাইলে। আই অ্যাম ইন আ পজিশন টু চুজ। যখন একটা কাজ করি, ওটাই করি। তার সঙ্গে আরও পাঁচটা কাজ করি না। আর আমাদের রাজনীতিটা অ্যাকচুয়ালি রাজনীতির লোকের মতো করতে হয় না। আমাদের সেই স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে যে, কাজটা প্রায়োরিটি দেওয়া এবং মানুষের কাজ করা। আমার অফিস থেকে যেন কেউ ঘুরে না যায় পরিষেবা না পেয়ে, সেটা দেখা আমার দায়িত্ব। তাই স্ট্যান্ড বাই থাকে সবসময়।
টলিউডে তো বিয়ের মরশুম। আপনার প্রেমের খবরটা তো অন্তত দিন।
মিমি: আই অ্যাম সাচ আ বোরিং সোল কী বলব। বিয়ে করার আগে ছেলে পেতে হবে। তার জন্য ডেট করতে হবে। দেখা করতে হবে, চারটে জায়গায় যেতে হবে। আমি কিছুই করি না। কাজ করি, বাড়ি ফিরি, বই পড়ি, ফোন স্ক্রল করি, তিন ছেলেপুলে (পোষ্য) নিয়ে এগজসটেড হয়ে যাই (হাসি)।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.