নন্দিতা দাস পরিচালিত ‘জিগাটো’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন কপিল শর্মার বিপরীতে। সেই অভিজ্ঞতা ফোনে জানালেন সাহানা গোস্বামী। শেয়ার করলেন মনের কথা। শুনলেন বিদিশা চট্টোপাধ্যায়।
‘ফিরাক’-এর পর নন্দিতা দাসের সঙ্গে আবার কাজ করলেন ‘জিগাটো’-তে। কতটা পরিবর্তন দেখলেন সেটে?
‘ফিরাক’ নন্দিতারও প্রথম ছবি আর অভিনেতা হিসাবে আমারও প্রথম দিককার ছবি। ওর সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা দারুণ। নন্দিতা যেভাবে কোনওরকম ফর্মাল ট্রেনিং ছাড়াই পরিচালক হিসাবে নিজেকে ছবি তৈরির কাজে গভীরভাবে নিযুক্ত করেছে, সেটা দেখতে ভাল লাগে। ওর ভিশন একেবারে পরিষ্কার। আর এতদিন পর কাজ করে দেখলাম ওর স্পিরিটটা বদলায়নি। শি ইজ ভেরি হ্যান্ডস অন ডিরেক্টর। ও পারলে নিজের একশোটা ভাগ করে সমস্ত ডিপার্টমেন্টের কাজ করে ফেলতে পারে, ক্লান্তিহীন হয়ে। প্রচণ্ড এনার্জি। নন্দিতা তার অভিনেতাদের প্রতি এমপ্যাথেটিক। আর এখন আমি অভিনেতা হিসাবে নিজেকে অনেক বেশি ‘উপস্থিত’ বলে মনে করি। আগে অনেক বেশি নার্ভাস ছিলাম। আই অ্যাম মোর সিওর নাও।
‘জিগাটো’তে আপনার চরিত্র ‘প্রতিমা’ সম্পর্কে জানতে চাই।
নন্দিতার স্ক্রিপ্টে ‘প্রতিমা’কে খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিমার মধ্যে একটা এনার্জি আছে, একটা আগুন আছে যেটা সব কিছু জ্বালিয়ে দেয় না, বরং আলোকিত করে। অনেকটা রোদ্দুরের মতো। খুব আশাবাদী মানুষ প্রতিমা। নিম্ন মধ্যবিত্ত অসুখী পরিবেশেও সে খুশির ঝরনার মতো। নিজের স্বামীর স্ট্রাগল দেখে সে তাকে সাপোর্ট করার কথা ভাবে, নতুন কাজ নেয় এবং স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেকার ডায়নামিক্স খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে। ইটস নট ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট।
স্ট্রাগলিং স্বামীর সাপোর্টিং স্ত্রীর চরিত্রে আপনাকে আগেও দেখা গিয়েছে। ‘রক অন’, ‘গলি গুলেয়া’ এবং অন্যান্য ছবিতে। প্রত্যেকবার একটার থেকে অন্যটা আলাদা কী করে করেন?
অনেস্টলি আমি নিজেই জানি না। আই ডোন্ট হ্যাভ এ মেথড। কোনও কনশাস প্রসেসও নেই, যে ওটার থেকে অন্যটা খুব আলাদা করতে হবে। আসলে প্রতিটা ব্যক্তিত্বই তো আলাদা। ছবি অনুযায়ী চরিত্র, জার্নি, ক্রাইসিসও আলাদা। এবং পরিচালক সেটা কীভাবে দেখছেন সেটাও একটা ব্যাপার। অনেকেই জিজ্ঞেস করেন, কম ছবি করেন, এত চুজি কেন! আমি চুজি কারণ, আমি তাদের সঙ্গে কাজ করতে চাই যাদের ভাবনা এবং কাজের প্রতি আমি শ্রদ্ধা করতে পারি। সেটা অভিজ্ঞ পরিচালক হতে হবে এমন কোনও ব্যাপার নেই। আই ক্যান লুক আপ টু ফার্স্ট টাইম ডিরেক্টর অ্যাজ ওয়েল, যদি তাদের সেই গুণ থাকে। আই হ্যাভ টু ফিল দ্যাট সেন্স অফ ক্রিয়েটিভ রেসপেক্ট টু ওয়র্ক উইথ দেম।
‘জিগাটো’তে কপিল শর্মার বিপরীতে কাজ করবেন শুনে অবাক হয়েছিলেন?
হয়তো বাকিদের মতো আমিও একটু অবাক হতাম কিন্তু কপিলের শো আমি খুব একটা ফলো করি না, টুকটাক ক্লিপিংস দেখেছি। কপিলের শো-তে কী হয় সে সম্পর্কে অবগত ছিলাম না। তবে জানতাম টেলিভিশনে একটা বড় নাম। যখন নন্দিতা বলল, ‘ইটস কপিল’। আমার তখন মনে হয়েছিল, দ্যাটস ইন্টারেস্টিং। সেট-এ গিয়ে বুঝেছিলাম কপিলকে নন্দিতার
কাস্ট করার কারণ। হি ইজ ভেরি রিয়্যাল। এত নামডাক হওয়া সত্ত্বেও কপিল আশ্চর্যরকম সহজ মানুষ। ওর সঙ্গে কাজ করে খুব মজা পেয়েছি।
আপনি বিদেশের অনেক ছবি করেছেন। এখানকার সঙ্গে কতটা তফাত হয়ে যায়?
ক্রিয়েটিভ ডিফারেন্স তেমন একটা নয়। আর আন্তর্জাতিক যে প্রোজেক্ট করেছি সেগুলো সবই ইন্ডিপেনডেন্ট ছবি। দু’টো জিনিস লক্ষণীয়। ইন্ডিপেনডেন্ট প্রোজেক্ট-এ ছোট টিমে সবাই খুব একজোট হয়ে প্যাশনেটলি কাজ করে, ইনটিমেট স্পেসে। আরেকটা হল ভারতে হায়ারার্কির চল খুব বেশি। ভারতীয় সমাজই আসলে হায়ারার্কিক্যাল। এখানে স্টার সবচেয়ে উঁচু আসনে তারপর একে একে সকলে পদ পায়। স্পটবয়, লাইটম্যানদের সঙ্গে কেউ কথা বলে না। এটা আমার খুব সমস্যার মনে হয়। কারণ, আমি তেমন মানুষ নই। আমি অটোওয়ালা থেকে সবজিওয়ালি সবার সঙ্গে কথা বলতে ভালবাসি। বিদেশের বড় প্রোডাকশন হাউসে কী হয় জানি না, কিন্তু ইন্ডিপেনডেন্ট প্রোজেক্টে এসবের চল নেই। ওখানে ক্লাস ডিভাইড একটু কম বলে হয়তো এই বিভেদটা কম।
অভিনেত্রী হিসাবে আপনার কোনও সেট রুল আছে, কোন ছবি আপনি একেবারেই করবেন না?
তখনই আমি কোনও ছবিকে না বলব, যদি সেই ছবির বার্তার সঙ্গে আমি একমত না হই। আই উইল নট ডু আ ফিল্ম দ্যাট প্রোপাগেট ভায়োলেন্স। কিংবা যে ছবি হোমোফোবিক অথবা জেন্ডার-ফ্লুইডিটির বিরুদ্ধে কথা বলে। বা এমন ছবি যেখানে কোনও নির্দিষ্ট কমিউনিটি বা ধর্মকে নিচু করে দেখানো হচ্ছে, আমি করব না। কিন্তু এমন কোনও চরিত্র যে নিজে ভুল করছে, অথবা ছবিটা শেষমেশ এসবের বিরুদ্ধে কথা বলছে, তাহলে করব।
আপনি তো পরিচালনাও করতে চান!
ছোটবেলা থেকে দু’টো স্বপ্ন ছিল– অভিনয় এবং পরিচালনা। একটা করে ফেলেছি। আমি নিজেকে আগামী দু’বছরের ডেডলাইন দিয়েছি, তার মধ্যে অন্তত একটা শর্ট ফিল্ম বানিয়ে ফেলবই।
অন্য কী ছবি করছেন?
অনু মেননের পরিচালনায় ‘নিয়ত’ করছি। বিদ্যা বালন, রাহুল বোস-সহ অন্যান্য অভিনেতা রয়েছেন। কানু বেহলের ছবি ‘ডিসপ্যাচ’ রয়েছে মনোজ বাজপেয়ীর সঙ্গে। রিমা দাস পরিচালিত ‘অ্যান্থোলজি অফ’ শর্ট ফিল্মে কাজ করেছি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.