Advertisement
Advertisement

‘তালিবান আমাকে, মণীষাকে মেরেই ফেলত!’ আজও আতঙ্কিত Escape from Taliban ছবির পরিচালক

ছবি মুক্তির পরও পরিচালকের কাছে আসত হুমকি ফোন।

Escape from taliban director ujjwal chatterjee on Taliban Terror | Sangbad Pratidin
Published by: Akash Misra
  • Posted:August 17, 2021 6:39 pm
  • Updated:August 17, 2021 7:26 pm  

আকাশ মিশ্র: ‘ছবির শুটিং করতে গিয়েছিলাম। দ্রুত ওখান থেকে চলে না এলে, মেরে ফেলত ওরা !’ জাতীয় পুরস্কার বিজয়ী পরিচালক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের চোখের সামনে ১৮ বছর আগের বীভৎস স্মৃতি আবার যেন ফুটে উঠল। আফগানিস্তান নিয়ে কথা বলতে গিয়েই, আতঙ্ক জড়ানো গলায় পরিচালক বলে উঠলেন, ‘প্রাণ হাতে নিয়ে ফিরে এসেছি।’

সালটা ২০০৩। সেই বছরই মুক্তি পায় মণীষা কৈরালা অভিনীত ‘এসকেপ ফ্রম তালিবান’ (Escape from Taliban) ছবিটি। কলকাতার লেখক সুস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজের জীবন নিয়ে লেখা ‘কাবুলিওয়ালার বাঙালি বউ’ (Kabuliwalar Bangali Bou) থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এই ছবি তৈরি করেছিলেন উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় (Ujjal chatterjee)। ছবির গল্পে উঠে এসেছিল এক বাঙালি মেয়ের আফগানিস্তান পাড়ি দেওয়ার গল্প। এক কাবুলিওয়ালার সঙ্গে সংসার করার আখ্যান। সেই মহিলার উপরে হয়েছিল অকথ্য অত্যাচার। তার প্রতিবাদও করেন সেই মহিলা। কিন্তু তিনি তো একা। তালিবান শাসনের বিরুদ্ধে একা লড়াই করবেন কী করে! তার মূল্য চোকাতে হয়েছিল সুস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তালিবানের গুলিতেই মৃত্যু হয় তাঁর।  

Advertisement
Movie Poster of Escape from Taliban
এসকেপ ফ্রম তালিবান ছবির পোস্টার।

‘এসকেপ ফ্রম তালিবান’ ছবি তৈরির আগে থেকেই বিতর্কের ঝড় বয়েছিল। শুটিং শুরুর সময় থেকেই পরিচালক আঁচ পেয়েছিলেন তালিবানদের উগ্র চেহারা।

লেখিকা সুস্মিতা (বাঁ দিকে), মণীষা কৈরালা (ডানদিকে)

[আরও পড়ুন: Afghanistan Crisis: ফিরছে তালিবানি ফতোয়ার যুগ! আতঙ্কে সন্ত্রস্ত আফগান মহিলারা]

উজ্জল চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘১৬ অক্টোবর আমরা কাবুল পৌঁছই। কাবুল বিমানবন্দরে যখন নামি তখন প্রায় দুপুর সাড়ে তিনটে। আমার যাওয়ার কথা ছিল সারানাতে। কাবুল থেকে সারানার দূরত্ব প্রায় ১৮ ঘণ্টার রাস্তা। তবে আমরা সারানাতে যেতে পারিনি। সারানায় এক পরিচিতর সঙ্গে কথা বললাম আমরা। সুস্মিতা আমার সঙ্গেই ছিল। সে সময় সারানার অবস্থা যা ছিল, সেটাই এখন কাবুলে হচ্ছে। নারী, শিশুদের ওপর অকথ্য অত্যাচার চলছে। হিউম্যানিটি বলে কিছুই ছিল না। সেই ২০০৩ সালের দৃশ্যই এখন ফের দেখতে পাচ্ছি। তবে এবার কাবুলে। সে সময় কিন্তু কাবুলে খুব একটা তালিবানরাজ দেখা যায়নি। আফগানিস্তানের একটু ভিতরের দিকে তালিবানরাজ চলত। মেয়েদের বোরখা পরিয়ে রাখা, অত্যাচার করা। আমার ছবিতে সবই দেখিয়ে ছিলাম। আর এখন ১৯ বছর পর দেখছি ছবির সব দৃশ্যই বাস্তব রূপ নিয়েছে। সুস্মিতা তো এসবের সম্মুখীন হয়েছিল। ওখানকার মেয়েদের পড়াশোনা করানোর চেষ্টা করেছিল। আর সেটা জানতে পেরে সুস্মিতার উপর অত্যাচার করেছিল। বাচ্চা বাচ্চা মেয়েদের ধর্ষণ করেছিল। বীভৎস অবস্থা। আমাদের ওই সময়টা একেবারেই যাওয়া উচিত হয়নি। আমাদের মেরে ফেলতে পারত। দূতাবাস থেকে তো আমাদের দ্রুত ফিরে যেতে বলেছিল। তার উপর যখন জানতে পেরেছিল ছবির শুটিংয়ের জন্য গিয়েছিলাম। তখন তো আরও বেশি সমস্যা হয়েছিল।’

Manisha koirala in Escape from Taliban
এসকেপ ফ্রম তালিবান ছবিতে মণীষা কৈরালা।

 

আফগানিস্তানে আর শুটিং করা হয়নি উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের । লাদাখকেই সারানা বানিয়ে ছবি তৈরি করেছিলেন।  তবে এখানেই সমস্যার শেষ হয়নি। ছবি মুক্তির পরও আফগানিস্তান থেকে হুমকি ফোন আসত পরিচালকের পরিবারের কাছে। প্রাণনাশের ফতোয়াও জারি হয়েছিল উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় ও মণীষা কৈরালার নামে। পরিচালক জানালেন, ‘ছবি মুক্তির পর পরই অজানা নাম্বার থেকে ফোন আসত আমার পরিবারের কাছে। আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হতো। এমনকী, জানতে পারি আফগানিস্তানে ফতোয়া জারি হয়েছিল আমাকে আর মণীষাকে মেরে ফেলার। খুব আতঙ্কে ছিলাম। এই ঘটনার পর ৭ বছর ধরে পুলিশি নিরাপত্তায় ছিলাম। এখনও মাঝে মধ্যে সেই আতঙ্ক তাড়া করে। বিশেষ করে গত কয়েকদিন ধরে টিভিতে যা দেখছি। তা দেখে চোখের সামনে সব দৃশ্য ভেসে উঠছে। নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে।’

‘এসকেপ ফ্রম তালিবান’ ছবি ছাড়া এই পরিচালকের ‘উত্থান’, ‘সার্চ’, ‘ভূমিকা’, ‘কালরাত্রি’ ছবি প্রশংসিত হয়। জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছেন পরিচালক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়। সেন্সর বোর্ড অফ ফিল্ম সার্টিফিকেশনের উপদেষ্টা কমিটিতে রয়েছেন তিনি। সঙ্গে চিত্রভারতী ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের বিচারক।

[আরও পড়ুন: ‘আমাকেও খুন করুক তালিবান’, অপেক্ষায় Afghanistan-এর প্রথম মহিলা মেয়র]

 

 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement