সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সম্প্রতি কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘লক্ষ্মী ছেলে’ সরিয়ে রণবীর-আলিয়ার ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ ছবি চালানো নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশেই ঝামেলায় জড়ান প্রিয়া সিনেমার মালিক অরিজিৎ দত্ত এবং এসভিএফের কর্ণধার। আর এবার নির্দিষ্ট কোনও ছবি বা হলের কথা উল্লেখ না করেই রাজ্যে বাংলা ছবির সিনেমা হল না পাওয়া নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় মুখর হলেন পরিচালক তথাগত মুখোপাধ্যায় (Tathagata Mukherjee)। ফেসবুকে লম্বা পোস্ট দিলেন পরিচালক।
তথাগত লিখলেন, ”এই মূহুর্তে পশ্চিমবাংলার সিনেমা হলে বাংলা ভাষার সিনেমার গুরুত্ব বোধহয় সবার তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।সে লক্ষী ছেলে হোক কিম্বা দুষ্টু ছেলে,বাংলা সিনেমার মান ভাল হোক কিম্বা খারাপ,ফ্লপ হোক কিম্বা হিট,নিজের রাজ্যে নিজের ভাষার সিনেমাকে হারিয়ে দেওয়ার প্রানান্তকর যে প্রচেষ্টা কিছু ব্যবসাদার আর তাদের পোষা বিভিন্ন ক্ষেত্রের এমিবা গোত্রীয় প্রানীরা করে চলেছে তা প্রশংসাযোগ্য।পরিনতি হিসেবে গত দশ বছরে গোটা বাংলায় বন্ধ সিনেমা হলের সংখ্যা, আর কমতে থাকা দর্শক। দাবী একবারও এটা নয় অন্য ভাষার সিনেমা বাংলার সিনেমা হলে চলবে না,দাবী এটা যে অন্য ভাষার সিনেমার সাথে বাংলা সিনেমাকে সমান গুরুত্বের সাথে প্রাইম টাইম শো, যথেষ্ট সংখ্যক হল দেওয়া হোক।তারপর তাতে দর্শক না হলে হল থেকে সরিয়ে দেওয়া হোক কিন্তু গুরুত্ব সম্মান সবটা সমান,ভাল খারাপটা দর্শক বিচার করুক,গুটকাখোর কিছু ব্যবসায়ী আর তার স্তাবকবৃন্দরা নয়।লজ্জার বিষয় বাংলায় থেকে বাংলায় কথা বলে বাংলা সিনেমার সম্মান দাবী করতে হচ্ছে।আজ মহারাষ্ট্র বা হায়দ্রাবাদ বা আরো অনেক রাজ্যে এ দাবী তোলার আগে সিনেমা মাধ্যমটাই তুলে দিতে হত,কারন তাদের সরকারী নিয়মের অর্ন্তগত যে নিজের ভাষার সিনেমাকে অগ্রাধিকার বা সমানাধিকার দিতে হবে।এ ব্যপারে এ রাজ্য নিস্পৃহ,সরকার উদাসীন অথচ এই রাজ্যে সমান সুযোগ সুবিধা আর গুরুত্বের সাথে বাংলা ভাষার পাশাপাশি অন্য ভাষার সিনেমা চললে তার পরিনাম কি হবে তা বাংলা সিরিয়াল তার রাজ্যপাট দিয়ে অনেকদিন আগেই প্রমান করে দিয়েছে।স্টার,জি,কালারস এর পাশাপাশি এদের হিন্দি বা অন্য ভাষাগুলোও থেকেছে বরাবর টিভির রিমোটে,কিন্তু পশ্চিমবাংলাতে বাংলা সিরিয়ালের রাজ্যপাটে এতটুকু ভাগ বসেনি।বাংলা সিনেমা দেখানোর সমান সুযোগ পেলেও এ ক্ষেত্রেও অন্যথা হবে না।সিনেমা দেখারও অভ্যেস তৈরি করতে হয় সবকিছুর মতনই,বাংলা সিনেমাকে প্রতিমূহুর্তে অপমান করে বাংলা সিনেমার দর্শক তৈরি করা যায় নি আর যাবেও না।অনেকদিন ধরে কিছু লোকেদের মুখে শুনি ব্যবসা ব্যবসা,তা যদি শুধু ব্যবসাই করতে হয় আলুর গুদাম দে,সিনেমা তো আর শুধু ব্যবসা নয়,ব্যবসা তার অংশমাত্র।চ্যানেল কিম্বা নিজস্ব ওটিটি কে আগে থেকে সিনেমা বেচে নামমাত্র রিলিজ করে ফাঁকা সিনেমা হলে হাউজ ফুলের বোর্ড ঝোলালে বাংলা ভাষার সিনেমাটা মরে যাবে, যেভাবে মরছে প্রতিদিন।বাংলা সিনেমাগুলো হল থেকে তুলে দিয়ে লাভের লাভ একটাই সিনেমা হলের জায়গায় জামাকাপড়ের দোকান,আর মাল্টিপ্লেক্সের মলগুলোতে তো এমনিই রকমারি কিনতে পাওয়া যায়।আর আগে থেকে নির্ধারিত নানারকম কন্ডিশনের পরিবর্তে তৈরি সিনেমা বিক্রি করা সিনেমা দিয়ে যদি ব্যবসাই করতে হয় তার চেয়ে মুদির দোকানের ব্যবসা ঢের সম্মানের,অন্তত মাল সাজানোর স্বাধীনতাটুকু আছে,কোন মালটা দোকানে রাখব সেটার সিদ্ধান্ত অন্তত অন্য কেউ নেয় না। লেজে পা পড়লে কুকুররাও কিন্তু ঘেউ করে ওঠে,যাদের লেজে পা পড়েছে বা পড়ছে তারাও এখনো অনেকে চুপ, আমরা বোধহয় বোধবুদ্ধিতে কুকুরদের থেকে উন্নত প্রজাতি,উল্টোটা প্রমান করবেন না প্লিজ।আর যারা চুপ করে ছিলেন, আছেন, থাকবেন তাদের এটুকুই বলার অন্য কাজ খুঁজুন কারন এভাবে চলতে থাকলে বাংলা ভাষায় আর সিনেমা তৈরি হবে না।কিছু আবোদা ভাত ডাল খেয়ে দুপুরে ভাতঘুম দেওয়া পাব্লিকের ইচ্ছে মতো কনটেন্ট তৈরি হবে।হ্যাপি সিনেমা দিবসের আগাম শুভেচ্ছা। অনান্য রাজ্যের মতনই সরকারী সিদ্ধান্ত প্রয়োজন যে নিজের মাতৃভাষার সিনেমাকে অনান্য ভাষার সিনেমার মতন সমান গুরুত্ব দিতে হবে। বাংলা ভাষার সিনেমার স্বর্নাক্ষরের ঐতিহ্যের পরেও যে বাংলায় এই দাবী জানাতে হচ্ছে তা বোধহয় সমস্ত আপামর বাঙালির লজ্জা, বাংলা ভাষাভাষী মানুষের লজ্জা।”
পরিচালক তথাগতর এই পোস্ট শেয়ার করেছেন টলিউডের আরেক পরিচালক অনীক দত্ত। অনীক লিখলেন, ” বাংলা কি বাংলার সিনেমাকে চায়? আমাদের এমন ছবি করতে হবে যা দর্শক দেখতে চাইবে। পাশে, সামনে, পিছনে কোথায় কাউকে দাঁড়াতে হবে না। কারও দয়া দাক্ষিণ্য চাই না। খালি কাঠি করবেন না। তাহলে কাঠি বাঁশ হয়ে ফিরে আসবে…”
সম্প্রতি দেখা গিয়েছে, বলিউড বা দক্ষিণী বিগ বাজেটের ছবি মুক্তি পেলেই শো টাইম হারাচ্ছে বাংলা সিনেমা। বিশেষ করে মাল্টিপ্লেক্স গুলোতে এই সমস্যা সবচেয়ে বেশি। এই নিয়ে টলিউড ইন্ডাস্ট্রি সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্য়াম্পেনও শুরু করেন বাংলা সিনেমার পাশে দাঁড়ান। সেই ক্যাম্পেনকে সঙ্গে নিয়ে এই পোস্ট তথাগতর।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.