আগামী সপ্তাহে সিনেমা হলে মুক্তি পেতে চলেছে রানি-সইফ অভিনীত ‘বান্টি অউর বাবলি টু’ (Bunty Aur Babli 2)। তার আগে একান্ত সাক্ষাৎকারে ২৫ বছরের অভিনয় জীবন নিয়ে নানা কথা জানালেন রানি মুখোপাধ্যায় (Rani Mukerji)। শুনলেন বিদিশা চট্টোপাধ্যায়।
ষোলো বছর পর আপনি ফিরছেন ‘বাবলি’ হয়ে। পুরনো চরিত্রে আবার অভিনয় করার অনুভূতিটা কেমন?
আমাকে যখন চরিত্রটা অফার করা হয়েছিল, অবাকই হয়েছিলাম। কারণ ‘বান্টি অউর বাবলি’-র সিক্যুয়েল প্রথমটার পর পরই ভাবা হয়েছিল। তখন শাদ আলির করার কথা ছিল। স্ক্রিপ্টটা নিয়ে অনেক এদিক-ওদিক হয়। ঠিক যেমনটা চাওয়া হচ্ছিল, তেমন স্ক্রিপ্ট হচ্ছিল না। এবং যশরাজ কেবল সিক্যুয়েল বানাতে হবে বলেই সিক্যুয়েল বানাতে চায়নি। আর এতদিন পর ওরা ফাইনালি একটা আইডিয়াতে রাজি হয়েছে। পরিচালক বরুণের স্ক্রিপ্টটা পছন্দ হয়। গোটা ছবিটাই একটা রোলার কোস্টার রাইড।
বলিউডে আপনার পঁচিশ বছর হয়ে গেল। কী মনে হয়, একজন অভিনেতা জীবনে দামি উপহার কী পেয়েছেন?
আমার ফ্যানদের থেকে যে আনকন্ডিশনাল ভালবাসা পেয়েছি তার তুলনা নেই! আমি যখন কাজ করছি না তখনও পেয়েছি। আর আজকের যুগে দাঁড়িয়ে যেখানে সোশ্যাল মিডিয়াতে আমার উপস্থিতি নেই তা সত্ত্বেও তারা আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। আমি অভিভূত। আমার মনে হয় না আর কোনও অভিনেতার ক্ষেত্রে এটা ঘটেছে। আর পঁচিশ বছর ধরে একটা ফ্যান বেস থেকে যাওয়া ইজ নট এ জোক। এটা আমাকে এগোতে সাহায্য করে। আই ক্যানট টেক দিস লাভ ফর গ্র্যান্টেড। আগামী ছবিতে আমি আবারও নিজেকে প্রমাণ করতে চাই। ‘মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে’র শুটিং শেষ করলাম। এটা ‘বান্টি অউর বাবলি টু’-এর থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। প্রত্যেকবার দর্শকদের নতুন কিছু দিতে চাই।
আর অভিনয় জীবনের খারাপ দিক কোনটা? পঁচিশ বছরের অভিজ্ঞতা কী বলে?
এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়াটা একটু স্ট্রেঞ্জ। একজন অভিনেতা যখন সাফল্য পায়, খ্যাতি পায়, তখন কিছু দাম তাকে দিতেই হয়। এভরিথিং কামস উইদ আ প্রাইস। খ্যাতির শিখরে বসে সব কিছু নিজে বেছে নিতে পারব এমনটা হয় না। আমরা চাই আমাদের নিয়ে কথা হোক। আর ঠিক এই জায়গাটাই বেশ জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। ইটস এ ক্যাচ টোয়েন্টি টু সিচুয়েশন। অভিনেতা চাইবে সে খবরে থাকুক, তাকে নিয়ে কথা হোক, তার প্রাসঙ্গিকতা বজায় থাকুক। এবার সে কতটা এক্সপোজ করবে, কীভাবে ব্যক্তিগত জীবন বাঁচাবে, কীভাবে ব্যালান্স করবে- এটা তাকেই খুঁজে নিতে হবে। আমি নিজে সেই ব্যালান্সটা করতে পেরেছি বলেই মনে করি। আমার কোনও কমপ্লেন নেই।
সইফ আলি খানের (Saif Ali Khan) সঙ্গেও প্রায় ১৪ বছর পর কাজ করলেন। সইফ এখন অনেক বেশি ম্যাচিওরড। এতদিন পর কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন? সেট-এ আপনাদের বন্ডিং কেমন ছিল?
আমাদের প্রথম আলাপ হয় ‘হাম তুম’-এর সেট-এ। সেই সইফ একেবারে অন্যরকম ছিল। এখনকার সইফ অনেক অভিজ্ঞ। এখন আমরা দু’জনেই পেরেন্ট। পেরেন্টহুড নিয়ে অনেক কথা হয়েছে, পরস্পরের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছি। আর ওর মতো অভিনেতা সেট-এ থাকা মানে ইন্সপায়ার্ড হওয়া। সইফের কমিক টাইমিং দারুণ। প্রচণ্ড মজার মজার কথা বলে। নিজেকে সিরিয়াসলি নেয় না। আর এত বছর ধরে পরস্পরের প্রতি যে শ্রদ্ধা আর ভালবাসা সেটা বেরিয়ে এসেছে একসঙ্গে অভিনয় করতে গিয়ে।
রানি, যদিও আপনি প্রাইভেট পার্সন, কিন্তু এই প্যানডেমিক সবাইকেই বাড়িতে বসিয়ে দিয়েছে। গত দু’বছর আপনার এবং আদিরার কেমন কেটেছে?
গত দু’বছর সত্যিই শক্ত ছিল। আমার মেয়ে নার্সারিতে ছিল যখন প্যানডেমিক হিট করে মার্চে। তারপর হোম স্কুলিং শুরু হয়। কেজি ওয়ান আর টু তো বাড়িতেই কেটে গেল। সামনের বছর ওয়ানে উঠবে। আর এই বয়সে বাচ্চারা স্কুলে সব থেকে বেশি মজা করে। বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে একটু একটু করে মিশতে শেখে, সোশ্যাল স্কিল শেখে। সেটা খানিকটা তো বিঘ্নিত হলই। প্রত্যেকেই কোনও না কোনও ভাবে এফেক্টেড। আমার মা আর শাশুড়িকে নিয়েও চিন্তা ছিল। বাড়িতে বয়স্ক বলতে ওঁরা। আর ছোট বলতে আদিরা। একটু ভয়ে ভয়ে ছিলাম। আর এই ভয় সকলের মধ্যেই ছিল।
পুরনো এবং নতুন ‘বান্টি বাবলি’-র গান এবং ট্রেলার দেখে একটা কথা মনে হয়েছে। সময় অতিবাহিত হলেও আপনার মধ্যে একটা অদ্ভূত ছেলেমানুষি আছে যেটা নষ্ট হয়নি। এখনও নিজের ভিতরে এই দস্যি মেয়েটাকে কীভাবে বাঁচিয়ে রেখেছেন?
আমি জানি না। মা হওয়ার পর পুরনো আমিকে আদিরার মধ্যে দেখতে পাই। আমার মেয়ে একেবারে আমার মতো। আর বাচ্চাদের সঙ্গে থাকলে একটু দুষ্টুমি আয়ত্ত করে নিতে হয়, তাল মিলিয়ে চলতে গেলে। শেষ দু’বছর আমাকে সব ধরনের রোল প্লে করতে হয়েছে আমার মেয়ের সঙ্গে। আমিই ওর বন্ধু, ওর কেয়ার গিভার, কখনও টিচার আবার একই সঙ্গে আমি মা। আর আমার বাবার মধ্যেও এই সারল্য ছিল, চোখে-মুখে দুষ্টুমি ছিল। আমি খানিকটা সেটা আমার বাবার থেকে পেয়েছি। আর এই সরলতাটাই আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে, এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। আর ‘ভিম্মি’র চরিত্রটা করতে গিয়ে সেইসব আমার মধ্যে ফিরে এসেছে। ভিম্মি ইজ সাচ এ ম্যাড ক্যারেক্টার।
‘বান্টি অউর বাবলি টু’ মুক্তি পাচ্ছে সিনেমা হলে!
হ্যাঁ, আই হোপ লকডাউন পরবর্তী এই সময়ে মানুষ সিনেমা হলে গিয়ে যেন একটু আনন্দ করতে পারে। বিশেষ করে ছোট বাচ্চারা খুবই ভুক্তভোগী। আর OTT কনটেন্ট-এর বেশিরভাগটাই বড়দের জন্য। ‘বান্টি অউর বাবলি টু’ এমন একটা ছবি যেখানে সব বয়সের মানুষ একসঙ্গে বসে দেখতে দেখতে এনজয় করতে পারবে। আর এই ছবির কমেডি সিচুয়েশনাল। সবাই মিলে একসঙ্গে হাসতে পারবে। ছবিটা করতে পেরে আমি খুবই খুশি। তবে প্যানডেমিকে সেটাও বিঘ্নিত হয়েছিল। আমাদের শুটিং মাঝপথে থামিয়ে দিতে হয়। লাস্টলেগ-এর শুটিং হচ্ছিল মার্চে। তারপর বন্ধ করে দিতে হয়। এবং সেটটা একইভাবে ছয় থেকে সাত মাস রেখে দিতে হয়েছিল। তারপর আমরা সম্প্রতি শুটিং শেষ করি। আর আদি (আদিত্য চোপড়া) অনড় ছিল যে সিনেমা হলেই ছবির রিলিজ করাবে। আই থিংক দ্যাট ইজ এ ভেরি বিগ কল ফর হিম।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.