আসছে রাজ চক্রবর্তীর প্রথম ওয়েব সিরিজ ‘আবার প্রলয়’ (Abar Proloy)। ফিরছে ‘অনিমেষ দত্ত’ অর্থাৎ শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় (Saswata Chatterjee)। হাড়হিম করা অভিজ্ঞতার কথা বললেন অভিনেতা। শুনলেন শম্পালী মৌলিক।
২০১৩ সালের আগস্টে মুক্তি পেয়েছিল ‘প্রলয়’। তার ঠিক দশ বছর পরে ১১ আগস্ট Zee5-এ আসবে ‘আবার প্রলয়’। কেমন অনুভূতি?
আমার জীবনে প্রলয় দশগুণ বেড়ে গিয়েছে (হাসি)। মানে ওই ‘প্রলয়’-তে যা দেখেছে দর্শক তার চেয়ে আরও দশগুণ দেখবে। এরকম অ্যাকশন আগে হয়নি।
টিজারের প্রতিক্রিয়াও তো ভাল।
এখন তো সবকিছুতেই রেসপন্স পাওয়া যায়। ও ঠিক আছে। আমি বুঝতে পারছি না কতজন দেখবে রিয়্যালি, মানে পুরোটা ক’জন ফলো করবে। যদি দ্যাখে, প্রত্যেকটা এপিসোড টানবে। এখন প্রতিযোগিতা খুব বেশি। কোনওকিছু খেলার ছলে করতে পারি না।
ইংরেজি-হিন্দিতে OTT সিরিজ দেখতে অভ্যস্ত প্রায় সকলেই।
শুধু হিন্দি-ইংরেজি কেন, যে কোনও ভাষায় ভাল কাজ পেয়ে যাবে হাতের মুঠোয়। কাজেই যাঁরা ভাল করছেন তাঁদের দেখা যায়। ভাষাটা আর কোনও অন্তরায় নয়। না হলে আমি কী করে এত হিন্দি কাজ করি বা তেলুগু কাজ করছি। এখন দুনিয়াটা খুব ছোট হয়ে গিয়েছে। সবাই সবাইকে জানে, চেনে। সিরিয়াসলি কাজ করতে হবে, আর কিচ্ছু করার নেই। লোক ঠকানো যাবে না (হাসি)।
‘আবার প্রলয়’ সেই মানের হয়েছে মনে হয়?
আমি তো যা দেখার ডাবিং করার সময় টানা দেখেছি। পরিচালক রাজ চক্রবর্তী এত প্যাশনেট একটা কাজের পিছনে, ও যখন এই কাজটা করেছে, সারাক্ষণ সব ব্যাপারে জড়িয়ে ছিল। কাজেই প্যাশন যখন থাকে, প্রত্যাশাও থাকে যে, এ কাজটা কিছুতেই ছাড়বে না।
দশ বছরের ব্যবধানে অনেক কিছুই বদলে যায়। ফিটনেস, চেহারা ধরে রাখা তো সহজ নয়। আগের ‘প্রলয়’-তে আমার এত ফিটনেস দরকার হয়নি, ‘আবার প্রলয়’-তে যেটা লেগেছে।সেখানে স্পেশ্যাল ক্রাইম ব্রাঞ্চ ‘অনিমেষ দত্ত’-কে ফিরিয়ে আনা আপনার পক্ষে কতটা শক্ত ছিল?
আমাকে প্রথম ‘প্রলয়’-এর পর যখন বলেছিল রাজ, আমি বলেছিলাম, ‘যদি পরেরটা করতে হয় তাড়াতাড়ি করো।’ এই প্ল্যানিং কিন্তু আজকের নয়, অনেকদিন আগের। এটা যখন করতে এলাম রাজ যা যা দেখিয়েছিল, আমি বলেছিলাম, ‘এটা তো আমার পঁচিশ বছর আগে করার কথা ছিল (হাসি)।’ আমরা লাস্ট একটা প্রোগ্রামে গিয়েছিলাম, সেখানে মিঠুনদা ট্রেলারটা দেখলেন। দেখে আমার দিকে তাকালেন, চোখের দৃষ্টিই বলে দিচ্ছিল উনি কতটা ইমপ্রেসড। দেখা যাক, এবার দর্শক কী বলেন।
কেমন প্রস্তুতি নিয়েছিলেন বা কতটা পরিশ্রম করেছেন?
পরিশ্রমের কোনও শেষ ছিল না। সকাল থেকে সন্ধে অবধি পরিশ্রম চলত। কী আর বলব, এরকম ফাইট সিকোয়েন্স কখনও করিনি। একবার স্ট্রিম করতে শুরু করলে লোকজন বুঝবে কে কতটা পরিশ্রম করেছে।
এর জন্য আলাদা কোনও ফিটনেস ট্রেনিং বা চর্চা করেছেন?
আমার মনটাকে ফিট রেখেছি। আমি জানি, মন ভাল থাকলে শরীর ভাল থাকে।
কিন্তু যতটা অ্যাকশনের ঝলক দেখেছি, সে তো এমনি সম্ভব নয়।
কিছুই দেখা যায়নি এখনও, এটুকু বলব (হাসি)।
‘প্রলয়’ ছিল সিনেমা, ‘আবার প্রলয়’ সিরিজ এবং রাজ চক্রবর্তীর প্রথম ওয়েব সিরিজ। ক্রাইম থ্রিলার, পাচার চক্র যেখানে উঠে আসবে। সবাই মনপ্রাণ দিয়ে কাজ করেছেন দেখে মনে হচ্ছে…
একদম, মনপ্রাণ দিয়ে সবাই কাজ করেছে। একটা কাজের মাথা যদি ঠিক থাকে, বাকি সব ঠিক থাকবে। রাজের প্যাশন এত স্ট্রং, কী বলব! আর প্রযোজক হিসাবে শুভশ্রীর কথা বলব। এটার জন্য রাজ যা যা চেয়েছে শুভশ্রী তাই দিয়েছে। এবং আমরা যখন সুন্দরবনে শুটিং করতে গিয়েছি শুভশ্রী গিয়েছিল বাচ্চাকে নিয়ে, কিছুদিনের জন্য। এতটাই প্যাশন তাদের কাজের জন্য। সেখানে কারও ফাঁকি দেওয়ার জায়গা নেই।
কতদিন ছিলেন শুটিংয়ে সুন্দরবনে?
ম্যাক্সিমামটই সুন্দরবনে তোলা। আমরা সব মিলিয়ে প্রায় ৪০-৪২ দিন শুটিং করেছি। তার মধ্যে আমি দশদিন শুধুই অ্যাকশন করেছি।
এর শুটিং তো জলে-স্থলে…
হ্যাঁ, স্থলটাও তো জলের ওপরেই। নৌকোর ওপরে মারপিটের দৃশ্য রয়েছে। এমন এমন সিন করেছে রাজ, যেটা ভাবতে লোকের ভয় লাগবে। সুন্দরবনে নদীতে রানিং লঞ্চে সিন ছিল, যেখানে একজনকে উলটো করে জলে চোবানো হচ্ছে, তোলা হচ্ছে আর আমি প্রশ্ন করছি। মানে মাথা জলে ঢুকে যাবে, আবার উঠবে। আর আমি মাছ ভাজা খেতে খেতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছি! এটা ভাবাই বিরাট ব্যাপার। একটি ছেলে, লোকাল ছেলে বলেই শুটটা উতরে দিয়েছে। আমি খালি রাজকে বলছিলাম, ‘ওরে রাজ, পুরো বডিটা উঠবে তো? নাকি তুললি দেখলি মুণ্ডু নেই, কুমিরে নিয়ে গেছে হয়তো!’ তবে স্থানীয় ছেলেটি বলেছিল, ওখানে সেরকম সম্ভাবনা নেই। কারণ ভটভটির পাশে চট করে কুমির আসে না। এই বলে, সে নিজেই শট দিল।
কিন্তু রিস্ক ফ্যাক্টর তো থেকেই যায়।
ঝুঁকি থাকবেই। নো রিস্ক নো গেন– এটাতে বিশ্বাস করে রাজ।
View this post on Instagram
ঋত্বিক চক্রবর্তী, পরান বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবাশিস মণ্ডল, কৌশানী মুখোপাধ্যায় এবং আরও অনেকে রয়েছেন, সব মিলিয়ে জমজমাট কাস্টিং।
সায়নী (ঘোষ) রয়েছে, গৌরব (চক্রবর্তী) আছে। আগেরটা থেকে আমি আর পরানদা শুধু কমন। জুন রয়েছে আমার স্ত্রীর চরিত্রে। আর একজনের কথা বলব, সোহিনী সেনগুপ্ত অসাধারণ করেছে। আমি একটা জিনিস বলতে পারি, যাদের নাম এবারে এল, তাদের প্রথমবার এমন রূপে দেখবে দর্শক। আমার শ্বশুরের চরিত্রে বিশ্বজিৎদাও (চক্রবর্তী) রয়েছেন। রাজের অদ্ভুত ক্ষমতা আছে যে, যাকে যেভাবে আমরা ইন্ডাস্ট্রিতে পেয়েছি, তার চেয়ে একেবারে অন্যভাবে নিয়ে আসতে পারে। এটা সব পরিচালকের থাকে না।
এ ছাড়া সামনে কী রিলিজ পেন্ডিং?
‘যমালয়ে জীবন্ত ভানু’ আছে তবে কখন রিলিজ জানি না। ‘প্রোজেক্ট K’ যেটার এখন নাম হয়েছে ‘কালকি’ ওটা আসবে। আর ‘ক্রু’ বলে হিন্দি একটা সিনেমার কাজ বাকি আছে। অনুরাগ বসুর ‘মেট্রো ইন দিনো’-র শুটিং বাকি (হাসি)।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.