একদিনে সিনেমা, আরেকদিকে রাজনীতি। টক অফ দ্য টাউন দেব ও তাঁর ‘প্রধান’। একান্ত সাক্ষাৎকারে মন খোলা টলিউড সুপারস্টার। শুনলেন বিদিশা চট্টোপাধ্যায়।
ইন্ডাস্ট্রিতে আঠারো বছর কাটিয়ে ফেলেছেন, প্রথম ছবি ‘অগ্নিশপথ’ মুক্তি পায় ২০০৬ সালে, পিছন ফিরে তাকালে কী মনে হয়?
দেব: এখনও অনেকটা পথ বাকি, সবে কাজ শুরু করেছি মনে হয়। যখন বুম্বাদাকে দেখি, রজনীকান্তকে দেখি, ফর দ্যাট ম্যাটার মিঠুনদাকে দেখি– এঁরা সকলে দাপিয়ে কাজ করছেন প্রায় চল্লিশ বছর ধরে, সেখানে আঠারো বছরটা কিছুই না। এখন যে লড়াইটা চলছে, যেভাবে লোকাল সব কিছু গ্লোবাল হয়ে যাচ্ছে, ন্যাশনাল লেভেলে চলে যাচ্ছে, আমিও চাইব বাংলা ছবির কনটেন্ট সেই জায়গায় পৌঁছে যাক।
তবু আঠারো বছর তো একটা মাইলস্টোন। এই অ্যাডাল্টহুড কতটা এনজয় করছেন?
দেব: মানুষের মধ্যে এতটা রিজেকশন চলে এসেছে, সেখানে এই যে আঠারো বছর ধরে আমার ছবি চলছে, দর্শকের ভালোবাসা এখনও পাচ্ছি এটাই খুব বড় ব্যাপার। আর আমার কেরিয়ারে অনেক ওঠাপড়া হয়েছে, রাজনৈতিক কারণে নানা লোকে নানা কথা বলেছে কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, নিজের কাজের প্রতি যদি সৎ থাকা যায় তাহলে ফল পাওয়া যাবেই। আর কোথাও যেন মনে হয়, কাজের প্রতি আমার ডেডিকেশন আমাকে এই আঠারো বছর ধরে টিকিয়ে রেখেছে।
দীপক অধিকারী, যে মুম্বই থেকে এসে ‘অগ্নিশপথ’ করেছিল আর আজকের দেব– এই রাস্তা হেঁটে পার হওয়া এতটা সহজ ছিল না, কী মনে হয় সবচেয়ে বড় বাধা কী ছিল?
দেব: সুযোগ পাওয়াটাই তো একটা বড় বাধা। কারণ মুম্বইয়ের মধ্যবিত্ত বাড়িতে বড় হয়েছি, বাংলা লিখতে, পড়তে কিছুই পারতাম না। সেখান থেকে বাংলা ছবি করে, দ্বিতীয় ছবিতেই হিট পাওয়ার পর মনে হয়েছিল যে, না, আমাকে বাংলা বলতে, পড়তে এবং লিখতে জানতে হবে। ভাষাটাকে ধীরে ধীরে রপ্ত করাটা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। প্রতিটা ছবির সঙ্গে, প্রতি মাসে একটু একটু করে নিজেকে গ্রুম করেছি, এবং সব সময় মনে হয়েছে যে, না, আরও ভালো করতে হবে, পারফেকশনের কাছাকাছি পৌঁছতে হবে। এই যে নিজের সঙ্গে নিজের লড়াইটা সেটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
দেবের কেরিয়ারে টার্নিং পয়েন্ট কোনটা?
দেব: আমি বলব প্রথম সুযোগ পাওয়াটাই টার্নিং পয়েন্ট। ‘অগ্নিশপথ’ আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। কারণ, এই ছবিটা না হলে আমি কলকাতায় আসতাম না। তারপর এসভিএফ-এর সঙ্গে যোগাযোগ ঘটে, সেকেন্ড ছবিটা হয়। তাই প্রথমটা না হলে, আমি হয়তো মুম্বইতেই থেকে যেতাম। ওখানে অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করতাম বা বাবার ক্যাটারিং ব্যবসায় যোগ দিতাম, না হয় কোনও চাকরি খুঁজে নিতাম বা মডেলিং করতাম। অনেক কিছুই হতে পারতাম। আমি তো বাই ফ্লুক চলে এসেছিলাম। আসলে সেই সময় মুম্বই থেকে বেরোতে চাইছিলাম। তাই কিছু না ভেবেই আসা। তখন আমি জানতাম এক মাসের বেশি এখানে থাকব না। ছবি করব, চলে আসব। কে জানত এক মাসের জন্য এসে আঠারো বছর থেকে যাব!
‘প্রধান’ ছবির পঞ্চাশ দিন হল। হিন্দি ছবির পাশাপাশি এই বক্স অফিসের লড়াইটা কতটা কঠিন?
দেব: আমার একটা ছবি ‘বাঘা যতীন’ একশো দিনের পথে। ‘প্রধান’ ফিফটি ডেজ কমপ্লিট করেছে। এটাই তো ভালোলাগা এবং অভিনেতা, প্রযোজক হিসেবে আমি সবসময়ই চাইব আমার বডি অফ্ ওয়ার্ক-এ ভ্যারাইটি থাকুক। সব ধরনের ছবি তৈরি করতে চাই বিনোদন মাথায় রেখেই। তুমি যদি প্রোপাগান্ডা ফিল্ম বানাও তাহলে অসুবিধে আছে, কিন্তু যদি মানুষকে এন্টারটেন করতে চাও, তাহলে বিনোদন এবং কনটেন্ট-এর কথা মাথায় রাখতে হবে। আর একই ধরনের ছবি করতে গিয়ে আজকাল বোর হয়ে যাই। তখন মনে হয়, ‘খাদান’-এর মতো একটা ছবি করতে হবে। মনে হচ্ছিল অনেকদিন থ্রিলার করিনি, তখন সৃজিত আমাকে ‘টেক্কা’ অফার করল।
শুনেছি ‘টেক্কা’-তে আপনি একেবারে চমকে দেবেন! ‘বাঘা যতীন’, ‘ব্যোমকেশ’ এবং ‘প্রধান’-এর পর, পেশায় জমাদার এমন চরিত্রে আপনাকে দেখা যাবে!
দেব: এই ট্রান্সফরমেশনটা খুব এনজয় করি। সবসময় চেষ্টা করি যাতে আমাকে এক রকম ভাবে না দেখা যায়। একেকটা ছবিতে যেন আলাদা মানুষ মনে হয়। আর এই চরিত্রে রাজি হলাম কারণ গল্পটা খুব ভালো লিখেছে। একটা ফ্রেশনেস আছে। আমিও সৃজিতের সঙ্গে কাজ করতে চাইছিলাম। যখন এই সাবজেক্টটা আমাকে শোনায়, আমি বলেছিলাম, আই ওয়ান্ট টু ডু দিস। আর যে চরিত্রে আমাকে কেউ ভাববে না তেমন চরিত্রই তো করতে চাইব। আমাকে যদি আরও আঠারো বছর সারভাইভ করতে হয়, তাহলে তো নিজেকে ভাঙতে হবে।
এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং চরিত্র কোনটা?
দেব: আমার মনে হয় ‘খাদান’-এ যে চরিত্রটা করব সেটা সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং। এখন কমার্শিয়াল ছবিকে দর্শকের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করে, প্রেক্ষাগৃহ ভরানো সোজা নয়। তাও বলব ‘প্রধান’-এর মতো ছবি করে দর্শক টানা যায়, কিন্তু ‘খাদান’-এর মতো ছবিতে দর্শককে সিনেমা হলে টানা খুব শক্ত কাজ। ছবিটা রিলিজ করলে বুঝতে পারবে কেন বলছি। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি শুটিং শুরু। প্রথমে কলকাতায়, তারপর মার্চ মাসে আসানসোলে হবে ।
‘খাদান’এর গল্পটা কেমন ?
দেব: কয়লাখনির গল্প। সেখানে দুই বন্ধুর সম্পর্কের গল্প। যে চরিত্রে আমি আর যিশু অভিনয় করছি। শেষ পর্যন্ত দুই বন্ধু কীভাবে কাঁধে কাঁধে রেখে সব বাধা পেরোয় সেই গল্প বলবে ‘খাদান’।
‘প্রধান’ ছবিতে রাজনৈতিক ফাঁকফোকর তুলে এনেছেন। নিজে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকা অবস্থায় সেটা করা কি কঠিন ছিল?
দেব: তোমরা যেভাবে দেখছ, আমি তো সেভাবে দেখিনি। আমি তো একটা চরিত্র দেখেছি। গ্রামে একজন পুলিশ অফিসারের কী-কী অসুবিধে হতে পারে। এটা ভারতের যে কোনও স্থানে হতে পারে।
আপনি একদিকে রাজনীতিবিদ অন্যদিকে অভিনেতা এবং প্রযোজক। এই দুই সত্তার দ্বন্দ্ব কতটা? পলিটিশিয়ান দেবকে অভিনেতার ইমেজ বাঁচিয়ে চলতে হয়? এবং অভিনেতা দেবকে একজন পলিটিশিয়ানের ইমেজের কথা সারাক্ষণ ভাবতে হয়?
দেব: এই দুটোর মধ্যে কোনও লড়াই নেই। রাজনীতি এবং অভিনয় দুটোই ডেডিকেশন এবং সততা নিয়ে করি। আমার পদের কোনও মোহ নেই। আমি তো ছেড়ে দেব ভেবেছিলাম, কিন্তু রাজ্য সরকার যখন ‘ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান’ নিয়ে আশা দেখাল সেটার জন্য মনে হল আমি ফিরতে পারি। তাতে অসংখ্য মানুষের উপকার হবে। আর সেটা খুব দরকার, আর আমি তো দিদিকে বলেওছিলাম আমার কোনও পদ চাই না। এবং নির্বাচনের আগে দলের ক্ষতি হোক আমি চাইনি। তাই দল যেভাবে বলবে আমি পাশে আছি।
সন্দেশখালির বর্বর, নিন্দনীয় ঘটনা নিয়ে আপনি কী বলবেন?
দেব: আমার মনে হয় সাধারণ মানুষকে কীভাবে ভালো রাখা যায় শান্তিতে এবং নির্ভয়ে রাখা যায় সেটা দেখা প্রশাসনের কাজ, এবং তার জন্য যা যা করা দরকার প্রশাসন এবং সরকারকে সেটা করতে হবে।
ইডির তলব নিয়ে আপনার কী প্রতিক্রিয়া?
দেব: দেশের প্রতি, দেশের মানুষের প্রতি আমার কর্তব্যকে সবচেয়ে এগিয়ে রাখি। আমি আমার কর্তব্য পালন করব। নিশ্চয়ই যাব।
এই বছর আপনার কী কী ছবি রিলিজ করবে?
দেব: অতনু রায়চৌধুরির সঙ্গে একটা ছবি প্ল্যান করছি সেটা ক্রিসমাসে রিলিজ করবে আর ‘টেক্কা’ পুজোতে রিলিজ হবে। ‘খাদান’ যেহেতু বড় প্রোজেক্ট, সেটা এই বছর না হলে আগামী বছর মুক্তি পাবে।
সরস্বতী পুজো এবং ভ্যালেন্টাইনস ডে একই দিনে পড়ল, কী করলেন?
দেব: আরে ওই বয়সটা পেরিয়ে এসেছি, এখন আর আলাদা করে প্রেম দিবস পালন করি না।
এটা প্রেমের মাস, রুক্মিণীকে যদি একটা মেসেজ দিতে হয়, কী বলবেন?
দেব: কেন রুক্মিণীকেই প্রেমের বার্তা দিতে হবে?
আপনার বান্ধবীকেই তো প্রেমের বার্তা দেবেন! ভালোবাসার দিনে কী বার্তা দিতে চাইবেন, ভালোবাসার মানুষকে?
দেব: (একটু চুপ থেকে) এটাই বলব যে আমাকে ভালো রেখো, ভালো রাখলে, ভালো থাকবে! আর আমার ভক্তদের বলব আমাকে তঁারা নিজের প্রার্থনায় রাখুন। সামনে কঠিন লড়াই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.