বৃদ্ধা ইন্দুবালা রূপে ওয়েব সিরিজে ডেবিউ করছেন শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায় (Subhashree Ganguly) আসন্ন নারীদিবসে। সোশ্যাল মিডিয়া প্রাক্তন নায়ক দেব থেকে ট্রোলিং, বোটক্সের গুঞ্জন, সবকিছুর স্পষ্ট জবাব দিলেন অভিনেত্রী। শুনলেন শম্পালী মৌলিক।
এটা আপনার প্রথম ওয়েব সিরিজ। ইন্দুবালার চরিত্র করতে রাজি হওয়ার কারণ কী?
ইন্দুবালা চরিত্রের জার্নির কারণেই রাজি হয়েছি। এই চরিত্র করতে যদি রাজি না হতাম, তাহলে বোকামি হত। এত ভাল একটা চরিত্র, সমস্ত আর্টিস্ট মুখিয়ে থাকবে এমন চরিত্র পাওয়ার জন্য। ইন্দুবালার চরিত্র যে ফর্মেই হত, আমি সবেতেই রাজি হতাম।
৭৫ বছরের বৃদ্ধা ইন্দুর ভূমিকায় পর্দায় আসা তো খুব চ্যালেঞ্জিং?
ওই চ্যালেঞ্জের জন্যই ‘হ্যাঁ’ বলা। কোনও চরিত্রে যদি চ্যালেঞ্জ থাকে, যদি রাতে ঘুমতে না দেয়, তবেই সেই চরিত্র আমি করব। এমন একটা চরিত্র যেটা আমাকে বাড়ি থেকে টেনে বের করবে, ওই স্যাটিসফ্যাকশন দেবে। ইন্দুবালার প্রথম চ্যালেঞ্জই ছিল যে, ৭৫ বছরের ভূমিকায় আমাকে আসতে হবে।
একজন বৃদ্ধার হাঁটাচলা, কথা বলা তুলে ধরা তো সহজ নয়।
খুবই কঠিন ছিল। তার মানসিকতা কেমন হতে পারে ভেবে নিতে হয়েছে। যখন আমি ‘মেহুল’ করেছিলাম (‘পরিণীতা’), ছোটবেলায় ফিরে গিয়েছিলাম। এটার ক্ষেত্রে তো আমার তেমন কোনও অভিজ্ঞতা নেই। সেখানে নিজেকে নিয়ে যেতে হয়েছে এবং বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে হয়েছে। সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জ ছিল কণ্ঠস্বর। চলাফেরা, শরীরী ভাষা, তাকানো, সবকিছু করে নিতে পারব জানতাম। কিন্তু নার্ভাস ছিলাম কণ্ঠস্বর নিয়ে। ওটা নিয়ে খুব খেটেছি। তারপর ডাবিংয়ে গিয়ে নানারকম ভয়েস ট্রাই করার পর দেবালয়ের যেটা পছন্দ হয়েছে, সেটা আমরা রেখেছি। অনেকের হয়তো পছন্দ হবে, অনেকের হবে না। কিন্তু আমার পরিচালক (দেবালয় ভট্টাচার্য) যেখানে হ্যাপি, সেখানে আমি খুবই খুশি।
প্রস্থেটিকের একটা ভূমিকা রয়েছে এই চরিত্র নির্মাণে। যেখানে মেকআপ শিল্পী সোমনাথ কুণ্ডুর অবদান রয়েছে। অনেক সময়ই দেখেছি প্রস্থেটিকের ভারে চরিত্রের প্রাণ হারিয়ে যায়। সেটা নিয়ে ভয় আছে?
না, ভয় নেই। সোমনাথদা যেমন তার সেরাটা দিয়েছে, সেরকম আমারও চ্যালেঞ্জ ছিল, মেকআপটা যেন জাস্টিফাই করতে পারি। এবং নিজের সেরাটা দেওয়া। নিশ্চয়ই মেকআপ নিয়ে কথা হবে, কিন্তু আমার অভিনয় নিয়েও কথা হবে। এটা আমার কাছে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। আমি আমার নিজের হান্ড্রেড পার্সেন্ট দিয়েছি। কোথাও ইন্দুবালাকে ছাপিয়ে কেউ উঠে আসতে পারবে না। না শুভশ্রী, না সোমনাথ কুণ্ডু। সবাই ইন্দুবালাকে দেখবে। দ্যাট ওয়াজ মাই কনসার্ন।
যুভান কি ইন্দুবালার ভূমিকায় আপনার ঝলক দেখেছে? চিনতে পেরেছে?
হ্যাঁ, দেখেছে। টোয়েন্টি-টোয়েন্টির বাচ্চারা অদ্ভুত ব্রেন নিয়ে জন্মেছে। দে আর সো স্মার্ট। প্রথমে যখন প্রস্থেটিক নিয়ে লুক সেট ছিল, ওকে ছবি দেখিয়েছিলাম। দেখেই বলে, ওহ, মাম্মাজি। আমি ভাবলাম, বাবা এত তাড়াতাড়ি চিনে গেল। এবার যেদিন শুটিং হচ্ছে, আমি ওকে ভিডিও কল করি, একদম অন্যরকম গলা করে কথা বললাম ওর সঙ্গে। খানিকক্ষণ দেখল, তারপর পজ দিয়ে বলল, ‘মাম্মাজি ঠাম্মা’। এবার টিজার দেখে বলে দিল, ‘মাম্মাজি
ঠাম্মা সাজিলি’।
রাজ চক্রবর্তী দেখে কী বলছেন?
হি ইজ রিয়্যালি হ্যাপি। ও তো আমার সবথেকে বড় ক্রিটিক। সেটা আমাকে খুব হেল্প করে। ওর মুখে হাসি ফোটানো ভীষণ বড় দায়িত্বের মধ্যে পড়ে আমার।
‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’ কল্লোল লাহিড়ীর লেখা। এই গল্পটার মধ্যে এপার-ওপার বাংলা মিশে আছে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশের কাজ করতে চান? এখন তো ওদেশের অভিনেতারা অনেকেই এখানে কাজ করছেন।
অ্যাবসোলিউটলি, যদি ভাল গল্প আমার কাছে আসে। আমরা হচ্ছি জলের মতো, যেখানে ঢালবে, সেই পাত্রের আকার নিয়ে নেব। তেমন চরিত্র আমার কাছে এলে, যে কোনও জায়গায় গিয়ে কাজ করতে পারি।
৮ মার্চ হইচই-তে ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’-এর স্ট্রিমিং শুরু, নারীদিবসে। এই গল্প নারীর এমপাওয়ারমেন্ট-এর কথা বলে। এখনও ইন্ডাস্ট্রিতে নারী-পুরুষের পারিশ্রমিকে বৈষম্য আছে। এই বিষয়ে আপনি কী বলবেন?
এখনও কিছুটা সময় লাগবে। আজ থেকে ষোলো বছর আগে যখন ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছিলাম, তখন জেন্ডার ইকুয়ালিটি নিয়ে কথা হত না। উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট নিয়েও তেমন কথা হত না। এই লড়াইটা শুরু হয়েছে। এবং এটা নিয়ে যখন কথা হচ্ছে, আমরা এই লড়াইটা লড়ব। এই জন্য যে, আমাদের পরের প্রজন্মের জন্য যেন এটা কোনও টপিক-ই না হয়। লড়াইয়ের শেষ আসবেই। আজকে ইন্ডিয়ান ক্রিকেট টিম সেটা অ্যাচিভ করেছে। সব জায়গায় সাম্য আসবে, আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
জি বাংলার ‘ডান্স বাংলা ডান্স’-এর সঙ্গেও আপনি যুক্ত। এই কাজটা কতটা উপভোগ করছেন?
খুব এনজয় করি। এত খাঁটি প্রতিভা দেখতে পাই, সেটা দারুণ অভিজ্ঞতা। তাদের জার্নি, স্ট্রাগল, আরও বেশি হাম্বল হতে, ডাউন টু আর্থ হতে শেখায়। নিজেদের জার্নির কথা মনে করিয়ে দেয়। আমি যেহেতু নাচ ভালবাসি, শো-টা দারুণ লাগছে।
মাঝে মধ্যে আপনি রিলস করেন, নাচ থাকে, অন্য ধরনের ভিডিও, পোস্ট-ও থাকে। সেগুলো যেমন জনপ্রিয়তা পায়, অনেক সময় ট্রোলড-ও হয়। এই ট্রোলিং কীভাবে সামলান? মনে ছাপ ফেলে?
না, না। যাঁরা ট্রোল করেন তাঁদের চিনি না। তাঁদের থেকে অনেক বেশি সংখ্যক মানুষ আছেন যাঁরা আমাকে খুব ভালবাসেন, সম্মান করেন। তাঁরা ভালবাসেন বলেই আমি এত বছর কাজ করছি। তাঁদের গুরুত্ব আমার কাছে অনেক বেশি, খারাপ বলছেন যাঁরা তাঁদের থেকে। কাজেই কুমন্তব্য এখন আর চোখেও পড়ে না।
সাম্প্রতিক কালে আপনি প্রযোজনায় এসেছেন। রাজ চক্রবর্তীর ‘আবার প্রলয়’ সিরিজের সূত্রে। এটায় তো আপনার নতুন ভূমিকা।
(হাসি) হ্যাঁ, আমি আন অফিশিয়ালি আরেকটা প্রোজেক্টও করেছিলাম। তবে অফিশিয়ালি এটাই প্রথম, যেখানে আমি আমার নামটা দিলাম।
চাপ কতটা বেড়েছে? প্রযোজনায় তো অনেক দায়িত্ব?
চাপ বেড়েছে। আগে আর্টিস্ট হিসাবে একটা সাইন করতাম। এবারে তো সব আর্টিস্টের জন্য কনট্র্যাক্ট সাইন করতে হয়েছে প্রযোজক হিসাবে। হাত ব্যথা হয়ে গেছে (হাসি)। আমাদের টিমটা তো খুব স্ট্রং। রাজ নিজে এই সব কাজ খুব ভাল পারে। আমাকে এই কাজগুলোর মধ্যে খুব একটা ঢুকতে হয়নি এখনও। তবে ঢুকব, আমার প্রোডাকশনে আগ্রহ আছে।
সামনে আর কী ছবি?
বাবা যাদবের পরিচালনায় ‘পাখি’ আছে। আর বেশকিছু কথা চলছে। প্রায় রোজ একটা করে অফার আসে।
দেব পরপর বেশ কয়েকটা হিট ছবি দিয়েছেন। ‘প্রজাপতি’ দেখেছেন?
না, দেখা হয়ে ওঠেনি।
ভবিষ্যতে দেবের সঙ্গে কাজের ইচ্ছা রয়েছে?
আমার কাছে আমার চরিত্র খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমার বিপরীতে কে থাকল সেটা অত গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমার চরিত্রটা যদি ঘুমতে না দেয়, ওই কিকটা যদি দেয়, দেন আই ডোন্ট মাইন্ড আমার অপোজিটে কে আছে।
আপনি নাকি বোটক্স পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন? এমন গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।
এটা সত্যি?
n কে কী করছে সেটা অ্যাবসোলিউটলি পার্সোনাল। আমি যদি মেডিক্যাল কোনও প্রসেসের মধ্যে দিয়ে যাই, লোককে কেন বলতে হবে? কিছু আমাদের গোপন থাকবেই, তাই না? আমি করিনি, সেটা আমি বলতে পারি। কেউ যদি করে সেটার পক্ষে আমি। জাজমেন্টাল হওয়ার কিছু নেই। মানুষ করতেই পারে। লেটস বি ক্যাজুয়াল অ্যাবাউট ইট। বোটক্স একটা বয়সের পরে করায় মানুষ। আই অ্যাম জাস্ট থার্টি টু। কাম অন (জোরে হাসি)।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.