সংবাদ প্রতিদিনে মনের কথা খোলসা করলেন অভিনেতা। শুনলেন শম্পালী মৌলিক।
কেমন আছেন?
টোটা: সাধারণত আমি ভালোই থাকি। ইদানীং একটু টেনশনে আছি। কারণ ২১ ডিসেম্বর আমার একটা বড় কাজ হতে চলেছে, ঠিক তার আগের দিন আমার দুটো গুরুত্বপূর্ণ কাজ আসছে। একটি হচ্ছে ‘চালচিত্র’, ছবিটি, যেটার পরিচালনায় প্রতিম ডি গুপ্ত। দ্বিতীয়টি ‘ফেলুদার গোয়েন্দাগিরির সিজন টু’, যার পরিচালনায় সৃজিত মুখোপাধ্যায়। এবারের গল্প হচ্ছে ‘ভূস্বর্গ ভয়ংকর’। আর ২১ তারিখ ব্যক্তিগত জীবনের মাইলস্টোনে পড়ছি। আমাদের বিবাহিত জীবনের ২৫ বছর পূর্তি আছে। এইসব নিয়ে উত্তেজনা যেমন আছে, কিঞ্চিৎ টেনশনও আছে।
প্রায় তিন দশক কাটিয়ে ফেলেছেন ইন্ডাস্ট্রিতে। তার পরেও মনে হয় শেষ দু’বছর আপনার একটু বেশি ভালো কাটছে। তাই তো?
টোটা: হ্যাঁ, দেখলাম যে সময়ে গিয়ে আশা করা যায় না। মোটামুটি সিচুয়েশন অনুযায়ী রিঅ্যাক্ট করে যেতে হয়, সে সময় দেখলাম ভালো কাজগুলো পেতে শুরু করেছি। উপরওয়ালার কাছে কৃতজ্ঞ।
এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে কেরিয়ারকে ফিরে দেখলে সন্তুষ্ট?
টোটা: অনেকগুলো ভুল করেছি। কিছু ছবি আমার করা উচিত হয়নি। এই সময় মনে হয়, আরেকটু জেনে বুঝে, ঠিকঠাক লোকের পরামর্শ নিয়ে এগোনো উচিত ছিল। যেহেতু পিছনে কোনও গডফাদার বা কেউ ছিল না, তাই ওই রাস্তাটা নিজেকেই খুঁজে পেতে হয়েছে। অনেক ভুলভাল অলিগলিতে ঢুকে পড়েছিলাম। তবে হ্যাঁ, ওই কারেকশন করে ফেরত এসেছি।
তার জন্য রিগ্রেট আছে?
টোটা: কিছুটা তো আছেই। তবে হ্যাঁ, আমি মনে করি এটা তো একটা জার্নি।
নিষ্ঠা আছে বলেই হয়তো এই বয়সে শার্টলেস সেলফি তোলার স্মার্টনেস ধরে রাখতে পেরেছেন! ম্যাজিকটা কোথায়?
টোটা: (জোরে হাসি) থ্যাঙ্ক ইউ! একটা জেদ হয়, জানো তো। প্রথম থেকেই দেখে এসেছি, আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে কিছু পরিচালক-প্রযোজক একটা কিছু হলেই অন্যদিকে আঙুল দেখায়, ওই দ্যাখ মুম্বইয়ের হিরোটাকে দ্যাখ বা ওড়িশার, পরবর্তীকালে বাংলাদেশের ওই হিরোকে দ্যাখ। আমাদের কোথাও যেন একটা সেকেন্ড ক্লাস সিটিজেন হিসাবে ভাবা। অন্তত আমার ক্ষেত্রে দেখেছি। আমার জেদ ছিল, যেটা আমার হাতে আছে, তার পূর্ণমাত্রায় সদ্ব্যবহার করব। সেটা ফিটনেস বলো, বা অভিনেতা হিসাবে নিজেকে পালিশ করে শেষ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জেদ ছিল। ওই জেদের বশেই আমি এখনও করে যাচ্ছি।
‘চালচিত্র’ এবং ‘ফেলুদা’ একই দিনে আসছে। ‘চালচিত্র’ থ্রিলার ছবি, যেখানে প্রধান পুলিশের চরিত্রে আপনি। চরিত্রের চ্যালেঞ্জটা কোথায়? এর আগেও পুলিশের চরিত্রে অভিনয় করেছেন, আর গোয়েন্দার চরিত্রে তো অভিনয় করছেন।
টোটা: ‘চালচিত্র’-র যে পুলিশের চরিত্রে আমি রয়েছি, সে ভীষণ রক্তমাংসের। কোনওরকম হিরোইজম নেই। এইরকম চরিত্র হয়তো লালবাজারে গেলে বা বেঙ্গল পুলিশের কোনও ডিপার্টমেন্টে গেলে দেখতে পাবে। প্রতিম সেইভাবে চরিত্রটা লিখেছে। তার কাজ বা পারিবারিক জীবন, কোথাও হিরোইজম নেই। সেটা খুব ভালো লেগেছে আমার।
একটা সিকোয়েন্স দেখছিলাম, সহকর্মী পুলিশ অফিসার শান্তনু মহেশ্বরীর সঙ্গে আপনার চমৎকার নাচের দৃশ্য। এই ডান্স সিকোয়েন্স কি ‘ডোলা রে’-কে ছাপিয়ে যাবে?
টোটা: আমরা যখনই কিছু করি আশা করি যেন আগেরটাকে ছাপিয়ে যেতে পারে। তবে হ্যাঁ, ওটা অন্য স্টাইলের ছিল, এটা একেবারে কনটেম্পোরারি। শান্তনুু অসম্ভব ভালো ডান্সার, তার সঙ্গে কাজ করা এবং তাল মিলিয়ে নাচা বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল।
বয়সের নিরিখে শান্তনু মহেশ্বরীকে আপনার তুলনায় ছোকরা বলা যায়। পাল্লা দিয়ে নাচতে কেমন লেগেছে?
টোটা: হ্যাঁ, চ্যালেঞ্জটা নিয়েছি। তখন ওই বিনাযুদ্ধে নাহি দিব সূচ্যগ্র মেদিনী। ক্যামেরার সামনে আমি ওইরকম। শান্তনু ওর টিম নিয়ে এসেছিল, কোরিওগ্রাফার-সহ। অনেক কিছু শিখলাম। স্টাইল এবং নতুনভাবে শট টেকিং, চিন্তা-ভাবনা। ১৫-১৬ বছরের তফাত আমাদের কিন্তু সাগ্রহে চ্যালেঞ্জ নিয়েছি।
বিগত কয়েকবছরে ‘ডোলা রে’-র পরে ‘চালচিত্র’-র এই নাচ, জেন্ডারস্টিরিওটাইপটা আপনি ভেঙে ফেলেছেন।
টোটা: এটা আমার সৌভাগ্য, মানুষ যদি এটা উপলব্ধি করে। কারণ, এর পিছনে আমার কোনও অবদান নেই। আমি শুধু হুকুম তামিল করেছি। যাঁদের অবদান তাঁরা হচ্ছেন আমার পরিচালক। তাঁদের চিন্তাধারা, দৃষ্টিভঙ্গি।
‘চালচিত্র’-তে শান্তনু ছাড়াও আরও তিনজন খুব গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অনির্বাণ চক্রবর্তী, ইন্দ্রজিৎ এবং বাংলাদেশের অপূর্ব। অপূর্বর সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?
টোটা: অপূর্বর ব্যবহার ভীষণ ভালো। ও যে ওই লেভেলের সুপারস্টার, অকল্পনীয় ফ্যান ফলোয়িং– সে এমন মাটির মানুষ ভাবাই যায় না। ভীষণ ভালো অভিনেতা। এই ছবিতে অভিনয়টাও ভেঙেছে। খুব ভালো লাগল কাজ করে।
পরিচালক প্রতিম ডি গুপ্তর সঙ্গে আপনার প্রথম কাজ।
টোটা: হ্যাঁ। যেটা খুব ভালো লাগে, প্রতিম আইসকুল। চুপ করে বসে থাকে, অনেকটা স্বাধীনতা দেয়। আর ভীষণ ইন্টেলিজেন্ট। ভালো লেখে। কতটা চায় বলে দেয়। কী চায় না বলে না। বলে, তুমি করো। চরিত্রকে নিজের মতো এক্সপ্লোর করার সুযোগ দেয়।
ডিসেম্বরে তো এবার যুদ্ধ। এতগুলো বড় রিলিজ। শুরু হয়েছে ‘পুষ্পা টু’ দিয়ে। এরপর ‘খাদান’, ‘সন্তান’ আসবে। এছাড়া ‘পাঁচ নং স্বপ্নময় লেন’ এবং ১৩-য় আসছে ‘মন পতঙ্গ’। বড় ছবির সঙ্গে ‘চালচিত্র’ কতটা ফাইট দিতে পারবে?
টোটা: এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আমাদের ফেস্টিভ সিজনে বিশেষ করে দুর্গাপুজো এবং বড়দিনের সময়ে মানুষ ছবি দেখতে আসে। তাই আমরা এই সময়ে ছবিগুলো প্রেজেন্ট করি। কিন্তু বলব, সবকটা ছবি আলাদা রকমের। বলব, বাংলার দর্শকদের জন্য এটা বুফে। যার যেমন দরকার তুলে নেবে।
আর কী কী হিন্দি কাজ অপেক্ষায়?
টোটা: তিনটেই আগামী বছর আসবে। বিক্রমাদিত্য মোতওয়ানের ‘ব্ল্যাক ওয়ারেন্ট’ সিরিজ, নীরজ পাণ্ডের ‘স্পেশাল অপ্স’ আর কুণাল দেশমুখের ছবি ‘দিলের’, শুটিং চলছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.