‘তাজ: রেইন অফ রিভেঞ্জ’-এ ফিমেল লিড হিসাবে আত্মপ্রকাশ ঘটছে বাংলার সৌরসেনী মৈত্রর (Sauraseni Maitra)। অভিনেত্রীর সঙ্গে কথা বললেন শম্পালী মৌলিক।
মুম্বই-কলকাতা করছেন তো ঘন ঘন, এয়ারপোর্টে অনেকটা সময় যাচ্ছে। কেমন আছেন?
(হাসি) মা তো বলে, তুই বরং এয়ারপোর্টে থেকে যা, বাড়ি আসতে হবে না। ভাল আছি, অনেকগুলো রিলিজ পরপর বেরচ্ছে। অত্যন্ত কৃতজ্ঞ যাঁদের সঙ্গে কাজ করছি বা করেছি তাঁদের কাছে।
হিন্দি আর বাংলা ব্যালান্স করছেন কীভাবে? এই আপনাকে ‘অমৃতের সন্ধানে’-তে পেলাম, তার আগে ‘এক থি বেগম’-এ, আবার আছেন ‘সাবাশ ফেলুদা’-এ, আজ জি ফাইভে ‘তাজ : রেইন অফ রিভেঞ্জ’ আসছে।
অ্যাক্টর হিসাবে আমি ভীষণ লোভী। যেখানে ভাল কাজের সুযোগ থাকবে নিয়ে নেব। তারপর যতটা সম্ভব ভাল করার চেষ্টা করি। আসলে সবক’টা সম্পূর্ণ আলাদা ধরনের চরিত্রে। অভিনেতাদের কাজই হচ্ছে ক্যারেক্টারের স্কিনের সঙ্গে মিশে যাওয়া। এই রকম নয় যে, ‘তাজ’-এর শুটিং করতে করতে ‘অমৃতের সন্ধানে’ করেছি বা ‘সাবাশ ফেলুদা’ করেছি। মাঝখানে রাজর্ষিদার ‘সাদা রঙের পৃথিবী’ করলাম। আমি এতটা ট্যালেন্টেড নই যে, নিজেকে এক-দু’দিনের মধ্যে পুরোটা বদলে ফেলতে পারব।
‘তাজ সিজন ২’-এর অফার কীভাবে এসেছিল?
প্রথম কল আসে ২০২১-এর এপ্রিলে। তখনও কোভিডের রেশ যায়নি। এবং ওরা আমাকে টেস্ট ভিডিও পাঠাতে বলেছিল। বলেছিল, এরকম কস্টিউম, এরকম লাইট এবং পিরিয়ড পিস। কিন্তু তখন আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। পরে যখন আবার কল আসে, ‘একান্নবর্তী’-র শুটিং করছিলাম। তখনও হেকটিক শিডিউলের মধ্যে পাঠাতে পারিনি। পরে যখন একটা ছবির জন্য মুম্বইয়ে শুট করছিলাম তখন আবার কল আসে। আমি অবাকই হয়েছিলাম যে, ছ’মাস ধরে কাস্টিং চলছে! তারপরে প্রযোজক সরাসরি অডিশনে আসতে বলেন। অডিশনে পরিচালক বিভু পুরী নিজে আসেন। যেটা একজন অ্যাক্টরের পক্ষে বড় ব্যাপার। দু’দিনের মধ্যেই সব চূড়ান্ত হয়ে যায়। আমাদের শো রানার উইলিয়ম অডিশনেই বলেছিল, ‘ইউ আর ভেরি গুড’। আমি স্বপ্নেও ভাবিনি, অন্য ভাষায় জাতীয় স্তরের কাজে এবং ঐতিহাসিক কাহিনিতে আমি সুযোগ পাব।
‘মেহেরুন্নিসা’ আপনার চরিত্র। সেখান থেকে নুরজাহান হয়ে ওঠার যাত্রা রয়েছে। একেবারে ফিমেল লিড রোলে।
ঠিকই। তবে ‘তাজ’ এমন একটা সিরিজ ওইভাবে লিড বলতে পারি না। প্রত্যেকটা ক্যারেক্টারের জার্নি যেভাবে দেখানো হয়েছে, থ্যাঙ্কস টু দ্য মেকার।
বাংলায় এখনও কোনও ছবির একক প্রধান মুখ হননি, কিন্তু হিন্দি সিরিজে অন্যতম প্রধান নারী মুখ হিসাবে সুযোগ পেলেন!
হয়তো বাংলায় প্রযোজক-পরিচালকরা আমার ওপর অতটা ভরসা করেন না (হাসি)। এটা কিন্তু সত্যি কথা। যদি আমার কেরিয়ারগ্রাফটা দেখেন ওই এক-দু’জন পরিচালকই রয়েছে যারা আমাকে নিয়েছে।
যেমন, মৈনাক ভৌমিক, অরিন্দম শীল…
এই দু’জন পরিচালকের কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ। এবং ভুল বলব না, অঞ্জনদার সঙ্গেও দু’টো কাজ করেছি। হালে অভিনন্দন দত্তর সঙ্গে কাজ করলাম। দারুণ অভিজ্ঞতা। কিন্তু মেন কাজ কিন্তু ঘুরে ফিরে দিয়েছে ওই দু’জন, যারা আমাকে সত্যি অন্যরকম চরিত্র দিয়েছে। আরেক জনের কথাও বলব, সায়ন্তন ঘোষাল।
‘তাজ’-এ নাসিরউদ্দিন শাহ, ধর্মেন্দ্র-র মতো কিংবদন্তি অভিনেতারা রয়েছেন। এছাড়া অদিতি রাও হায়দরি, জারিনা ওয়াহাব, সন্ধ্যা মৃদুল, অসীম গুলাটি, রাহুল বোস প্রমুখ রয়েছেন। এত বড় সব স্টারদের সঙ্গে শুটিং করার অভিজ্ঞতা কেমন?
‘তাজ’ আমার কাছে স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতো। এটা অনেকটা রূপকথার মতো। এত সিনিয়র অ্যাক্টর হয়েও নাসিরুদ্দিন শাহ এত হাম্বল কী বলব, আমরা তো হামলে পড়তাম ওঁর মেকআপ রুমে। উনি গল্প করতেন, ওঁকে অবজার্ভ করেও কত কিছু শেখা যায় ওঁর থেকে। ওই গুজরাটের গরমে আমরা কমপ্লেন করছিলাম পোশাক নিয়ে, উনি কিন্তু তখনও প্যাশনেটলি কাজ করে চলেছেন, সবার সঙ্গে, এত ঘণ্টা ধরেই।
আপনার সবচেয়ে বেশি দৃশ্য কার সঙ্গে?
‘সেলিম’ চরিত্রে যিনি করেছেন অসীম গুলাটির সঙ্গে সবচেয়ে বেশি দৃশ্য। আর নাসির স্যর, সন্ধ্যা মৃদুলের সঙ্গেও ছিল। নাসির স্যরের সঙ্গে প্রথমে আমার ওয়ান টু ওয়ান সিন ছিল না। পরে মেকাররা একটা সিন অ্যাড করেছে। ওটা আমার জীবনের সব থেকে বড় প্রাপ্তি। ধরমজি এবং নাসির স্যর যেদিন শুট করছিলেন, আমার কাজ ছিল না। কিন্তু আমি বায়না করেছিলাম, শুধু ম্যাজিকটা দেখার জন্য চলে গিয়েছিলাম। এখনও ভাবলে গায়ে কাঁটা দেয়, এই দু’জন লেজেন্ড-কে সামনে থেকে পারফর্ম করতে দেখেছি।
‘তাজ’ সত্যি বড় মাপের প্রোজেক্ট। মুঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাসের আধারে তৈরি। আর কিছু আসছে?
আরেকটা হিন্দি ছবিও করেছি যেটা হয়তো শিগগির মুক্তি পাবে। ভিক্টর মুখোপাধ্যায়ের নির্দেশনায় ‘সুইট ড্রিমস’। ওটায় আমার সঙ্গে মিথিলা পালকর, অমোল পরাশর, মিয়াং চ্যাং রয়েছে।
‘এক থি বেগম’, যে প্ল্যাটফর্মে এসেছিল সেটা আলাদা করে সাবস্ক্রাইব করতে হয় না বলেই কি আপনার ওই হিন্দি কাজটা গুরুত্ব পায়নি?
এইটা আমি জানি না। তবে এটা বলব, ওই কাজ হয়তো কলকাতার লোকজনের কাছে রেকগনিশন পায়নি, কিন্তু বাইরে থেকে ন্যাশনালি রেকগনিশন পেয়েছে। আসলে হিন্দি কাজের কথা যখন কলকাতায় প্রথম প্রথম বলা শুরু করেছিলাম তখনও রেকগনিশন পায়নি। হাতে গোনা কয়েকজন ভাল লাগার কথা জানিয়েছিল। যেমন ঋতব্রত, মৈনাক, অনন্যা, অরিন্দমদা, আবিরদা, রাজর্ষিদা, মল্লিকাদি এরকম কয়েকজন। এখন একেবারে ব্লান্ট হয়েই বলছি আপনার কাছে, ‘ও আচ্ছা ঠিক আছে’ টাইপের রিঅ্যাকশনই বেশি ছিল। অনেকেই ‘তাজ’-এর ট্রেলার দেখে চমকে গিয়েছিলেন। পোস্টার রিলিজ হওয়ার পর রেকগনিশন পাওয়া শুরু হয়।
একটু বাংলায় ফিরি। অরিন্দম শীল ‘ব্যোমকেশ গোত্র’, ‘মায়াকুমারী’ হয়ে আপনাকে দিয়ে কিন্তু ‘সাবাশ ফেলুদা’ অবধি করিয়ে ফেললেন। কখনও ভেবেছিলেন ফেলুদার গল্পে অভিনয় করবেন?
অরিন্দমদা আমার ছোটবেলার স্বপ্ন সত্যি করে দিয়েছেন। আই উইল অলওয়েজ বি সো থ্যাঙ্কফুল টু অরিন্দমদা অ্যান্ড টু জি ফাইভ অলসো। কারণ, বাঙালিদের মধ্যে প্রধান গোয়েন্দা চরিত্র ব্যোমকেশ এবং ফেলুদা। আমার ছোটবেলায় পড়া প্রথম গোয়েন্দা ফেলুদা। ছোটবেলায় ভাবতাম, ফেলুদার গল্পে সত্যজিৎ রায় কখনও কেন নারীচরিত্র রাখেননি। একমাত্র ‘শকুন্তলার কণ্ঠহার’ ছাড়া। তো সব মিলিয়ে খারাপ লাগত। এ বারে দর্শক ২০২৩-এ দাঁড়িয়ে ২০১৭-র ফেলুদাকে দেখছে। যখন আমরা এমপাওয়ারমেন্ট নিয়ে এত কথা বলি, আমার চরিত্রটাকে যেভাবে দেখানো হয়েছে, মনে হয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। নারী চরিত্র মানেই দর্শক ভেবে নেয়, সে হিরোর সঙ্গে প্রেম করছে। তা তো নয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই নানা কমেন্ট করেছিলেন সিরিজটা আসার আগে, আমার বক্তব্য ছিল আগে দেখুন। এখন প্রায় সকলেই চুপ।
View this post on Instagram
কেউ কেউ বলেন, আপনার সঙ্গে অরিন্দম শীলের বিশেষ সম্পর্ক, তাই বার বার আপনাকে নেন?
অফকোর্স সম্পর্ক আছে। একজন অ্যাক্টর এবং ডিরেক্টরের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস, পারস্পরিক সম্মান আর বোঝাপড়া থাকা দরকার। নিশ্চয়ই সেই বিশ্বাস,
সম্মান আর বোঝাপড়া আছে। আই রিয়্যালি লুক আপ টু হিম (হাসি)।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.