সদ্য রাজস্থান থেকে ‘জলি এলএলবি ৩’ ছবির শুটিং সেরে ফিরেছেন। আবার যাবেন মুম্বইয়ে শুটিং করতে। এরই ফাঁকে সুপর্ণা মজুমদারের সঙ্গে কথা বললেন খরাজ মুখোপাধ্যায়। অক্ষয়ের ছবি তোলা থেকে গ্রামের অদ্ভুত নিয়ম, সবই জানালেন অভিনেতা।
রাজস্থান থেকে ‘জলি এলএলবি ৩’র শুটিং করে ফিরলেন। কেমন ছিল অভিজ্ঞতা?
যেখানে শুটিং করছিলাম সেটা আজমেঢ়ের বান্দনওয়াড়া বলে একটা জায়গা। সেখানে ছিলাম আমরা। ক্লার্ক রিসর্ট বলে একটা রিসর্টে ছিলাম। কেন যে ওরকম একটা জায়গায় এত সুন্দর একটা রিসর্ট তার কোনও ব্যাখ্যা আমি পাইনি। দারুণ রিসর্ট সেখানে সবাই ছিলাম আমরা এবং সেখান থেকে এক ঘণ্টার একটা রাস্তা গিয়ে একটা গ্রাম। প্রত্যন্ত একটা গ্রাম। সেই গ্রামটার নাম হচ্ছে দেবমালি। এই গ্রামের অনেক ধরনের বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ওখানে বিশাল বড় এক জাগ্রত মন্দির রয়েছে পাহাড়ের উপরে।
কোন দেবতার মন্দির?
রাধা-কৃষ্ণর মন্দির, এবং সেখানে দেখলাম মন্দিরের নিচে পুজো দেওয়ার সামগ্রী, নারকেল বিক্রি হচ্ছে। এই গ্রামে কেউ দরজা বন্ধ করে ঘুমায় না। দরজা খোলা থাকে। ওখান থেকে একটা পাথরও যদি চুরি করে নিয়ে যায় তার নাকি ভয়ংকর রকমের শারীরিক অসুস্থতা হয়। এগুলো শোনা কথা। ওখানে যে সমস্ত পাথর রয়েছে তা নুইয়ে রয়েছে, সব দেবতাকে দেখে মাথা নুইয়ে আছে। ওখানে কোনও মাছ, মাংস, ডিম কিছু খাওয়া যায় না। রান্নাও করা যাবে না নিয়েও যাওয়া যাবে না। পুরো নিরামিষ।
মানে এ কটা দিন নিরামিষের উপর ছিলেন…
হ্যাঁ, হ্যাঁ, যা কিছু লোকে খাবে সমস্ত নিরামিষের উপরই থাকতে হবে এবং গ্রামের আরেকটা মজার বিষয় হল যে গোটা গ্রামটা একটাই ফ্যামিলি। মানে যত লোক আছে সব একই জ্ঞাতি-গুষ্টির লোক। এছাড়া গ্রাম মানে যেমন হয়, চাষবাস করে মানুষ। কিছু মানুষের কাছে প্রচুর টাকা আছে কিন্তু কেউ পাকা বাড়ি করতে পারবে না। এটা ওদের মান্যতা। এমন গ্রামে শুটিং করছিলাম। অক্ষয় একদিন এলেন, হেঁটে হেঁটে মন্দিরে গেলেন। অনেক উপরে মন্দিরটা। পুজো দিয়ে আসলেন। সত্যি কথা বলছি, আমি যাইনি, যেতে পারিনি। অতটা উপরে ওঠা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না।
আর শুটিং?
যেখানে শুটিং করছিলাম সে জায়গাটাও মেকআপ ভ্যান থেকে অন্তত আধ কিলোমিটার দূরে। এই আধ কিলোমিটার রাস্তায় কিন্তু বড় গাড়ি যাওয়ার মতো অবস্থা নেই। সুতরাং শুটিং করতে অক্ষয় যখন যাচ্ছিলেন, আর যখন ফিরছিলেন প্রত্যেকবার কিন্তু বাইকে করে যেতে হচ্ছিল। ওনার সঙ্গে যিনি নিরাপত্তারক্ষী ছিলেন, তিনি সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছিলেন, আবার নিয়ে আসছিলেন। আর আমাদের গরমে অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। প্রাণপাত করে দিয়েছেন সকলে যাতে সুস্থ থাকি। কিন্তু যতই হোক না কেন গরম তো গরম! সেটা সহ্য করা সত্যিই খুব কষ্টকর। তুমি এখন যদি আমার মুখটা দেখ তাহলে বুঝতে পারবে পুরো কালো হয়ে গেছি আমি।
শুটিংয়ে আর কে কে ছিলেন?
অক্ষয় ছাড়া আরশাদ ওয়ারসি ছিলেন। আরও কয়েকজন থিয়েটার শিল্পী ছিলেন। সবার নাম মনে নেই।
শুটিং যখন হত না তখন কীভাবে সময় কাটত?
অক্ষয় (Akshay Kumar) হাতে ক্যামেরা নিয়ে আমার ছবি তুলছিলেন একটা সময়। ছবি তুলে আবার আরশাদ ওয়ারসিকে দেখাচ্ছিলেন। দেখো কেমন এক্সপ্রেশন। আসলে আমি গরমে কষ্ট পাওয়ার এক্সপ্রেশন দিচ্ছিলাম। তা নিয়েই এই কাণ্ড হচ্ছিল। বারবার করে গোঁফটা খুলে যাচ্ছিল। বড় গোঁফ ছিল।
অক্ষয় কুমার তো শুনেছি প্র্যাঙ্কস্টার। এখানে কারও উপর প্র্যাঙ্ক করেননি?
তা তো করেনই। তবে যেদিন শুটিং শেষ হয়েছিল সেদিন উনি গোটা গ্রামের সামনে বক্তব্য রাখলেন। তাঁদের মধ্যে অনেককে সিনেমায় অভিনয় করার জন্য নেওয়া হয়েছিল। তাঁদের অক্ষয় বলেন, ‘আপনারা এত সুন্দর কাজ করেছেন, মনে হচ্ছে এই ছবিটা শেষ হলে আপনারা এক-একজন অভিনেতা হয়ে যাবেন। ভীষণ ভালো লেগেছে আপনাদের এখানে কাজ করে। আসব আবার এখানে তবে গরমে নয়। ওয়েদার একটু ভালো হলে আসব। খুব ভালো কাজ করেছেন। ভালো থাকবেন সবাই, আপনাদের ঠাকুরে প্রতি আমার অনেক শ্রদ্ধা।’ এমন গ্রামকে বাছার জন্য পরিচালককেও ধন্যবাদ দেন তিনি।
আপনার সঙ্গে কী কথা হল? আগেও ওনার সঙ্গে কাজ করেছেন…
এবারে তেমন নয়। সত্যি কথা বলতে এত গরম… দেখা হলে দূর থেকে হাত নাড়ছি বা শট দিতে যাওয়ার সময় পিঠে চাপড় দিয়ে গেলেন এই সমস্ত হয়েছে। কথা বলার মতো অবস্থায় কেউ ছিল না। গরমে ভালোই লাগছিল না কথা বলতে। এত গরম না! শুধু কাজটা ঠিকঠাক করে যে যার মতো চলে যাওয়া। ওখানে সূর্যাস্ত হতে হতেই সন্ধ্যা সাতটা। তার পর হোটেলে ফিরতে আরও এক ঘণ্টা। স্নান-টান করে শুয়ে পড়ে। আবার সকালে শুটিংয়ের কল। একদিন তো ভোর চারটের কল ছিল।
এর পর আর কোথায় কোথায় শুটিং আছে?
মুম্বইয়ে আছে। দিল্লিতে আছে। এই তো ২ তারিখে পৌঁছাব। তিন তারিখ থেকে আবার মুম্বইয়ে শুটিং।
[আরও পড়ুন: জীতুর ভবিষ্যতের পোস্টে প্রতিক্রিয়া তসলিমার, কী নিয়ে হল ভার্চুয়াল চর্চা?]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.