ছবি: কৌশিক দত্ত
স্টাফ রিপোর্টার: টলিপাড়ায় দীর্ঘদিন ধরে চলা পরিচালক গিল্ড বনাম ফেডারেশনের দ্বন্দ্ব এবার গেল আইনের দরজায়। মঙ্গলবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করে পরিচালকদের সংগঠন ডিরেক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া বা ‘ডিএইআই’-র পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, সমস্যা মেটাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। চলতি বছরের ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সেই কমিটির একটি রিপোর্ট দেওয়ারও কথা ছিল। কিন্তু রিপোর্ট তো দূরের কথা, চার মাসে সেই কমিটি পর্যন্ত গঠন করে ওঠা হয়নি। বাধ্য হয়ে সমস্যার সমাধানে তাঁদের আইনের দ্বারস্থ হতে হয়েছে।
এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সুদেষ্ণা রায়, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, সুব্রত সেন, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরি, জয়দীপ মুখোপাধ্যায়, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। সেখানে ডিএইআই-এর সভাপতি সুব্রত সেন বলেন, “আমাদের তরফ থেকে মামলার সমস্ত কাগজপত্র আজ দিল্লিতে ‘কম্পিটিশন কমিশন অফ ইন্ডিয়া’র কাছে পাঠানো হয়েছে।” মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে যে কমিটি গঠন করার কথা ছিল, তাতে থাকার কথা ছিল প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, দেব, পরিচালক গৌতম ঘোষ এবং রাজ্যের দুই মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ও ইন্দ্রনীল সেনের।
এদিন সুদেষ্ণা রায় বলেন, “গৌতমদা আমাদের জানিয়েছেন, কমিটি গঠন হয়নি। এমনকী কমিটি গঠন নিয়ে কোনও নোটিফিকেশনও এখনও হয়নি। তাই, আমরা ঠিক করেছি, আমরা নিজেদের মতো করে সব পরিচালকদের কাছ থেকে তাঁদের অসুবিধার কথা জেনে রিপোর্ট তৈরি করে ‘সিসিআই’-এর কাছে জমা দেব।” তাঁর কথায়, আমাদের লড়াই কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়, বরং যে অনিয়ম ও বেআইনি কাজ চলছে, তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।”
পরমব্রত বলেন, “একটা শব্দ তৈরি করে দেওয়া হয়েছে -‘গুপি শুটিং’। অথচ দেশের আইনে কোথাও বলা নেই যে কোনও পরিচালক তাঁর ইচ্ছেমতো কলাকুশলী নিয়ে শুটিং করতে পারবেন না। কেউ কোনও সংগঠনের সদস্য নন বলে তিনি কাজ করতে পারবেন না, একথাও বলা নেই। ইউনিয়নের সদস্য না হলে তাঁকে কাজ করতে দেওয়া হয় না। অথচ কোনও ট্রেড ইউনিয়ন কোনও নাগরিকের কাজ করার অধিকার কেড়ে নিতে পারে না। এটা ভারতীয় সংবিধানের আর্টিকেল ২১-এর পরিপন্থী।”
ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরি জানান, হিন্দি ভাষার কোনও ছবির শুটিং এ রাজ্যে হলে, ফেডারেশন প্রযোজকের থেকে দ্বিগুণ টাকা ও বিদেশি ছবির ক্ষেত্রে তিন গুণ টাকা দাবি করে। ইন্দ্রনীলের অভিযোগ, “দেশের অন্য কোনও ইন্ডাস্ট্রিতে এই নিয়ম নেই। এইভাবে তো বাংলায় বাইরের ছবি এবং বিজ্ঞাপনী ছবির শুটিং আরও কমে যাবে।” কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “পরিচালকেরা টালিগঞ্জে কোনও সুবিধাই পান না। অথচ দেশের অন্য সব ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁদের নানা সুবিধা দেওয়া হয়। গত বছর ইন্ডাস্ট্রিতে মোট ১৩৪টি বাংলা ছবি তৈরি হয়েছিল। চলতি বছরের শেষে সেই সংখ্যাটি ৩৭।” শিবপ্রসাদ বলেন, বক্স অফিসে হিন্দি ছবির তুলনায় বাংলা ছবির প্রযোজকরা অনেক কম টাকা পান। প্রযোজকের রোজগারের জায়গা তৈরি না হলে, আগামী দিনে তো ইন্ডাস্ট্রিতে আর কোনও প্রযোজক আসবেন না।
যাদের বিরুদ্ধে পরিচালকদের এই অভিযোগ, টালিগঞ্জের কলাকুশলীদের সেই সংগঠন ‘ফেডারেশন অফ সিনে টেকনিশিয়ান ওয়ার্কার্স অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া’র সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস এই প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, “আমি শুনেছি ওঁরা একটা সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন। কিন্তু কী বলেছেন, তা এখনও জানি না। সব জেনে তবেই এ নিয়ে যা বলার বলব।”
জুলাই মাসে পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায়ের ছবির শুটিংকে কেন্দ্র করে টালিগঞ্জ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে জড়িত কলাকুশলীদের ফেডারেশন এবং পরিচালকদের সংগঠন গিল্ডের মধ্যে বিরোধ বাধে। ফেডারেশনকে না জানিয়ে বাংলাদেশে গিয়ে শুটিং করে আসার অভিযোগ এনে রাহুলকে তিন মাসের জন্য বয়কট করার কথা ঘোষণা করে ফেডারেশন। যা নিয়ে রাহুলের পক্ষে দাঁড়িয়ে পালটা শুটিং বয়কটের ডাক পরিচালকরা দিলে ২৯ জুলাই থেকে বন্ধ হয়ে যায় সিনেমা, সিরিয়াল ও ওটিটি প্ল্যাটফর্মের শুটিং। অচলাবস্থা কাটাতে শেষ পর্যন্ত আসরে নামতে হয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তাঁর হস্তক্ষেপেই পরিচালকরা কাজে ফেরেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.