‘শিবপুর’ ছবির প্রযোজকের বিরুদ্ধে হেনস্তার অভিযোগে সোচ্চার হলেন স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। তাঁর কথা শুনলেন শম্পালী মৌলিক।
‘শিবপুর’ ছবির প্রযোজক আপনাকে হেনস্তা করেছেন– এমন একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে চাপানউতোর চলছে বিগত কয়েকদিন ধরে। সম্প্রতি সেই তথ্য সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন। প্রযোজকের তরফে আপনার ছবি বিকৃত করে ছড়ানো ও প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয়েছে। ঘটনার সূত্রপাত কীভাবে?
হঠাৎ একদিন সন্দীপ সরকারের (অন্যতম প্রযোজক) মেল আসতে শুরু করে। কেন, কীসের জন্য কিছুই জানি না। হেনস্তামূলক মেল প্রথমে শুরু হয় যে, আমি নাকি ওদের হ্যারাস করছি, কাজের অসুবিধা করছি। কিন্তু কীভাবে করছি তার কোনও প্রমাণ নেই, আলোচনাও নেই।
কাজের অসুবিধা মানে? ছবির প্রচারে আপনি অংশ নিতে চাইছেন না, এমন ধরনের অভিযোগ ছিল কি?
সেটা ওদের অ্যাজাম্পশন, ওরা ধরে নিয়েছে এমনটা। চুক্তিবদ্ধভাবে আমার ছবির প্রোমোশন করার কথা। কিন্তু মার্কেটিংয়ের প্ল্যান কোথায়? পিআর স্ট্র্যাটেজি কোথায়? ডেটস নিয়ে কোনও আলোচনা কোথায়? প্রথমে ছবিটা রিলিজের কথা ছিল মার্চে। তখন আমাদের সঙ্গে যোগযোগ করেছিল। আমরা ডেটস পাঠিয়েছিলাম, যে কোন সময়ে আমরা অ্যাভেলেবল। এগুলো সব ই-মেলে আছে। কোনও উত্তর ওদের কাছ থেকে আসেনি। মার্চে যে রিলিজ হচ্ছে না, সেটাও আমাদের জানানো হয়নি। বলেছিল, জানাবে। পরে মার্চে ছবির পরিচালক অরিন্দম ভট্টাচার্য যোগাযোগ করেন। বলেন যে, মে-তে ছবি রিলিজ। উনি মার্কেটিং ও প্রোমোশনের তত্ত্বাবধানে। উনি ডেট পাঠালে, আমরা অ্যাভেলেবেলিটি জানাই।
তারপর?
তারপর সন্দীপ সরকারের মেল আসে যদি আমি প্রচার না করি, তাহলে আমার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবেন, থানায় যাবেন। কমিশনারের কাছে, এমনকী চিফ মিনিস্টারের অফিসে নিয়ে যাবেন। ইউএস কনসাল জেনারেলে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগও জমা দিয়েছেন। ইউএস ভিসা ক্যানসেল করে দেবেন, এবং আমার আমেরিকায় ঢোকা ব্যান করে দেবেন– এইরকম সব ই-মেল প্রত্যেকদিন আসতে থাকে। যদি আমি প্রচারে অংশ না নিই তবে এসব হবে। আমি প্রথমে একদমই গায়ে মাখিনি। কারণ, ছবির অফার পরিচালক অরিন্দম ভট্টাচার্য নিয়ে এসেছিলেন। তারপরে এই ইন্দো-আমেরিকান প্রোডাকশন হাউসের সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়। সেখানে সন্দীপ সরকারের শুধু নাম আছে, সাইন করেছেন অজন্তা সিনহা রায়, যিনি কলকাতায় থাকেন। তাঁর সঙ্গে আমার একদিন সেটে আলাপ হয়েছিল। কিন্তু সন্দীপ সরকারের সঙ্গে কোনও ফর্মাল আলাপ হয়নি। সারা শুটিংয়ে তাঁকে খুঁজে পাইনি, বক্তব্যের দিক থেকে, যোগাযোগের দিক থেকে। শুধু জানতাম তাঁর নাম আছে কনট্রাক্টের দিক থেকে। তার থেকেও বড় কথা হল আমি যদি না করি– তাহলে তো ওদের তরফ থেকে প্ল্যান-স্ট্রাটেজি থাকতে হবে! মানে আমি কী করব না? আমি মিডিয়াকে জানানোর আগে সকলকে জিজ্ঞেস করেছি, যে ‘শিবপুর’-এর রিলিজ নিয়ে কোনও ইনটিমেশন পেয়েছে? ট্রেলার, টিজার কবে আসবে? কেউ কিন্তু জানে না। আমি প্রথমে ই-মেলগুলো পাত্তা দিইনি। কারণ ভেবেছিলাম ভদ্রলোকের মানসিকতা নিশ্চয়ই খুব বিকৃত। প্রত্যেকটা থ্রেট ইমেলে অজন্তা সিনহা রায় কিন্তু ‘কপিড’ আছেন। শুধু আমাকে নয়, পরিচালককেও শাসানো হয়েছে। অজন্তা কিন্তু চুপ ছিলেন।
কখন ভাবলেন এবার মুখ খোলা উচিত?
যখন সন্দীপ সরকারের অ্যাসোসিয়েট রভীশ শর্মার তরফ থেকে সেক্সুয়ালি হ্যারাসিং মেল এল। এবং আমার ম্যানেজারকে স্কুটার অ্যাকসিডেন্ট করে রাস্তায় মেরে ফেলবে– এমন হুমকি দেওয়ার পরে। আমি অরিন্দমদাকেও জানাই সেটা। তখন সন্দীপ সরকারের আরেকটা মেল পাই যে, বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে আসরে তিনি এই বিষয়ে আলোচনা করেছেন। এবং আমাদের পার্সোনাল মেল আইডি শেয়ার করেছেন। এটা অ্যাডমিট করে মেল করেন। এটাতে ওর কোনও দায়িত্ব নেই, এবং এটা নাকি অফেন্স নয়। এরপর চুপ করে থাকা সম্ভব ছিল না। এরপর থানায় জেনারেল ডায়রি করি। তারপরেও অরিন্দমদা মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করেন। আমরা বলি, প্রপার আইনজীবীর মাধ্যমে চুক্তি করাও যে এই ধরনের থ্রেটনিং ই-মেল আর আসবে না। কারণ অজন্তা সারাক্ষণ বলতেন, উনি নাকি কিছু জানেন না। এত ঘটনার মধ্যেও মার্কেটিং আর প্রোমোশনের উচ্চবাচ্য নেই। কোনও কাজের ই-মেল আসেনি শেষ ক’মাসে। শুধুই হুমকি।
একজন প্রথম সারির নায়িকা হিসাবে কতটা অসহায় বোধ করছেন?
না, অসহায় বোধ করার কিছু নেই। এদের এটা প্রথম কাজ, এরা কিছুই জানে না কাজটা কীভাবে হয়। তাহলে এই অসুবিধার জায়গা তৈরি হতই না। এদের ইন্দো-আমেরিকান ফেসবুক পেজ থেকে নাকি জানা গেছে আজকে (বুধবার) টিজার লঞ্চ। এদিকে পরিচালক কিন্তু জানে না। এরা কাজ জানে না, কিন্তু নোংরামো জানে। আমার সঙ্গে যদি এটা করতে পারে, তাহলে তো নতুনদের রাস্তায় নামিয়ে দেবে। নতুনরা হয়তো ভয় পেয়ে সহ্য করবে।
আরেকজন প্রযোজক তো নারী। তিনি বোঝেননি…
কনফারেন্স কলে আমি ওঁকে এটাই বলেছিলাম, আপনি প্রোডিউসার এটা তো পরে। প্রথমে তো একজন মহিলা। সেখানে আপনি কোনও স্ট্যান্ড নিচ্ছেন না। ১৫-২০ দিন ধরে এটা চলছে, আপনার অফিসের কেউ মেল চেক করে না, এটা তো হতে পারে না। দু’জন পার্টনারের তো একই দায়িত্ব হবে।
হুমকির কারণটাই তো পরিষ্কার নয়…
সেটা কারও কাছেই নয়। তারপরে সন্দীপ সরকার এটাও লেখেন যে, আমার বিরুদ্ধে এক্সটর্শন অফ মানির কেস করবেন। এদিকে আমাকে কনট্রাক্টের বাইরে তো একটা টাকাও দেননি। ইম্পায় জানিয়েছি। তারপর আর্টিস্ট ফোরাম এবং যে গিল্ডগুলো আছে সেখানে আর মহিলা কমিশনে জানিয়েছি।
সহ-অভিনেতাদের পাশে পেয়েছেন?
কেউ ফোন করেনি আমাকে। কিছু জিজ্ঞেসও করেনি। বাকি ইন্ডাস্ট্রির কথা ছেড়ে দিলাম, এই ছবিতে যারা আমার সঙ্গে কাজ করেছে তারাও চুপ। পরমব্রত, রজতাভ দত্ত, মমতা শংকর, খরাজ মুখোপাধ্যায় সকলেই এই ছবিতে আছেন। তাঁদের কারও কোনও জিজ্ঞাসাও নেই। শুধু পরিচালক অর্জুন দত্ত ফোন করেছে, খোঁজ নিয়েছে।
আহত হয়েছেন নিশ্চয়ই?
না, আমার কোনও প্রত্যাশা নেই। আমি তো কোনও লবিতে বিলং করি না। বাইরেও কাজ করি, দেখি তো। বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি একত্রিত হয়, যখন কোনও ফেস্টিভ্যাল বা ইভেন্ট হয়। কিন্তু কারও কোনও সংকট হলে মাঠ ফাঁকা। কোনও লবিতে থাকলে হয়তো, সেই লবির লোক সরব হত। ‘বন্ধুবান্ধব’ কথাটা আজকে ফেক মনে হয়। একমাত্র নিজের অসুবিধা হলে মানুষ সোচ্চার হয়। ২৩ বছর হল ইন্ডাস্ট্রিতে, কোনও বিপদের সময়ে কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করতে দেখি না, এটাই রিয়্যালিটি।
এরপর?
আর এই ছবির সঙ্গে যুক্ত থাকতে চাই না। কিন্তু ওরা এটা করে পার পেয়ে যাক চাই না। মামলা করার সময় এবং এনার্জি আমার নেই। কিন্তু এটা ক্রিমিনাল অফেন্স থানায় জানাতেই হত। কতটা শক্তিশালী মনে করলে এগুলো কেউ এভিডেন্সে রাখে! আমার ছবি মর্ফ করে নগ্ন ছবির স্যাম্পল পর্যন্ত ইমেলে পাঠিয়েছে, যে সহযোগিতা না করলে পর্নসাইটে দিয়ে দেবে। এসবে প্রচুর সময় নষ্ট হল। আমি ইউএস কনসুলেটকেও সবটা জানিয়ে রেখেছি, সমস্ত প্রমাণ দিয়ে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.