‘একটা অডিশন বদলে দিল সব কিছু। ‘‘সোনি লিভ’-এ ‘চার্লি চোপড়া’ মুক্তির আগে জানালেন নামভূমিকায় থাকা ‘জুবিলি’ খ্যাত অভিনেত্রী ওয়ামিকা গাব্বি। কথা বললেন বিদিশা চট্টোপাধ্যায়
বিশাল ভরদ্বাজ পরিচালিত ‘চার্লি চোপড়া’-র পাইলট এপিসোড এবং ট্রেলারের ফিডব্যাক কেমন? ২৭ সেপ্টেম্বর শো আসছে।
ওয়ামিকা গাব্বি: ট্রেলার বেরনোর পর আমার কাছে প্রচুর ফোন এসেছে। আমার পরিচিতরা খুব এক্সাইটেড। আমারও ভাল লাগছে দুর্দান্ত অভিনেতাদের মাঝখানে নিজেকে দেখতে পেয়ে। বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না। আমি খুব এক্সাইটেড।
আগাথা ক্রিস্টির ডিটেক্টিভ এবং বিশাল ভরদ্বাজের নায়িকা– একসঙ্গে দুটো হতে পেরে কেমন লাগছে?
ওয়ামিকা গাব্বি: ইট ফিলস ক্রেজি! বললাম না, নিজেই বিশ্বাস করতে পারিনি। জানি না আমি আমার জীবনে এমন কী ভাল কাজ করেছি যে এই সুযোগ পেয়েছি।
আপনি প্রথমে বিশাল ভরদ্বাজের সঙ্গে শর্ট ফিল্ম ‘ফুরসত’, তারপর ওয়েব সিরিজে একটা পর্ব (মডার্ন লাভ মুম্বই) করার পর ফুল লেন্থ ওয়েব সিরিজে লিড হলেন।
এই যে একটা থেকে আরেকটা কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?
ওয়ামিকা গাব্বি: ২০১৯-এ ‘নেটফ্লিক্স’-এর শো ‘মিডনাইটস চিলড্রেন’-এর জন্য অডিশন দিই, যেটা বিশাল ভরদ্বাজের পরিচালনা করার কথা ছিল। আর সেই সময় আমি অভিনয় ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবছিলাম। ইন্ডাস্ট্রি ছেড়ে পৃথিবী ভ্রমণে বেরিয়ে পড়ব প্ল্যান করছিলাম। আসলে যে ধরনের কাজ করতে চাইছিলাম সেটা পাচ্ছিলাম না। এদিকে মুম্বইয়ে ছয়-সাত বছর কেটে গিয়েছে। কিছুই মনের মতো হচ্ছে না। তখন মনে হয়েছিল, অভিনয় হয়তো আমার জন্য নয়, আমি ভাল অভিনেতা নই। একটু নিজের মতো ঘুরে বেড়িয়ে, নিজেকে আগে খুঁজি। আর সেই সময় আমি ভাল অভিনেতা ছিলামও না বোধহয়। এই সব সাতপাঁচ ভাবার পর ঠিক করলাম, অডিশনটা দিয়েই যাই, কী আর হবে! সিলেক্ট হব না, এই তো! আমি মনে করি জীবন আর শিল্প ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আমার নিজের আত্মার সঙ্গে যদি যোগাযোগ না ঘটে, ভাল অভিনয় করা যায় না। আই ওয়াজ নট ইন টাচ উইথ মাইসেলফ ব্যাক দেন।
তারপর…
ওয়ামিকা গাব্বি: এত লাকি নই যে বিশাল ভরদ্বাজের সিরিজে সুযোগ পাব– এই ভেবে অডিশন দিয়ে ফেলি। শর্টলিস্ট হয়ে যাই। তারপর বিশাল স্যরের অফিসে গিয়ে নেক্সট অডিশন। সেই আমার প্রথম আলাপ বিশাল স্যরের সঙ্গে। সেখান থেকে শর্টলিস্টেড হয়ে তিন দিনের একটা ওয়ার্কশপ করার সুযোগ হয় অতুল মোঙ্গিয়া-র সঙ্গে। ফ্রিতে এত এক্সপেনসিভ ওয়ার্কশপ করতে পারব ভেবে খুশি হয়ে গিয়েছিলাম। এই ওয়ার্কশপ আমার নিজেকে নিয়ে, জীবন নিয়ে, ধারণা বদলে দেয়। ইটস অ্যাবাউট অ্যাক্টিং, বাট ইটস মোর অ্যাবাউট সেল্ফ। অভিনয়কে ভালবেসে ফেললাম তারপর। সেই প্রোজেক্টটা হয়নি, কিন্তু তার পর থেকে এখনও পর্যন্ত বিশাল ভরদ্বাজের সঙ্গে চারটে কাজ করে ফেলেছি। ‘ফুরসত’, ‘মডার্ন লাভ’, ‘চার্লি চোপড়া’, এবং হিন্দি ছবি ‘খুফিয়া’ যেটা শিগগিরি মুক্তি পাবে।
অভিনেতা হিসাবে কতটা সমৃদ্ধ হয়েছেন? পরপর চারটে কাজ করে ফেলেছেন বিশাল ভরদ্বাজের সঙ্গে।
ওয়ামিকা গাব্বি: বিশাল ভরদ্বাজ অভিনেতাকে পুরো স্বাধীনতা দেন আবার প্রয়োজন মতো গাইডও করে দেন। আর উনি চরিত্রের গভীরে ঢুকে নানা ক্লু দিতে পারেন অভিনেতাকে। চরিত্র যেমনই হোক তারা তো আমার আপনার মতো কেউ, তাই না! চিত্রনাট্য অনুযায়ী, নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে সেই ‘চরিত্র’-র অবস্থান যেহেতু বাস্তবঘেঁষা, সেখানে বিশাল ভরদ্বাজ ‘চরিত্র’-র রিঅ্যাকশন নিয়ে এমনভাবে আলোচনা করেন, অভিনেতাদের কাছে সেটা সহজ হয়ে যায়। দ্যাটস সো বিউটিফুল। আমি তখন নিজেকে আরও একটু ওপেন আপ করি। আর এই যে বিভিন্ন চরিত্রের মধে্য দিয়ে সম্পর্কের যাত্রাপথ, আদান-প্রদান– এটা আমাকে ব্যক্তি হিসাবে সমৃদ্ধ করেছে। বিভিন্ন ‘চরিত্র’ হয়ে কাজ করতে করতে ব্যক্তিগত পরিসরে আমার সম্পর্কগুলোও আরও সহজ এবং ভাল হয়েছে। অ্যান্ড দ্যাটস সো বিউটিফুল। অভিনেতা হিসাবে নাম, যশ, অর্থের পাশাপাশি এই যে পার্সোনাল গ্রোথ– এটা একমাত্র শিল্পেই সম্ভব।
২০০৭-এ ‘জব উই মেট’-এ নায়িকার তুতো বোন থেকে আজকের চার্লি– ষোলো বছর। আপনার কেরিয়ার গ্রাফ ধীর পথে এগিয়েছে। যেন তাড়া নেই! আপনি কীভাবে নিজের কেরিয়ার প্ল্যান করেছিলেন?
ওয়ামিকা গাব্বি: জীবন যেমন অনিশ্চিত, আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে তেমন সাফল্য়ের কোনও বাঁধাধরা ফর্মুলা নেই। আমার পরিবার, বিশেষ করে আমার বাবা সবসময় বুঝিয়েছেন যাতে আমি মরিয়া না হয়ে উঠি। যে কোনও মতে সাফল্য পেতেই হবে– এমন ভাবনার মানুষ আমি কোনওদিনই ছিলাম না। আই নেভার ফেল্ট দ্য নিড টু বি ডেসপারেট। সেটা আমাকে সবসময় শান্ত এবং সংযত করেছে। আর এত তাড়াহুড়ো করে সব সাফল্য পেয়ে আমি কী করব। সাফল্যের চেয়ে গুরুত্ব দিয়েছি অন্য ভাবনাকে। যে কাজটা করছি সেটা করে কি আমার ভাল লাগছে? আমি মজা করে কাজ করতে চাই, খুব তাড়াতাড়ি নাম করে বড় অভিনেতা হয়ে যাওয়াটা বাইরে-বাইরে খুব ভাল লাগে। সফল অভিনেতা হয়ে যদি ব্যক্তিগত ভাল থাকা বিসর্জন দিতে হয়, ডিপ্রেশনে চলে যেতে হয়, সকালে উঠে চোখের জল ফেলতে হয় তাহলে কীসের বড় হওয়া! আই ওয়ান্ট টু হ্যাভ এ গুড লাইফ! আমার এই ষোলো বছরের যাত্রাপথ এখনও পর্যন্ত খুব তৃপ্তিদায়ক বলে আমি মনে করি। আমি কোনও ফিল্মি ফ্যামিলি থেকে আসিনি, কোনও আত্মীয়ও নেই…
সেটা ভাল না খারাপ, আপনার কী মনে হয়?
ওয়ামিকা গাব্বি: ভাল না খারাপ সেটা বিষয় নয়, আমি আমার বাস্তবটা বলছি। আমাকে একের পর এক অফার দেওয়ার মতো কেউ নেই। একটাতে ফেল করলে এটা কেউ বলবে না, কোই বাত নহি বেটা, ফিরসে দুসরি ফিল্ম ট্রাই কর লো। সেই প্রিভিলেজড ফিল্মি ব্যাকগ্রাউন্ড আমার নয়। আমার কাছে কোনও অপশন ছিল না। আমার জন্য এই জার্নি যেখানে আমি অপেক্ষার পর বিশাল ভরদ্বাজ, বিক্রমাদিত্য মোতওয়ানের সঙ্গে কাজ করছি, ‘মনু’ (গ্রহণ), ‘নিলোফর’ (জুবিলি), ‘চার্লি
চোপড়া’-র মতো চরিত্রে অভিনয় করাটা দারুণ ব্যাপার। ইটস বিউটিফুল অ্যান্ড আমেজিং ফর মি!
‘চার্লি চোপড়া’-তে হেভিওয়েট অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?
ওয়ামিকা গাব্বি: ওহ! ইটস সুরিয়াল! নাসিরুদ্দিন শাহ, রত্না পাঠক শাহ, নিনা গুপ্তা, লারা দত্ত– এদের সঙ্গে কাজ করতে পেরে আমি আপ্লুত। নাসির স্যর ইজ লাভেবল। সেটে একটু সিরিয়াস থাকতেন। তবে সেটা কারও অসুবিধে করে না। নিনা এবং রত্না ম্যাম খুব চিয়ারফুল, অনেক কথা বলেন। তবে প্রতে্যকের নিজেদের একটা ‘অরা’ আছে যেটা আমি একটা কাজ করতে গিয়ে টের পেয়েছি। কলকাতা থেকে পাওলি আছেন। শি ইজ ভেরি ট্যালেন্টেড। আমার সকলের সঙ্গেই দারুণ ইন্টার্যাকশন হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.