ফাইল চিত্র
মহাতারকার জন্মদিন আজ। এবং দেবের সঙ্গে জুটিতে তাঁর পুজোর ছবি মুক্তি। অকপট সাক্ষাৎকারে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় (Prosenjit Chatterjee)। মুখোমুখি শম্পালী মৌলিক।
আপনার জন্মদিন। একই সঙ্গে ‘কাছের মানুষ’ রিলিজ। অনেক শুভেচ্ছা রইল। কোনও বিশেষ পরিকল্পনা?
থ্যাঙ্ক ইউ! বিশেষ কোনও প্ল্যান নেই। বাড়িতে কিছু মানুষ আসেন। আর আমার একটা এনজিও আছে, প্রত্যেক বছর ওখানে যাই। গত দু’বছর পারিনি। এবারে ওখানে যাওয়ার ইচ্ছে আছে, খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করা হয়, এই আর কী (হাসি)।
ছবির প্রচারে আপনাকে প্রায়ই দেখা গেল নিজেকে নিয়ে মজা করতে। সেটা তো সহজ নয়…
সহজ নয়, ঠিকই। আইডিয়াটা আমার ভাল লেগেছিল। আমাদের ‘কাছের মানুষ’ (Kacher Manush) ছবিটাও অনেকটা এইরকম– একদিকে জীবন, অন্যদিকে মৃত্যু। একেক সময় নিশ্চয়ই মনে হয়, জীবনে আর কোনও রাস্তা নেই। কিন্তু কোনও একটা স্ট্রাইকিং মোমেন্ট থেকে আবার ঘুরে দাঁড়াতে হয়। মনে হয়, আবার চলা যায়। কারণ জীবন সুন্দর।
এই ছবিতে অ্যান্টি সুইসাইডাল একটা মেসেজ আছে।
ছবিতে দু’টো দিকই আছে। আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই এমন সময় এসেছে, যখন মনে হয়েছে যে, আমরা বোধহয় আর এগোতে পারব না। আমার ৩৮ বছরের অভিজ্ঞতা তাই বলে। দেবেরও নিশ্চয়ই তেমন অভিজ্ঞতা হয়েছে। আমাদের তো অনেক নেগেটিভ কথা শুনতে হয়, সেটা নিজের মতো করে মজার ছলে বলার মতো আনন্দ আর কীসে!
আপনার জীবনে সেই কঠিন মুহূর্ত, যখন আত্মহত্যার প্রবণতা জেগে উঠেছে, তেমন সময় এসেছে?
অফকোর্স এসেছে। এমন একটা সময় গিয়েছে, যখন এক-দেড়টা বছর প্রায় বাড়ি থেকে বেরোইনি। এবং ভাবতাম জীবনে ইতি টানতে হবে। যখন ছবি পর পর ফ্লপ করেছে, তখনও মনে হয়েছিল আর বোধহয় হবে না। যতবারই সেই জায়গা থেকে বেরিয়ে এসেছি, ততবারই এমন কিছু কাজ করেছি, আমার লংজিভিটি বেড়ে গিয়েছে। তখন মনে হয়েছে, এটা আমার জীবনের শিক্ষা। বোধহয় ঈশ্বর চেয়েছিল ওই বিরতিটা আমি নিই। যতবার ফিরে এসেছি, ঝড়ের গতিতে আবার এগিয়েছি। প্রচুর ব্যক্তিগত বা পেশাগত কারণে যখন মনে হয়েছে, আর হবে না, কিন্তু হয়েছে তো (হাসি)। কাছের মানুষ থাকাটা জীবনে খুব প্রয়োজন। সে বন্ধু, বান্ধবী, বা সহকর্মী হতে পারে, বা স্ত্রী-ছেলে-মেয়েও হতে পারে।
আপনার উচ্চতায় পৌঁছে কি কাছের মানুষ হয় আর? যখন লোকে বলে, আপনি ইন্ডাস্ট্রি।
আমি ইন্ডাস্ট্রি– এটা তো আমি বলিনি কখনও। এটা নিয়ে নানারকম কথা চলে, কিন্তু কোথাও, এমনকী স্বপ্নেও আমি নিজে এই লাইনটা বলিনি। ‘অরুণ চ্যাটার্জি ইন্ডাস্ট্রি’ এটা ‘অটোগ্রাফ’ ছবিতে ট্যাগলাইন ছিল। কিছু মানুষ সেটাকে আস্তে আস্তে ‘প্রসেনজিৎ ইন্ডাস্ট্রি’ করে দিয়েছে। আমি সবসময় একটা কথা বলে এসেছি, আমি ইন্ডাস্ট্রির অভিভাবক। আর আমার অভিভাবক ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
এই পর্যায়ে পৌঁছলে কি সত্যিই কাছের মানুষ পাওয়া যায়?
কাছের মানুষ সহজে পাওয়া যায় না। অনেস্টলি স্পিকিং, যাঁরা এরকম জায়গায় পৌঁছে যান, তাঁদের জন্য কিন্তু পথটা হল– আমাকে আমার মতো থাকতে দাও। কারণ মানুষের প্রত্যাশা এত বেড়ে যায়, সেখানে গিয়ে বিষয়টা ডিফিকাল্ট হয়ে যায়। আমার খুব কাছের মানুষ ছিল ঋতুপর্ণ ঘোষ। যে আমার বন্ধুর মতো ছিল। আমার জীবনের সবকিছু শেয়ার করতে পারতাম তার কাছে। একটা পর্যায়ে পৌঁছলে এই ধরনের কাছের মানুষ কমে যায়। একেবারে নেই বলা ঠিক নয়। হয়তো আমার থেকে বয়সে অনেক ছোট, ছেলে বা মেয়ের মতো, সেও আমার কাছের মানুষ হতে পারে। যদি সে আমাকে ভাল অ্যাডভাইস দেয়, সঠিক রাস্তা দেখায়। এই কারণে, আমার থেকে বয়সে অনেক ছোটদের সঙ্গে মিশি। তাদের মধ্যে অত জটিলতা নেই। মুখের ওপর স্পষ্ট বলে তারা।
দেবের সঙ্গে জুটি বাঁধা– এটা কি স্ট্র্যাটেজি পরিবর্তন করতে করতে ইন্ডাস্ট্রিতে চলার একটা অংশ? মানে হিরোর পাশে একটা গুরুত্বপূর্ণ ক্যারেক্টার রোলে চমকে দিতে চাইছেন?
ছবিটা দেখলে বোঝা যাবে কেন আমি। এটা শুধুমাত্র প্যাকেজের জন্য নয়। দায়িত্ব নিয়ে বলছি, যে চরিত্রে দেব করেছে, তেমন ওকে দর্শক আগে দেখেনি। আবার আমারও এতরকমের পার্ট দেখেছে লোকে, এইরকমটা আগে দেখেনি, বলতে পারি। এককথায় বলছি, এটা দু’জনে না হলে জমত না। এটা কমার্শিয়াল ছবি হলেও, অ্যাজ অ্যান অ্যাক্টর বলটা আমার পায়ে দিয়ে দিয়েছে। তারপর আমি আমার মতো করে ড্রিবল করেছি। গোল করতে পেরেছি কি না সেটা ৩০ তারিখ দর্শক বলবে (হাসি)।
ছবিটার ইউএসপি কী?
আমার মনে হয়, গল্প। যে কারণে ছবিটা আমরা অনুপ জেঠু আর বিকাশ জেঠুর শট দিয়ে ওপেন করেছি। ‘জীবন কাহিনী’ ছবিটা আমার প্রিয়। ওই ছবিটাকেই উৎসর্গ করেছি আমরা। সব বয়সের মানুষ আনন্দ পাবে ছবিটা থেকে। ভাল কমার্শিয়াল ছবির সব উপাদান আছে ছবিতে। অফকোর্স দেব আর আমি একসঙ্গে, সেটাও একটা ইউএসপি।
স্টার পাওয়ারে ভারী আপনাদের ছবিটা। অন্যদিকে আবিরের সোনাদা ফ্র্যাঞ্চাইজি আছে। পরমব্রত-ও আসছেন। তবু লড়াইয়ে কি আপনারা এগিয়ে মনে হচ্ছে?
এই লড়াইয়ে আমি বিশ্বাস করি না। সবার ছবি এগিয়ে যাক, লোকে দেখুক। একটা ছবি এগোলে অন্যটা চলবে না, তা নয়। এই রেসে আমি নিজেকে ফেলব না। যে ছবিটা লোকের দেখার দেখবে, না দেখার হলে দেখবে না। সোনাদার প্লাস পয়েন্ট হল, বাচ্চারা দেখবে বড়দের সঙ্গে। ‘কাছের মানুষ’ পুরো ফ্যামিলি দেখবে। সোনাদা একটা ব্র্যান্ড ক্রিয়েট করেছে। ‘কাছের মানুষ’-এ তারকার জোর আছে। গানগুলোও খুব জনপ্রিয় হয়েছে। ছবিটার ট্রেলার বেরনোর সময়েই প্রসেনজিৎ-দেবকে একসঙ্গে দেখে লোকজন অন্যরকম আশা করতে শুরু করেছে। ভাবছিল দুই ভাই হবে, বা একে অন্যকে হেল্প করবে কিংবা ঝগড়া করবে। এটা যে জীবন-মৃত্যু নিয়ে ছবি, এমনটা আশা করেনি (হাসি)।
মুম্বইয়ে কী করছিলেন কিছুদিন আগে?
ওখানে বেশকিছু কাজ চলছে, কিছু কাজের মিটিং-ও ছিল, এছাড়া ‘জুবিলি’-র প্যাচ ডাবিং ছিল। বেশ কিছু বাংলা ছবি রেডি। এরপর আরেকটা বাংলা ছবি করব। মুম্বইয়ে নভেম্বর-ডিসেম্বরে আরও একটা বড় কাজ করব।
আপনার লাস্ট রিলিজ ‘আয় খুকু আয়’ আশানুরূপ সাফল্য পায়নি বলে খারাপ লাগা আছে?
আমার কাছে এটা এখনও প্রশ্ন, যে এই ছবিটা কেন লোকে দেখলেন না। কারণ, আমার ধারণা ছিল দর্শক দেখবেন। এটা খুবই রুটেড গল্প। এরকম হচ্ছে এখন, লোকজন কিছু ছবি হল-এ দেখবেন না ঠিক করছেন, পরে দেখবেন ভাবছেন। সব জায়গাতেই এটা চলছে।
বলিউড এবং টলিউড দু’জায়গাতেই স্টার পাওয়ার চ্যালেঞ্জের মুখে। কী বলবেন?
‘আয় খুকু’-তে কিন্তু স্টার পাওয়ার দেখাইনি আমি। আমার মনে হয়, এটা একটা ফেজ। স্টার পাওয়ার বলে নয়, ফাইনালি কনটেন্ট কথা বলবে, এটা আমি আগেই বলেছি। অভিনয়ের ধারা বদলাতে হবে। আমি কিন্তু ‘আয় খুকু’-তে সেটা করেওছিলাম। আমি নিশ্চিত, পরে কোনও প্ল্যাটফর্মে ছবিটা এলে মানুষ আফসোস করবে। লোকে সেইভাবে হল-এ ঢুকছে না সেটা আমাদের কাছে থ্রেট।
এই মুহূর্তে আপনার কাছের মানুষ কে? মিশুক না দেব?
দেব এমনভাবে আটকে রেখেছে যে, এখন দেব। কিন্তু ফাইনালি মিশুক (হাসি)।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.