নতুন সিনেমা থেকে ফিউচার প্ল্য়ানিং। ফের জুটি বাঁধবেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর সঙ্গে। ‘প্রসেনজিৎ ওয়েডস ঋতুপর্ণা ‘ছবি মুক্তির আগে বিশেষ আড্ডায় প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। শুনলেন বিদিশা চট্টোপাধ্যায়।
প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে নিয়েই তামাশা! এমন ছবি করতে রাজি হলেন কেন?
প্রসেনজিৎ: সেই সময়ে খুব খারাপ একটা সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম। কোভিডে বাড়িতে বসে। তারপর পরিস্থিতি যখন একটু বেটার আমার বোন পল্লবীর ফোন, ‘স্ক্রিপ্ট শুনবি?’ তার আগে অবশ্য পরিচালক সম্রাটকে চিনতাম। শুনতে রাজি হলাম। দূরে বসে স্ক্রিপ্ট শুনিয়েই সম্রাট হাওয়া। পাঁচ সেকেন্ড অপেক্ষাও করেনি রিঅ্যাকশন জানার জন্য। তিন থেকে চারদিন সময় নিয়েছিলাম। কেন করব? ‘প্রসেনজিৎ ওয়েডস ঋতুপর্ণা’– ছবিতে ওদের বিয়ের গল্প থাকলেও গোটা ছবিটা আসলে ‘ব্র্যান্ড প্রসেনজিতের’ কথা বলছে। সম্রাট চালাকি করে নামটা দিয়েছে এবং সঙ্গত কারণেই। আর এই ব্র্যান্ড নিয়ে নানা মিম, জোক্স চলতেই থাকবে। সোশ্যাল মিডিয়াতে সেসব দেখে আমার মজাই লাগে, এনজয় করি। আর আমি রিঅ্যাক্ট করার মানুষ নই। তুমি আমার সমালোচনা করলে আমি কোনওদিন ফোন করে বলব না, এটা করলে কেন? আর নিজের মিম দেখে যদি আমি নিজে মজা পাই, তাহলে ‘ব্র্যান্ড প্রসেনজিৎ’-কে নিয়ে মজা করে ছবি করলে তো দর্শকও মজা পাবে। সম্রাট তো সেভাবেই ভেবেছে।
নিজেকে নিয়ে ঠাট্টা কিন্তু সবাই করতে পারে না!
প্রসেনজিৎ: আমার দেখা বা জানার মধ্যে একজন প্রিয় অভিনেতা হল শাহরুখ খান। হি ডাজ ইট এফর্টলেসলি। আর একটা নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর নিজের ইমেজ, বা সেটাকে ঘিরে যা রয়েছে, সেটা অ্যাকসেপ্ট করে নিতে হয়। অ্যান্ড দ্যাট গিভ ইউ গ্রেস। এই ক’দিন আগে আমার ষাট বছর জন্মদিন পালন হল। বয়স তো লুকিয়ে রাখিনি। আর ষাট বছর বয়সে এসে অতনু ঘোষের ছবির পাশাপাশি অন্য ছবিতে ‘চোখ তুলে..’ গানে নাচার চ্যালেঞ্জটাও নিতে ভালবাসি।
‘ষাট বছরের মাল’– এমন সম্বোধনেও আপত্তি নেই?
প্রসেনজিৎ: এটা তো শুধু টিজার, ছবিতে আরও অনেক বেশি আছে। মনে আছে শুটিং দেখতে গিয়েছি। কেউ আর শট নেয় না। মোহর এসে বলল, তুমি থাকলে ওরা প্রসেনজিৎকে নিয়ে ডায়লগ বলতে পারছে না। স্ক্রিপ্টটা তো আমি জানি। নিজের টাকা নষ্ট করে কী হবে, বেরিয়ে এলাম। (হাসি)
কিন্তু ‘প্রসেনজিৎ ওয়েডস ঋতুপর্ণা’ ছবিতে অভিনেতা প্রসেনজিৎ এবং ঋতুপর্ণাকে তো সেভাবে
পাব না?
প্রসেনজিৎ: সেটা হবে আমাদের ৫০তম ছবি। তার জন্য রেডি হচ্ছি। ডিসেম্বরেই জানাব। আর এটা ৪৯তম ছবি বলে আমি আর ঋতু খুব মজা করে অংশ নিয়েছি। আসলে উই বোথ আর ম্যাচিওরড এনাফ টু গো ব্যাক টু দোজ–স্টুপিড ফানি টাইম, যেটা আমরা ছেড়ে এসেছি। যদি জিজ্ঞেস করো কোন বাংলা ছবিকে সবচেয়ে ‘মক’ করা হয়– উত্তর ‘বাবা কেন চাকর’। সেই সময় ৭৫ সপ্তাহ চলেছিল, এখনও টিভিতে দেখালে হায়েস্ট টিআরপি দেয়। ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’ তেইশ বছর আগে তিন-সাড়ে তিন কোটি ব্যবসা দেয়। এগুলো সব কাল্ট ছবি। পুজোতে ‘অমরসঙ্গী’ কিংবা ‘গুরুদক্ষিণা’-র গান বাজবেই। আমরা এই বাংলা ছবি সেলিব্রেট করি না, এটা দুঃখের বিষয়।
আপনার জীবনে ‘ঋতুপর্ণা’ অর্থাৎ ঈপ্সিতা যে চরিত্রে অভিনয় করেছেন তেমন মহিলা ফ্যান নিশ্চয়ই আছে?
প্রসেনজিৎ: ভীষণভাবে আছে। আগেও এইসব সামলাতে হয়েছে। এখনও একজন রয়েছেন। আমি যেখানেই যাই, সেখানে পৌঁছে যান। প্রত্যেকদিন রাত দুটোয় একটা হোয়াটসঅ্যাপ পাঠান এবং তাঁর ঠাকুরঘরে আমার ছবি আছে। মাঝে মাঝে মনে হয়, লোকেশন ট্র্যাক করছে নাকি। কারণ প্রতিটা জায়গায় পৌঁছে যান। লাস্ট দশ-বারো বছর ধরে এটা চলছে। বয়স খুব বেশি না, ব্যাঙ্কে চাকরি করেন। ছবি তোলা বা সই সেসব চান না। ওর বক্তব্য হচ্ছে, আমি দূর থেকে দেখব। ওকে আমরা বকতেও পারি না, কারণ ওর তো কোনও ডিমান্ড নেই।
‘প্রসেনজিৎ ওয়েডস ঋতুপর্ণা’-তে সংলাপ আছে, ‘ভাল থাকা কঠিন, ভাল রাখা আরও কঠিন’? আপনার জীবনে, আপনি আপনার প্রিয় মানুষকে ভাল রাখতে পেরেছেন?
প্রসেনজিৎ: দেখো, ভাল রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করেছি, সেই জন্যই তো ওই লাইনটা। সবাই ভাল রাখতে পারে না। যারা রাখতে পারে তারা হ্যাপি, যারা ভাল রাখতে পারে না, তারা কোথাও গিয়ে আনহ্যাপি হয়ে যায়। আর আমার ব্যক্তিগত জীবনটা একেবারে ঢেউয়ের মতো। মাথা তুলেছে, আছড়ে পড়েছে সেটা সবারই জানা। কিন্তু আমি যে গিভ আপ করেছি এমন নয় বা জীবন নিয়ে ছেলেখেলা করেছি সেটা না– বাট হ্যাঁ, ওয়ার্ক করেনি। কিন্তু এটাও সত্য়ি, আমার আঠেরো বছরের বিবাহিত জীবন তো রয়েছে। ছেলেও প্রায় আঠেরো হতে চলল। যে যার মতন করে আছি। বাট উই আর ফাইন, উই আর গুড।
ষাট বছর পূর্ণ করলেন। আগামী দিনে আর কী কী করতে ইচ্ছে করে?
প্রসেনজিৎ: সবাই জানে, আমি একটু অন্য রকমের চরিত্রের খোঁজে থাকি। কিছুদিন পর একটা ছবি আরম্ভ করছি। সাত বছর আগে স্ক্রিপ্টটা শুনি। এই ছবিটা নাটকের ওপর, এমন কাজ আগে করিনি। নাট্যকর্মীর একটি চরিত্র। ছবির নাম ‘সাজঘর’। তার দেড়-দুই বছরে একটা বড় মাপের কমার্শিয়াল ছবি করব। ‘প্রসেনজিৎ ওয়েডস ঋতুপর্ণা’ সেই ছবির টিজার বলতে পারো। আর নতুন ছবির জন্য বডি চেঞ্জ করে, নতুন লুকে আসব (হাসি)।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.