সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: “নমস্কার, আমি বলছি। আপনার সঙ্গে ফোনে একটু গল্প করতে চাই।” অতিমারীতে (Pandemic) ঘরবন্দি জীবনে যদি এমন একজন মানুষ থাকতেন, যাঁর সঙ্গে দুটো মনের কথা বলা যেত, নিঃসঙ্গ জীবনে বেঁচে থাকার কিছু উপলব্ধি শেয়ার করে নেওয়া সম্ভব হতো, তাহলে কী ভালই না হত! ঘরবন্দি জীবন বোধহয় এতটাও অসহনীয় হয়ে উঠত না। চাইলেই তো আর সব ইচ্ছে পূরণ হয় না। তবে এই ইচ্ছেপূরণ হতেই পারে। আর তা করতে এগিয়ে এসেছে শহরেরই কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। করোনা (Corona Virus) পরিস্থিতিতে অনেক বৃদ্ধ-বৃদ্ধাই নিঃসঙ্গতায় ভুগছেন। কারও সন্তান বিদেশে থাকেন, কেউ বয়সকালে সঙ্গীকে হারিয়ে একা হয়ে পড়েছেন। এদিকে কোভিড (COVID-19) পরিস্থিতিতে বাইরে যাওয়ারও উপায় নেই। এমন মানুষদের পাশে দাঁড়াতেই বিশেষ উদ্যোগ নিলেন চিত্রগ্রাহক ও পরিচালক প্রেমেন্দু বিকাশ চাকী, লেখক ও চিত্রনাট্যকার পদ্মনাভ দাশগুপ্ত, অভিনেত্রী মানালি মনীষা দে (Manali Manisha Dey), সাংবাদিক ও পরিচালক সুব্রত সেন, চিত্রনাট্যকার ও পরিচালক উৎসব মুখোপাধ্যায়, লেখিকা ও চিত্রনাট্যকার অদিতি মজুমদার ও ক্রিয়েটিভ ডিজাইনার একতা ভট্টাচার্য।
সারাটা দিন বাড়িতে যাঁদের একলা এবং নিঃসঙ্গতায় কাটে, তাঁদের কথা শোনার জন্যই তৈরি ‘কান পেতে রই’। যার মাধ্যমে নিঃসঙ্গতায় ভোগা বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের সঙ্গে পালা করে কথা বলবেন সাত জন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। তাঁদের কথাও শুনবেন প্রত্যেকে।
কীভাবে যোগাযোগ করা যাবে?
ফেসবুকের মাধ্যমে। মেসেঞ্জারে নাম, ফোন নম্বর এবং বয়স লিখে দেবেন। তা দেখেই আপনাকে ফোন করে নেবেন টলিপাড়ার সাত বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের একজন।
এছাড়া, ৮২৭৬৯২৮৬৫৯ নম্বরে হোয়াটসঅ্যাপ (Whatsapp) করেও দেওয়া যেতে পারে তথ্য। তবে ফোন করবেন না, শুধুমাত্র হোয়াটসঅ্যাপ করবেন। যেখানে নাম ফোন নম্বর এবং বয়স লিখে দেবেন।
বিকেল চারটে থেকে আটটার মধ্যে আপনাকে ফোন করা হবে। সাত জনের মধ্যে যে কোনও একজন কথা বলবেন আপনার সঙ্গে, আপনার মনের কথা শোনার জন্যই কান পেতে থাকবেন। কেন এই উদ্যোগ? এই প্রশ্ন করা হয়েছিল প্রেমেন্দু বিকাশ চাকীকে (Premendu Bikash Chaki)। উত্তরে বিশিষ্ট পরিচালক জানান, বহুদিন ধরেই এই ভাবনা ছিল। করোনার প্রকোপের আগে থেকে। গল্ফ গ্রিনের বাসিন্দা প্রেমেন্দুবাবু। এলাকার বেশিরভাগ বাসিন্দাই বয়স্ক। দেখেছেন তাঁদের মানসিক কষ্ট, একাকীত্ব। সেই থেকেই ‘কান পেতে রই’-এর ভাবনা। ঘূর্ণিঝড় ‘যশ’ বা ‘ইয়াস’ (Cyclone Yaas) আসার আগেই এই কাজ শুরু করার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু ঝড়ের কারণে অনেক জায়গাতেই কানেকশনের সমস্যা হয়। তাই ঝড় পরবর্তী সময়েই শুরু করেছেন ‘কান পেতে রই’।
প্রেমেন্দু বিকাশ চাকী জানান, করোনার প্রকোপ কমাতে বিধিনিষেধ জারি করেছে রাজ্য সরকার। বিনা কারণে বাইরে না গিয়ে যদি একটু নিয়ম মানা যায়, তাহলে সকলেরই ভাল। আর বাড়ি থেকে কাজ করার ফলে যাতায়াতের সময় বেঁচে যাচ্ছে। ফলে দিনে এক থেকে দেড় ঘণ্টা খালি সময় থাকছে। এই সময়টাকে কারও ভালর জন্য তো ব্যবহার করাই যায়! আপাতত বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের জন্যই এই পরিষেবা থাকছে। তবে পরবর্তীকালে আরও বৃহত্তর কিছু করার ইচ্ছে হয়েছে ‘কান পেতে রই’ টিমের। তবে হ্যাঁ, কোনও মানসিক সমস্যার সমাধান এই উদ্যোগে করা সম্ভব নয় বলেই জানিয়েছেন প্রেমেন্দু বিকাশ চাকী। তাঁর মতে, “টিমের কেউ মনোবিদ নয়। তাই আমরা শুধু বন্ধুর মতো ধৈর্য রেখে সকলের কথা শুনতে পারি, ক্ষণিকের আড্ডায় মন ভাল করার চেষ্টা করতে পারি। পরবর্তীকালে যদি কোনও মনোবিদ আমাদের সঙ্গে যুক্ত হন তাহলে মানসিক সমস্যার দিকটিও দেখা হবে।”
হোয়াটসঅ্যাপ করার নম্বর – ৮২৭৬৯২৮৬৫৯
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.