‘সমালোচনা ভয় পাই না’, একান্ত সাক্ষাৎকারে অকপট অভিনেতা জিতু কমল (Jeetu Kamal)। অনীক দত্ত পরিচালিত ‘অপরাজিত’ (Aparajito) ছবিতে সত্যজিৎ রায়ের চরিত্রে তাঁর উপস্থিতি ইতিমধ্যেই সাড়া ফেলেছে। তা নিয়েই আলোচনা হল। শুনলেন বিদিশা চট্টোপাধ্যায়।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের তরফে মুম্বইয়ে ‘অপরাজিত’-র স্পেশ্যাল স্ক্রিনিং আয়োজন করা হয়েছিল। কেমন প্রতিক্রিয়া?
ওখানে যাঁরা ছবিটা দেখেছেন, সবাই ছবিটা দেখে খুব অভিভূত! আর শ্যাম বেনেগল, যাঁর কাজ দেখে আমি অভিনয়ে আসতে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলাম, সেই মানুষটা যখন নিজে থেকে এগিয়ে এসে অ্যাপ্রিশিয়েট করলেন সেটা আমার জীবনে একটা স্মরণীয় মুহূর্ত।
অনীক দত্ত আপনাকে ‘সত্যজিৎ রায়’-এর চরিত্রের জন্য বেছে নিয়েছিলেন, অবাক হননি?
আমি তো প্রথমে বুঝতেই পারিনি। কারণ জানতামও না কীসের জন্য আমাকে অ্যাপ্রোচ করা হচ্ছে। গত বছর মে মাসে অনীকদা ফোন করে পাঞ্জাবি পরা ছবি চান। তার বেশ কিছু দিন পর একটা স্ক্রিপ্ট পাঠিয়ে শুট করে পাঠাতে বলেন। নিজের মতো করে পাঠালাম। তখনও বুঝিনি। তারপর লুক টেস্ট ডাকার আগে জানলাম সত্যজিৎ রায়ের (Satyajit Ray) চরিত্র! যারা আমার ওয়েল উইশার তারা সকলেই আমাকে এনকারেজ করেছিল চরিত্রটা করতে।
বাঙালি তো সত্যজিৎ রায় এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিয়ে খুবই স্পর্শকাতর। তো এমন একটা চরিত্রে অভিনয় করা খুব ঝুঁকির! আপনার টেনশন হয়নি?
দেখুন আমি খুব জেদি। আর আমি কোনও কিছু নিয়েই খুব একটা ভয় পাই না। মৃত্যুভয়ও নেই। আমার ভয় বলতে একটাই, আপনজন হারানোর। আর সমালোচনা ভয় পাই না। আমি যে কাজ করে আনন্দ পাই সেটা তো আমাকেই বুঝে নিতে হবে। সেটা নিয়ে টেনশন করে লাভ নেই। কেরিয়ার যখন শুরু করি তখন ক্রিটিসিজম নিয়ে ভাবতাম। এখন মনে হয়, আমি যেমন আমার পছন্দমতো কাজ করি, যারা সমালোচনা করার তারা তাদের জায়গা থেকে করে। তাদের বাকস্বাধীনতা আছে। অসুবিধে নেই তো!
সত্যজিৎ রায় হয়ে উঠতে বিগেস্ট সাপোর্ট কার?
কোনও একজন তো নয়। সেটা বললে অন্যায় হবে। অনীকদা তো রয়েইছেন, উৎসবদা রয়েছেন, অনীকদার স্ত্রী তুতুলদি– কাকে ছেড়ে কার কথা বলব। আমার স্ত্রী নবনীতা প্রায় তেইশ-চব্বিশ দিনের জন্য নিজের ফ্ল্যাটে গিয়ে থেকেছে। আমি কাজের মধ্যে এতটাই ডুবে ছিলাম যে, একা থাকতে চেয়েছিলাম। তো ওকেও একা থাকতে হয়েছে। কারণ আমি জানি যে— ছবিতে অভিনয় করতে চলেছি সেখানে পান থেকে চুন খসলে লোকে ছেড়ে কথা বলবে না। একটা দড়ির ওপর দাঁড়িয়ে ব্যালান্স করার মতো। সেই জন্য একা থেকে মনঃসংযোগ করা জরুরি ছিল। আর এবার মুম্বইয়ে গোটা ছবিটা দেখে জোর গলায় বলতে পারি যে নিরাশ করব না।
এই যে জীতু কামাল মেথড অভিনয় করতে গিয়ে দাঁতের অপারেশন করিয়েছেন– সেটা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে ঝড় বয়ে গেল। কিছু বলবেন?
আসলে কেউ ভাল কিছু করার চেষ্টা করলে সেটা নিয়ে তক্ষুনি সমালোচনা শুরু হবে। এই যদি লুকের এত মিল এবং ভাল না লাগত তাহলে কিন্তু এত কথা হত না। হ্যাঁ, দাঁতের এই অপারেশনটা করানোর সিদ্ধান্ত আমি নিজেই নিয়েছিলাম। তাতে কী হয়েছে! এটা তো আর রকেট সায়েন্স নয়। আর তার প্রায় সাত-আট মাস পর নবনীতা ইমোশনালি ফেসবুকে লিখেছে। আমি আগ বাড়িয়ে কাউকে জানাতে চাইনি। এটা নিয়ে প্রোপাগান্ডা হলে আমার নিজেরই অস্বস্তি হত। কারণ সবাই মিলে খেটে একটা ছবি করলাম, আর গোটা ফোকাসটা গিয়ে পড়ল দাঁতে! তাহলে তো আরও বলতে হয়। আমি অ্যাজমার পেশেন্ট। সেখানে শুটিং-এ যে পরিমাণ সিগারেট টানতে হয়েছে– এটা নিয়ে তো প্রচার করিনি।
এই ছবির মূল ফোকাস তো ‘পথের পাঁচালী’-র মেকিং নিয়ে?
হ্যাঁ, ‘পথের পাঁচালী’ তৈরি করতে সত্যজিৎ রায়কে কতটা স্ট্রাগল করতে হয়েছে সেটা অনেকেই জানেন না। সেই সময়ে দাঁড়িয়ে ‘নাচ-গান-রোম্যান্স’ বাদ দিয়ে ছবি তৈরি করার যে স্ট্রাগল সেটা এসেছে এই ছবিতে।
এই ছবির সাফল্য নিয়ে চিন্তিত? কী মনে হয়, আপনার কেরিয়ারের দিকনির্দেশ করে দেবে ‘অপরাজিত’?
দেখুন, এই বিষয় নিয়ে আমি কেয়ার করি না। আমি আমার সমস্তটা দিয়ে নিজের কাজ করেছি। বক্স অফিসে কী হবে সেটা নিয়ে ভাবি না। আর ইন্ডাস্ট্রিতে চোদ্দো-পনেরো বছর ধরে কাজ করছি। যখন শুরু করেছিলাম তখন কি জানতাম এমন একটা চরিত্রে অভিনয় করব? একটা স্ট্রাগল, এতদিনের প্র্যাকটিসের মধ্য দিয়ে আজকে আমি এইখানে। বাড়ি হয়েছে, গাড়ি হয়েছে। আমি কেন একটা ছবির সাফল্যের ওপর এতটা আশা করে বসে থাকব! এই ছবি সাফল্য পেলেও শ্যাম বেনেগল কালই আমাকে ডেকে রোল দেবেন এমন আনরিয়্যালিস্টিক ভাবনা আমার নয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.