বাংলার পাশাপাশি হিন্দি, তেলুগু সিনেমাতেও অভিনয় করছেন। চূড়ান্ত ব্যস্ততা। এর মাঝেও সময় বের করে সংবাদ প্রতিদিনের মুখোমুখি শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় (Saswata Chatterjee)। অভিনেতার মনের কথা শুনলেন শম্পালী মৌলিক।
কেমন আছেন? এবারে ক’দিনের জন্য কলকাতায়?
ভাল আছি। বেশিদিনের জন্য নয়। ২৬ তারিখ চলে যাব রাজস্থানে।
শ্রীলঙ্কায় গিয়েছিলেন তো শুটিংয়ে। কলকাতা আপনাকে কম পাচ্ছে।
হ্যাঁ, গতমাসটা পুরো শ্রীলঙ্কায় ছিলাম একটা হিন্দি সিরিজের শুটিংয়ে। তারপর শিমলা হয়ে ক’দিন মুম্বইয়ে। এবারে ফিরলাম আবার এই বেরিয়ে যাব সিরিজের কাজে।
এইরকম ব্যস্ততা কতটা উপভোগ করছেন?
খুব এনজয় করছি। মাঝখানে যে সময়টা আমরা পেয়েছি, ছুটি আর চাই না। দু’বছর বোর হয়ে গিয়েছিলাম।
অতিমারী পরিস্থিতিতেও আপনার হিন্দি-বাংলা মিলিয়ে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য রিলিজ ছিল। ‘দিল বেচারা’, ‘হীরালাল’, ‘হবুচন্দ্র রাজা গবুচন্দ্র মন্ত্রী’ ‘অনুসন্ধান’, ‘৮/১২’, ‘স্বস্তিক সংকেত’ এবং আরও কিছু ছবি পরপর এসেছিল।
সে এখন ভাগ্য ভাল যাচ্ছে, এই আর কী (হাসি)। আবার মাঝে মধ্যে যখন লকডাউন উঠেছে, শুটিং করেছি। সেটাই বাঁচিয়ে দিয়েছে। মানে মানসিকভাবে নয়তো চূড়ান্ত ডিপ্রেশনের জায়গায় চলে যাচ্ছিলাম। কাজ না থাকা যে কী বেদনাদায়ক কী বলব! কাজ যতদিন আছে, মনটা ভাল থাকে।
২০২২-এ আপনার দ্বিতীয় রিলিজ হতে চলেছে রাজর্ষি দে পরিচালিত ‘আবার কাঞ্চনজঙ্ঘা’। শুরুতে এসেছিল শৈবাল মিত্রর ‘তখন কুয়াশা ছিল’।
হ্যাঁ, ‘তখন কুয়াশা ছিল’ সৌমিত্রজেঠুর সঙ্গে শেষ কাজ আমার। পয়লা এপ্রিল আসবে ‘আবার কাঞ্চনজঙ্ঘা’।
‘আবার কাঞ্চনজঙ্ঘা’ মূলত পারিবারিক রিইউনিয়নের ছবি। যতদূর জানি।
অসাধারণ ভেবেছে এই গল্পটা। বাঙালিকে তুষ্ট করার জন্য যা যা দরকার যেমন, বেড়াতে যাওয়া, ফ্যামিলি মেম্বারদের মধ্যে সম্পর্ক- সব আছে। ‘দেব পরিবার’ এক সময় সুবিশাল
ছিল। কিন্তু কাজের প্রয়োজনে সব আলাদা হয়ে গিয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় থাকে সবাই। দেববাড়ির বড় ছেলে (কৌশিক সেন) সবাইকে পৈতৃক বাড়িতে আমন্ত্রণ জানায়। যে সবাই মিলে একবার দেখা করা যেতে পারে।
তারপর?
সবাই জড়ো হয়। তারপর আস্তে আস্তে বেরিয়ে আসে যে, কেন তাদের ডাকা হয়েছে। বোঝা যেতে শুরু করে বিভিন্ন সংসারগুলো, যারা এখানে এসে মিলেছে, তারা কোথায় দাঁড়িয়ে আছে। এবং তাদের মধ্যেকার সম্পর্কের জটিলতা। আমি ছবিতে অর্পিতার স্বামী, দেববাড়ির জামাই। অর্পিতাও এসেছে স্বামীকে নিয়ে এই জমায়েতে। সেখানে একটা টুইস্ট রয়েছে। অর্পিতা চায় ক্রিসমাসটা সবাই ভাল করে পালন করুক। কিন্তু পরস্পরের সম্পর্কের যা ইকুয়েশন বেরিয়ে আসছে, তা দেখে অর্পিতা স্বামীকে বলে, ‘এই ক্রিসমাসে তুমি আমার সান্টা ক্লজ হবে?’ এই জামাই তখন সম্পর্কের ব্যবধান কমাতে নেমে পড়ে। খুবই ইন্টারেস্টিং চরিত্র আমার।
অনসম্বল কাস্টে এখনও রাজি হচ্ছেন, আপনার এবার তো মলাটচরিত্র পাওয়ার কথা।
না, না আমার সবথেকে আগে মনে হয়, সিনেমার নায়ক হচ্ছে স্টোরি এবং স্ক্রিপ্ট। গল্প এবং চিত্রনাট্য যদি ভাল হয় তবে করব। এখানে প্রত্যেকটা চরিত্রের আলাদা জায়গা আছে। যে কারণে কেউই ছোট নয়, কেউই বড় নয়। ফ্যামিলি নিয়ে গল্প তো, প্রত্যেকের নিজস্ব অ্যাঙ্গেল আছে। খুব সুন্দর ভেবেছে।
কেরিয়ারের এই পর্যায়ে দাঁড়িয়ে বাংলা-হিন্দি শুধু নয়, তামিল-তেলুগুতেও ডাক পাচ্ছেন।
একটাই তেলুগু আর হিন্দি ডাবল ভার্সন করছি। খুবই কঠিন (হাসি)। হিন্দিটা তো ঠিক আছে। হিন্দির পরেই যখন তেলুগু বলতে হচ্ছে, চাপ হচ্ছে। সেটা অবশ্য সকলকেই করতে হচ্ছে। এটা ‘প্রোজেক্ট কে’-র কথা বলছি।
হিন্দিতে আপনার ‘ব্যাড বয়’, ‘ধাকড়’, ‘দোবারা’, প্রতিম ডি গুপ্তর সিরিজটা– পর পর কাজ মুক্তির অপেক্ষায়।
হ্যাঁ, ‘ধাকড়’ এই বছরেই আসবে। আমার ডাবিং শেষ হয়ে গিয়েছে। প্রতিমের সিরিজে আমার অভিনয়ের পার্টটা প্রায় হয়ে গিয়েছে।
এই সময়ে এসে আপনার এত চাহিদা, সেটা কী করে ঘটল মনে হয়?
আমি জানি না। একটা জিনিস বিশ্বাস করি, মন দিয়ে কাজ করলে কাজের অভাব হয় না।
এর মাঝখানে দু’টো বাংলা ছবির শুটিং করেছেন। ‘তীরন্দাজ শবর’ আর ‘অচেনা উত্তম’।হ্যাঁ, করলাম এই দু’টো। রিলিজের অপেক্ষায়।
২৫ বছর প্রায় কাটিয়ে ফেললেন টলিউডে। মুম্বই আর কলকাতায় তফাত কী বুঝছেন?
ওখানে অর্থ আর লোকবল অনেকটা বেশি। ইনফ্রাস্ট্রাকচার অনেক বড়। অনেক বেশি সাপোর্ট পায় ওখানকার মানুষ। কিন্তু আমাদের এখানে ট্যালেন্টের অভাব নেই। কিন্তু ওই পর্যায়ের বাজেট বা ইকুইপমেন্টস আমাদের পক্ষে পাওয়া মুশকিল। বাংলা ইন্ডাস্ট্রি চলছে শুধুমাত্র ট্যালেন্টের ওপর।
কী মনে হয়, প্রেক্ষাগৃহে সিনেমার ভবিষ্যৎ কী?
ঠিক বুঝতে পারছি না। একটা ছোট দোকানের কথাও যদি বলেন, তাকে জিজ্ঞেস করলেও, সে বলবে যে, দোকানে লোক আসছে না কিনতে। ৬৫ টাকার জিনিসও লোকে অনলাইনে কিনছে। কেউ বাড়ি বসে সিনেমা দেখে ফেলতে চাইলে তাকে হল- এ টেনে আনা খুব শক্ত। যদি না বড় স্কেলে ছবি হয়। যেটা হল- এই দেখতে হবে। ওই লেভেলে গিয়ে ছবি করা ক’জন প্রযোজকের পক্ষে সম্ভব। বাংলায় তো সম্ভবই নয়।
প্রায় বছরখানেক হল আপনি সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় হয়েছেন। এটা আপনার পক্ষে বদলই বলব।
আমি সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাক্টিভ হতে বাধ্য হয়েছি, কারণ যখন এটা থেকে দূরে ছিলাম কিছু বদ জিনিস আমাকে এফেক্ট করছিল মানে ফল্স পেজ থেকে আমার নাম করে উল্টোপাল্টা রিকোয়েস্ট যাচ্ছিল। বলতে পারেন, পুলিশের পরামর্শে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের অথেনটিক পেজ খুলতে বাধ্য হয়েছি। অনেক খারাপ প্রস্তাব আমার নামে যাচ্ছিল, সেটা যে আমি নই জানাতে আমি পেজ খুলি।
মোবাইলও ব্যবহার করছেন।
কারণ বাইরে যেতে হচ্ছে এবং বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ রাখার জন্য। আর এখন তো কলটাইম, গাড়ি ইত্যাদির ডিটেল সবই আগের দিন মোবাইলে আসে, ফলে ফোন রাখতেই হচ্ছে (হাসি)।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.