প্রধান সিনেমায় জটিল ‘জটিলেশ্বর’ অনির্বাণ চক্রবর্তী (Anirban Chakraborty)। প্রথমবার নেগেটিভ চরিত্রে অভিনয় করার অভিজ্ঞতা কেমন, জানালেন শম্পালী মৌলিককে।
‘প্রধান’-এর ট্রেলারে তো একেবারে অন্য অনির্বাণ চক্রবর্তী, সাড়া কেমন আপনার কাছে?
খুবই ভালো। ট্রেলার যেদিন থেকে বেরিয়েছে, সেদিন থেকেই যেখানে যাচ্ছি লোকজন বলছে ট্রেলারটার কথা। আমাকে যেহেতু এভাবে একদমই দেখেনি, সকলেরই স্ট্রাইকিং লাগছে।
হাসিঠাট্টা করতে করতে একেবারে কড়া ভিলেনের ভূমিকায়!
(হাসি) আমাকে একজন বলল, ভিলেন ধরতে ধরতে নিজেই ভিলেন হয়ে গিয়েছেন।
আপনার চরিত্রের নাম ‘জটিল’। তো কতটা জটিল চরিত্রটা?
যে জটিলদের দেখে বোঝা যায়, তারা কম জটিল। আর যে জটিলদের দেখে বোঝা যায় না, তারা আসলে বেশি জটিল। এই ‘জটিলেশ্বর মুখার্জ্জি’র চরিত্রটা নিজেকে ঈশ্বরের কাছাকাছি মনে করে। এবং যে জায়গাটার ঘটনা, সেখানে ও যা যা ঘটায় সেটা নিয়ে ওর অধিকার আছে মনে করে। ও যে খারাপ কাজগুলো করে, সেগুলোকে খারাপ বলে মনেই করে না। পুরো কনভিকশন নিয়ে এগুলো করে। এমনিতে লোকটা হাসিখুশি। খুব মিষ্টি করে কথা বলে। বড়দের প্রণাম করে বা দেখলেই হাতজোড় করে নমস্কার। ওর সঙ্গে যদি ক্ল্যাশ না হয়, বিশ্বাস করবে যে লোকটা ভালো লোক।
‘জটিল’-এর মতো চরিত্র আপনি কাছ থেকে দেখেছেন? রেফারেন্স হিসাবে কী ছিল?
না, দেখিনি। বা হয়তো দেখেছি। কিন্তু ক্ল্যাশ না হলে তো বুঝতে পারব না। রেফারেন্স হিসাবে কাউকে পাইনি। খানিকটা আমাকে বানাতে হয়েছে। এই কম্বিনেশন-এর এমন কাউকে পাইনি, যাকে সরাসরি রেফারেন্স বলতে পারি। ফলে অনেকটাই কল্পনা নির্ভর। যেটা করেছি, দুটো মানুষকে ভাবার চেষ্টা করেছি একটা চরিত্রের মধ্যে। যে বাইরে একরকম, ভিতরে অন্য একটা মানুষ।
ট্রেলারে একটা দৃশ্য দেখলাম, সরাসরি দেব-এর সঙ্গে পাঙ্গা নিচ্ছেন। সেই চ্যালেঞ্জ কেমন ছিল? মানে বিশ্বাসযোগ্য তো করতে হবে।
এই ছবিটা ফুল ফ্লেজেড কমার্শিয়াল ছবি যেমন হয়, সেরকম নয়। আবার একেবারে ফ্যামিলি ড্রামা যেমন হয়, তেমনও নয়। মাঝামাঝি ধরনের। হিরো বনাম ভিলেন, এমন পাঙ্গা নেওয়ার দৃশ্য আমি করিনি আগে। আগে গ্রে শেডের চরিত্র করলেও (যেমন– ‘কাকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’ বা ‘মুখোশ’) এই রকম নয়। এই সামনাসামনি টক্কর করতে গিয়ে খুব মজা লেগেছে। কারণ, আমি এইরকম হিরো ভার্সেস ভিলেনের সিকোয়েন্স দেখেছি। এখানে প্রায় হাতাহাতি হওয়ার উপক্রম। আমার স্বপ্ন যে, এমন অ্যাকশন সিকোয়েন্স করব, পিছনে একটা বিস্ফোরণ হবে। যাদের সঙ্গে কাজ করেছি, সেই সব পরিচালকদের বলেওছি। পরে তাঁরা আশ্বাসও দিয়েছেন যে হবে (হাসি)। এটা ওই লেভেলে না হলেও, খানিকটা হয়েছে।
চরিত্রটা যখন শোনেন পরিচালক অভিজিৎ সেনের কাছে, তখন কি এই গ্রে শেড-ই আকর্ষণ করেছিল?
হ্যাঁ। অবভিয়াসলি যে ধরনের চরিত্রের জন্য পরিচিত বেশি, তার বাইরের কাজ করার জন্য আমি সবসময়ই খুব আগ্রহী। লাকিলি হয়েওছে সেটা। ‘প্রধান’-এ এটা যখন হল ভালো লেগেছে। চরিত্রটার কথা বলার একটা রিদম আছে। ভালো মুডে থাকলে ‘রাইম’ করে। নানারকম সব জিনিস একটা চরিত্রের মধ্যে একসঙ্গে আনতে হয়েছে। দুটো সিনের মধ্যে যেন ছন্দপতন না হয় খেয়াল রাখতে হয়েছে। ব্যবহারটা বেশি মিষ্টিও করা যাবে না, সেক্ষেত্রে চরিত্রের শ্রুড ব্যাপারটা থাকবে না। ফলে একদম শুটিং শুরুর দিকে শট দিয়ে অভিজিৎকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে, টিউনটা ঠিক লাগছে কিনা। ও ভালো বলার পরে আমি সেটাই মেনটেন করেছি।
‘প্রধান’-এ দেব এবং পরান বন্দ্যোপাধ্যায় জুটি। সেইখানে কখনও মনে হয়েছে আপনার কতটা জায়গা থাকবে?
না, একদমই মনে হয়নি। শুরুতে অভিজিৎ এবং অতনুদার সঙ্গে যখন কথা হয়, ওরা আমাকে ক্যারেক্টারের স্কেচ বলেছিল। তখন স্ক্রিপ্ট ড্রাফটের পর্যায়ে ছিল। তার বেশ কিছুদিন পরে স্ক্রিপ্ট রিডিং হয়। আমি জানতাম না বাকি কারা রয়েছেন ছবিতে। শুধু জানতাম দেব (Actor Dev) করছে। এত বড় বড় অভিনেতারা রয়েছেন জানতাম না। সেটা আমার সবসময় এনকারেজিং এবং এনরিচিং মনে হয়। যত ভালো অভিনেতারা থাকবেন তত ভালো। তার মাঝখানে আমি কোথায় হারিয়ে যাব, এটা নিয়ে আমি চিন্তা করতে বসিই না। এবং পরানদা-দেবের সঙ্গে অভিনয় বা খরাজদা-অম্বরীশ-কাঞ্চনদা, বিশ্বনাথ সবাই রয়েছে। দারুণ টিম।
একঘেয়েমি কাটানোর জন্য ‘প্রধান’-এর চরিত্রটা কাজে এল তাহলে?
খুবই এনজয় করেছি এই চরিত্রটা। তবে আমার মধ্যে একঘেয়েমি খুব একটা আসেনি। আমি যেহেতু এক চরিত্র অনেকবার করছি, অনেকে এটা মনে করেন। একেনবাবুর নটা কনটেন্ট করেছি। সাতটা সিজন আর দুটো ছবি। প্রায় ছ’বছর ধরে। কিন্তু এর সঙ্গে আমি অন্য প্রচুর কাজও করেছি। ফলে আমি কখনও বোরড হইনি। কিন্তু জটিলের মতো চরিত্র আগে করিনি (হাসি)। ‘প্রধান’-এ খুব অন্যরকমের কাজ করে ভালো লেগেছে। দারুণ রেসপন্সও পাচ্ছি।
‘টুংকুলংয়ে একেন’-এর প্রতিক্রিয়া কেমন?
সাড়া খুব ভালো পাচ্ছি। সোশ্যাল মিডিয়ায় দর্শকের ভালো প্রতিক্রিয়া। একটা উইকেন্ড গেলে আরও ফিডব্যাক আসে।
এ মাসে আপনার একটা সিরিজ এল, একটা সিনেমা আসছে (২২ ডিসেম্বর ‘প্রধান’) আর একটা কাজ অভিরূপ ঘোষের সঙ্গে…
হ্যাঁ, ওটা প্রত্যেক শনিবার একটা করে এপিসোড আসছে। ওটা ‘বাংলার সেরা ভূতের গল্প’।আমার গল্পটা এরপরে আসবে। এছাড়াও ‘মহাত্মা বনাম গান্ধী’ নাটকটা করছি। সামনে নান্দীকারের চল্লিশতম জাতীয় নাট্যমেলায় শো রয়েছে ১৮ ডিসেম্বর।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.