পুজোর ছবি ‘রক্তবীজ’ মুক্তির আগে প্রেম, অভিনয়, রাজনীতি নিয়ে স্পষ্ট কথায় মিমি চক্রবর্তী। শুনলেন বিদিশা চট্টোপাধ্যায়।
অনেকদিন পর পুজোয় আপনার ছবি মুক্তি পাচ্ছে। ‘রক্তবীজ’-এর পাশাপাশি এতগুলো হেভিওয়েট ছবি। চাপ কতটা?
মিমি: যদি বলি একদম চাপ নেই, ভুল বলা হবে। যদি বলি প্রচণ্ড চাপে, সেটাও ঠিক না। একটা মিক্সড ফিলিং হচ্ছে! ইন্ডাস্ট্রিতে যত দিন বাড়ছে তত নার্ভাসনেসটা বাড়ছে। আসলে নন্দিতা রায়-শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘রক্তবীজ’-এর মতো একটা ভাল ছবি আমি চাইব দর্শক দেখুক। আর যেহেতু আমি বেছে ছবি করি, আমার নির্বাচনে দর্শকের সিলমোহর পেলে ভালো লাগাটা দ্বিগুণ হবে।
এই ছবিকে ‘হ্যাঁ’ বললেন কেন? কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?
মিমি: এই ছবিতে আমি ‘সংযুক্তা’। এসপি বর্ধমান। এর আগে কখনও পুলিশের চরিত্রে অভিনয় করিনি। এই ধরনের চরিত্র আমার খুব চ্যালেঞ্জিং মনে হয়। যখন প্রথম গল্পটা শুনি, বলেছিলাম, দিস ইস ওয়ান অফ দ্য বেস্ট স্ক্রিপ্ট অফ ‘উইন্ডোজ’। দারুণ লেগেছিল। ছবিটা তৈরিও হয়েছে গ্র্যান্ড স্কেলে। নন্দিতাদি-শিবুদা খুব খুঁতখুঁতে। সেখান থেকে শেখার আছে। অনেকদিনের আউটডোর, বড় কাস্ট– ট্রেলারে গ্র্যাঞ্জারটা ধরা পড়ছে। ওরা যে ধরনের ছবি করে, সেই ঘরানার বাইরে বেরিয়ে এই ছবি করেছে।
সংযুক্তা কেমন জানতে চাই।
মিমি: কলকাতা থেকে বদলি হয়ে বর্ধমানে আসে। তার একটা ব্যক্তিত্ব আছে। নিজের কাজটা খুব ভালো জানে, দাপুটে। একটা ‘বয়েইশ’ চার্ম আছে। আর যেহেতু সে বস, থানায় সেটা সবাইকে বুঝিয়ে দেয় প্রথম থেকেই। ‘সংযুক্তা’ মহিলা অফিসার হতে পারে, কিন্তু তাকে টেকেন ফর গ্রান্টেড করা যাবে না। নন্দিতাদি বলেছিলেন, সংযুক্তা আমারই মতো ডানপিটে, মারকুটে (হাসি)।
‘রক্তবীজ’-এ আপনি এবং আবির চট্টোপাধ্যায় দুজনেই পুলিশ অফিসার। স্ক্রিনে কার ক্যারিশ্মা বেশি? দুজন অফিসার মানে তো ইগোর লড়াই? প্রেম আছে?
মিমি: আমার ক্যারিশ্মা সেরা, সেটা বিশ্বাস করে কাজ করি। কোনও ইনসিকিওরিটি নিয়ে কাজ করতে যাই না। তাই স্ক্রিনেও সেটা পাবে না। এখানে আবির আমার বস, ও দিল্লি থেকে আসছে।
সেন্ট্রাল বনাম স্টেট-এর লড়াই!
মিমি: ট্রেলারেই সব উত্তর। আর আবিরদার যা হট ইমেজ, আমি জানি মহিলারা ওর প্রেমে পাগল, দর্শক ওকে ভালোবাসে। আরেকজন কো-স্টার, ফিল্মের দুনিয়ার লোক– এভাবে আবিরদাকে দেখি না। ‘বোঝে না…’-র সময়ের এত স্মৃতি আছে কী বলব। রোজকার কথা হয় না, কিন্তু খুব আন্তরিক একটা সম্পর্ক। পরিবারের কারও সঙ্গে অনেকদিন পর দেখা হলে যেমন লাগে, তেমন।
খাগড়াগড় বিস্ফোরণ নিয়ে পলিটিক্যাল থ্রিলার পুজোয় দর্শকের এই ছবি কেমন লাগবে?
মিমি: বাংলার মানুষ রাজনীতি ভালোবাসে। বাঙালির আড্ডায় পলিটিক্স নিয়েই গল্প। কে কাকে কী বলল, কোন দল কী করল, ইউ ক্যানট টেক পলিটিক্স আউট অফ বংস! পুজোয় মানুষ এমন একটা ছবি চায়, যেখানে পুজোর ভাইব আছে, টানটান উত্তেজনাও আছে।
নিজের রাজনৈতিক এবং অভিনয় কেরিয়ার নিয়ে কতটা খুশি?
মিমি: দেখো চাওয়া-পাওয়ার শেষ নেই। অ্যান্ড আই অ্যাম অ্যান অ্যাম্বিশাস পার্সন ইন লাইফ। অল্পতে খুশি হই না। আরও অনেক কিছু করার আছে। আমার স্বপ্নগুলো খুব বড়। বড় স্বপ্ন দেখেছিলাম বলেই একটা গ্রাম থেকে শহরে এসে নিজের জন্য এইটুকু করতে পেরেছি। তবে কী করেছি সেটা নিয়ে ভাবি না। প্রতিটি দিন আমার কাছে নতুন। প্রতিদিন ডেবিউট্যান্ট হিসাবে শুরু করি।
পলিটিক্স কখনও অভিনয়কে চেপে দিয়েছে?
মিমি: একটা সত্য়ি কথা বলি। আমি খুব স্বাধীনচেতা মানুষ। ফ্রি বার্ড যাকে বলে। খুব ভোকাল, স্ট্রং মতামত আছে আমার, একেবারেই ডিপ্লোম্যাটিক নই। কিন্তু রাজনীতিতে আসার পর তুমি অনেক কথা বলতে পারবে না। আমরা যারা ফিল্ম থেকে পলিটিক্স জয়েন করেছি, আমাদের কোনও রেসট্রিকশন নেই, কিন্তু এমপির চেয়ারটার একটা ভার আছে, দায়িত্ব আছে। এত অল্প বয়সে রাজনীতি জয়েন করতে চাইনি, সেটা আমার প্ল্যান ছিল না। কিন্তু আমি আবার সেই মানুষ যে মাঝপথে অন্যকে ডুবিয়ে চলে যাবে না, বরং তার পাশে দাঁড়াবে। যেটুকু করি সবটা অনেস্টি এবং ডেডিকেশন দিয়ে করি। তাই সবসময় ব্যালান্স করার চেষ্টা করেছি। প্রথমদিকে অসুবিধে হয়েছে কিন্তু এখন অভিনয় করতে গিয়ে সেট-এ বিশৃঙ্খলা, বা কোনও দাবি জানালে সেটা সামলাই। ফলে দুটোকে এক বিন্দুতে এনেছি। অভিনেতারা পলিটিক্স জয়েন করলে অনেক বেশি স্ক্রুটিনি হয়।
আর প্রেম? জীবনে বিশেষ কারও উপস্থিতি মিস করেন?
মিমি: আমার সময়ই নেই। এমন নয় যে, প্রেম করিনি। কিন্তু একটা জিনিস বুঝেছি, আমার জীবনে নানাবিধ কাজ নিয়ে এত ব্যস্ত থাকি– সেটা যদি কোনও মানুষ বুঝতে পারে, আমার কাজকে শ্রদ্ধা করে তাহলে সে আমার জীবনে আসবে। আই ডোন্ট ওয়ান্ট ইনসিকিওরড মেন ইন মাই লাইফ। এমন পুরুষ মেলা শক্ত। আমি ওই চোদ্দো-ষোলো ঘণ্টা কাজ করে বাড়ি ফিরে জবাবদিহি করতে পারব না, কার সঙ্গে ছিলাম, এই ছবিটা কেন, এটা কে, ওখানে কী হয়েছে– এত এক্সপ্ল্যানেশন দিতে পারব না। আই হ্যাভ ডান দ্যাট। সেই স্পেসে আমি আর নেই। তেমন কিছু ঘটলে, তোমরা নিশ্চয়ই জানবে।
আপনার ওয়েব ডেবিউ আসছে হইচই-এ। ‘ধনঞ্জয়’-এর চাইতে এই ‘আইনজীবী’-র চরিত্র আরও পাওয়ারফুল?
মিমি: হ্যাঁ, আমার প্রথম ওয়েব-এর কাজ আসছে, বেশ কিছু অফারের মধ্যে এটা বেছে নিয়েছি। কারণ, খুব শক্তিশালী চরিত্র ছাড়া তো আমি করব না। এখানে আমি ‘পৃথা’। আইনজীবী হলেও এটা খুবই আলাদা।
সমালোচকদের প্রশংসার পাশাপাশি বক্স অফিস সাফল্যও গুরুত্বপূর্ণ একজন অভিনেতার কাছে। আপনার ক্ষেত্রে প্রথমটার তুলনায় বক্স অফিস সাফল্য তুলনামূলকভাবে কম? হতাশ লাগে?
মিমি: হ্য়াঁ, ‘খেলা যখন’-এ আমার অভিনয় প্রশংসা পেয়েছে, কিন্তু ব্যবসা হয়নি। আমার সবটা দিয়ে অভিনয় করার পর যখন ছবিটা চলেনি তখন এতটাই খারাপ লেগেছিল যে এমন একটা মানসিক স্টেটে পৌঁছে গিয়েছিলাম যে, ভেবেছিলাম, পুরোপুরি কমার্শিয়াল ছবিতে ফিরে যাব। ভালো অভিনয় করে কী হল! আমি খুব আপসেট হয়েছিলাম। ‘মিনি’-ও রিলিজ হয়। মৈনাক খুব বন্ধু। ও বুঝিয়েছিল যে ফিল্ম না চলার অনেক কারণ থাকে, নিজের ওপর সব দায় যেন না নিই। বাট এটা ঠিক বিদিশা, ইট টুক এ টোল অন মাই মাইন্ড। সেই সময় অনেক কাজ না বলেছি। এখন সেই হতাশার ফেজটা আর নেই। আই অ্যাম আউট অফ ইট। আই অ্যাম হ্যাপি নাউ। ‘রক্তবীজ’-এর মতো একটা ছবি রিলিজ করছে। দর্শকের ভালো লাগবে আশা রাখি (হাসি)।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.