‘বাচস্পতির মতো বর চাই’, কেরিয়ার, ‘ফাটাফাটি’ এবং ওজন বৃদ্ধি নিয়ে খোলামেলা আড্ডায় বললেন ঋতাভরী চক্রবর্তী। অভিনেত্রীর কথা শুনলেন বিদিশা চট্টোপাধ্যায়।
‘উইন্ডোজ’-এর সঙ্গে পরপর দুটো ছবি হয়ে গেল আপনার। ‘ব্রহ্মা জানেন…’ এবং ‘ফাটাফাটি’। দুটোই বেশ অভিনব ভাবনার। কেমন লাগছে এইরকম দুটো ছবির অংশ হতে পেরে?
খুবই ভাল লাগছে। একটা ছবির সাফল্য পরবর্তী ছবির জন্য সাহস জোগায়। একই টিমের সঙ্গে আবার ছবি করছি এবং আবার নারীকেন্দ্রিক ছবি। এমন দু’টো ছবির অংশ হতে পারাটা খুবই স্পেশ্যাল যেখানে বিনোদনের মধ্য দিয়ে মেসেজও দিতে পারছি।
আবিরের সঙ্গে এর আগে বিজ্ঞাপন করেছেন, সিনেমায় স্ক্রিন শেয়ার করার অভিজ্ঞতা কেমন?
হ্যাঁ, বেশ কিছু বিজ্ঞাপন করেছি। কিন্তু সিনেমা করার অভিজ্ঞতা খুবই ভাল। সেট-এ আমরা ‘বাচস্পতি’ আর ‘ফুল্লরা’ হয়েই ছিলাম। ঋতাভরী আর আবির হয়ে নয়। সেই জন্য অনেক বছর ধরে থাকা দম্পতির যে কমফোর্ট জোন তৈরি হয়, সেই কেমিস্ট্রিটা তৈরি করা সম্ভব হয়েছিল। আবির চট্টোপাধ্যায়ের মতো একজন সিনিয়র অভিনেতা তার কো-অ্যাক্টরকে সেই কমফোর্ট জোনটা দেয়।
ছবির বিষয় ‘ফ্যাট শেমিং’-এর সঙ্গে আপনারা কখনও নিজেদের পার্সোনাল জার্নির সঙ্গে কানেক্ট করেছেন?
আমরা দু’জনেই কানেক্ট করেছি ভীষণভাবে। দু’জনেই নিজেদের অভিজ্ঞতার ছোট ছোট দিক চিত্রনাট্যে সংযুক্ত করতে পেরেছি। জিনিয়াদি এই ব্যাপারে খুবই ওপেন মাইন্ডেড এবং গল্পের খাতিরে সেগুলো খুব সুন্দর করে বুনে দিতে পেরেছে চিত্রনাট্যে। আর সেই কারণেই এই ছবি খুব কাছের। ইট ফিলস লাইক আওয়ার ফিল্ম, মাই ফিল্ম। তাছাড়া অরিত্র, শিবু-নন্দিতাদি বাড়ির লোকের মতোই।
আপনার জার্নিটা একটু বলবেন? টেলিভিশন দিয়ে শুরু। তখন এক রকমের চেহারা ছিল, পরে বদলেছে। আপনি বাংলা ছবি, বলিউড, মিউজিক ভিডিও সবই করেছেন!
শেষ পনেরো বছর নিজের জীবনটাও বেঁচেছি, শুধু অভিনয় করেছি তা নয়। আমি এখনও নিজেকে স্টুডেন্ট হিসাবে দেখি। রোজ শিখছি। দেয়ার আর সো মেনি ওয়েজ টু বি। আর বলতে পারো ‘ব্রহ্মা জানেন…’ করার সময় নিজের ভিতর একটা স্বচ্ছ ধারণা তৈরি হয়। বুঝতে পারি আমার অন্যদের পথে হাঁটার দরকার নেই, আমি নিজের পথে হাঁটব। তথাকথিত ফিল্ম কেরিয়ার তৈরি করারও আমার প্রয়োজন নেই। আমি অন্য ধরনের মানুষ। আমার পথটা কখনওই আর পাঁচ জনের মতো হবে না। অন্যের কেরিয়ারের ব্লু প্রিন্ট কেমন সেটা আমার ভেবে লাভ নেই। নিজের চাওয়া-পাওয়াকে গুরুত্ব দিতে চাই। ‘ফাটাফাটি’-র জন্য যখন ১৯-২০ কিলো গেন করি, তখন ফিজিক্যালি বিগার হয়েছি। বাট ইটস ওয়র্থ, দ্য জার্নি। ছবিটার জন্য এটা প্রয়োজন ছিল। অংশুমান প্রত্যুষ পরিচালিত পরের ছবি ‘আপনজন’-এর জন্য আবার ১৯ কিলো কমিয়ে ফেলেছি। তার পরের ছবিটা যেখানে বিষাদের গল্প আছে, তাতে আরও ওজন কমাব! আরও একটা ছবি করছি যেখানে গৃহবধূ, গয়নার দোকানের মালিকের বউ, তার জন্য হয়তো আবার একটু গেন করব। চরিত্রের জন্য নিজেকে যেভাবে ভাঙা-গড়া দরকার, আমি করতেই চাই।
‘আপনজন’-এ আপনার চরিত্রটা কেমন?
এখানে আমি একজন সিঙ্গল মাদার। আমার বিপরীতে জিতু কামাল রয়েছে। সেও সিঙ্গল পেরেন্ট। ১৬-১৭ তারিখ নাগাদ লন্ডনে শুট করতে যাচ্ছি।
সার্জারির পর একটু ওয়েট গেন করেছিলেন। তার পরেই বোধহয় এই ছবিতে ডাক পান? রাজি হলেন কেন?
অরিত্র আমাকে প্রথমে একটা খুঁটিপুজোয় দেখে, তারপর আবিরের সঙ্গে বিজ্ঞাপনে দেখার পর এই ছবির কথা বলে এবং ‘একটু’ ওয়েট গেন করতে হবে জানায়। সেই ‘একটু’টা হল
১৯-২০ কেজি! আসলে এটা ডাবল এক্সএল মহিলার গল্প। মানে যার সাইজের জামা দোকানে পাওয়া যায় না। আমার মনে আছে ছবির আগে সার্জারির পর ওয়েট গেন নিয়ে কত কথা শুনতে হয়েছে। ইন্ডাস্ট্রিতে, সোশ্যাল মিডিয়াতে কত রকমের ট্রোলিং, কত রকম বডি শেমিং! খুবই রুড এবং অশালীন ভাষা শুনতে হয়েছে। শরীর এবং চেহারা যে কতটা ম্যাটার করতে পারে অন্যের চোখে গ্রহণযোগ্য হতে গেলে সেটা বুঝেছিলাম। পারসেপশন টুওর্ডস সামওয়ান ক্যান চেঞ্জ অ্যাকরডিং টু দেয়ার বডি। এই অভিজ্ঞতা হয়েছিল বলেই, ছবিটা করতে রাজি হলাম। দ্য ইনসাল্ট অ্যান্ড পেন ওয়াজ টু মাচ! এই ছবিতে ওবেসিটির প্রচার করছি না। কোনও মানুষ যদি মোটা হয়েও সুস্থ বা হেলদি থাকে, তাহলে অসুবিধেটা কোথায়! সবাইকে এক সাইজের হতে হবে, এ কেমন কথা!
আচ্ছা আপনার কী মনে হয় একজন মোটা বরের চেয়ে অপেক্ষাকৃত মোটা বউকে
কি বেশি শেমিংয়ের শিকার হতে হয়?
দু’ক্ষেত্রেই কথা শুনতে হয়। এই যে রাধিকা মার্চেন্ট, আম্বানির ছেলেকে বিয়ে করেছে– সেটা নিয়ে কি কম কথা হয়েছে! ট্রোলিং-এ ভরে গিয়েছে। কেউ বলেছে, ‘এর থেকে বোঝা যায় পয়সা থাকলে রোগা বউ পাওয়া যায়’ কিংবা ‘পয়সার জন্যই রাধিকা বিয়ে করতে রাজি হয়েছে।’ ওদের বিয়ে থেকে সেক্স লাইফ– সব কিছু নিয়ে লোকে চুলচেরা বিচার করেছে! নারী-পুরুষ নির্বিশেষে বডি শেমিং-এর শিকার হয়। তবে মেয়েদের ক্ষেত্রে একটু বেশিই ভারী হয়ে এসে পড়ে। আমাদের সমাজে মেয়েদের জীবনযাপন, প্রেম, বিয়ে সবই শুধু চেহারা নির্ভর বলে।
ওয়েট গেন-এর ডায়েট কী ছিল?
মোটা হতে গিয়ে অসুস্থ হতে চাইনি। একজন নিউট্রিশনিস্ট ছিলেন। আগে তো ভাত খেতাম না। খাবারে ভাত, মিষ্টি আলু বেশি খেতাম, সকালে কিশমিশ। আর যখন যা ইচ্ছে করত খেতাম। এই ছাড় নিজেকে আগে দিইনি। শুটিং যখন কাছাকাছি এসে গিয়েছে, তখন পেটটা আরও একটু বড় হওয়ার দরকার ছিল। সেটা কিছুতেই হচ্ছিল না। দু’দিন আগে থেকে নুন আর চিনির পরিমাণ বাড়ানো হল। এক্সারসাইজও বন্ধ ছিল।
এই মুহূর্তে আপনার স্টেটাস কী? জীবনে কেমন পার্টনার চান?
আমি কাজ করছি এটাই আমার স্টেটাস, এইটুকুই। তবে আমি ‘বাচস্পতি’র মতোই একজন বর চাই, যে নিজের বউয়ের বিগেস্ট ফ্যান এবং সাপোর্টার। যার শিরদাঁড়া সোজা এবং যে পুরুষ মানুষ। আমি কোনও ছেলেমানুষ চাই না, যাকে শিখিয়ে-পড়িয়ে নিতে হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.