Advertisement
Advertisement

Breaking News

Parambrata about Abhijaan

‘প্রথমে দ্বিধা ছিল’, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘অভিযান’ তৈরি নিয়ে কেন একথা বললেন পরমব্রত?

একান্ত আড্ডায় ছবি নিয়ে আরও নানা কথা জানালেন তিনি।

Exclusive interview of director Parambrata Chatterjee about Soumitra Chatterjee's boigraphical film Abhijaan | Sangbad Pratidin
Published by: Suparna Majumder
  • Posted:April 8, 2022 2:19 pm
  • Updated:April 8, 2022 2:20 pm  

বাংলা নববর্ষের মুখে আসছে সৌমিত্র চট্টোপাধ‌্যায়ের (Soumitra Chatterjee) বায়োপিক ‘অভিযান’। ছবি তৈরির নেপথ‌্য কাহিনি শোনালেন পরিচালক পরমব্রত চট্টোপাধ‌্যায় (Parambrata Chatterjee)। শুনলেন বিদিশা চট্টোপাধ‌্যায়।

সৌমিত্র চট্টোপাধ‌্যায়কে নিয়ে বায়োপিক করবেন এই ভাবনাটার শুরু কোথায়?
আসলে এটা আমার নিজের ভাবনা নয়। ছবির প্রযোজক এবং ডক্টর শুভেন্দু সেন তিনি নিউ জার্সিতে থাকেন এবং সৌমিত্রজে‌ঠুর বাংলা লেখাগুলোর অনুবাদ করছিলেন- তাঁরা আমাকে অ‌্যাপ্রোচ করেছিলেন ২০১৮-র শেষে।

Advertisement

Abhijaan movie

সৌমিত্র চট্টোপাধ‌্যায়ের মতো কিংবদন্তি অভিনেতাকে নিয়ে বায়োপিক করাটা বেশ চ‌্যালেঞ্জের। একবারেই রাজি হয়েছিলেন?
না, আমার প্রথমে দ্বিধা ছিল। তারপর নিজে একটু ভাবনাচিন্তা করি। ওঁদের বলেছিলাম, আমাকে যদি ছবিটা বানাতে হয়, তাহলে যেভাবে আমি ওঁকে দেখেছি এতগুলো বছর ধরে এবং ওঁর সম্পর্কে আমার যা ব‌্যক্তিগত ধারণা- সেটা ধরেই আমি ছবিটা তৈরি করতে চাইব। কিন্তু সেটা ওঁকে অনুমোদন করতে হবে। আমার এই দৃষ্টিভঙ্গিতে যদি সৌমিত্রজে‌ঠু রাজি না হন তাহলে কিন্তু আমার পক্ষে ছবিটা করা সম্ভব হবে না। ওঁরা রাজি হয়ে যান। এরপরে যখন সৌমিত্রজে‌ঠুর সঙ্গে সামনা-সামনি বসে আলোচনা করি তখন উনি বলেছিলেন, ‘বাহ্‌, এটা তো মনে হচ্ছে ঠিক লোকের হাতেই পড়েছে। এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কেউ আমার জীবন নিয়ে ভেবেছে বলে মনে হয় না।’ উনি খুব সানন্দে মেনে নিয়েছিলেন। ফলে খুব একটা অসুবিধা হয়নি। তারপর ওঁর সঙ্গে টানা দু’মাস, প্রতি সপ্তাহে দু’-তিন দিন গিয়ে নানা আড্ডা রেকর্ড করেছিলাম। সেই রেকর্ডিং ধরেই আমি ফাইনাল স্ক্রিপ্ট তৈরি করি।

Soumitra Chatterjee 3

আমাদের এখানে বায়োপিক মানেই সেই ব‌্যক্তির যা কিছু ভাল সেটাকেই উদযাপন করা হয়। যত মহান ব‌্যক্তিই হোন না কেন, প্রত‌্যেকের জীবনেই কিছু অপ্রিয় ঘটনা থাকে। শুনেছি সৌমিত্র চট্টোপাধ‌্যায়ের ব‌্যক্তিগত জীবন খুব সুখের নয়, এবং অর্থের প্রয়োজনেই তাঁকে শেষের দিকে অনেক কাজ করতে হয়েছে। এই বিষয়গুলো কি ছবিতে থাকবে?
খুব বেশি রিভিল না করেই বলছি, এই যে তাঁর ব‌্যক্তিগত অসুখী জীবন কিংবা নানা ধরনের কাজ করার বাধ‌্যতা এগুলো আমি নিজে দেখেছি। সৌমিত্রজে‌ঠুকে তো অনেকদিন ধরেই চিনি। আমার যেটা সবসময়ই মনে হয়েছে একদিকে কাজের সঙ্গে তাঁর একটা নিরবচ্ছিন্ন সম্পর্ক তৈরি হলেও, অন‌্যদিকে সেটার থেকে একটা দূরত্ব রচনা করতেন। যে কাজটা করে উনি জীবন ধারণ করছেন সেটা চল্লিশ বছর বা আশি বছর বয়সে হোক না কেন- সেটার প্রতি ওঁর একটা নির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি ছিল। ‘অভিযান’ ছবিতে আমি সেটাকেই অ‌্যানালাইজ করার চেষ্টা করেছি।

Parambrata Abhijaan

[আরও পড়ুন: দক্ষিণী ছবিতে এবার বঙ্কিমের ‘আনন্দমঠ’, চিত্রনাট্য লিখলেন রাজা মৌলির বাবা]

একটা সময় ওঁর করা বিজ্ঞাপন নিয়েও তো সমালোচনা হয়েছে…
হ্যাঁ, হেন ট্র্যাশ কাজ নেই যেটা উনি করেননি। সেটা খুব সাধারণ মানের মেগা সিরিয়াল থেকে শুরু করে নিম্নমানের ছবি- অনেক কিছুই করেছেন। আমার ছবিতে ওঁর জীবনের মাইলস্টোনগুলো যেমন ধরা আছে, তেমনই তাঁর জীবনের নানা কনফ্লিক্ট রয়েছে গোটা ছবি জুড়ে।

এটা খুব কমই হয়েছে, যেখানে যার বায়োপিক তৈরি হচ্ছে সেই ব‌্যক্তিকেই সেই চরিত্রে দেখা যাচ্ছে। সৌমিত্র চট্টোপাধ‌্যায় যেহেতু অভিনেতা তিনি সবসময় ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে ধরা দিয়েছেন পর্দায়। সেখানে ব‌্যক্তিগত পরিসরে, নিজের বেডরুমে মানুষটা যেভাবে অকৃত্রিম থাকেন সেটা পর্দায় তুলে ধরা খুব সোজা নয়। আপনি কি সেই সৌমিত্র চট্টোপাধ‌্যায়কে নিজের ছবিতে ধরতে পেরেছেন?
নিজেকে খুব একটা ঢাকার লোক উনি ছিলেন না। আমিও খুব চেষ্টা করেছিলাম আমার বুদ্ধি অনুযায়ী আসল লোকটাকে বের করে আনতে। কাজটা করতে গিয়ে আমি বুঝতে পারছিলাম কোনও কোনও দিন উনি একটু অস্থির হয়ে উঠছেন। উনি বুঝতে পারছেন নাতির বয়সি একটা ছেলে তাঁকে দেখে ফেলছে, বুঝে ফেলছে। ভিতরের মানুষটাকে জেনে ফেলছে। বিভিন্ন খোলস দিয়ে ভিতরের মানুষটাকে যেভাবে এতদিন ঢেকে রেখেছিলেন সেই খোলসগুলো একটা একটা করে খুলে পড়ে যাচ্ছে। তখন শুটিংয়ের সময় প্রশ্নের উত্তরে ছোট-ছোট বাক‌্য বলতেন। ওঁর টাইম বাঁধা থাকত সাড়ে চার ঘণ্টা। সেই সব দিনগুলোতে সাড়ে তিন ঘণ্টাতেই তিনি যাই-যাই শুরু করতেন। আবার এমনও দিন আছে, আমার একটা প্রশ্নের তিন লাইনের উত্তরে উনি এত কথা বলছেন যে ‘কাট’ বলতে পারছি না।

Soumitra Chatterjee 1

সৌমিত্র চট্টোপাধ‌্যায়ের বায়োপিকে তাঁর সঙ্গে কাজ করার সবচেয়ে কঠিন চ‌্যালেঞ্জ কোনটা?
প্র্যাকটিকাল চ‌্যালেঞ্জ ছিল সময়টা। উনি দিনে সাড়ে চার ঘণ্টার বেশি শুট করতেন না। ফলে প্রচণ্ড তাড়াহুড়োর মধ‌্যে কাজটা করতে হত। কিন্তু ক্রিয়েটিভ চ‌্যালেঞ্জ ছিল তাঁর জীবনের নানা ঘটনা যেগুলো নিয়ে তিনি খুব স্বচ্ছন্দ‌্য নন, সেগুলোকে ছবির মধ‌্যে নিয়ে আসা। আমি ওঁকে বলেছিলাম, ‘একটু ভরসা করো। আমি যেমন একটা ক্রিটিকাল জায়গা থেকে দেখছি তেমন এমন কোনও কিছু ছবিতে দেখাব না যেটা সকলের সামনে নতুন করে, এই বয়সে তোমার জন‌্য বিড়ম্বনার কারণ হবে।’ মোটামুটি সবকিছু নিয়েই রাজি হয়েছিলেন দু’-একটা জিনিস ছাড়া। শুটিংয়ের আগে উনি বলেছিলেন এগুলো রাখিস না।

এই ছবিতে আপনি একজন অঙ্কোলজিস্টের চরিত্রে। যে বিদেশ থেকে আসে সৌমিত্র চট্টোপাধ‌্যায়ের ওপর তথ‌্যচিত্র তৈরি করতে। আপনার চরিত্রটা তো একটা ফিল্ম স্টুডেন্ট কিংবা পরিচালকেরও হতে পারত।
ডক্টর সেনের সঙ্গে সৌমিত্রজে‌ঠুর বন্ধুত্বের জায়গাটা আমার খুব ইন্টারেস্টিং লেগেছিল। কিছুটা ওঁর উপর ভিত্তি করেই আমার চরিত্রটা তৈরি করেছি। তাছাড়া আমার মনে হয়েছিল কলকাতায় থাকা ফিল্মের একজন ছাত্র হলে তার একটা নির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি থাকবে একজন অভিনেতা বা শিল্পীর ওপর। অন‌্যদিকে বিদেশ থেকে আসা বাঙালি ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার যাঁরা আছেন তাঁরা বাংলার স্বর্ণযুগের শিল্পীদের নিয়ে একটা ‘ইমোশনাল বাবল’-এ বাস করেন। যেটা সবসময় সত‌্যি হয় না। তাঁরা যখন তাঁদের প্রিয় শিল্পীর সংস্পর্শে আসেন তখন সেই ভ্রান্ত ধারণাটা অনেক সময় ভেঙে যায়। বাবল বার্স্ট করে। আমার ছবিতে সেটা রাখতে চেয়েছিলাম।

Soumitra Chatterjee 1

যিশু সেনগুপ্তকে (Jisshu Sengupta) দেখা যাবে অল্পবয়সি সৌমিত্র চট্টোপাধ‌্যায়ের চরিত্রে। এই ফ্ল‌্যাশব‌্যাক তৈরি করা কতটা চ‌্যালেঞ্জিং?
যিশু আমার খুব বন্ধু। তবে অভিনেতা যিশুকে নিয়ে আমার একটা মতামত আছে। সেটা হল যিশু ডিরেক্টর্স অ‌্যাক্টর। কোনও ছবিতে অভিনয় বেশি ভাল হতেই পারে কিন্তু যেটা লক্ষ‌ণীয় সেটা হল পরিচালক বদলে গেলে ওর অভিনয়ের ধরনটাও বদলে যায়। কারণ ও পরিচালকের হাতে সবটাই স‌ারেন্ডার করে দেয়। আমি তেমন অভিনেতা নই, আমার স্টাইল আলাদা। আর যিশু এটা নিজে জানত যে, সৌমিত্রজেঠুর মনের মধ্য ও ঢুকতে পারবে না কোনওদিনই। তাই ও সেই চেষ্টাও করেনি। কারণ দু’জনে সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী মানুষ। ফলে সৌমিত্রজেঠুর সাইকোলজিক্যাল দিকটা অ‌্যানালিসিস করে সেই দিক থেকে অভিনয়টা অ‌্যাপ্রোচ করতে পারবে না। ও পুরোপুরি স‌ারেন্ডার করেছিল।

[আরও পড়ুন: পাহাড় বা সমুদ্র নয়, রণবীর-আলিয়ার মধুচন্দ্রিমা হবে জঙ্গলে! জানেন কোথায়?]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement