১২ মে সিনেমা হলে মুক্তি পাবে নন্দিতা-শিবপ্রসাদ জুটি প্রযোজিত ‘ফাটাফাটি’ (Fatafati)। পরিচালনায় অরিত্র মুখোপাধ্যায়। উইন্ডোজের প্রযোজনায় এটি অরিত্রর তৃতীয় ছবি। আত্মবিশ্বাস যেন তিনগুণ। শম্পালী মৌলিকের সঙ্গে মুখোমুখি হয়ে পরিচালক জানালেন নানা কথা।
‘মোটা হতে পারি, তবে আমাদের জীবনটা মোটামুটি নয়, ফাটাফাটি’– ছবির এই সংলাপটা এই মুহূর্তে খুব জনপ্রিয়। ‘উইন্ডোজ’-এর আগামী ছবি ‘ফাটাফাটি’ মুক্তি পাচ্ছে ১২ মে। মূলত স্থূলকায় এক গৃহবধূর প্লাস সাইজ মডেল হয়ে ওঠার গল্প বলবে এই ছবি। পরিচালনায় অরিত্র মুখোপাধ্যায়। কাহিনি ও চিত্রনাট্য লিখেছেন জিনিয়া সেন আর সংলাপ সম্রাজ্ঞী বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা। এই ত্রয়ীর হাত ধরেই এর আগে এসেছিল ‘ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মোটি’ এবং ‘বাবা বেবি ও’। ফলে তাঁদের হ্যাটট্রিক ফিল্ম ‘ফাটাফাটি’। কী বলবেন?
অরিত্র: (মৃদু হেসে) হ্যাঁ, খুবই ভাল লাগছে। ট্রেলারের ভাল সাড়া পাচ্ছি। প্রথম দশদিনে ফেসবুকে ওয়ান মিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে, ইউটিউবে সাড়ে আট লাখের ওপর রিচ, সেটা ভাল।
আগের দুটো ছবির মতোই অরিত্রর তৃতীয় ছবিটিও ইস্যুভিত্তিক এবং সামাজিক বার্তাবাহী। এই ধরনের ছবিই কি করতে চান?
অরিত্র: আগের দু’টো ইস্যুভিত্তিক ছবির সাফল্য আমাকে এই ধরনের ছবিতে অনুপ্রাণিত করেছে। সব ধরনের জনারের কাজই করতে চাই। একটু তলিয়ে ভাবলে দেখবেন সবক’টা কাহিনি আলাদা। ‘বাবা বেবি ও’ কিন্তু সিঙ্গল ফাদারের গল্প যেমন, একই সঙ্গে প্রেমের গল্পও। আমাদের ‘উইন্ডোজ’-এর স্টাইল-ই হচ্ছে একটা মেসেজ রেখে যাওয়া। এই ছবিতেও বডি শেমিং-এর এগেনস্ট-এ কথা বলেছি আমরা। আমি নিশ্চয়ই সব ধরনের জনার এক্সপ্লোর করতে চাই। জিনিয়ার সঙ্গে কথাও হয়েছে অন্য ধরনের বিষয় নিয়ে।
এর আগে বলিউডে আমরা বডি শেমিংয়ের ইস্যু নিয়ে ‘ডবল এক্সেল’ দেখেছি। ‘ফাটাফাটি’ ছবিটির ভাবনার শিকড় কোথায়?
অরিত্র: জিনিয়া ছোট বয়সে বডি শেমিং নিয়ে অনেক বিচিত্র অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছিল, ট্রিগার পয়েন্ট সেটাই। এই ছবিটার গল্পটা লেখা হয়েছিল প্রথম লকডাউনের সময়। মানে ‘ব্রহ্মা’ হওয়ার ঠিক পরেই। তখন বিদেশের একটা খবর থেকে আমরা ডবল এক্সেল মডেলের ব্যাপারে জানতে পারি। তেমন মডেলের ছবি দেখে আমাদের ইন্টারেস্টিং লাগে। বাইরের দেশে কিন্তু ডবল বা ট্রিপল এক্সেলের মডেল নিয়ে র্যাম্প শো হচ্ছে অনেকদিন ধরে। সেই ধরনের পোশাকও খুব জনপ্রিয় হচ্ছে। আর জিনিয়া যেহেতু নিজে ওজন নিয়ে, খাওয়া নিয়ে তির্যক কথা শুনেছে, ফলে বিষয়টা নিয়ে আগ্রহী হয়েছিল।
আর আমি নিজেও বডি শেমিং চোখের সামনে দেখেছি। আমার স্ত্রীর চেহারা ভারী ছিল বেশ। যখন বিয়ে হয় আমাদের, ওর প্রায় একশো কেজির কাছাকাছি ওজন। লোকে তখন বউভাতের দিনও আমাকে শুনিয়ে গেছে যে, ‘কীরে তুই এরকম একটা মোটা মেয়েকে বিয়ে করলি।’ আরও অনেকটা সময় জুড়ে এটা শুনেছি, যে হাতির মতো বউ! তো বিষয়টা আমার মনের খুব কাছাকাছি। একই কথা প্রযোজ্য খুব রোগাদের ক্ষেত্রেও, তাদের বাঁকা কথা শুনতে হয় অহরহ। তার থেকেই বিষয়টা সিনেমায় এক্সপ্লোর করতে চেয়েছিলাম।
[আরও পড়ুন: ফিল্মফেয়ারের মঞ্চে সেরা আলিয়া, রাজকুমার, শ্রেষ্ঠ গায়ক অরিজিৎ, দেখুন জয়ীদের তালিকা]
প্রাথমিক ভাবে শুনেছিলাম, ‘ফাটাফাটি’-তে অপরাজিতা আঢ্যর অভিনয় করার কথা। এখন সেইখানে ঋতাভরী চক্রবর্তীকে (Rithabhari Chakraborty) পাচ্ছি আমরা। অপরাজিতার ছবিটা করা হল না কেন?
অরিত্র: গল্পটা যখন লেখা হয়েছিল তারপর সময় যেতে কিছুটা পালটায়। এটা বোধহয় ছাব্বিশ নম্বর ড্রাফট, যেটা নিয়ে শেষ অবধি আমরা কাজ করেছি। জিনিয়া আর আমার দু’জনেরই মনে হয়েছিল, একটা কমবয়সি মেয়ে মোটা হলে তাকে যত কথা শুনতে হয়, আর চল্লিশ-বিয়াল্লিশ বছর বয়স হয়ে গেলে তার ওই কথাগুলো কিন্তু সয়ে যায়। বয়স ছাব্বিশ হলে ধাক্কাটা বেশি লাগে। তার বাচ্চা না হওয়ার কারণ হিসাবেও স্থূলতাকেই ধরা হয়। ফলে সিনেমার স্বার্থেই তুলনায় কমবয়সি চরিত্র রাখা হয় চিত্রনাট্যে। অপাদির মতো বড় অভিনেত্রীকে সরানোর কথা আমরা ভাবতেও পারি না। আমি অপাদিকে সিচুয়েশনটা বুঝিয়ে বলেছিলাম। তবে ঋতাভরী-ই হবে এটা কিন্তু শুরুতে ভাবিনি, আমরা খুঁজছিলাম।
কীরকম ভাবে তাহলে ঋতাভরীর কাস্টিং?
অরিত্র: “ব্রহ্মা’-র অনেকদিন পর লকডাউন পেরিয়ে ঋতাভরীর সঙ্গে দেখা হয় একটা পুজোয়। তখন শুনেছিলাম অপারেশনের পর অনেকটা মোটা হয়েছে, কিন্তু দেখা হয়নি। সেদিন দেখেই মনে হয়, আমাদের হিরোইন পেয়ে গেছি। তবে ছবির জন্য আরও ১৫ কেজি ওজন বাড়িয়েছিল ঋতাভরী। ও কিন্তু সত্যি ৯৫ কেজি হয়েছিল। আর ওর পাশে ছিপছিপে ছেলে চাই, ফলে আবিরকে (Abir Chatterjee) নেওয়া। কারণ মোটা বউয়ের পাশে রোগা বরকে সবসময় কথা শুনতে হয়।
আবির-ঋতাভরী ছাড়া তাৎপর্যপূর্ণ চরিত্রে রয়েছেন স্বস্তিকা দত্ত, সংঘশ্রী সিনহা মিত্র, অরিজিতা মুখোপাধ্যায়, দেবশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়, সোমা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। সব মিলিয়ে ‘ফাটাফাটি’ নিয়ে দর্শকের কৌতূহল চোখে পড়ছে, চমক হাসান, অমিত চট্টোপাধ্যায়ের গানও ভাল লাগছে। ‘উইন্ডোজ’-এর ছবি আসছে মানে অনেকেই ধরে নেন নন্দিতা-শিবপ্রসাদের ছবি আসছে। এই ছবিটা যে অরিত্র মুখোপাধ্যায়ের, অনেকেই জানেন না। বড় নামের ছত্রচ্ছায়ায় থাকার যেমন ভাল দিক আছে, তেমনই নিজস্ব আইডেনটিটি তৈরি হতে সময় লাগে। এটা কখনও ভাবায় অরিত্রকে?
না, সেটা আমার কখনও মনে হয় না। এটা তো স্বাভাবিক যে হাউস থেকে ছবিটা আসছে, দিদি-দাদার কথা প্রথমে আসবেই। ধরুন, এবার আর্জেন্টিনা ওয়ার্ল্ড কাপ জিতেছে। সবাই মেসি-মেসি করে লাফাচ্ছে। এ দিকে আলভারেজ, ডি মারিয়াও তো গোল করেছে। প্রথমে আসে মেসির নাম। দিদি-দাদাই তো আমাদের মেসি। আর মনে হয় আমাদের এই ইয়ং টিমটাকে দেখতে দেখতে আস্থা জন্মে যাবে দর্শকের। আশা করি নিরাশ করব না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.